My_Mafia_Boss_Husband Part:২

0
5448

My_Mafia_Boss_Husband Part:২
#Mafia_Boss_Season2

Writer:Tabassum Riana
রুবীনা বেগম আর আজমল খানের একমাত্র কন্যা রুহানী তাসকিন রুহী।আজমল খানের সাথে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলো রুবীনা বেগম।রুবীনা বেগম কনসিভ করার পর আজমল খান আর রুবীনা বেগম গোপনে বিয়ে করে নেন।কিন্তু আজমল খান তার প্রথম বিয়ে গোপন করেন রুবীনা বেগমের কাছে।প্রসবের সময় এগিয়ে আসছিলো রুবীনা বেগমের।একদিন আনিলা বেগম আজমল খানের গোপন বিয়ের কথা জেনে যাওয়ায় আনিলা বেগম রুবীনা বেগমের বাড়িতে এসে যাতা বলে অপমান করে।কষ্ট সহ্য করতে না পেরে রুবীনা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন।তার ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।ফুটফুটে কন্যা রুহীর জন্ম হয়।আজমল খান মেয়েকে দেখতে এলে রুবীনা বেগমের সাথে প্রচন্ড কথা কাঁটাকাঁটি হয় আজমল খানের।পরদিন রুবীনা বেগমের লাশ পাওয়া যায় বাথরুমের বাথটবে।সবাই সুইসাইড বলে চালিয়ে দিয়েছিলো।আজমল খান নামকরা মাফিয়া লিডার হওয়ায় পুলিশ তদন্ত করতে সাহস পায়নি।যার কারনে রুবীনা বেগমের মৃত্যু রহস্যই থেকে যায়।কথা গুলো ভেবে কাঁদতে থাকে রুহী।দুহাতে নাক মুখ মুছতে থাকে।বেড়ে উঠেছে খুব কষ্টে।বাবা ঘরে নিয়ে আসার পর সৎ মায়ের মার অপমান সহ্য করতে হয়েছিলো দিনের পর দিন রাতের পর রাত।সৎ ভাই আনাম কোন দোষ করলে ও রুহীর ওপরই দোষ এসে পড়তো।সৎ মা গায়ে গরম তাওয়ার ছ্যাঁকা দিতো আবার কখনো শরীরে গরম তেল ঢেলে দিয়েছে।বাবার ব্রেনওয়াশ তো করেছেই রুহীর বিরুদ্ধে। বাবা ও দেখতে পারেনা এখন।কখনো ভালো মতো কথা বলেনা,কখনো মাথায় হাত রেখে বলেনা মা ভালো আছিস?হাঁটুর ওপর মুখ গুঁজে জোরে কাঁদতে শুরু করেছে রুহী।প্রতি রাতই চোখের জলে বুক ভাসায় রুহী।ওর প্রত্যেকটা কষ্টের সঙ্গী হয় সিগারেটের ধোঁয়া। শুনেছিলো সিগারেট ড্রিংক এগুলো কষ্ট ভুলাতে সাহায্য করে।রাতের পর রাত সিগারেটের ধোঁয়া আর মদের মাতালতায়৷ নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছিলো রুহী।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,গাড়ি থেকে নেমে উঠে দাঁড়ালো রুহী।হাত পা অসাড় হয়ে আছে।ঠিক মতো দাঁড়াতে ও পারছেনা।সব কষ্ট সহ্য করে নিয়েছে ও।কখনো ভেঙ্গে পড়েনি পড়বে ও না।কারন তেমন মেয়ে না ও।হাত ঘড়িটা চেক করলো। সময় গুলো ঘোলা হয়ে আসছে।দুচোখ ডলে সময় দেখার চেষ্টা করলো।রাত ১১টা বাজছে।দুপুরে বেরিয়ে ছিলো।দুপাশে বন আর মাঝে রাস্তা।খুবই নির্জন জায়গাটা।মাঝে মাঝে ঝিঝি পোকার আওয়াজ ওর অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে।রুহী রাস্তা ধরে হাঁটা শুরু করেছে।দুহাত পিছনে ভাজ করে হাঁটছে রুহী।মাঝে লাফাচ্ছে আবার পড়ে যেতে নিলে নিজেকে সামলিয়ে নেয়।একাই থাকবে সারাজীবন।এই জীবনটাকে তো চায়নি ও।তাহলে কেন এমন হলো?এমনকি কেউ নেই যে ওর কষ্ট গুলো দূর করে দিবে।বুকের মাঝে জড়িয়ে রাত ওকে ভালবাসার দুনিয়ায় নিয়ে যাবে।নাহ নেই।আর থাকবেই কেন?কেউ কি চাইবে কোন এক নেশাখোর মেয়ের ভালবাসায় জড়াতে?
,,,,,,,,,,,,,,,,ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এলো রোয়েন।সাদা নাইট ড্রেসটার ফিতা খুলে আয়নার সামনে এলো রোয়েন।নাইট ড্রেসটা একটু ফাঁকা করে রোয়েন শরীরে খামচির দাগ গুলো দেখছে।কোন অনুভূতি কোন ভালোবাসার ছোঁয়া নেই।শুধু কিছুক্ষনের আনন্দের ছোঁয়া দাগ গুলো।সিক্সপ্যাক, বডি ফিটনেস,সব গুলোই রোয়েনকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে।মেয়েদের ক্রাশ সেই ক্লাশ সেভেন থেকেই।আজ ও মেয়েদের ফিসফিস আওয়াজ শুনতে পায় তবে ওর পরিচয় শুনে কেউ কাছে ঘেঁষার সাহস পায়না।চোখের কোনে জ্বলজ্বলে অশ্রু এসে গেছে শুধু পড়ার সুযোগ।নাইট ড্রেসের ফিতা দ্রুত লাগায় রোয়েন।ফোনে কাউকে কল করে কানে রাখে ফোন।
হ্যালো স্যার।কাজের লোকটা বলে উঠে।

বোতলটা নিয়ে এসো গম্ভীর গলায় বলল রোয়েন।

জি স্যার।ফোন কেঁটে যায়।খাটের ওপর ফোন ছুড়ে মারে রোয়েন।ইজি চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে আছে রোয়েন।জন্মের পর থেকে মার মুখ দেখেনি।শুনেছে মা বাবার প্রেমের বিয়ে ছিলো।কিন্তু নিশি নামের এক মেয়ের সাথে বাবার অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠে যার কারনে মা বাবার মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝগড়া লেগেই থাকতো।ওর ৫মাস বয়সের সময়ে মা মারা যায়।এর থেকে আর বেশি কিছু জানেনা রোয়েন।বুঝ জ্ঞান হওয়ার পর থেকে জামাল সাহেব কে দেখেছে।বাবা হিসেবে জামাল সাহেবকেই জানতো।পড়াশুনা করিয়েছে ওনি।ইন্জিনিয়ারিং করে।একদিন ভার্সিটিতে ওর ব্যাগে ড্রাগ পাওয়ায় ১ বছর জেল হয়েছিলো রোয়েনের।জেল থেকে ফিরে এসে শুনতে পায় জামাল সাহেব পলাতক।এর পর আরো খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে জামাল সাহেব ওর বাবা আর মায়ের খুনি।ডার্ক গ্রুপের সাথে যোগাযোগ ছিলো জামাল সাহেবের।তাই……….চোখের কোনা বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ে রোয়েনের।এর পর থেকে প্রত্যেকটা রাত মেয়েদের নেশায় কেঁটে গেছে ওর।বাবাকে খুঁজে আত্মহত্যা করবে ও,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,, ত
স্যার!!!!!! কাজের লোকটা ট্রেতে করে একটা ওয়াইনের বোতল নিয়ে এলো।সাথে আছে একটা গ্লাস আর কিছু বরফ।কাজের লোকের কথা শুনে চোখ খুলে রোয়েন।চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। কাজের লোকটা চলে গেল।সোফায় বসে গ্লাসে ওয়াইন ঢালতে শুরু করেছে রোয়েন।একজায়গায় দাঁড়িয়ে আছে রুহী।বেশী দূর যাওয়া ঠিক হবেনা।গাড়িতে উঠে বসা ভালো হবে।কিন্তু এতো রাতে কই যাবে ও?ভাবতে ভাবতে গাড়ির কাছে চলে এসেছে রুহী।গাড়িতে উঠে বসলো।বাসায়ই যাবে।ঢলতে ঢলতে গাড়ি স্টার্ট দিলো।বাসার সামনে এসে গাড়ি থামালো রুহী।সবাই এতক্ষনে ঘুমিয়ে গেছে হয়ত।পিছনের জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকলো রুহী।সিড়ির দিকে পা বাঁড়ালো।রুমে এসে নিজের ওপর কন্ট্রোল রাখতে না পেরে ফ্লোরে শুয়ে পড়ে রুহী।চোখের সামনে সব ঘোলা হয়ে আসছে।খয়েরী বর্ন চোখ জোড়া ধীরে ধীরে বুজে আসলো।,,,,,,,,,,,,,,,,,,, পরদিন সকাল
ঘুম ভেঙ্গে নিজেকে ফ্লোরে আবিষ্কার করলো রুহী।ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ালো রুহী।কখন এলো ঘরে?কিভাবে এলো?কে নিয়ে এলো? কপাল হাত দিয়ে চেপে ধরলো রুহী।,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
উফফ কিছু মনে পড়ছে না কেন আমার?মাথা থেকে হাত সরিয়ে ঘড়ি চেক করলো রুহী।১১টা বাজে।এতক্ষন ঘুমিয়েছে ও?ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেল রুহী।রোয়েন ঝড়নার নিচে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পানির প্রত্যেকটা ফোটা কে অনুভব করছে।এগুলো যেন ওর প্রত্যেকটা কষ্ট ভুলিয়ে দিচ্ছে।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে রুহী।ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে শুকিয়ে নেয় চুল।কলেজের জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে আসতে থাকে রুহী।টেবিলে বাবা আনাম আর আনিলা বেগম বসে আছে।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,রুহীকে দেখে আজমল খান চেঁচিয়ে উঠেন।ফিরে আসলি ক্যান?মরে যেতে পারিসনি?রুহীর বুক ধক করে উঠে।বাবা ওকে এসব বলছে?বাবাটাতো ওর।তাহলে?নিচে নেমে আসে রুহী।টেবিলের কাছে এগিয়ে যেতেই আনিলা বেগম চিৎকার করে বলে উঠেন কি রে বললিনা কই ছিলি সারারাত?যেখানে ইচ্ছা সেখানে ছিলাম।তোমাদের কি?আমার পারসোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করার অধিকার কাউকে দেই নাই।হঠাৎ রুহীর গালে খুব জোরে থাপড় পড়ে।আনামের হাতটা কাঁপছে।এটা কি ধরনের ভদ্রতা মার সাথে কথা বলার?চিৎকার করে বলতে থাকে আনাম।আমার কেউ নাই,আমার মা না কেউ আমার বাবা ও নাই,কোন ভাই ও নাই।চিৎকার করে বলে উঠে রুহী।কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় রুহী।কতবড় বেয়াদব মেয়ে দেখলে বাবা?রাগী গলায় বলে উঠে আনাম।আজমল খান আনামের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে চলে যায়।কলেজে এসে পৌছায় রুহী।গাড়ি থেকে নেমে গেটের ভিতর ঢুকে পড়ে রুহী।ওর সাথে ক্লাশে কেউ কথা বলে না সাধারনত।ওকে দেখে সবাই দূরে সরে যায়।ক্লাশের পিছনের একটা বেঞ্চে বসে পড়ে।ক্লাশ শেষে বেরিয়ে আসে রুহী।সারাদিনে কিছু খাওয়া হয়নি।ক্যান্টিনে এসে কিছু খেয়ে নেয় রুহী।বিকেলে এদিক সেদিক ঘুরতে থাকে গাড়ি নিয়ে।সন্ধ্যায় ওর প্রতিদিন কার ক্লাবে এসে পৌছায়।ক্লাবের মাঝখানটায় দুটি মেয়ে খুব অশ্লীল ভঙ্গিতে নাচছে।রুহী নাচ দেখতে দেখতে একটা টেবিলে এসে বসে পড়ে।সামনে না তাকিয়ে একটা ড্রিংক নিয়ে খেতে থাকে।ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকায় রোয়েন।ওর ড্রিংকটা একটা মেয়ের হাতে।দাঁতে দাঁত চাপে রোয়েন।কপালের রগ খাড়া হতে থাকে। এক্সকিউজ মি দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে রোয়েন।রুহী নাচ দেখছে মন দিয়ে।এক্সকিউজ মি!!রাগী গলায় বলে উঠে রোয়েন।এই মেয়ে তো কানেই শুনছেনা।রোয়েন হাত মুঠ করে টেবিলে জোরে বাড়ি লাগায়।রুহী সামনে তাকায়।এনি প্রবলেম?ভ্রু কুঁচকে প্রঊশ্ন করে রুহী।রুহীর হাতের ড্রিংক টার দিকে ইশারা করে রোয়েন।ওটা আমার!!!!!দাঁতে দাঁত চেপে বলে রোয়েন।
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,ওহ সরি বাট এটা তো ঝুটা হয়ে গেছে।সো…..আমি খেয়ে নেই বলে ঢকঢক করে গিলে নিলো রুহী।রাগে রোয়েনের হাত পা কাঁপছে।এই মেয়ের এতো সাহস হয় কি করে ওর ড্রিংক শেষ করার?ভাবতেই মেজাজ ভীষন খারাপ হচ্ছে রোয়েনের।রুহী ঠাস করে গ্লাসটা টেবিলের ওপর রেখে ঢলতে ঢলতে চলে গেলো রোয়েনের সামনে থেকে।রোয়েন রুহীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে গ্লাসে চুমুক দিলো।একে ওর চাই এক রাতের জন্য।চোখ লাল হয়ে উঠে রোয়েনের।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে