স্বামীর ভালোবাসা part : 2

0
5101

স্বামীর ভালোবাসা♥
লেখিকা সুরিয়া মিম
part : 2
!
শুধু আমার প্রথম স্ত্রী বলে আমি ওকে এ ঘরে ঠাই দিয়েছি, নাহলে ওকে কবে ও ডিভোর্স দিয়ে দিতাম,
!
কি হলো বাবু কি এতো ভাবছ?
!
কিছুনা সোনা,
!
দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে,
ওনা মুখে ইশার জন্যে সোনা ডাক টা শুনে পরান টা স্তব্ধ হয়ে গেল আমার,
তবু ও নিজেকে সামলে নিয়ে রুমে চলে যাই,
!
উনি ও খেয়েদেয়ে ইশা কে নিয়ে ঘুরতে চলে যায়,
গত বছর এমন সময় উনি আমাকে নিয়ে কত জায়গায় ঘুরেছেন,
এবারো তো আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার ছিল,
ছিল টা ছিল রয়ে গেল,
শুধু ওনার সাথের মানুষ টা বদলে গেল,
যে মানুষ টা আমি অসুস্থ হলে পাগল হয়ে যেতো,
সে এখন আমাকে চোখ তুলে তাকিয়ে চোখের দেখা ও দেখতে আসেনা,
!
কেন আল্লাহ?
কেন তুমি আমাকে এমন পরীক্ষায় ফেললে?
কেন তোমার সমস্ত ধৈর্য্যের পরীক্ষা আমি দিবো?
কিছু ভালো লাগেনা আমার?
মাঝেমধ্যে মনে হয় সুইসাইড করে ফেলি,
!
কিন্তু,
সুইসাইড তো হারাম,
কেন সুইসাইড করবো?
কার জন্যে করবো?
জন্মের পরি আমি কালে বলে আমাকে আমার বাবা মা পরিত্যাগ করে চলে গেছিলো,
!
তাই আমি আমার স্বামী কে পেয়ে সকল কষ্ট ভুলে থাকার চেষ্টা করে ছিলাম,
কিন্তু তার এ রূপ দেখে কষ্ট গুলো না চাইতেও চোখের সামনে ভেসে ওঠে আমার,
!
আমি আর কখনো ওনার জন্যে নীল সাড়ি, চুড়ি পরে বসে থাকবো না,
নীল ওনার ফেভারিট কালার তাই তো?
এখন থেকে ওনার মতো এটা ও আমার সবচেয়ে অপছন্দের হবে,
ওনার কোনো পছন্দের জিনিশ আমি আমার কাছে রাখবো না,
!
তাই তখনি কাজের মেয়ে ময়না ও পাখি কে ডেকে পাঠাই,
আর ওরা আসতেই আমি ওদের আমার ছয়টা নীল সাড়ি তিনটে তিনটে করে ভাগ করে দেই ,
সাথে নীল চুড়ি গুলো ও দিয়ে দেই,
!
তখন খেয়াল করে দেখি ময়নার চোখ দুটো ছলছল করছে,
পাখি ওর দুহাত দিয়ে চোখেরজল মুছছে,
!
কি হলো তোরা কাঁদছিস কেন?
!
এতো দামিদামি সাড়ি ও চুড়ি আমাদের দিয়ে দিলে বৌ রানী?
ভাই সাহেব দেখলে তো রাগ করবেন?
উনি তো তোমার জিনিস কাওকে ধরতে দেন না,
!
না তোমার ভাই সাহেব রাগ করবেন,
না আমার জিনিস বা আমাকে কেউ ছুঁইলে ওনার কিছু হবে,
এতদিনে তোরা বুঝলি না যে তোদের ভাই সাহেব আর আগের মতো নেই,
থাকলে কি এসব করতো বল,
!
তুমি কাইন্দো না গো বৌ রানী,
তুমি একদিন এর সঠিক বিচার পাইবা,
!
আমরা তোমারে কইতাছি,
“গরিবের কতা বাসী হইলে ও ফলে”
!
জানিনা কি পাবো?
আর কি পাবো না,
তবে ওনার কাছ থেকে আজ পর্যন্ত যা যা পেয়েছি তা হয় তো দান করে দিবো নয় তো তার বৌয়ের হাতে তুলে দিবো,
!
তোমার কষ্ট আগো সহ্য হয় না গো বৌ রানী,
কখনো ভাবিনী যে আমাগো ভাই সাহেব ওমন মাইয়ার পাল্লায় পরে,
“ঘরের লক্ষি কে পায়ে ঠেলে দিবে”
!
এসব কথা বলে লাভ নেই ময়না,পাখি তোমরা এখন আসো আমি একটু রেস্ত নিতে চাই শরীর টা ভালো নেই আমার,
!
তা হইবো কেমনে?
তুমি মা হইতে চলেছ এই কথা তুমি যেদিন বলবে ওই দিন তোমার স্বামী তোমার সতীন কে ঘরে এনে তুলেছে,
আর হেই লইগাই তুমি চুপপপ মেরে গেছ,
বলতে চেয়ে ও বলতে পারনি,
!
মোর স্বামীডা হারাদিন মদগাজা খাইয়া মটকা মাইরা ঘরের মধ্যে পইরা থাহে,
ওরে খালি ভাই সাহেবের প্রশংসা শুনাইতাম,
কিন্তু আমাগো হেই ভাই সাহেব কি থেইক্কা কি হইয়া গেল,
তোমারে তো পাগলের নাহান ভালোবাসতো কিন্তু কি দেইহা যে ওই বিলাতী মাইয়ার পেছনে ছুটলো খোদাতায়ালা জানে,
যাই হোক তুমি সাবধানে থাকবা,
ওহন আর তুমি একা নও আরো একজন আসতাছে তোমার মাধ্যমে,
তাই ঠিক মতো খাওয়া লওয়া করবা,
!
আমার প্রেগন্যান্সির কথা তোমরা কাও কে জানাইয়ো না প্লিজ,
কেন জানি খুব ভয়ভয় করছে,
!
কাকপক্ষী তেও টের পাবে না বৌ রানী তুমি নিশ্চিন্ত থাইকো,
মোরা ওহন আসি,
!
আচ্ছা আসো,
সারাদিন কাও কে পাইনা নিজের দুঃখ্য কষ্ট গুলো কাওকে শেয়ার করার জন্যে,
তবে আজকে ময়না ও পাখির সাথে কথা বলে মন টা হালকা হয়ে গেছে আমার,
!
ইদানীং ইমান যাই করুক না কেন?
ওর চোখ দুটি মাঝেমধ্যেই মিশকা কে বাড়িময় খুজে বেড়ায়,
সেটা সে শিকার করতে না চাইলেও এটাই সত্যি,
!
মিশকার এক ঝলক দেখার জন্যে প্রায়শই ইশার হাত ধরে বাসার দক্ষিণ দিকের ফুলের বাগানে পাইচারি করে বেড়ায়,
কিন্তু তার কোনো দেখা পায় না,
পাবেই বা কি করে?
মিশকা যে নিজেকে চারদেওয়ালের মধ্যে বন্ধি করে রেখেছে,
ইউনিভারসিটি ও বাসা ছাড়া কোথাও যায় না ও,
শুধু নিজের আর ওর অনাগত সন্তানের যত্ন নেয়,
!
এক রাতে মিশকা পানি নিয়ে রুমে যাচ্ছিল তখন,
ও ইমান ও ইশার খুনসুটি ভরা ভালোবাসা দেখে ফেলেছিল,
!
“যেটা ওর হৃদয়ে সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেড় হয়ে ছিল ”
তবু ও নিজেকে সামলে নিয়ে রুমে গিয়ে সালাত আদায় করতে শুরু করেন,
!
ইতিমধ্যে সবাই ইমানের দ্বিতীয় বিয়ের খবর যেনে যায় তাই ওকে সবাই যা নয় তাই বলে অপমান করে,
!
কি হলো ইশা তুমি কাঁদছ কেন?
!
আব্বু আমাকে বলেছে আমার মতো মেয়ের পক্ষেই অন্যের সাজানো সংসার ভেঙে তার স্বামীর সাথে ঘর করা সম্ভব,
!
যে যাই বলুক না কেন?
আমরা ভালোবেসে বিয়ে করেছি কোনো অন্যায় করিনি তাই তুমি মন খারাপ করো না আমার কলিজা টা,
আমাকেও তো লোকে কতকিছু বলে,
আমি কি সবার কথা গায়ে মেখে চলি নাকি হুমমম,
!
তবে হ্যা তোমার জন্যে একটা সারপ্রাইজ আছে সোনা টা,
!
কি?
!
কালকে একটা পার্টির আয়োজন করেছি ফর আওয়ার রিসেপশন ও কোম্পানির সাকসেস পার্টি জন্যে সো শপিং এ যাবেনা?
!
হুমম বাবু,
!
তারপর ওরা শপিং করতে যায়,
!
বিয়ের আগে থেকেই উনি কোম্পানির সাকসেস পার্টি তে আমার নাম উল্লেখ করতো এবার করবে ইশার নাম,
এ আর নতুন কি?
এটা তো জানা কথা,
!
পরেরদিন রাতে ওনাদের রিসেপশন ও কোম্পানির পার্টি তে উনি বলেন,
!
একজন সফল পুরুষের পেছনে দুজন মহিলার হাত থাকে একজন হল তার মা অন্য জন তার ওয়াইফ,
আর আমার সাকসেসের পেছনে ও আমার মা এবং আমার মোস্ট বিউটিফুল ওয়াইফ ইশা ইমান খানের অবদান সবচেয়ে বেশি,
তখন সবাই হাত তালি দিতে শুরু করে,
তারপর তারা ড্যান্স পার্টি থ্রো করে,
!
পার্টি শেষে মিশকা ওর রাতের খাবার নিতে নিচে চলে যায়,
তখন কিছু একটা পরে যায়,
আর সেই শব্দ শুনে
ইমান কিচেনে ছুটে আসে,
তখন খেয়াল করে দেখে,
!
কেউ একজন মিষ্টি কালারের সাড়ি পরে ভেঙে যাওয়া কাঁচের গ্লাসের টুকরো তুলছে,
!
প্রথমে মিশকা কে বুঝতে না পারলে ও ওর পিছু করতে করতে রুমের কাছে আসতেই ময়না ওকে বলে,
!
বৌ রানী তুমি কষ্ট করে নিচে গেছ কেন?
আমি বা পাখি আমাদের বললে তো হতো,
!
না ঠিক আছে,
আমি নিয়ে এসেছি,
!
আজ প্রায় ষাট দিন মানে দুই মাস পরে ইমান মিশকাকে দেখছে ওর কথা শুনছে তাও ঘোমটা দিয়ে নিজের মুখ টা ঢেকে রেখেছে ,
!
ইমান পিছু ডাকতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই মিশকা ওর রুমে চলে যায়,
!
তখন ও ময়না কে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
!
ও এখনো খায়নি?
!
ময়না ইমানের কথার মানে বুঝতে পেরে ও কথা ঘুড়িয়ে বলে,
!
ইশা ম্যাম তো খেয়েছে সাহেব,
!
আশ্চর্য আগে ওরা আমি কিছু বলার আগেই বুঝে যেত আমি কার কথা বলছি আর এখন?
আচ্ছা আমি কেন এতো ওকে নিয়ে ভাবছি?
আমার এতো ওকে নিয়ে ভাবার টাইম নেই হুমম,
!
তারপর ও ওর রুমে গিয়ে শওয়ার নিয়ে বেড় হয়,
তখন ইশা ওর সামনে নাইটি পরে ঘুরে ঘুরে বলে,
!
কেমন লাগছে বাবু?
!
ভালো,
!
আজকে আমাকে আদর করবেনা বাবু?
!
মুড নেই আমার,
তাই ও অন্যদিকে ফিরে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পরে,
!
কিন্তু শতচেষ্টা করে ও ঘুমোতে পারছেনা ও কারন ও না চাইতেও মিশকার চিন্তাভাবনা ওদের কাটানো মুহূর্ত গুলো ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে,
আর ও ভাবছে,
ত এতো শুকিয়ে গেছে কেন?
ঠিক মতো খাওয়াদাওয়া করেনা নাকি?
একি বাড়িতে অপরিচিতা হয়ে থাকি,
আগের ভালোবাসা টা হয়তো নেই কিন্তু বিশ্বাস টাও কি নেই?
একটু আমার সাথে কথা বললে কি হয় কি তোমার?
বন্ধু হয়ে কি থাকা যায় না নাকি?
এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পরে ও,
!
পরেরদিন সকালে ইমান ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গিয়ে দেখে,
!
যে কেউ একজন নীল সাড়ি চুড়ি পরে কিচেনে এদিকওদিক করে রান্নাবাড়া করছে,
!
ইসস,
এতকিছুর পরে ও নীল সাড়ি যাক ও আমার পছন্দ ভুলেনি,
তাই আমি ও ওকে চমকে দিতে চাই,
তারপর ওকে বলবো আমরা সারাজীবন এভাবে বন্ধু হয়ে থাকবো আর আমাদের ডিভোর্স হবে না সবাই মিলেমিশে থাকবো,
!
তাই হাসতে হাসতে গিয়ে নীল সাড়ি ওয়ালী কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে,
!
তখন নীল সাড়ি ওয়ালী চিৎকার করে বলে,
!
ভাই সাহেব আমারে ছাইড়া দেন,
মুই না বৌ রানী নই,
!
এ কথা শুনে নীল সাড়ি ওয়ালী কে ছেড়ে দিয়ে ইমান হা করে তাকিয়ে দেখে যে,
!
ময়না মিশকার নীল সাড়ি চুড়ি পড়ে আছে,
!
ময়না কে মিশকার সাড়ি চুড়ি পরে থাকতে দেখে রাগে কটমট করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
!
এগুলো তুই কোথায় পেয়েছিস?
!
বৌ রানী তার সাড়ি চুড়ি আমারে ও পাখি রে দিয়ে দিছে সাহেব,
!
এসব শুনে ইমানের মধ্যে রাগের আগুন জ্বলতে শুর করে,
তাই ও রাগে একা একা বিড়বিড় করে বলে,
!
ঘৃণা করো আমায়?
আমার ভালোবেসে দেওয়া সমস্ত জিনিস তুমি দান করে দিলে?
!
যা পারো করো গিয়ে তাতে আমার কি?
কোনো কষ্ট হয় না আমার,
একি ঘরে তো অপরিচিত হয়ে থাকো,

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে