মায়াবতী বউ ২য় পার্ট

0
3837

মায়াবতী বউ ২য় পার্ট

পিচ্চি পোলা
একটুপর আমিও রুমে ঢুকলাম। দেখি
মেয়েটা আমার খাটে বসে আছে।
এখনো মুখটা ঢেকে রাখছে।
আপনি পাশের রুমে যান একটু
নিচু কন্ঠে বললাম।
আপনি কেমন মানুষ গো। একটা মেয়েকে
ঠাই দিলেন অথচ খেতে বলবেন না?(মেয়েটি)
ভ্রু কুচকে তাকালাম মেয়েটার দিকে।
কি ঝামেলায় পড়লাম।
কোথাকার কোন মেয়ে এসে ঘরে উঠেছে।
তার উপর আবার মা, বোন আসবে একটুপর।
কি বলবো এই মেয়ের কথা, কি ভাববে
মা?
ফ্রিজ থেকে একটা বিরিয়ানির প্যাকেট
বের করে প্লেট ভরে দিলাম টেবিলে।
টেবিলে গিয়ে খেয়ে নেন আর খাওয়ার
পর সোজা ঐ রুমে গিয়ে শুয়ে
পড়ুন।
ভোরে উঠেই চলে যাবেন দয়া করে।
ওকে? (আমি)
ওকে এবার আপনি একটু বাইরে বা অন্য
রুমে যান আমি খেয়ে নেবো। (মেয়েটা)
কি আর করার আপদ যখন ঘরে এনেছি তখন
সামলেই নিতে হবে।
দরজা ঠেলে বাইরে যেতেই দেখি ঝড়
থেমে গেছে তবে বৃষ্টি পড়ছে টুপটুপ করে।
বারান্দায় বসতে যাবো হঠাৎ দেখি গেট
দিয়ে মা আর ছোটবোন আসছে। দুজনই
বৃষ্টিতে ভিজে গেছে।
আমাকে দেখেই মা বললেন কি বৃষ্টি রে
বাবা। ভিজেই আসতে হলো।
এই বলেই মা আর বোন আমার রুমে ঢুকে
পড়লো।
আমি মাথা চুলকাচ্ছি আর ভাবছি কি হবে
এখন? মেয়েটার ব্যাপার কিভাবে
ম্যানেজ করবো?
কিছু না বুঝে তাড়াতাড়ি রুমে ঢুকলাম।
দেখি মা ঐ মেয়েটার মাথায় হাত
বুলিয়ে বলছে কি সুন্দর মেয়ের সাথে
প্রেম করেছে আমার পাগল ছেলেটা দেখ
রুমা। (রুমা আমার ছোটবোন)
এই প্রথম মেয়েটার মুখ দেখলাম আমি।
দেখে পুরাই অবাক হয়ে গেলাম। এ কি
দেখছি আমি।
এ তো সুমির বান্ধবী মায়া।
মায়া আমার দিকে চেয়ে হাসছে।
তার চেয়ে অবাক হলাম মায়া মাকে বলছে
আপনি কেমন আছেন মা?
মা আর ছোটবোন অবাক হয়ে তাকালো
আমার দিকে।
কি রে আমাদের না জানিয়েই বিয়ে
করেছিস সুমি কে? (মা)
মাকে ফোনেই
সুমির নাম বলেছিলাম তাই মায়াকেই
সুমি মনে করে সুমি বলতেছে।
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই মায়া
বললো কিছু মনে কইরেন না মা। আসলে
আমারবাবা আমাকে জোর করে বিয়ে
দিতে চাইছিলো অন্য জায়গায়। তাই
আমরা গতকালকেই বিয়ে করেছি কাজি
অফিসে গিয়ে। হুট করে এমন বিয়ের জন্য
আমরা দুজন আপনাদের জানাতে পারিনি
এসব। সরি মা প্লিজ কিছু মনে করেন না।
তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু আজকেও তো
বলতে পারতো আবির।
ওর বাবা শুনলে কি বলবে আল্লাহ জানে।
আসলে আমরা আপনাদের এ ব্যাপারটা
সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য বলিনি আজ
তাইনা গো? (আমার দিকে চেয়ে চোখটিপ
মেরে মায়া)
আমি অপ্রস্তুত ছিলাম। শুধু মাথা নেড়ে
বললাম হুম।
মা তোমরা বাথরুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে
আসো তো। ভেজা শরীরে কতোক্ষন
থাকবে? ঠান্ডা লেগে যাবে যাও।
মা মুচকি হেসে বললো আচ্ছা বাবা ফ্রেস
হয়ে আসি পরে কথা হবে।
মা বোন রুম থেকে বের হবার পরই মায়ার
কাছেএগিয়ে গেলাম আমি।
কি হচ্ছে এসব? এমন নাটক করতে গেলেন
কেনো? কি জন্য বলেন।
সব বলবো সময় হলে। এই বলে একটা মুচকি
হাসি দিয়ে টেবিল থেকে উঠে এসে
আমার গালে একটা টোকা মেরে সোফায়
গিয়ে বসলো মায়া।
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি আর
ভাবছি কি হয়ে গেলো।
খাটে গিয়ে বসতেই ছোটবোন রুমে ঢুকলো।
ভাইয়া ঐ রুমটা ওমন অগোছালো কেনো?
বাবা চিটাগাং যাওয়ার পর বুঝি আর ঐ
রুমের যত্ন নেয়া হয় নাই?
হা রে। বাবা যাবার পর ঐ রুমে যাওয়াই
হয়না যত্ন নিবে কে?
কেনো রে খোকা? রহিমা (কাজের বুয়া)
কোথায়? ওকে তো দেখছিনা। (মা রুমে
ঢুকতে ঢুকতে বললো)
একদিনের ছুটি দিয়েছি বাড়িতে ঘুরে
আসার জন্য। আজকে আসার কথা থাকলেও
ফোন করে বলেছে আসবে না আজ।
ও আচ্ছা। রুমা যা তো মা রুমটা পরিস্কার
কর একটু। (মা)
ঠিক তখনই মায়া বলে ওঠে আপনারা আগে
খেয়ে নেন তো। টেবিলে খাবার বেড়ে
রেখেছি। আমি যাচ্ছি ঐ রুম পরিষ্কার
করতে। এই বলে ঐ রুমে চলে যায় মায়া।
তাকিয়ে দেখি ফ্রিজ থেকে সব বের
করে আমাদের তিনজনের জন্য খাবার
রেডি করেছে।
খেতে বসে মা বলতেছে দারুন একটা
মেয়েকে বিয়ে করেছিস খোকা। কি
লক্ষি মেয়েটা।
আমি কিছুই বলতে পারছি না। মাথাটা
এলোমেলো হয়ে গেছে আমার।
ভাবিটা কিন্তু দারুন সুন্দর ভাইয়া (রুমা)
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই মায়া
রুমে ঢুকে বললো মা আমি কিন্তু গ্রামে
যাবো আপনাদের সাথে।
অবশ্যই যাবে মা। গ্রামে ধুমধাম করে
আয়োজন করে বিয়ের অনুষ্ঠান করবো আমার
ছেলে আর বৌমার।
কিন্তু আবিরের অফিস দেখতে হবে যে।
ওর বাবা তো চিটাগাং রয়েছে। (মা)
তো কি হইছে। ভাবিকে নিয়ে যাবো আর
বাবা আসলে ভাইয়া আর বাবা যাবে
তারপর বিয়ে হবে। (রুমা)
আরে ও তো অফিসের কাজ সব
ম্যানেজারের দায়িত্বে দিয়ে বাবার
কাছ থেকে ১ সপ্তাহের ছুটি নিয়েছে।(মায়া)
আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম মায়ার
দিকে। এ খবর ও জানলো কি করে? সত্যিই
তো আমি গ্রামে যাবার জন্য বাবাকে
ফোন করে অফিসের সব কাজ
ম্যানেজারের কাছে হস্তান্তর করে
এসেছি পরশুদিন।
কিন্তু এই মেয়েটা এতো কিছু জানে কি
করে? আর কেনোই বা এমন আমার বউ
সেজে অভিনয় করছে?
কি হলো সাহেব? আরেকটু দেবো
বিরিয়ানি?
মায়ার কথায় চমকে গেলাম।এই মেয়ে তো
সত্যিকারের বউয়ের মতো কথাবার্তা
বলছে।
না নেবো না। মা আর রুমাকে দাও।
খাওয়ার পর শুয়ে পড়ছি বিছানায়। বৃষ্টি
না থাকলে হয়তো একটু রাস্তায় বা
দোকান থেকে ঘুরে আসতাম।
একটা সিগারেট ধরাতে ইচ্ছা করছে। তা
মা আবার কখন ঢুকে যায় ঘরে এই ভয়ে
ধরাচ্ছি না।
টিভিটা অন করে দেখতে চাইলাম কিন্তু
টিভিতেও মন বসছে না।
রাতের কথা ভাবছি। ঐ মেয়েটা বউ
হিসেবে এখন আবার আমার ঘরে শুতে না
এলেই হয়।
মায়াকে নিয়ে মা আর বোন বাবার রুমে
গল্প করছে। জানিনা ঐ মেয়েটা মার
কাছে কি না কি বলতেছে।
টেনশন বেড়েই চলছে… নাহ একটা
সিগারেট ধরাই।
যেই না সিগারেটে ধরাবো এমন সময় কারো
আসার শব্দ পেলাম রুমে। তড়িঘড়ি করে
সিগারেট লুকালাম।
বৌমাকে নিয়ে আগামীকালই আমরা
গ্রামে যাবো কি বলিস আবির? (মা)
এখানে ২/১ দিন থাকো তারপর না হয়
যাবো।
না খোকা। তোর বাবাকে ফোনে সব
বলেছি। সে কয়েকদিনের মধ্যে ফিরবে।
বাবাকে কি বলেছো মা? (ভয়ে গলা
কাঠ)
কি বলবো আবার। তোর আর বৌমার কথা,
আর বলেছি বৌমাকে নিয়ে কালকেই
গ্রামে যাচ্ছি। তুমি ফিরলে সরাসরি
গ্রামে যাবে তারপর ধুমধাম করে ওদের
বিয়ের আয়োজন করবো।
বলো কি মা! কিছু বলে নাই বাবা?
হুম তা তো বলছেই। ভীষন রাগ করে বললো
আমাকে জানালে কি এমন ক্ষতি হতো?
আমি কি ওদের মেনে নিতাম না?
আমি বললাম দেখো আমাদের একটাই
ছেলে সে যখন ভুল করেই ফেলেছে
আমাদেরই সামলে নিতে হবে।
তাছাড়া মেয়েটাকে ওর বাবা জোড় করে
অন্য যায়গায় বিয়ে দিতে চাইছিলো আর
তাইতো ওরা তাড়াতাড়ি এই
সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরো অনেকভাবে বুঝানোর পর বলেছে
আচ্ছা বৌমাকে গ্রামে নিয়ে যাও। আমি
২/১ দিনের মধ্যেই আসছি।
ওহ মা তুমি সত্যিই আমার লক্ষি মা। এই
বলে মাকে জড়িয়ে ধরলাম।
হয়েছে ছাড়। বৌমাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
এই ঝড় বৃষ্টির মধ্যে বাইরে না গিয়ে শুয়ে
পর।
আমার সারাদিন গাড়িতে থেকে মাথা
ঘুরছে আমরাও শুয়ে পড়বো।
রুমা আর মায়াকে বুয়ার রুমে গিয়ে শুতে
বলো। ওখানে ওরা গল্পসল্প করুক। (আমি)
না না তা শুবে কেনো? রুমা আমার
কাছেই শুবে।
আর বৌমা তোর কাছেই থাক পাগল
ছেলে আমার।
এই বলে মা বের হয়ে গেলো।(মা আমার
কাছে বন্ধুর মতো তাই এমন ফ্রি।)
আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো।এই
নাটকে মায়ার সাথে আমিও অভিনেতা
হয়ে গেলাম। জানিনা কপালে কি আছে।
শুয়ে আছি হঠাৎ দরজা ঠেলে মায়া
ঢুকলো।
চলবে………………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে