হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-৭

0
2311

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-৭
#আরিশা অনু

-বাসায় এসে রুমে যেয়ে ইচ্ছা মত ভাংচুর করলাম।কি করে এত নোংরা কথা বললাম আমি অনুকে।ছিহ্ এখন নিজের প্রতি নিজেরি ঘৃনা হচ্ছে আমার।আর ওখানে তো শুধু রিসভ ছিলনা নিপা ও সাথে ছিল তারপর ও এতবড় কথা কি করে বললাম আমি ওকে।মেয়েটা খুব কষ্ট পেয়েছে।ও কাঁদছিল তখন চোখদিয়ে পানি পড়ছিল ওর তারপর ও ওর চোখের পানিতে আমার মন গলেনি। এত নিষ্ঠুর কি করে হলাম আমি।যে আমি অনুর চোখের জল সহ্য করতে পারতাম না সেই আমিই আজ কাঁদাচ্ছি ওকে।উহ্ হাতটা ও কেটে গেছে গল গল করে রক্ত বের হচ্ছে হাতদিয়ে।আচ্ছা এত কথা শোনানোর পরও আমায় এই অবস্থায় দেখেও কি অনু ঠিক থাকতে পারতো নাকি আবার আগের মত আমার ব্যাথায় কেঁদে ফেলতো….?

-কি যানি কি করছে মেয়েটা এখন খুব ইচ্ছে করছে ওর সাথে একটা বার কথা বলতে কিন্তু ওর ফোন নম্বর তো আমার কাছে নাই কি করি এখন।হুম পেয়েছি নিপার থেকে নম্বর নিয়ে ফোন দিলাম ওকে……!!!

-দুইবার রিং হয়ে কেটে গেল বাট ও ফোন ধরলো না উফ্ খুব অসস্তি হচ্ছে এখন। কি যানি পাগলিটা কি করছে।আগেতো একটু বকা দিলেই কেঁদে কেটে নাক ফুলিয়ে বসে থাকতো খেতে ও চাইতো কতো কষ্ট করে বুঝিয়ে সুজিয়ে খাইয়ে দিতাম ওকে।তবে কি আজ ও না খেয়ে নাক ফুলিয়ে বসে আসে আমার পাগলি টা….?

-বাসায় আসার পর থেকে অনুর চিন্তায় আমার ঘুম হারাম হয়ে গেছে।ঐ ঘটনার পর রাগ করে কানাডা চলে গিয়েছিলাম।এত বছর বাইরে থেকে দেশে এসেই যে অনুকে দেখতে পাবো সত্যি যানতাম না আমি।ঘুমিয়ে যাওয়া অনুভূতি গুলো যেন আবার নতুন করে জাগ্রত হতে শুরু করেছে।কেন এমন সুখের সংসারে আগুন লাগালে তুমি।কোন সুখ টার অভাব রেখেছিলাম আমি না চাইতেই তোমার সব চাওয়া পাওয়ার খেয়াল রেখেছি আমি।হাজার ব্যস্ততার মাঝে ঘুরতে নিয়ে গেছি, সময় দিয়েছি, গাড়ি,বাড়ি কোনাটার কমতি কি রেখেছিলাম আমি?তারপর ও কেনো ঐ ছেলেটার সাথে তুমি…উহ্ দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার আবার।আবার মাথার রক্ত রাগে তগবগ করে ফুটতে শুরু করেছে।নাহ্ কিছুতেই তোমায় সুখে থাকতে দেবনা আমি।এতগুলো বছর যে যন্ত্রনার মাঝে ডুবে আছি আমি এখন থেকে তার দ্বিগুন যন্ত্রনা তোমায় দেব অনু তৈরি থেকো….!!!(রোহান)

-আম্মু আম্মু তোমার ফোন কে যেন ফোন দিছিলো আমি ধরার আগেই কেটে গেলো।আচ্ছা সোনামা কই দেখি কে ফোন দিল।বারান্দায় বসে রোহানের বলা কথা গুলো মনে মনে আওড়াচ্ছিলাম তখন ই রুহি ফোন নিয়ে আমার কাছে আসলো।একটা অচেনা নম্বর থেকে দুইবার কল এসছে কে যানি কে ফোন দিল আবার।ভাবনা বাদ দিয়ে উঠে পড়লাম। মাগরিবের আজান দিচ্ছে চারদিকে তাই উঠে অজু করে এসে নামাজ পড়ে নিলাম।নামাজ শেষ করে এসে রুহিকে পড়াতে বসলাম।(অনন্যা)

-আম্মু যানো স্কুলে আমার অনেক ফ্রেন্ড হয়েছে আজ। সবাই অনেক ভালো।আর রুফাইদা তো আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ও আমার পাশে বসেছিল আজ।আমায় চকলেট ও দিয়েছে। যানো ওর বাবা এসেছিল ওকে নিতে। আমায় অনেক আদর করেছে আঙ্কেল।আচ্ছা আম্মু সব বাবারা কি এমন করে আদর করে..?আচ্ছা আমার বাবা আমায় আদর করেনা কেনো আম্মু…..?(রুহি)

-রুহির কথায় আম্মু আমি দুজনেই কেঁদে ফেললাম।আজ আমার বাচ্চাটার বাবা থেকেও নেই। না যানি আমার সোনাটা কে আর কতদিন বাবা ছাড়া থাকতে হবে।কেনো রোহান কেনো সত্যিটা না জেনে আমায় ভুল বুঝলে? তোমার অনুর উপর এটুকু ভরষা কি ছিলনা তোমার?তারপর কোনো রকম চোখ মুছে রুহিকে বললাম সোনামা তুমি যেদিন বড় হবে নিজের পায়ে দাঁড়াবে সেদিন তোমার বাবা নিজে এসে তোমায় নিয়ে যাবে। এখন পড়ায় মন দাও তো বাবু…!(অনন্যা)

-তারপর রুহির পড়ানো শেষ করে ওকে খাইয়ে দিলাম আর নিজেও খেয়ে নিলাম।টুকটাক কাজগুলো গুছিয়ে আম্মুকে মেডিসিন দিয়ে রুমে আসলাম।রুমে এসে দেখি রুহি শুয়ে পড়েছে তাই আমিও পাশে শুয়ে পড়লাম।

-সকালে নামাজ পড়ে আম্মুকে রান্নায় একটু হেল্প করে রেডি হয়ে নিলাম। কারন আজ আবার লেট হলে হাজার টা কুকথা শোনাবে রোহার আমায়।তাই রুহিকে নিয়ে সকাল করেই বেরিয়ে পড়লাম।
আসার সময় বাড়ি ওয়ালা আন্টির সাথে দেখা হলো ওনাকে সালাম দিয়ে ভিতরে যেতে বলে আমি রুহিকে নিয়ে বেরিয়ে আসলাম।

-রুহিকে স্কুল এ দিয়ে আমি অফিসে চলে আসলাম।আজ নয়টা বাজার পাঁচ মিনিট আগেই এসে পৌছে গেছি।আমায় দেখে নিপা আর রিসভ এগিয়ে আসলো….!!(অনন্যা)

-স্যরি অনন্যা কাল আমাদের জন্য না জানি স্যার কি কি শুনিয়েছে তোমায়।পরে যে স্যরি বলবো তার আগে তুমি চলে গিছিলে তাই আর বলা হয়নি(নিপা,রিসভ)

-ইটস্ ওকে গাইজ এত চাপ নেওয়ান কিছু নাই বাদ দাওতো।কখন আসছো তোমরা। (অনন্যা)

-এইতো একটু আগে এসে পৌঁছালাম।( নিপা)

-আচ্ছা তোমরা কথা বলো আমি কেবিনে যাই নয়তো ষাড়টা এসে আবার ঝাড়ি দেবেনে আমায়।(অনন্যা)

-হা হা হা ভালো নাম দিয়েছো লাল কচ্ছপ আর ষাড়। স্যার শুনলে তোমার সাথে সাথে আমাদের ও বারোটা আট বাজাবে(রিসভ)

-বারোটা আট শুনে আবার সবাই একসাথে হেসে উঠলো তখন ই রোহান অফিসে এসে ঢুকলো আর ওদের হাসতে দেখে ফেললো।তবে আজ কিছু না বলে সোজা ওর কেবিনে চলে গেল।

-বাপরে ষাড়ের নাম করতে করতে হাজির তোমরা থাকো আমি যাই নয়তো আবার আমার চৌদ্দটা বাজাবে।তারপর ওদের রেখে কেবিনে চলে আসলাম আর কাজে মন দিলাম….!!(অনন্যা)

-কাল এতকিছু বলার পর ও আজ আবার ঐ ছেলেটার সাথে হাসাহাসি করছে। মেজাজ টা খারাপ হলেও মুখে সেটা প্রকাশ করলাম না সোজা রুমে চলে আসলাম।দাঁড়াও তোমার পাখা গজানো বার করছি আমি আজ।তারপর ওকে ফোন দিয়ে আমার কেবিনে আসতে বললাম…!!(রোহান)

-উফ্ দুমিনিট আসতে না আসতে ডেকে পাঠিয়েছে।যদি সাধ্য থাকতো তাহলে আর কখনোই ওর অফিসে আসতাম না।তারপর ভাবাভাবি বাদ দিয়ে ওর কেবিনের দরজায় যেয়ে নক করলাম….!!!(অনন্যা)

-এসে গেছে মহারিনী আজ তোমার কপালে শনি বিরাজ করবে।সব পাখা যদি না ছেটে দিয়েছি না তো আমার নাম ও রোহান খান না। তারপর ভাবনা বাদ দিয়ে ওকে ভেতরে আসতে বললাম…(রোহান)

-স্যার কিছু বলবেন….? (অনন্যা)

-ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বুকের ভেতর টা মোচড় দিয়ে উঠলো। তখন আসার সময় খেয়াল না করলেও এখন ওর ফোলা চোখ মুখ বলে দিচ্ছে যে কাল খুব কেঁদেছে ও ।তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম ইয়েস মিসেস অনন্যা ডেকেছি।আগে থেকে আনিয়ে রাখা দশটা ফাইল ওকে দিয়ে বললাম আজকের মধ্যে এই কাজগুলো করে দেবেন আমায়…!!!(রোহান)

-এতগুলো ফাইল একসাথে দেখে মাথার ভেতর চক্কর দিয়ে উঠলো আমার। ওর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি আর দিন তো দূরে মরুক রাত বারোটা পার হয়ে যাবে এত ফাইল দেখতে দেখতে এগুলো ভাবছিলাম তখন ও ডেকে উঠলো…!!!(অনন্যা)

-মিসেস অনন্যা আপনি কি সারাদিন হা করে দাঁড়িয়ে থাকবেন নাকি এবার কাজ করবেন…?(রোহান)

-শয়তান,বন বিড়াল,টিকটিকি,অক্টোপাস, কুমির মনে মনে এক ঝুড়ি গালি দিয়ে ফাইলগুলো নিয়ে চলে আসছিলাম তখনই আবার ডাকদিল হারামিটা…..!!!!(অনন্যা)

-একি কোথায় যাচ্ছো তুমি….?(রোহান)

-কোথায় আবার আমার কেবিনে যাচ্ছি…(অনন্যা)

-তোমাকে যেতে বলেছি আমি?চুপচাপ এখানে বসে কাজ করো।কি হলো আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে কি দেখছো বসতে বললাম না….(রোহান)

-উহ্ এখন মনটা চাইছে কাঁচা তেতুলের মত লবন মরিচ মিসিয়ে এইটাকে কড়মড় করে চিবিয়ে খাই।শয়তানের হাড্ডী একটা আমার জীবনটা ত্যানা ত্যানা করে ছাড়ল।তারপর যেয়ে চেয়ার টেনে বসে কাজ মন দিলাম…(অনন্যা)

-হা হা হা ওর রেগে লাল হয়ে যাওয়া ফেসটা দেখে ঠোঁট চেপে হাসছিলাম এতখন।ওর কেবিনে যেতে দিলাম না কারন আজ আবার যাতে রিসভের সাথে আড্ডা না দিতে পারে তাই।এসব ভাবতে ভাবতে হাতটা সরিয়ে আনছিলাম তখন ই কাটা হাতটা টেবিলের সাথে ধাক্কা লেগে গেল আর ব্যাথায় কাঁকিয়ে উঠলাম আমি.(রোহান)

-কাজ করছিলাম তখন হঠাৎ রোহান আহ্ করে উঠলো।মুখতুলে তাকিয়ে দেখি ওর হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠলো আমার। দৌঁড়ে যেয়ে হাতটা ধরে কাছে টেনে নিলাম।হাতে ব্যান্ডেস করা তারমানে আগে থেকেই কেটেছে।

-রোহান হাত কি করে কাটলো।এত কেয়ারলেস কেন তুমি।একটু ও কি নিজের খেয়াল রাখতে পারনা তুমি।আজ ও বাচ্চাদের মত বেখেয়ালি রয়ে গেছ। কি হল বল কি করে কাটলো হাতটা। কাল তো ঠিক ছিল প্লিজ বল আমায়।….!!!(অনন্যা)

-কাল তোমায় এই হাত দিয়ে কষ্ট দিয়েছিলাম না তাই শাস্তি দিয়েছি এই হাতকে…!!!(রোহান)

-উফ্ তুমি কি পাগল।কি করেছো তুমি এসব।ফাস্ট এইড কোথায় রাখছো।উফ্ কত রক্ত বের হচ্ছে। আমি ডক্টর কে কল করি আগে…!!!(অনন্যা)

-শান্ত হও অনু ডক্তার কে কল করা লাগবে না দ্বিতীয় ড্রয়ারে দেখ ফাস্ট এইড রাখা আছে…!!

-পাগলি টা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে আর আমার হাত ব্যান্ডেস করে দিচ্ছে।মাঝে মাঝে ফু দিচ্ছে যেন ওর হাতে ব্যাথা করছে।এখনো ঠিক আগের মত পাগলিটাই রয়ে গেছে…!!(রোহান)
.
.
.
.
Continue…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে