নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ২৮

0
2492

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ২৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি, মেঘ বারান্দার এদিক থেকে ওদিকে পায়চারী করছে। অনেক গুলো প্রশ্ন করে একটা উত্তরও পায়নি আমার কাছ থেকে তাইতো মেঘ অস্থির হয়ে এভাবে পায়চারী করছে। মেঘ অধৈর্য হয়ে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো, আমার হাতের উপর ওর একটা হাত রাখলো।
মেঘ: কণা আর কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো? (ঝটকা দিয়ে হাতটা সরিয়ে আনলাম)
আমি: তোমাকে কি আমি আটকে রেখেছি?
মেঘ: তা রাখোনি কিন্তু আমার কোনো প্রশ্নের উত্তরও তো দিচ্ছ না যে আমি..
আমি: কোনো উত্তর নেই তুমি আসতে পারো।
মেঘ: প্লিজ লক্ষীটি এমন করো না।
আমি: নষ্টা থেকে লক্ষী? তুমি তো খুব ভালো রূপ বদলাতে পারো।
মেঘ: সবকিছুর জন্য সরি তো, দেখো সেদিন আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম ঠিকি কিন্তু পরে তো আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। হ্যাঁ এতোদিন লজ্জায় তোমার সামনে আসতে পারিনি কিন্তু এখন না এসে আর থাকতে পারছিলাম না তাইতো..
আমি: মেঘ বলতো ভালোবাসতে হলে কোনটা প্রথমে প্রয়োজন।
মেঘ: বিশ্বাস।
আমি: শুধু বিশ্বাস নয়, বিশ্বাস এবং সম্মান দুটুই সবার আগে প্রয়োজন। এই দুটুর মধ্যে কোনোটাই তো তুমি আমাকে করো না।
মেঘ: (নিশ্চুপ)
আমি: তুমি আমাকে না বিশ্বাস করো না সম্মান করো, তাহলে আমি কিভাবে তোমার কাছে ফিরে যাবো বলো।
মেঘ: এখন তো আমি তোমাকে বিশ্বাস করি, আগেও করতাম শুধু…
আমি: মেঘ বিশ্বাস করি বলাটা যতো সহজ তারচেয়ে অনেক বেশি কঠিন বিশ্বাস করাটা।
মেঘ: কণা আমিতো আমার ভুল স্বীকার করছি যে সেদিন আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম।
আমি: সেদিন লোকটা আমার হাত ধরেছিল দেখে তুমি বলেছিলে আমি নষ্টামি করতে গিয়ে তোহার এই অবস্থা করেছি, মানছি সেদিন তোমার দেখায় ভুল ছিল। কিন্তু সেদিন তো তুমি আমাকে অসম্মান করতেও দুবার ভাবোনি, সবার সামনে তুমি আমার ভালোবাসাকে বারবার ছোট করেছ। আরে তোমার থেকে তো রাহুল আমাকে বেশি সম্মান করে।
মেঘ: রাহুল কে?
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: বলো বলছি রাহুল কে?
আমি: ওইযে নীল রঙের দুতলা বাড়িটা দেখছ ওই বাসার ছেলে। (মেঘ হা হয়ে আমাদের পাশের বাসার দিকে তাকিয়ে আছে)
মেঘ: এই ছেলের সাথে তোমার কি সম্পর্ক?
আমি: তোমার কি মনে হয় এই দুমাস আমি তোমার জন্য কেঁদে কেঁদে কাটিয়েছি? না মেঘ আমি রাহুলের সাথে প্রেম করেছি আর এই বারান্দাতে দাঁড়িয়েই। জানো তো রাহুল এখন… (আমার পুরো কথা শেষ হবার আগেই মেঘ আমার গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। মেঘ রাগি চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে, গালে হাত রেখে মেঘের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম)
মেঘ: তুমি আসলেই আমার ভালোবাসার যোগ্য নও। (আবারো হাসলাম)
আমি: বলেছিলাম না মেঘ বিশ্বাস করি বলা সহজ কিন্তু বিশ্বাস করাটা খুব কঠিন।
মেঘ: মানে?
আমি: তুমি আমাকে কতোটা বিশ্বাস করো পরীক্ষা করে নিলাম। ওই বাসায় কেউ থাকে না মেঘ সবাই বাহিরে থাকে আর ওদের পরিবারে ওরা দুবোন শুধু কোনো ছেলে নেই।
মেঘ: তারমানে..
আমি: মিথ্যে বলেছি তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য যদিও ভালোবাসায় কোনো পরীক্ষা চলে না তাও করতে হলো শুধুমাত্র তোমার…
মেঘ: কণা আমি সরি..
আমি: থাপ্পড়টা খুব জোড়েই দিয়েছ হয়তো তোমার হাতের আঙ্গুলের দাগ বসে গেছে।
মেঘ: বিশ্বাস করো তোমার মুখে অন্য ছেলের নাম শুনে আমার মাথা ঠিক ছিল না, আমি তোমাকে থাপ্পড় দিতে চাইনি কিন্তু.. (মেঘ আমার গালে স্পর্শ করতে চাইলো পিছিয়ে আসলাম)
আমি: এবার বুঝতে পেরেছ তো তুমি যে আমাকে বিশ্বাস করো না? যে নিজের ভালোবাসাকে বিশ্বাস করেনা সম্মান করেনা তার সাথে সারাজীবন না কাটানোটাই মঙ্গল।
মেঘ: কণা আমার কথা শুনো।
আমি: চলে যাও মেঘ।
মেঘ: শুনো প্লিজ!
আমি: তুমি কি চাইছ আমি কাল কানাডা চলে যাই?
মেঘ: না না তুমি কানাডা চলে গেলে আমি..
আমি: তাহলে আমার চোখের সামনে থেকে চলে যাও নাহলে আমি কাল সত্যি কানাডা চলে যাবো।
মেঘ: কণা আমি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি।
মেঘের দিকে না তাকিয়ে রুমে এসে বারান্দার দরজা লাগিয়ে দিলাম। খুব কষ্ট হচ্ছে যাকে আমি এতো ভালোবাসি সে কিনা আমাকে এতোটুকু বিশ্বাস করেনা। যে মেঘের জন্য আমি অপেক্ষা করছি সে কিনা আমার ভালোবাসাকেই বিশ্বাস করেনা। আমিতো ভেবেছিলাম মেঘ নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসবে কিন্তু এভাবে মনের মধ্যে অবিশ্বাসের বীজ রেখে ফিরে আসবে ভাবিনি।

জোহা: আপু এই আপু..
আমি: হুম।
জোহা: সোফায় ঘুমিয়ে আছ কেন? (জোহার কথায় চোখ খুলে তাকালাম, রাতে কাঁদতে কাঁদতে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম)
জোহা: আপু কি হয়েছে? রাতে অনেক কেঁদেছ তাই না?
আমি: মেঘকে সবকিছু কেন বলেছিলি?
জোহা: এভাবে দুইটা ভালোবাসার মানুষ আলাদা হয়ে যাক তা আমি চাই না।
আমি: বারান্দার দরজা কে খুলা রেখেছিল?
জোহা: আমিই।
আমি: খুব বড় হয়ে গেছিস তাই না?
জোহা: আপু ভাইয়ার কাছে ফিরে যাও প্লিজ।
আমি: কার কাছে যাবো হ্যাঁ যে আমাকে বিশ্বাসই করেনা।
জোহা: আরে আস্তে চেঁচাও ড্রয়িংরুমে আব্বু আছে সাথে রুহান ভাইয়া।
আমি: রুহান কেন এসেছে?
জোহা: তোমার সাথে নাকি দেখা করবে তাইতো তোমাকে ডাকতে আসলাম।
আমি: গিয়ে বল আমি ওই বাড়ির কারো সামনে যাবো না।
জোহা: রুহান ভাইয়া কি দোষ করলো?
আমি: (নিশ্চুপ)
জোহা: নিচে চলো।
আমি: গিয়ে বল রুমে আসতে।
জোহা: ঠিক আছে।

চুপচাপ বিছানায় বসে আছি, রুহান কেন এসেছে কিছুতেই ভেবে পাচ্ছি না। মেঘ পাঠিয়েছে? নাকি অন্য কোনো কারণ?
রুহান: আসতে পারি?
আমি: হ্যাঁ এসো।
রুহান: বিরক্ত হচ্ছ মনে হচ্ছে। (সোফায় বসতে বসতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, আসলে তো বিরক্ত হচ্ছি না কেন জানি ওই বাড়ির কাউকে দেখলেই রাগ হচ্ছে)
আমি: বিরক্ত হবো কেন?
রুহান: এইযে গতকাল আমাদের তাড়িয়ে দেওয়ার পর আজ আবার আসলাম। (রুহানের কথায় এবার নিজেই লজ্জা পেলাম, কাল ওদের সাথে এমন ব্যবহার করা ঠিক হয়নি। কিন্তু আমি কি করবো আমিও তো একটা মানুষ আর যে এসব সহ্য হচ্ছে না)
রুহান: আজ কিন্তু আমি অন্য প্রয়োজনে এসেছি।
আমি: কি প্রয়োজন বলো।
রুহান: কাল তো কিছু বলার সুযোগই দাওনি কিন্তু আজ না বললে আর হয়তো আম্মুকে ফিরে পাবো না, তোমরা তো কানাডা চলে যাচ্ছ আজ।
আমি: চাঁচিকে ফিরে পাবেনা মানে?
রুহান: দুদিন আগে আম্মুর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আম্মু তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে চান আর মুক্তি চান। (রুহানের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালাম, এই মহিলা এতো তাড়াতাড়ি শোধরে গেল)
রুহান: আজ যদি তোমরা কানাডা চলে যাও তাহলে তো…
আমি: কানাডা কে যাবে? আমিতো কানাডা যাচ্ছি না।
রুহান: আমি জানতাম তুমি রাজি হবেনা কারণ তুমি তো ভাইয়াকে ভালোবাস, ভাইয়াকে ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার কথা তুমি ভাবতেই পারো না।
আমি: আমি কাউকে ভালোবাসি না।
রুহান: হুম তাতো তোমার চোখই বলে দিচ্ছে।
আমি: যে কাজে এসেছ সেটা নিয়ে কথা বলো।
রুহান: একবার যদি থানায় যেতে আর আম্মুকে..
আমি: উনি সত্যি শোধরে গেছেন তো?
রুহান: হুম।
আমি: ঠিক আছে তুমি ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
রুহান: হুম।

ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখি আম্মু আর জোহা সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছে। আমাকে দেখেই চাচ্চু হাসলেন।
চাচ্চু: রেডি হয়ে নে দুঘণ্টা পর আমাদের ফ্লাইট।
আমি: একটু থানা থেকে আসছি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
আম্মু: কি বলছিস দুঘণ্টা পর তো..
আমি: ফ্লাইট মিস হবেনা তাড়াতাড়ি চলে আসবো আমি।
চাচ্চু: ও এসব বলে বেরুচ্ছে আসবে না দুঘন্টার মধ্যে।
আম্মু: কোথাও যাওয়া হবেনা চুপচাপ বাসায় বসে থাক।
আমি: আম্মু বলছি তো আমি চলে আসবো।
চাচ্চু: একদম চুপ তোর চালাকি আমরা বুঝিনা মনে করেছিস, রুমে যা। (দ্যাত বেরুতে না পারলে তো চাচ্চু জোড় করে আমাকে নিয়ে যাবে আর একবার কানাডা নিয়ে যেতে পারলে বিয়ে দিয়ে দিবে)
আমি: চাচ্চু..
চাচ্চু: তুই কি চাচ্ছিস আমি তোদের ফেলে রেখে চলে যাই? তুই এমন করলে আমি চলে যাবো তোদের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবো না।
আম্মু: কণা খুব খারাপ হচ্ছে কিন্তু।
আমি: রুহান তুমি থানায় যাও আমি পুলিশ আঙ্কেলের সাথে ফোনে কথা বলবো।
রুহান: ঠিক আছে।

পুলিশ আঙ্কেলের সাথে কথা বলা শেষ করে রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম। আম্মুর সাথে কানাডা চলে যাবো নাকি একা থাকবো সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না। কানাডা যাওয়া মানে মেঘকে সারাজীবনের জন্য হারানো আর না যাওয়া মানে চাচ্চুকে হারানো, এখন আমি কোনটা বেছে নিবো?
আম্মু: কণা দরজা খুল মা।
আমি: (নিশ্চুপ)
আম্মু: তুই এমন করলে তোর চাচ্চু আমাদের ছেড়ে চলে যাবে তুই কি তা চাস? তোর চাচ্চু তো তোর ভালোর জন্যই সবকিছু করছে।
আমি: আম্মু আমি মেঘকে ভালোবাসি আমি ওকে ছেড়ে কানাডা যেতে পারবো না।
আম্মু: ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি তুই আমাকে কখনো ফোন করবি না থাক তুই মেঘের অপেক্ষায়। (আম্মু কাঁদছেন শুনে তাড়াতাড়ি দরজা খুললাম, ততক্ষণে আম্মু চলে গেছেন। দৌড়ে আম্মুর রুমে আসলাম)

আম্মু বিছানায় বসে কাঁদছেন, চুপচাপ আম্মুর পাশে এসে বসে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম।
আম্মু: কেন এসেছিস আমার কাছে আমি তোর কে? মেঘ তো তোর সবকিছু মেঘের কাছে ফিরে যা।
আমি: এই একটা মানুষ আর এই বিয়েটা আমাদের সবকিছু উলটপালট করে দিয়েছে তাই না আম্মু?
আম্মু: কাঁদছিস কেন বোকা মেয়ে? বুঝার চেষ্টা কর মেঘ তোকে ভালোবাসে না আর সে জন্যই আমরা তোর আবার বিয়ে দিতে চাইছি।
আমি: কিন্তু আমিতো মেঘকে ভালোবাসি আম্মু।
আম্মু: (নিশ্চুপ)
আমি: মেঘকে আমি সত্যি ভালোবাসি আম্মু আর সারাজীবন বাসতে চাই। আমি কানাডা যাবো কিন্তু বিয়ের জন্য তোমরা আমাকে জোড় করতে পারবে না, যদি করো তাহলে আমি সুইসাইড করবো।
আম্মু: কণা আমার কথা শুন।
আম্মুর ডাকে না দাঁড়িয়ে রুমে চলে আসলাম।

সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছি, কানাডা যাওয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা নেই আমার কাছে। মেঘের জন্য তো আমি আম্মুকে কষ্ট দিতে পারিনা।
জোহা: আপু..
আমি: হুম।
জোহা: নাও। (জোহার দিকে তাকালাম আমার দিকে ফোন এগিয়ে দিলো)
আমি: কে?
জোহা: ভাইয়া।
আমি: (নিশ্চুপ)
জোহা: চলেই তো যাচ্ছ শেষবার কথা বলে নাও। (ফোনটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে আসলাম)

ফোনের দুপাশে দুজন চুপচাপ হয়ে আছি কেউ কোনো কথা বলছি না। মেঘ কাঁদছে বুঝতে পারছি কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই। শুধুমাত্র মেঘের একটা ভুলের জন্য আজ সবকিছু উলটপালট হয়ে গেল। একটা মাত্র অবিশ্বাস সবকিছু কেড়ে নিলো।
মেঘ: চলেই তো যাচ্ছ একটু কথা বলো প্লিজ!
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: একটা ভুলের শাস্তি এভাবে দিচ্ছ? আরে ভুল তো সবারই হয় তাই বলে ক্ষমা করা যায়না?
আমি: রাখছি বেরুতে হবে।
মেঘ: শুনোনা কণা তুমি যেওনা প্লিজ! আমি তোমার চাচ্চুর কাছে ক্ষমা চাইবো।
আমি: এই কাজটা আগে করলে হয়তো লাভ হতো এখন অনেক দেরী হয়ে গেছে। সব শেষ হয়ে গেছে মেঘ।
মেঘ: কিচ্ছু শেষ হয়নি আমি আসছি।
আমি: মেঘ শুনো..
মেঘ তো ফোন কেটে দিলো, মেঘ বাসায় আসবে নাতো?
আম্মু: কণা তাড়াতাড়ি আয়।
জোহা: আপু চাঁচি ডাকছে।
আমি: হুম।
জোহা: আপু সব কেমন যেন আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে তাই না?
আমি: যে সম্পর্কে বিশ্বাস থাকেনা সে সম্পর্ক একদিন এভাবেই শেষ হয়ে যায়। (চুপচাপ বেরিয়ে আসলাম)

এয়ারপোর্টে বসে আছি আর চারদিকে চোখ বুলাচ্ছি, কেন যেন মনে হচ্ছে মেঘ এখানে আসবে। আর তো কিছুক্ষণ একবার চলে গেলে আর ফিরে আসতে পারবো না চাচ্চু আসতে দিবে না।
জোহা: আপু তোমার দুচোখ এভাবে কাকে খুঁজছে?
আমি: ককই কাকাউকে নাতো।
জোহা: ভালোই যখন বাসো তাহলে ছেড়ে চলে যাচ্ছ কেন?
আমি: সে যে ভালোবাসে না। (জোহার ফোন বেজে উঠলো, ফোন হাতে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: কি?
জোহা: পপি আপু, নাও তুমিই কথা বলো।
আমি: হুম। (ফোন রিসিভ করে আমি কিছু বলার আগেই পপি কেঁদে উঠলো)
পপি: ভাবি ভাইয়া এক্সিডেন্ট করেছে।
আমি: কি?
পপি: হসপিটালে আছে খুব খারাপ অবস্থা তোমাকে দেখতে চাইছে তুমি একবার আসবে প্লিজ!
আমি: আসছি। (ফোন রেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই আম্মু আমার হাত ধরে ফেললো)
আম্মু: কোথায় যাচ্ছিস?
আমি: আম্মু মেঘ হসপিটালে আমাকে যেতে দাও প্লিজ!
আম্মু: কোথাও যেতে হবেনা।
আমি: আম্মু আমি তোমার সব কথা শুনবো একবার যেতে দাও শুধু।
জোহা: কেন তোমরা এমন করছ? ওরা তো প্রেম করছে না যে তোমরা আলাদা করে দিবে, ওদের বন্ধন তো আল্লাহ্‌ দিয়েছেন তাহলে তোমরা আলাদা করতে চাইছ কেন? ছাড়ো বলছি আপুর হাত। (জোহা আম্মুর হাত সরিয়ে নিতেই দৌড়ে চলে আসলাম)

রাস্তা যেন আজ শেষ হচ্ছে না গাড়ি যেন খুব আস্তে চলছে, জানিনা মেঘের এখন কি অবস্থা। খুব অস্থির লাগছে সবকিছুর জন্য আমি দায়ী, আমার কাছে আসতে গিয়েই তো মেঘের এক্সিডেন্ট হলো।

অক্সিজেন মাস্ক লাগানো অবস্থায় বেডে শুয়ে আছে মেঘ, মা পাশে বসে কাঁদছেন। তোহা একটু দূরে ছিল আমাকে দেখে দৌড়ে এসে জাপটে ধরলো আমাকে। তোহার হাতটা ধরে এক পা দুপা করে এগিয়ে যাচ্ছি মেঘের কাছে…

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে