হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-২৮

0
2230

হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি  পাঠ-২৮
#আরিশা অনু

-বিকালে রোহান অনন্যাদের ওবাড়িতে রেখে আসলো।রুহি কিছুতেই তার বাবাই কে ছাড়তে চাইছিল না।মেয়েটা কেঁদে কেটে অস্থির। রুহির কান্না দেখে অনন্যা,রোহান কেঁদে ফেলেছে।অবশেষে রোহান রুহিকে কথা দিয়েছে যে বাবাই তোমায় প্রতিদিন ঘুরতে নিয়ে যাবে তারপর মেয়েটা একটু কান্না থামিয়েছে।আর এক মুহুূর্ত দেরি না করে রোহান চলে আসে।কারন মেয়েটার কান্না ও সহ্য করতে পারছিল না।

-সন্ধায় রোহান বাসায় এসে সোজা রুমে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।তৃধা ওর মামী এতবার করে ডাকার পর ও দরজা খোলেনি রোহান।

-রুমের ভেতরটা টা যতবার ই দেখছি মনে হচ্ছে যেনো রুহি ছোটাছোটি করে খেলছে।এই তো এই ডান সাইড টাই আমার অনন্যা ঘুমিয়ে থাকতো।এই সাতটা রাত ঠিকমত ঘুমায়নি শুধু দুচোখ ভরে আমার অনুসোনার মুখটা দেখবো বলে।বুকেন ভেতর টাই দাও দাও করে আগুন জ্বলে যাচ্ছে। আমার রুহিসোনাটা এ কয়দিন আমার বুকের মধ্যে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়েছে।আজ যেন বুকটা কেমন খালি খালি লাগছে।অসহ্য এক যন্ত্রনায় বুকটা ছিড়ে যাচ্ছে এখন।কাল ঠিক এই সময়টায় সারা বাড়ি ছোটাছোটি করছিল আমার রুহিটা আর আজ আমায় একা করে চলে গেল। শ্বাস নিতেও যে খুব কষ্ট হচ্ছে এখন আমার।দুদিনের মায়ায় কেন জড়ালাম আমি।এতক্ষণ রোহান রুহির ফেলে যাওয়া একটা টেডি জড়িয়ে ধরে একা একা কথা গুলো ভাবছিল আর নিরবে চোখের জল ফেলছিল।

-ওদিকে রুহি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে না খেয়ে।

-দেখতে দেখতে পাঁচমাস কেটে গেলো।দিন গুলো এত দ্রুত কিভাবে কেটে গেলো অনন্যা রোহান কেউ ই বুঝে উঠতে পারেনি।আর মাএ একমাস আছে কন্টাক্ট পেপারের মেয়াদ। এর পর অনন্যা ইচ্ছা করলে যে কোনো সময় জবটা ছেড়ে দিতে পারবে।বার বার রোহানের মনে হচ্ছে কেন সময়টা আরো বাড়ালো না।এত দ্রুত সময় চলে যাবে রোহান বুঝে উঠতে পারেনি।অপরদিকে অনন্যার প্রথম দিকে চাকরি ছেড়ে দিতে চাইলে ও এখন একদম রোহানকে ছাড়তে মন চাইছেনা ওর।বার বার মনে হচ্ছে রোহানের পাশে সারাজীবন এভাবে থাকতে।কিন্তু এখন সেটা একেবারেই সম্ভব না কারন তৃধা আর রোহানের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।অনেক বেশি অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে দিন কাটাচ্ছে অনন্যা আর রোহান।এর মাঝে রোহান অনন্যা কে অফিসে সিফট্ করেছে।কারন রোহান যানে অনন্যা বাসায় থাকলে তৃধা এক সেকেন্ড ও শান্তিতে থাকতে দেবেনা।আর মামীর উপর ও বিশ্বাস নেই ওর কখন কি বলে বসে তখন আবার কোন অঘটন ঘটে যাই তার ঠিক নেই। সেই ভয়ে রোহান আবার অনন্যাকে অফিসে আসতে বলছে।মাঝে মাঝে অফিস শেষে অনন্যাকে বাসায় দিয়ে যাই রোহান আর এই বাহানাই রুহির সাথে সময় ও কাটায়।মোটামুটি ভালোই কেটে যাচ্ছে ওদের দিনগুলো ।

-রুহির সাথে আড্ডা দিতে দিতে আড় চোখে অনন্যা কে দেখা। আবার দুজনার চোখে চোখ পড়ে যাওয়ায় লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নেওয়া বেশ ভালোই জমে উঠেছে আজকাল ওদের প্রেমটা।এ যেন নতুন এক অনুভূতি।এক সেকেন্ড চোখের আড়াল হলেও যেন অনেক বেশি কষ্টে থাকে দুজন এখন।আবার নতুন করে #হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি গুলো যেন প্রান ফিরে পেতে শুরু করেছে।সবকিছু যেন নতুন করে শুরু হতে চলেছে ওদের মাঝে।ঘৃনা কে একপাশে রেখে আবার নতুন করে জন্ম নিতে শুরু করেছে বিন্দু বিন্দু ভালোবাসা।সত্যি বড় অদ্ভুত এক ভালো লাগায় মিশ্রিত সময় পার করছে অনন্যা আর রোহান। আবার ও হয়তো দুজনে এক হওয়ার স্বপ্ন ও দেখতে শুরু করেছে।কিন্তু কথায় বলেনা সুখের সময় দ্রুতই পেরিয়ে যাই কথাটা আসলেই ঠিক।দুঃখের সময় যত ধীরে ধীরে পার হয় সুখের সময় তার দ্বিগুণ দ্রুত গতিতে পার হয়ে যাই।

-আজ রোহানের একটা জরুরি কাজ পড়ে গেছে অফিস শেষে তাই অনন্যা কে একাই বাসায় চলে যেতে বলেছে ও।অনন্যা ও কথামত অফিস টাইম শেষে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে।রাস্তায় এসে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি কিন্তু কোনো রিকসা পাচ্ছি না কি মেজাজ খারাপ হয় এবার।একটু পর একটা গাড়ির হর্নের শব্দে হুস ফিরলো আমার।চিন্তার জগৎ ছেড়ে সামনে তাকিয়ে দেখি তমাল গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনন্যা চলে আই এখন কোনো রিকসা পবিনা আমি তোকে নামিয়ে দেব।ওর সাথে এভাবে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? এদিকে সন্ধা ও নেমে আসছে উপায় না পেয়ে উঠে পড়লাম গাড়িতে।

-কেমন আছিস তুই? কোনো খোঁজ খবর নেই তোর রাগ করেছিস আমার উপর কথাগুলো একটানা বলে থামলো তমাল?

-আরে না রাগ করব কেন পাগল।একটু ব্যস্ত ছিলাম তাই আর কি কথা বলা হয়নি।ভালো আছি আমি।তুই কেমন আছিস আর ভাবির কি খবর।

-হুম ভালো আছি তোর ভাবি ও ভালো আছে।রুহির কি খবর আমার ছোটমা টা ভালো আছে তো?

-হুম তোর ছোট মা ও অনেক ভালো আছে।তারপর টুকটাক কথা বলতে বলতে হঠাৎ তমাল গাড়ি থামাল।কিরে গাড়ি থামালি যে হঠাৎ?

-সামনে তাকা গাধী।

-সামনে কি বলে তাকিয়ে দেকি ফুসকা ওয়ালা। ওয়াও সাথে সাথে বলে উঠলাম ফুসকা।

-হু চল আজ দেখব কে ফাস্ট হয়।

-বলছিস যখন চল তবে আমি যানি আমি ফাস্ট হব। কার ভার্সিটিতে থাকতে কখনো তুই ফুসকা খাওয়ায় আমার উপরে উঠটে পারিসনি সুতরাং আজ ও আমি ফাস্ট হব।

-ও হ্যালো ম্যাম সময় পাল্টে গেছে আজ তো আমিই ফাস্ট হব বলে দিচ্ছি।

-হইছে থাম তুই সময় ই বলে দেবে কে কি হবে তা।

-তারপর দুজন রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ফুসকা খাওয়ায় মন দিলাম।টুকটাক কথা বলছি আর হাসছি দুজন সাথে গপাগপ ফুসকা শেষ করছি হা হা।

-কাজ শেষ করে গাড়ি নিয়ে বাসায় যাচ্ছিলাম তখন হঠাৎ করে রাস্তার পাশে চোখ গেল।অনন্যা আর তমাল একসাথে ফুসকা খাচ্ছে আর হাসাহাসি করছে।এই মুহুর্তে যে আমার ভিতরে কি হচ্ছে সেটা কাউকে বোঝাতে পারবো না।আবারো আমার একটু একটু করে গড়ে তোলা স্বপ্নগুলো ভেঙে চূর্নবিচূর্ন হয়ে গেল।নাহ্ এভাবে আর মরিচিকার পেছনে ছুটে সময় নষ্ট করে লাভ নেই যা করার এবার আমাকেই করতে হবে।এতক্ষণ কথাগুলো মনে মনে ভাবছিল রোহান তারপর অনন্যা আর তমালের দিকে একবার তাকিয়ে জোরে গাড়ি চালিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে পড়লো।আর এদিকে বেচারি অনন্যা যানতে ও পারলোনা ওর অজান্তেই আবারো কতবড় ভুল করে ফেললো ও।
.
.
.
.
Continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে