খেলাঘর/পর্ব-৩৬

0
2551

খেলাঘর/পর্ব-৩৬
লেখা-সুলতানা ইতি

যাক ভাভা এমন করলো কেনো,নিজেই সেধে গাড়িতে উঠতে বল্লো নিজেই নামিয়ে দিলো এখন তো কোন রিক্সা পাবো না হেটেই যেতে হবে

মিথিলা হাটছে আন মনে
হাটতে হাটতে বাসার সামনে প্রায় চলে এসেছে এমন সময় হঠ্যাৎ কোথা থেকে ইভান এসে মিথিলার সামনে দাড়ালো

মিথিলা প্রথমে ভয় পেয়ে যায়,তার পর নিজেকে সামলে নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে গেলে ইভান পিছন থেকে মিথিলার হাত টেনে ধরে
– যেয়েও না মিথি প্লিজ আমার কথা শুনো

মিথিলা খুব রেগে যায়, হাত ছাড়ুন, নইলে আমি চিৎকার করবো

ইভান- ওকে যাও হাত ছেড়ে দিলাম আমার কথা টা তো শুনো

মিথিলা- কি কথা শুনবো আপনার,আদৌ কি আপনার কোন কথা বলার আছে?আর থাকলে ও আমাকে বলার মতো মুখ রাখেন? যখন চলে এসেছি আপনাকে ছেড়ে তখন তো একটি বারের জন্য ও এসে বলেন নি – ফিরে চলো
এখন যেই ধোকা খেয়েছেন অমনি ভালোবাসা উপছে পড়ছে আমার জন্য, আসলে আপনি ভবের পাগল যখন যে দিকে স্বার্থ টান দেয় সে দিকেই যান, এখন আপনার দরকার হয়েছে আমাকে তাই আমার পিছনে ছুটছেন,কিন্তু না আপনার প্রয়োজন নিয়ে তো আমার জীবন চলতে পারে না,প্লিজ আর কখনো ও আমার পথ আগলে দাড়াবেন না
মিথিলা এক দমে কথা গুলো বলে শেষ করে দূর্ত পা ফেলে হেটে চললো

ইভান থ হয়ে দাঁড়িয়ে মিথিলার চলে যাওয়া দেখছে আটকানোর কোন পথ নেই
মিথি আমি যে ভুল করেছি জানি তার ক্ষমা হয় না, কিন্তু আমি তোমার কাছে থেকে এই ইগনোরেন্স নিতে পারছি না প্লিজ মিথি ফিরে এসো,শুধু তুমি ই পারো আমার আগের সে হাসি খুশি পরিবার টা ফিরিয়ে দিতে
ইভান রাস্তার মাঝখানে বসে পড়ে হেটে গিয়ে গাড়িতে উঠার মতো শক্তি যেন তার নেই

নির্ঝরিণী এখন গান শিখতে যায়, নির্ঝরিণী গানের মাস্টার বলে দিয়েছে নির্ঝরিণীর আর গান শেখার দরকার নেই, এবার সে চাইলে গানে অ্যালবাম বের করতে পারবে
কিন্তু অ্যালবাম বের করতে প্রথমে অনেক টাকা ইনবেষ্ট করবে হবে ওতো টাকা নির্ঝরিণীর নেই তাই সে অ্যালবামের চিন্তা মাথা থেকে বাদ দিলো
কিন্তু আয়াপ বলেছে তার ভিবিন্ন শো তে নির্ঝরিণী কে সাথে যেতে এ ভাবেই একদিন নির্ঝরিণী গানের জন্য সবার কাছে পরিচিত হয়ে যাবে

এর মাঝে ওদের এস,এস,সি এক্সামের রেজাল্ট বের হয়, আয়ান নির্ঝরিণী দুজন ই ভালো রেজাল্ট করে
মিথিলার আজ আনন্দের শেষ নেই তার কষ্ট কিছু টা হলে ও স্বার্থক হয়েছে

মিথিলা ভাই বোনদের ভালো একটা কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়,দুজনের পড়া শুনা ভালো ই চলছে

আমার রাজ কুমারী স্বপ্ন চারিণী আমার প্রিয়া আমার বাঁম পাজরের হাড়, কবে যে তোমায় পাবো?মন টা আকুলি বিকুলি করছে খুব তুমি নিশ্চয়ই আমার কথা ভাবছো, আমি জানি তুমি আমায় না দেখে থাকতেই পারো না কিন্তু কি করবো বলো,আপু কে আমার বড্ড ভয় হয়, আপুর নজরে পড়লে তোমাকে পাওয়া এই জনমে হবে না, জান মিস করছো আমায় খুব তাই না,শুনো তুমি চোখে কাজল দিও না তোমার ঐ কাজল কালো চোখ দেখে যে আমি খুন হয়ে যাই, ভালোবাসি তোমায় জানু
তুমি তো আলাদা কলেজে পড়ছো দেখো কারো প্রেমে পড়ো না আবার, তোমায় এত্তো গুলো ভালোবাসি
ইতি
তোমার আয়ান
তার পর কিছু কিস ইমোজি এঁকে চিঠি টা চার বাঁজ করে নির্ঝরিণী কে ডাকলো
আয়ান- নির এই চিঠি তা উতলা কে দিয়ে আসবি প্লিজ

নির্ঝরিণী দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বল্লো
– আমি কেনো তুই যা তোর চিঠি দিতে

আয়ান- যাস না রে, আপু দেখলে মেরেই ফেলবে আমায়

নির্ঝরিণী – তা এই ডিজিটাল যুগে যোগাযোগের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি থাকতে চিঠি কেনো তুই বেছে নিলি

আয়ান- শুন যেই কথা গুলো মুখে বলা যায় না সে কথা গুলো শুধু কাগজে কলমে বুঝানো যায় তাই এই চিঠি,,

নির্ঝরিণী – ওকে তাইলে আমি আপু কে গিয়ে ব্যাপার টা জানাই

আয়ান- ঠিক আছে তা হলে আমাকে ও তোর আয়াপ খানের কথা আপুকে এবার বলতে হবে

নির্ঝরিণী – এই না না কি বলছি যাস্ট কিডিং আমার ভাইটা কিচ্ছু বুঝে না, আর শুন ভাই আয়াপ খান শুধু ই আমার একজন পার্টনার আর বেশি কিছু নয় তুই আবার কি ভাবছিস কে জানে

আয়ান- থাক শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না আমি সব বুঝি

নির্ঝরিণী – কচু বুঝিস

আয়ান- এই শুন না কবে বলবি উনাকে তোর মনের কথা

নির্ঝরিণী – ভাই উনার সাথে আমার যায় না,কোথায় উনি কোথায় আমি,

আয়ান- তুই তার থেকে কম কিসের

নির্ঝরিণী – থাক ভাই এই নিয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না, যাই উতলা আপু কে চিঠি টা দিয়ে আসি
নির্ঝরিণী চলে যায়

নির্ঝরিণী এখন ছোট খাটো কোন শো হলে আয়াপের সাথে যায়,নির্ঝরিণীর গানের গলা এখন অনেকের ই পছন্দ, আয়াপ বল্লো
– কোকিলা তুমি একটা গানের অ্যালবাম বের করো যা খরচ লাগবে তা আমি দিবো

নির্ঝরিণী – না মিঃ আয়াপ আপু এটা ভালো চোখে দেখবে না,, আমি যে আপনার সাথে ভিবিন্ন শো তে আসি এটা আপু কে বলি না
আপু শুনলে খুব বকবে

আয়াপ – তোমার আপু এমন কেনো? একটা রাশ ভারি মানুষ

নির্ঝরিণী – আমার আপু খুব ভালো, আপনি আমার আপুর সাথে কথা বল্লেই বুঝতে পারতেন

আয়াপ বিড় বিড় করে বল্লো
– হুম হবু বড় বোনের সাথে তো দেখা করতেই হবে

নির্ঝরিণী – হুম কিছু বললেন

আয়াপ- না কিছু বলিনি
নির্ঝরিণী আর কিছু বল্লো না, লজ্জা পেয়ে মুখ নিচু করে ফেল্লো

মিথিলা তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে আজ লেইট হয়ে যাবে অফিসে পৌছতে, তাই তাড়া তাড়ি একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়লো

– এই মিথিলা কোথায় যাচ্ছিস

মিথিলা পাশে ফিরে দেখলো রাহি কে

মিথিলা- আরেহ রাহি তুই

রাহি- হুম নাম রিক্সা থেকে কথা আছে তোর সাথে

মিথিলা- আমার অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে রে,

রাহি- একদিন দেরি হলে কিচ্ছু হবে না তুই অফিস ফোন করে দে আজ তোর আসতে লেইট হবে

মিথিলা রিক্সা থেকে নামতে নামতে বল্লো আর্জেন্ট কিছু বলবি

রাহি -হুম
রাহি আর মিথিলা একটা কফি শপে গিয়ে বসলো
রাহি- অরণি দেশে ফিরেছে

মিথিলা খুশি হয়ে বল্লো
– ওহ তাই আমি ইহানের খোজ জানি,এবার যে করেই হোক ওদের দুজন কে এক করতেই হবে

রাহি- ইহানের সাথে তোর দেখা হলো কোথায় ইহান কবে দেশে আসলো

মিথিলা- এসেছে অনেক দিন এখন সে আমার বসস আমি তার পি এ

রাহি – মানে বুঝিয়ে বলতো

মিথিলা সব কথা রাহি কে বল্লো
রাহি সব কথা শুনে বল্লো
– ওহ মাই গড ইহান আমার সাথে একটু যোগাযোগ করলো না

মিথিলা – তা হলে চল আজ তুই আমার সাথে যাবি অফিসে

রাহি- আজ না তোকে একটা কথা বলার ছিলো

মিথিলা- হুম বল,অরণি কোথায় আছে আগে সেটা বল

রাহি- হুম সেটাই বলছি শুন,অনেক দিন আগে তোকে বললাম না অরণি অসুস্থ

মিথিলা- হুম এখন ও ভালো হয়নি?

রাহি – অরনির ক্যান্সার

মিথিলা- হোয়াট

রাহি- হুম লাস্ট স্ট্রেজ ডাক্তার বলেছে আর এক মাস ও থাকতে পারে,আবার পনেরো দিন ও থাকতে আবার হয়তো তার ও কম সময়

মিথিলা চোখের চশমা টা খুলে টেবিলে রাখলো হারিয়ে গেলো স্মৃতির পাতায়

মিথিলা কোন ভাবে নিজেকে সামলে অফিসে এলো
ইহান- আজ এতো লেইট হলো যে তোর

মিথিলা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে বল্লো
আমি কি একটু বসতে পারি

ইহান মিথিলার অবস্থা দেখে বল্লো
– বস কিন্তু কি হয়েছে তোর মিথিলা তোর কি শরির খারাপ

মিথিলা- নাহ আমি ঠিক আছি, অর,অ,অর

ইহান- কি হয়েছে বল

মিথিলা- অরণি দেশে ফিরেছে মিথিলা কথা গুলো গলায় আটকে আসছিলো তবু ও কথা গুলো বল্লো

ইহান- হ্যাঁ তো এতে তোর এই হাল কেনো

মিথিলা- ইহান তুই না বললি তুই অরনি কে মৃত্যুর আগে ও ক্ষমা করবি না,সে তোর ক্ষমার পাওয়ার জন্য বসে থাকবে না রে

ইহান- মানে

মিথিলা- এতো হাসি খুশি প্রাণচঞ্চল মেয়েটা যে মরন ব্যাধি রোগে আক্রান্ত হয়ে এতো টা দিন হসপিটালে ছিলো আমরা কেউ কি তার খোজ রেখেছি

ইহান শান্ত গলায় বল্লো কি হয়েছে অরণির

মিথিলা- ক্যান্সার

ইহান আর কোন কথা বলতে পারলো নিস্তব্ধ হয়ে গেছে মনে হচ্ছে কথা গুলো বরফে আটকে গেছে

বেশ কিছু সময় পার হয়ে যাওয়ার পর ইহান কথা বল্লো
– অরণি এখন কোথায়

মিথিলা- ওদের বাসায়

ইহান- চল অরণির বাসায় যাবো তুই কি আমার সাথে যাবি

মিথিলা হুম চল

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে