Love At 1St Sight Season 3 Part : 38

0
4805

Love At 1St Sight
~~~Season 3~~~

Part : 38

writer-Jubaida Sobti

স্নেহার বাবা : এটাই আশা করেছিলাম [ স্নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ] দেখ স্নেহা! আমি তোর বাবা, তোর ভালোটাই তো চাইবো, সামির অনেক ভালো ছেলে স্নেহা!

– সে নিজেই আমাকে বলে গেছে ও তোকে বিয়ে করবে না, [ সবাই অবাক হলো স্নেহার বাবার কথায় ]

– কারণ ও তোর আর ঐ ছেলেটার ব্যাপারে সব জেনে গেছে, ও নিজেই বলেছে ও তোর অমতে কখনো তোকে বিয়ে করবে না,

– সামির তোকে অনেক খুশি রাখবে স্নেহা! ও তোর খুশির জন্যই আমার সামনে এই ছেলের চরিত্র তুলে ধরেছে, যাতে তুই যেনো পরে কষ্ট না পাশ, ও এটাও বললো যে স্নেহার আমাকে বিয়ে করার দরকার নেই, তবে সে যাকেই বিয়ে করুক আমি চাই ও যেনো সুখী থাকুক,

– আরে এমন ছেলে তো আজকাল পাওয়াই মুশকিল!

– [ আংগুল তুলে রাহুলের ছবি গুলোর দিক ইশারা করে ] আর এমন ছেলেগুলোই তোদের মতো মেয়েদের ফাঁসানোর চেষ্টা করে,

– আর তুই কি ভেবেছিস আমি শুধু সামিরের কথায় এসব বলছি?
নাহ স্নেহা! যখন জানলাম এসব তখন তোর খুশির দিক দেখে নিজেই সব কিছুর খবরাখবর নিলাম,

[ স্নেহা চোখ বন্ধ করে চেপে পানি ফেললো, মাথায় প্রচন্ড রাগ উঠছে আজ, রাহুল এমন না তা সত্ত্বে ও আজ তার নামের সাথে বাজে মন্তব্য জড়ানো হচ্ছে, তার জন্যই রাহুলের বাবা-মায়ের নামে ইনসাল্ট করানো হচ্ছে, মনে মনে আফসোস করছে স্নেহা! রাহুল নির্দোষ এটা প্রমাণ করার জন্য হয়তো তার কাছে কিছু নেই, কিন্তু রাহুলের নামে এসব বলানো তো বন্ধ করতে পারবে ]

স্নেহার বাবা : খবর নিয়ে জানলাম, না আছে ছেলেটার ফ্যামিলি, না আছে ছেলেটার ক্যারেকটার,শুধু বাড়ী-গাড়ী থাকলে কি হবে!

স্নেহা : [ কান চেপে ধরে ] ব্যাস! বাবা! তোমার কথায় তো রাখছি! [ কাদো কন্ঠে ] আমি রাহুলকে ভুলে যাবো বললাম!

স্নেহার বাবা : স্নেহা! এমন ছেলের জন্য কাঁদছিস যে কিনা এমন কতো মেয়ের সাথে… [ জোড়ে একটি শাস ফেলে ]

– সামির তোকে অনেক খুশি রাখবে স্নেহা! [ বলেই স্নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ভেতরে চলে গেলো,স্নেহা ঐদিকটায় থমকে দাঁড়িয়ে আছে, মার্জান ধীরেধীরে এগিয়ে এলো স্নেহার পাশে, স্নেহার দিক তাকাতেই অনেক মায়া লাগছে তার, কিন্তু এই অবস্থায় কি করবে স্নেহার জন্য কিছুই মাথায় আসছে না, স্নেহা ও আহ্লাদী চোখে তাকালো মার্জানের দিক, মার্জান মাথা নাড়িয়ে ইশারা করলো স্নেহাকে কান্না না করার জন্য! দু-তিন সেকেন্ড চেপেই রাখলো ভেতরের আবেগ গুলো, আর না পেরে মুখ চেপে ফুফিয়ে কেঁদে দৌড়ে মেইন ডোর খুলে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় স্নেহা!

মার্জান, জারিফা, শায়লা ও পেছন পেছন দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো, স্নেহা খালি পায়েই দৌড়ে শিরি দিয়ে নেমে যাচ্ছে, স্নেহা বলে বলে চেঁচিয়ে উঠলে ও স্নেহা থেমে নয় ]

মার্জান : শায়লা, যা তুই গিয়ে ব্যাগ গুলো নিয়ে আয়, [ বলেই জুতা পায়ে দিয়ে স্নেহার জুতা গুলো ও হাতে উঠিয়ে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে নিচে এগিয়ে গেলো ]

নিচে নেমে আসতেই দেখে, স্নেহা ফুফিয়ে কেঁদে কেঁদেই হাটতে চলছে, মার্জান আর জারিফা দৌড়ে গিয়ে আটকালো স্নেহাকে!

মার্জান : স্নেহা! কি করছিস তুই! এভাবে করলে অসুস্থ হয়ে পড়বি!
– [ জুতা এগিয়ে দিয়ে ] নে জুতাগুলো পড়েনে!

স্নেহা : [ কাদো কণ্ঠে ] রাহুল এমন না মার্জান!

জারিফা : [ স্নেহার চোখ মুছে দিয়ে ] রিলেক্স স্নেহা! আশেপাশের লোকজন দেখছে! কান্না করিস না!

মার্জান : যেটা আংকেলকে বলেছিস ওটা পারবিতো?.. [ আবারো কেঁদে উঠলো স্নেহা ]

মার্জান : যখন পারবিনা স্নেহা! তাহলে বললি কেনো?…

স্নেহা : [ রাগান্বিত ভাবে ] তো এটাই বলতাম যে ঠিকাছে আমি চলে যাচ্ছি রাহুলের কাছে, তোমাদের আমি আমার বাবা-মা মানিনা, আর আমার এই চেহেরা ও তোমাদের কখনো দেখাবো না!

– হ্যা?..বল?..এটাই বলতাম?…

[ শায়লা ও এগিয়ে এলো, মার্জান জারিফা দুজনেই চুপ হয়ে আছে ]

স্নেহা : এতোটাও সেল্ফিস কিভাবে হবো মার্জান?.. ওরা না থাকতো তো তাহলে..আজ আমি এই পৃথিবীতেই না হতাম!

– [ চোখ মুছে ] আমি জানি এটা আমার জন্য অনেক কঠিন! কিন্তু আমাকে পারতে হবে, [ বলেই আবার কেঁদে উঠলো ]

শায়লা : উফফ! ঐও কোনদিকটা যাবে তোরা বল?..একদিক প্যারেন্টস্ তো আরেকদিক রাহুল! একবার এই সিচুয়েশনে নিজেদের ভেবে দেখ! তোরা কি আ্যন্সার দিতি!

[ সকলেই নিস্থব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, হঠাৎ ]

মার্জান : [ স্নেহাকে টেনে নিরিবিলি একজায়গায় দাড় করিয়ে ] স্নেহা! তুই আগে জানতি! রাহুলের ফটোগুলোর ব্যাপারে… তাহলে আমাদের বলিসনি কেনো?..

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] ফটো গুলো আমাকে নেহাই দেখিয়েছিলো যখন ও আমাকে কিডন্যাপ করেছিলো, আমি ও বাবার মতোই ভেবেছিলাম রাহুলকে!
[ বলেই ঐদিন রাতে ঘটে যাওয়া নেহা আর রাহুলের কথা সবই খুলে বললো ]

জারিফা : [ মাথায় হাত দিয়ে ] ইয়া আল্লাহ! একটা মেয়ে এতোটা নিচে কিভাবে নামতে পারে?…

শায়লা : আচ্ছা! নাহলে আমরা এক কাজ করি ঐ নেহাকে গিয়ে বলি যাতে আংকেলকে এসে সত্যিটাই বলেদে! যা আংকেল ভাবছে তেমন কিছুই না!

মার্জান : পাগল হয়েছিস! ঐ নেহাকে তুই চিনিস না?..ও আমাদের কথা মানবে তাই না?..আমার তো মনে হয় এসবে নেহার ও হাত আছে! নাহলে সামির ছবি গুলো পেলো কিভাবে!

জারিফা : আরে হ্যা! তাই তো!
– নাজানি রাহুল জানলে এই সামিরের কি হয়!

স্নেহা : [ চোখ মুছে ] রাহুলকে জানিয়ে কি হবে?..ও সামিরের সাথে মারপিট করবে! এটাইতো! বাবা অলরেডিই রাহুলকে অনেক খারাপ ভেবে বসে আছে! যখন জানবে রাহুল সামিরকে মেরেছে, বাবার চোখে ও আরো খারাপ হতে চলবে, আর আমি ও চাই না এমন হোক!

– রাহুলকে ভালো রাখার জন্য যদি ওর চোখে আমাকে খারাপ হতে হয় তাহলেও আমি রাজি,

মার্জান : আমার ও তাই মনে হয়! রাহুল মারামারি করে এটা জানলেও হয়তো আংকেলের রাহুলের প্রতি আরো ঘৃণা জমবে,

– উফফ! এমন কিছুই মাথায় আসছে না যে ছবি গুলোর কাহানী সব সাজানো এটা প্রুফ করবো!

জারিফা : আইডিয়া!

– রাহুল স্নেহাকে যেমন বুঝিয়ে বলেছে তেমন আংকেলকে ও বললে…

মার্জান : তোর বেকার আইডিয়া তোর কাছেই রাখ! আংকেল এখনো ললিপপ খায় মনে হয়?..রাহুল ঐদিন কিছুই করেনি এটা আংকেলকে রাহুল যেভাবেই বলবে আংকেল ওটাই বিশাস করে নিবে! তাই না?

জারিফা : উফফ তাহলে!

– আচ্ছা শোন আমরা সবাই মিলে বললে!

মার্জান : আল্লাহর ওয়াস্তে তুই চুপ করবি?..

স্নেহা : [ চোখ মুছে ] হয়তো সাথে থাকা ভালোবাসা না! হয়তো ভালোবাসা ঐটাই,

– যা সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েও সাথে থেকে যায়, [ বলেই একটু হেসে এক খেয়ালি হয়ে হাটতে থাকে, রাহুলের সাথে কাটানো সব মোমেন্টগুলোই একনাগাড়ে চোখের সামনে ভেসে যাচ্ছে স্নেহার, বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে এসব মনে পড়তেই! ]

স্নেহার ফ্রেন্ডসরা ও পেছন পেছন এগিয়ে আসছে, এই মুহূর্তে স্নেহার জন্য তারাও কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না!
তাই সব ডিসিশন স্নেহাই নিক…এই মনে করে তারউপরই ছেড়ে দিলো!

বাসায় এসে পৌছালো, বিকেল প্রায় শেষের দিকে, বারান্দার রিলিং এ মাথা ঠেকিয়ে স্নেহা বসে আছে, চোখ দিয়ে অজস্র অশ্রু ঝড়ে যাচ্ছে সেই তখন থেকেই, ভেবেও নিয়েছে স্নেহা! যদি পরিবারের সুখের জন্য তার ভালোবাসা ত্যাগ দিতে হয় তাহলে সে দিবে, তবে এই বুকের মাঝে গেথে থাকা রাহুলের ভালোবাসার জায়গা সে আর কাউকেই দিতে পারবে না!
এসব ভাবতে ভাবতে এক খেয়ালিই হয়েগেছে স্নেহা! এর মাঝে কখন থেকে যে ফোনটা বেজে চলছে ধ্যানীই দিলো না!

জারিফা : [ স্নেহাকে নেড়ে দিয়ে ] স্নেহা! ফোন বাজছে!

স্নেহা : [ চমকে উঠে ] অহ! ..কে করেছে?…

জারিফা : রাহুল! [ বলতেই স্নেহা রুমের দিক তাকালো, দাঁড়িয়ে আছে মার্জান দেওয়ালের সাথে গা হেলিয়ে, শায়লা বসে আছে, খাটের উপর..তারাও স্নেহার দিক তাকিয়ে আছে, হয়তো এটাই ভাবছে সবাইকে যে বললো রাহুলকে ভুলে যাবে, আদৌ কি স্নেহা রাহুলকে ভুলতে পারবে! কিন্তু না স্নেহা উইক হয়ে পড়বে না, সবার সামনে তাকে স্ট্রং দেখাতে হবে, এই ভেবেই ফোনটা রিসিভ করলো ]

স্নেহা : হ্যালো!

রাহুল : কোথায় ছিলা স্নেহা?..কখন থেকেই ফোন দিচ্ছিলাম!

স্নেহা : বাসায়ই আছি!

রাহুল : তোমার ভয়েসে্র কি হলো!

স্নেহা : তে…তেমন কিছুই না..হয়তো ঠান্ডায় হয়েছে!

রাহুল : হোওয়ারি তো কথা! নিজের সময় অলোয়েজ কেয়ারলেস্ থাকো!

স্নেহা : রাহুল! আমার আপনাকে কিছু দেওয়ার ছিলো!

রাহুল : হুম তা কি?..

স্নেহা : আসলেই দেখবেন!

রাহুল : আচ্ছা ঠিকাছে!

স্নেহা : আপনি আসছেন?..

রাহুল : ইয়াহ..আই এম কামিং!

স্নেহা : আমি অপেক্ষা করছি! [ বলেই ফোনটা রেখে দিলো ]

মার্জান : [ দূর থেকে চেঁচিয়ে ] স্নেহা রেগে কাজ করিস না! ব্যাপারটা আরো বেড়ে যাবে!

– এক কাজ কর, আংকেল নেক্সট যে অপশনটা দিয়েছে ঐটাই বেছে নে, তারপর পরে দেখবি আংকেল এমনি এমনিতেই মেনে নিয়েছে,

জারিফা : [ স্নেহার পাশ বসে ] আমিও এটা ভাবছিলাম স্নেহা! রাহুলের সাথেই পালিয়ে যা, পড়ে বিয়ে হয়ে গেলে দেখবি আংকেল এমনিতেই মেনে নিয়েছে!

স্নেহা : চুরি করিনি আমি! না কারো খুন করেছি, আমিতো ভালোবেসেছি! পালাবো কেনো?…

মার্জান : [ এগিয়ে এসে ] স্নেহা! বারবার বলছি রেগে কাজ করিস না, এতে দু-জনেই কষ্ট পাবি!

স্নেহা : রেগে যে কাজ করবো ওটা সবসময় ভুলই হবে, জানিস কেনো?..

– কারণ রাগ সবসময় দিমাগের কথা নয় মনের কথা শুনে,আর মন কখনো নিজের জন্য ভাবে না..ও তো সবসময় ওর জন্যই ভাবে, যার হেফাজতে ওকে রাখা হয়েছে!

– হয়তো রাহুল আমার কপালে নেই, নাহ এটা হবে কেনো?.. ইনফ্যাক্ট আমিই রাহুলের কপালে নেই, [ কাদো ভাবে ] ওর কপালে হয়তো আমার চেয়ে বেশী ভালোবাসবে এমন কেউ আছে!

– আজ যদি আমি বাবার দেওয়া নেক্সট অপশনটাই নিতাম, তাহলে আমার ভালোবাসার অসম্মান হতো! ভালোবাসা আমার কাছে খেলনার পুতুল হয়ে যেতো, রাহুলের জন্য যদি বাবা-মাকে ছেড়ে দিতাম, তাহলে অন্য কারো ভালোবাসার জন্য রাহুলকে ছাড়তে তো আমার দু-সেকেন্ডই লাগবে না!

– [ মুচকি হেসে ] বলা অনেক সহজ মার্জান, যখন কাউকে মনেপ্রাণে চাইবি তখন বুঝবি! ব্যাপারটা করতে কতো কঠিন!

[ মার্জান আর কিছু বললো না, ভেতরে গিয়েই বসে ভাবতে লাগলো, ঠিকই তো বললো স্নেহা, হয়তো সে কাউকে এখনো ভালোবাসেনি তাই হয়তো সেকেন্ড অপশনটাই বেচে নিতে বললো, একদিকে বাবা-মা আরেকদিক যাকে ভালোবাসে সে, দুটো অপশন থেকে একটা, উফফ কি কঠিন বেচে নেওয়া, কিন্তু স্নেহা যেটা নিলো সেটা ওর ক্যারেকটারের সাথে যায়, নিজে কষ্ট চেপে রেখে অন্যকে সুখ দেওয়া এটা ওরই কাজ, ছোট থেকেই তো এমনি স্নেহা, আমরা হলে হয়তো নিজের ভালোবাসার পেছনেই দৌড়াতাম, একবার ও ভাবতাম না যে এই পৃথিবীতে ভালোবাসতেই তো সবার আগে বাবা-মা শিখিয়েছে ]

সময় পেড়িয়ে গেছে, বেলা ও ঘনিয়ে এলো, সবাই সবার মতো মগ্ন হয়ে বসে আছে,
হর্ণের আওয়াজ ভেসে এলো, নিচের দিক তাকাতেই বুকটা ধুক করে উঠলো, হাত দিয়ে ইশারা করছে রাহুল নিচে নেমে আসতে, উঠে ভেতরে এগিয়ে গিয়ে চুল গুলো মুচড়ে খোপা করে নিলো টেবিল থেকে নিয়ে চশমাটাও পড়ে নিলো, যাতে রাহুল আজ স্নেহার চোখ পড়তে না পারে, গায়ে শাল মুড়িয়ে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো, বাকিরা তাকিয়ে আছে স্নেহার চলে যাওয়া!

গেইটের দিক পৌছাতেই হার্টবিট বেড়ে চলছে স্নেহার, কেনো হচ্ছে আজ এমন?..হয়তো ভালোবাসার উপভোগটা আজ আরো বেশী করেই মায়া ছড়িয়ে দিচ্ছে, ধীরেধীরে রাস্তা পাড় হয়ে রাহুলের কাছে গিয়েই দাঁড়ালো স্নেহা!

রাহুল : ওহ নো স্নেহা! আমার সামনে এভাবে চুল বেধে এসো না, তোমাকে তখন এত্তো কিউট লাগে!

– এক সেকেন্ড [ স্নেহার কপালে হাত দিয়ে ] তুমি কি সি্ক?..

স্নেহা : [ রাহুলের হাত সরিয়ে দিয়ে ] নাহ!

রাহুল : [ স্নেহার নাক টেনে দিয়ে ] কেঁদেছো মনে হচ্ছে!

স্নেহা : ঠা..ঠান্ডায়!

[ রাহুল আর কিছু বললো না চেয়ে আছে স্নেহার দিক, স্নেহা ও চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, শীতের সন্ধ্যাবাতাস গায়ের সাথে মিশে যাচ্ছে, স্নেহার মুখের সামনে পড়ে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো ও বাতাসের সাথে খেলছে, দু-হাত একসাথে মোচড়ামোচড়ি করছে স্নেহা! নাক,ঠোট, গাল সবই লালচে হয়ে আছে, সবশেষে রাহুলই নিরবতা ভাঙলো ]

রাহুল : স্নেহা! তুমি ঠিকাছো?..

স্নেহা : হ্যা! ঠিকাছি, [ চোখ পানিতে ঝাপসা হয়ে আসছে স্নেহার ] আপ..আপনি প্লিজ আপনার গাড়ীর লাইটটা বন্ধ করবেন?..

রাহুল : লাইট?..ওখেই [ লাইট বন্ধ করে স্নেহার কাছে এগিয়ে দাঁড়ালো ]

স্নেহা : [ একটু পিছিয়ে দাঁড়িয়ে ] আ..আমি বলেছিলাম আপনাকে কিছু দেওয়ার ছিলো!

রাহুল : ও হ্যা!

স্নেহা : আমি এটা দেওয়ার পর প্লিজ আমার থেকে আর কিছুই জিজ্ঞেস করবেন না! [ রাহুল অবাক হলো স্নেহার কথায় তাও আর কোনো প্রশ্ন করলো না, চুপ করে তাকিয়েই রইলো স্নেহার দিক, কিছুক্ষণের মধ্যেই রাহুল যা দেখতে পাচ্ছিলো তা রাহুল নিজেকে বিশাস করাতে পারছে না, সে কি সপ্ন দেখছে নাকি বাস্তবেই এটা ঘটছে ]

[ রাহুল পড়িয়ে দেওয়া স্নেহার আংগুলের রিংটি খুলে স্নেহা গাড়ীর বনাটের উপর রেখে দিলো ]

স্নেহা : আমাদের এইখানেই থেমে যাওয়া উচিৎ রাহুল!

রাহুল : অও! এতোটা সহজ তোমার জন্য স্নেহা?…

[ স্নেহা কিছু বললো না,রাহুল চমকেই আছে, স্নেহার চেহেরার দিক তাকিয়ে দেখলো স্নেহা মাথা নিচু করে আছে, গাল বেয়ে চোখের জল গড়িয়ে পড়ছে তাড়াহুড়ো করে মুছেই ফেললো জল গুলো, এবার বুঝতেই পারলো রাহুল গাড়ীর লাইট কেনো বন্ধ করতে বললো, যাতে রাহুল তার চোখের পানি দেখতে না পাই! স্নেহার নিস্থব্দতাই রাহুলের বুকের পাঁজরটা আরো দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে, যেনো কেউ ছুড়ি মেরে বের করে ঐ ক্ষতের উপর আবারো আঘাত করতে লাগলো ]

রাহুল : [ মনের কষ্ট মনেই চেপে রেখে রিংটি নিজের হাতে তুলে ধরে বলে উঠলো ] আমি জানি সামির তোমার বাবাকে আমার আর নেহার ছবি গুলো পাঠিয়েছে, [ স্নেহা শকড হয়ে তাকালো ]

রাহুল : উমহুম! অবাক হবানা.. আমি তোমার সাথেই আছি, আমি সবদিকই আছি, যে দিকটা তুমি কল্পণা ও করতে পারবা না আমি সেইদিকটা ও আছি!

– সামিরের কথা পরে আসছে, তবে তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি! [ স্নেহা ওড়নার আচলের কোণা ধরে মুচড়ামুচড়ি করছে ]

রাহুল : হ্যা! এটা আশা করেছিলাম ছবি গুলো দেখে তোমার বাবার ধারণা আমার জন্য এই রুপটাই হবে, তবে স্নেহা তুমি?..তুমিতো জানোই সব! [ স্নেহা আর কিছু বললো না তাড়াহুড়ো করে রাস্তা পাড় হতে লাগলো, রাহুল চেয়ে আছে, ]

হঠাৎ, গেইটের দিক পৌছাতেই বিকটভাবে কাচ ভাংগার শব্দ ভেসে এলো কানে, পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে রাহুলের হাত বেয়ে টপ-টপ করে রক্ত ঝড়ছে

স্নেহা : [ দৌড়ে এগিয়ে এসে, চেঁচিয়ে উঠে ] আজিব? পাগল নাকি আপনি?..বাচ্চাদের মতো কান্ড করছেন! [ বলেই ওড়না দিয়ে রাহুলের হাতটি পেছিয়ে দিতে লাগলো ]

রাহুল : স্নেহা আমার দিক তাকাও! তুমি পারবা আমাকে ভুলে থাকতে?..[ স্নেহা কোনো জবাব দিচ্ছে না ওড়না পেছাতেই ব্যস্ত ]

রাহুল : স্নেহা! আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি!

স্নেহা : কাচ হাতে ঢুকেছে কিনা কে জানে! কিসব করেন না আপনি!

রাহুল : [ নাক ফুলিয়ে ঝাড়া মেরে স্নেহা থেকে তার হাতটি ছুটিয়ে নিয়ে ] আমাকে জবাব দাও স্নেহা!

[ স্নেহা মাথা নিচু করে রাহুলের হাতটা আবার এগিয়ে নিয়ে ওড়নাটা ভালো করেই পেছিয়ে দিতে লাগলো, রাহুল রেগে হাতটা আবার টেনে নিয়ে স্নেহার দিক এগুতেই স্নেহা পিছিয়ে যায় ]

রাহুল : [ দাতকিলিয়ে ] কামঅন স্নেহা স্টপ দিস্ ননসেন্স! আমার প্রশ্নের জবাব দাও!

স্নেহা : দিলামই তো জবাব! [ রাহুলের হাত তুলে ধরে রিংটির দিক দেখিয়ে ] আমার জবাব!

রাহুল : [ মাথা নাড়িয়ে ] ওখে! [ বলেই স্নেহার হাত টেনে নিয়ে রিংটি আবার পড়িয়ে দিলো ]

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] রাহুল কি করছেন আপনি!

রাহুল : রিংটির জায়গা যেখানে ঐখানেই বসিয়ে দিলাম!

স্নেহা : কিন্তু এটা সম্ভব না রাহুল!

রাহুল : [ টান দিয়ে স্নেহার চোখ থেকে চশমাটা খুলে, চোখের নিচ থেকে পানি গুলো আঙুল দিয়ে কুড়িয়ে নিয়ে ] তাহলে এসব?.

স্নেহা : [ মাথা নিচু করে ] হয়তো চোখে কিছু পড়েছে!

রাহুল : তাই?..তাহলে আমার চোখের দিক তাকিয়ে জবাব দাও!

স্নেহা : আপনার চোখের দিক কেনো তাকাবো, আপনি এমনিতেই রেগে আছেন আমার আরো ভয় লাগবে!

রাহুল : বাহানা বানানো বন্ধ করো স্নেহা!

স্নেহা : আমি বাহানা বানাচ্ছি না!

[ রাহুল হাত মুঠি করে চেপে স্নেহা থেকে সরে দাঁড়ালো, ফুফাতে লাগলো এদিকওদিক তাকিয়ে, স্নেহা মাথা নিচু করে ঐদিকটাই ভীতু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, রাগ কন্ট্রোল করে স্নেহার কাছে আবার এগিয়ে এসে দাঁড়ালো! ]

রাহুল : যখন ভালোবাসার সাহস চোখ উঠিয়ে দেখে, তখন ভয় ও মাথা ঝুকিয়ে নেই স্নেহা!

– [ স্নেহার হাত ধরে ] চলো স্নেহা! আমার হাত ধরে, আমার সাথেই!

স্নেহা : রাহুল! আপনার হাতে ব্লিডিং হচ্ছে!

রাহুল : বলো স্নেহা! যাবা?.. আ..আমার সাথে!

স্নেহা : [ রাহুলের হাতের দিক চেয়ে থেকে কাদো কন্ঠে ] ব্যান্ডেজ করে নিবেন!

রাহুল : [ কাদো ভাবে ] কেনো করছো এমন স্নেহা! আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে!

স্নেহা : কা..কাচ ঢুকেছে কিনা চে..চেক করে নিবেন!

রাহুল : কিছুতো বলো স্নেহা! প্লিজ!

স্নেহা : চে..চেক না করলে! পড়ে ইনফেকশন হয়ে যাবে! [ বলেই মুখ চেপে ফুফিয়ে কেঁদে দৌড়ে চলে যায়, রাহুল আহ্লাদী চোখে তাকিয়ে থাকে স্নেহার নিশ্চুপ হয়ে চলে যাওয়া, চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে রাহুলের, ধীরেধীরে গাড়ীতে উঠে বসলো, কিছুক্ষণ থমকে বসে রইলো, হাতের দিক তাকাতেই স্নেহার মুড়িয়ে দেওয়া ওড়নাটা চোখে পড়লো, নাকের কাছে এনে স্মেল নিলো কিছুক্ষণ, হঠাৎ ফুফিয়ে কেঁদে মুখের মধ্যে চেপে ধরলো ওড়নাটা ]

রাহুল : [ কান্না কন্ট্রোল করে মনে মনে ] আমার তাকদীর বলেছে আমি থুফান থেকে বাচতে পারবো না, বাট স্নেহা! আমি ও তাকদীরকে দেখিয়ে দিবো

– থুফান তো আমি নিজেই! [ বলেই গাড়ী স্টার্ট দিয়ে বেড়িয়ে পড়লো ]
________________________________

[ স্নেহা চোখ-নাক মুছে, ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করতে লাগলো, পেছন মুড়তেই দেখে, তার ফ্রেন্ডসরা তাকিয়ে আছে, শালটা টেবিলে ছুড়ে ফেলে ওয়াসরুমে ঢুকে পড়লো, দরজা আটকে ফুফিয়ে কেঁদে উঠলো, দু-হাত মেলে তাকিয়ে দেখলো, রাহুলের রক্ত গুলো হাতে শুকিয়ে মিশে গেছে, রিংটিও আজ অতিরিক্ত ঝলমলে দেখাচ্ছে ]

নিস্থব্ধতা আর বেখেয়ালি মনোভাব,নির্ঘুম এবং নিস্ব হয়ে দুজনের দু-ভাংগা দুটি মন, বেইমান রাতটি পার করিয়েই দিলো…

পরদিন ভার্সেটিতে গেলো, মনমরা হয়েই ঢুকছিলো সবাই, পার্কিং এর দিক তাকাতেই দেখে রিদোয়ান আর আসিফ বসে আছে গাড়ীর দরজা খোলা রেখে, আর রাহুল গাড়ীর বনাটের উপর এক পা বটে শুয়ে আছে, মুখের উপর কেপ দিয়ে ঢেকে রেখেছে, স্নেহা এসেছে ঠের পেয়ে আড়চোখে তাকিয়ে রইলো, কিন্তু কোনো রিয়েক্ট করলো না,

রিদোয়ান এগিয়ে আসছে, স্নেহা, মার্জান, শায়লা তিনজনই ক্লাসের দিক চলে গেলো,

জারিফা : আপনারা মারামারি কেনো করলেন?.. আর এসব কি হয়েছে আপনার কপালে?..মার দিতে গিয়েছিলেন নাকি উল্টা খেয়ে এসেছেন!

রিদোয়ান : আরে কপালের এটা রাহুলের মার খেয়েছি!

জারিফা : [ অবাক হয়ে ] আপনি কার দলে ছিলেন!

রিদোয়ান : [ হেসে ] রাহুলকে থামাতে গিয়ে বাড়ি খেয়েছিলাম!

জারিফা : [ হেসে ] ওহ!

রিদোয়ান : হ্যা! হাসো!

জারিফা : [ মুখ গোমড়া করে ] জানেন!স্নেহা এসব জানলে আবার কষ্ট পাবে?…

রিদোয়ান : আরে জারিফা কষ্ট পাওয়ার কি আছে?..ঐ সামিরের কারণেই ওদের দুজনের আলাদা হতে হচ্ছে! আর তুমি না বললে স্নেহা জানবে না! ব্যাস!

– আজও ভার্সেটি এসেছে স্নেহার প্রটেক্ট এর জন্য! বললাম আমরা আছি, তাও মনকে শান্তি দিতে পারছে না চলে এলো,

জারিফা : স্নেহার টেনশন এটাই মারামারি করতে গিয়ে রাহুলের না কিছু হয়ে যায়,

রিদোয়ান : আচ্ছা! ট্রু লাভার কাকে বলে জানো?..

জারিফা : হয়েছে হয়েছে! ব্যাস! আব.. রাহুল ঠিকাছে! এখন?..

রিদোয়ান : ওর আর কি? কাল রাত থেকেই তো বললাম দেবদাস হয়ে আছে!
– দেখো তুমিও আবার আমাকে দেবদাস বানিয়ে দিয়ো না কিন্তু!

জারিফা : কিসব আজেবাজে কথা বলেন! যাচ্ছি আমি ক্লাসে!

রিদোয়ান : [ হেসে ] ওকে যাও!
________________________________

ভার্সেটি ছুটির পর,

মার্জান : আচ্ছা স্নেহা! চল আমরা আজ কোথাও ঘুরে আসি!

স্নেহা : তোরা যা আমার ভালো লাগছে না! [ সবাই বুঝতে পারলো কেনো ভালো লাগছে না, তাই আর কি করার বেড়িয়েই যাচ্ছে স্নেহার সাথে সাথে, পার্কিং এর দিক এসেই স্নেহা থেমে গেলো, পাশ মুড়ে তাকাতেই দেখে রাহুলকে যেমনটা দেখে গেছে এখনো তেমনিভাবে শুয়ে আছে, মুখের উপর কেপটাও ঐপজিশনে দিয়ে রেখেছে এখনো, হাতের দিক তাকিয়ে লক্ষ্য করলো, যা ভাবলো তাই হলো, ব্যান্ডেজ করেনি, চোখ থেকে পানি পড়ছে স্নেহার, বুঝতে পারলো রাহুল রেগে নিজেকেই কষ্ট দিচ্ছে ]

মার্জান স্নেহার কাধে হাত রাখলে, স্নেহা চোখ মুছে হনহনিয়ে গেইট দিয়ে বেড়িয়ে পড়ে,

বাসায় এসে ব্যাগ কাধ থেকে রেখে বারান্দায় এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলো, মার্জান ও স্নেহার পাশে এসে দাঁড়ায়!

মার্জান : ফিরিয়েই তো দিয়েছিস তাহলে আবার কাঁদছিস কেনো?.. [ স্নেহা নিস্থব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ]

মার্জান : আমি জানি ভুলতে পারবিনা! কিন্তু ভোলার অভিনয় করে যাচ্ছিস!

স্নেহা : আমাকে একটু একা থাকতে দে…[ বলেই ভেতরের দিক চলে যায়, মার্জান ও কি আর করার জোড়ে একটি শাস ফেলে আশেপাশে তাকাতে লাগলো, ভাবছে, থাক কিছুক্ষণ একা থাকলে মনটা ফ্রেশ হয়ে যাবে, হঠাৎ ভেতর থেকে জারিফা আর শায়লা স্নেহা! বলে চেঁচিয়ে উঠার শব্দ এলো, তাড়াহুড়ো করে ভেতরে এগিয়ে গেলেই দেখে, স্নেহা মাঠিতে পড়ে আছে ]

মার্জান : [ শকড হয়ে ] আরে! কি হয়েছে!

শায়লা : হয়তো মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে গেছে, স্নেহা! তুই ঠিকাছিস?..

স্নেহা : [ মাথা চেপে ধরে উঠে বসলো ] হ্যা! আমি ঠিকাছি! [ বলেই উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো, বাকিরা ও ধরে হেল্প করলো উঠে দাড়াতে ]

মার্জান : এতো স্ট্রেস নিলে এমন হবেই স্নেহা!.. চল শুয়ে রেষ্ট কর!

স্নেহা : আ..আমি আসছি..একটু বেরুবো!

শায়লা : আরে এই অবস্থায়?..

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] ও আমার উপর রেগে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছে শায়লা! ওকে বলেছি কাল রাতে যেনো ব্যান্ডেজ করে নেই! নয়তো ইনফেকশন হয়ে যাবে,

মার্জান : [ স্নেহাকে নাড়িয়ে দিয়ে ] রিলেক্স স্নেহা! শান্ত হো!

স্নেহা : [ চোখ মুছে ] আমি ঠিকাছি! [ বলেই ব্যাগটা কাধে নিয়ে দরজা খুলে বেড়িয়ে যাচ্ছে ]

মার্জান : স্নেহা! তুই একা এই অবস্থায় কোথায় যাচ্ছিস?..

স্নেহা : বললাম তো ঠিকাছি! তোরা টেনশন করছিস কেনো?..

মার্জান : কিন্তু স্নেহা!

স্নেহা : প্লিজ মার্জান! [ বলেই বেড়িয়ে গেলো ]

শায়লা : টেনশন করিসনা! হয়তো রাহুলের কাছেই যাচ্ছে!

মার্জান : কিন্তু শায়লা ওর শরীরের অবস্থা দেখলি?..

শায়লা : আমাদের ওকে বাধা দেওয়া উচিৎ না এখন! ও যেহেতু রাহুলের কাছেই যাচ্ছে!

মার্জান : হুম!
________________________________

রাহুলের বাসার উদ্দেশ্যই স্নেহা বেড়িয়ে পড়লো, বাড়ীর সামনে এসে পৌছাতেই চোখ মুছে নিজেকে স্ট্রং করে নিলো, ধীরেধীরে গেইট দিয়ে ঢুকতেই রাহুলের গাড়ী দেখতে পেলো মনে শান্তি এলো তারমানে রাহুল বাড়ীতেই আছে! ঘরের দরজার সামনে এসে দাঁড়াতেই মনটা ছটফট করছে! বেল দিতে সাহস হচ্ছে না স্নেহার! বুকটাও কাঁপছে! কিন্তু কেনোই বা পারছে না রাহুল থেকে দূরে থাকতে, রাহুল কষ্ট পাবে সেটাও তো সে চাইনি!

[ দিয়েই দিলো বেল, পাচ-ছয়বার বাজালেও দরজা খুললো না, হঠাৎ স্নেহা লক মোচোড় দিতেই দেখে দরজাটা খুলে গেলো, ভেতরে ঢুকতেই দেখে সব জিনিষ ভেংগে চুরমার হয়ে এলোমেলো ভাবে চারদিক ছিটে আছে ]

হেটে ভেতরে এগিয়ে গিয়ে চারদিক চোখ বুলিয়ে সোফার দিক তাকাতেই দেখে রাহুল সোফায় শুয়ে আছে,

স্নেহা : [ রাহুলের দিক এগিয়ে গিয়ে ] রাহুল! কি হয়েছে আপনার?.. আপনি ঠিকাছেন?…

রাহুল : [ মাতাল অবস্থায় স্নেহার মুখে স্লাইড করে ] কেনো এসেছো স্নেহা! আমার তো সব শেষ হয়ে গেছে!

স্নেহা : [ কাদো কন্ঠে ] আপনি আবার ড্রিংক্স করেছেন?…

রাহুল : [ হেসে ] সবাই ছে..ছেড়ে চলে গেছে! ও যায়নি! [ বলেই বোতোলটা আবার এগিয়ে নিতে লাগলো ]

স্নেহা : [ বোতোল সরিয়ে দিয়ে ] ব্যাস! রাহুল, অনেক খেয়েছেন আর না! আর আপনি হাতে ব্যান্ডেজ করেননি কেনো?..বললাম না ইনফেকশন হয়ে যাবে! [ বলেই উঠে ভেতরে গিয়ে ফার্ষ্ট এইড বক্সটা এগিয়ে আনলো, রাহুল উঠে বসলো, স্নেহা মাঠিতে বসে হাত এগিয়ে নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে, সাথে চোখ বেয়েও গড়িয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে, রাহুল তাকিয়ে রইলো একপলকে, হঠাৎ কিছুক্ষণ পরে স্নেহা থেকে হাতটা টেনে নিয়ে ফার্ষ্ট এইড বক্সটা লাত্তি দিয়ে সরিয়ে স্নেহাকে তুলে দাড় করিয়ে নেই ]

স্নেহা : [ অবাক হয়ে ] রাহুল! কি হলো?

রাহুল : [ চেঁচিয়ে ] কি ফাইদা এসবের স্নেহা?..কি হবে এই শরীর সুস্থ রেখে যখন ভেতরের আত্মাটাই জলে যাচ্ছে!

[ স্নেহা মাথা নুয়ে চুপ করে রইলো ]

রাহুল : যখন তুমি চুপ থাকো স্নেহা! তখন তোমার নিশ্চুপ চেহেরায় সব বলেদে! [ বলেই বোতোলটা এগিয়ে নিয়ে কয়েকঢোগ খেয়ে রাগান্বিত ভাবে পাশে ছুড়ে ফেলে হনহনিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো, গাড়ীর দিক এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুললো, হঠাৎ আবার স্নেহার কথা মনে পড়তেই দরজা লাগিয়ে ফুফিয়ে কেঁদে উঠে ]

[ এইদিকে স্নেহা ও কান্নায় ভেঙে মাঠিতে বসে পড়লো! আশেপাশে তাকাতেই সব সৃথি ভেসে উঠছে চোখের সামনে, মনে মনে ভাবছে স্নেহা, যদি রাহুলই তার একটা অপশন হতো! ]

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে