গল্পটা নিশ্চুপ বালিকার(অন্তিম পর্ব)

1
2515

গল্পটা নিশ্চুপ বালিকার(অন্তিম পর্ব)

রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা’

বাস্টটপে গাড়ি থামিয়ে উন্মাদের ন্যায় শুভ্র এদিকওদিক ছুটতে থাকে। খুঁজতে থাকে প্রাণের নীলিমা’কে। টিভিতে প্রচার করা দূর্ঘটনা স্থলে হাজির হয়। রক্তাক্ত স্থানে’র চারিপাশে দৌঁড়াতে থাকে। আহত কিংবা নিহত মানুষের কোন চিহ্ন’ই নেই সেখানে। সবাই যে যার মতো কাজে ব্যস্ত। রক্তাক্ত স্থানটিকে আরো একবার ফিরে যায় শুভ্র। ফিরে আসার সময় কুড়িয়ে পায় একটা পায়ের নূপুর। মনে পড়ে শুভ্র’র, এ নূপুর নীলিমা’র পায়ে দেখেছে সেদিন ক্যাম্পাসে। মাথা’য় দু’হাত রেখে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে তীব্র আর্তনাদে সে স্থানে বসে পড়ে শুভ্র। ঠিক তখনি পাশ থেকে গাড়ির হর্ণ বেজে উঠে। মাথা উঁচু করে রাস্তার মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের দিকে তাকিয়ে ‘থ’ হয়ে যায় শুভ্র। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। বাসে জানালা’র যে পাশের সিটে বসে নীলিমা চিপস খাওয়া’য় ব্যস্ত, শুভ্র ছুটে যায় সেখানে। দৌঁড়ে উঠে বাসে। নীলিমা’র কিছু বুঝে উঠা’র আগেই টানতে টানতে ওকে বাস থেকে নামিয়ে আনে। হাত ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চলছে নীলিমা’র। ‘কি করছেন! কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? ছাড়ুন! ছাড়ুন বলছি। নইলে…’ হাত ছেড়ে দেয় শুভ্র। দু’হাত দিয়ে নীলিমা’র দু’গাল স্পর্শ করে। ‘নইলে কি?’ প্রতিউত্তরে চুপ করে থাকে নীলিমা। ‘কি হলো? কথা বলছো না কেন? নইলে কি?’ কথা বলছিল শুভ্র। তখন’ই ওর ফোনটা বেজে উঠে। — হ্যাঁলো, — ভাইয়া আমি শাকিলা। নীলিমা নাকি বাসায় নেই! পেয়েছেন ওরে? — হ্যাঁ, কথা বলো ওর সাথে। নাও তোমার বান্ধবী! কথা বলো। (লাউডস্পিকার বাড়িয়ে দিয়ে।) — আসসালামু আলাইকুম। শাকিলা কেমন আছিস?(নীলিমা) — ওয়ালাইকুম আসসালাম। এই কি বলছি শুন! ভাইয়া’কে আমি আর আপু সবটা বলে দিয়েছি! — মামামানে? কোকোকোন ভাইয়া? — কোন ভাই আবার! তোর স্বপ্নদেখার রাজকুমার, তোর শুভ্র ভাই! — (আড়চোখে নীলিমা একবার দেখে নেয় শুভ্রকে। তারপর ঢোক গিলে।) — তোর আর্থ সামাজিক অবস্থা, তুই ওনাকে কতটা ভালোবাসিস, সব, সবটা বলে দিয়েছি! আর ক্যাম্পাসে তুই কালকে ভুল করে যে ডায়েরীটা ফেলে গিয়েছিস সেটাও ভাইয়া’কে দিয়ে দিয়েছি। ডায়েরী’টাও ভাইয়া’র পড়া শেষ। তাই বলি কি মনের কথা ভেতরে না চেপে রেখে বলে দে ভাইয়া’কে। বলে দে ভালোবাসা’র কথা। দেখবি, ভেতরটা অনেকটা হালকা লাগবে। আচ্ছা, দে! এখন ভাইয়া’র কাছে দে… — হ্যাঁ, শাকিলা বলো…(নীলিমা’র হাত থেকে ফোনটা নিয়ে গিয়ে।) — ভাইয়া! আমি জানি আপনি নীলিমা’কেই ভালোবাসেন। আপু বলেছে, ক্যাম্পাসে প্রথম দিন নীলিমাকে দেখেই নাকি আপনি পাগল হয়ে গেছিলেন। ধীরে ধীরে একটু একটু করে ভালোবেসে ফেলেছিলেন ওকে। বলতেও চেয়েছিলেন ভালোবাসা’র কথা। কিন্তু নীলিমা’র বয়ফ্রেন্ড আছে এটা শুনে পিছিয়ে যান। একবুক হতাশা নিয়ে দুরে সরে যান। — পরে কথা বলি। রাখছি এখন। — আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ। ফোনটা পকেটে রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যায় শুভ্র। নিচের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে নীলিমা। কাছে যায় শুভ্র। স্পর্শ করে নীলিমা’র দু’গাল। আঙ্গুল দিয়ে মুছে দেয় চোখের জল। মুখটা উপরের দিকে তুলে নরম গলায় প্রশ্ন করে, ‘এত ভালোবাসো বলো নি কেন?’ জবাবে কিচ্ছু বলেনি নীলিমা! পূর্বের ন্যায় নিচের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে আর চোখের জল ফেলছে। যেতে যেতে অনেকটা কাছে চলে যায় শুভ্র। বুকে জড়িয়ে নেয় নীলিমা’কে। কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে, তুমি কি আমার বউ হবে? কান্না থেমে যায়। হাসি ফুটে উঠে নীলিমা’র মুখে। চোখে জল, মুখে হাসি নিয়েই জবাব দেয়, আমি তো শুধু তোমার বউ না। তোমার সন্তানের মা’ও হতে চাই…

 

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে