বাজিরপ্রেম২ ,২য় পর্ব/শেষ পর্ব

0
2057

বাজিরপ্রেম২ ,২য় পর্ব/শেষ পর্ব

লেখক:- তৌহিদুল ইসলাম

। কষে এক চড় মেড়ে বসলাম ।
“আমি কখনও ভাবিও নি তুমি এমন টা করবে ! এতো সুন্দর চেহারা তোমার । মনটা এতো কুৎসিত কেন ?? আমার নিজের উপর ঘৃনা হচ্ছে যে তোমাকে আমি ভালবেসেছি ।“
কথা গুলো ওকে কিভাবে বলেছিলাম কে জানে । তারপর চলে আসি ওখান থেকে ।
পরের এক সপ্তাহ বলতে গেলে একেবারে বিচ্ছন্নই ছিলাম সবার কাছ থেকে । কারো সাথে কোন যোগাযোগ করি নি । একাই নিজের মন বুঝ দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম । তারপর যখন ক্লাসে গেলাম সবাই যেন আমাকে একটু অন্য চোখে দেখতে লাগল ।
মুক্তা মত মেয়েকে যে আমি চড় মেড়ে বসব এই কথা হয়তো কেউ ভাবে নি । সবার কথা বলছি কেন আমি নিজেই তো ভাবি নি । নিজের ক্লাস রুমটাকে কেমন জানি অচেনা লাগছিল । কদিন আগেও জীবন টা কত সহজ ছিল । আর এখন জীবন টা কত জটিল হয়ে গেলো । মুক্তা আসলো তারও কিছুক্ষন পরে ।আগের মত হাসি খুশি না । আজ আর চেহারায় সেই আত্মবিশ্বাসের হাসি দেখতে পেলাম না । তারপর এভাবেই দিন চলে যাচ্ছিল ।
সব কিছুই ঠিক ছিল কিন্তু আগের সহজ সরল জীবনের সুর কেটে গিয়েছিল । আস্তে আস্তে এটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠল ।
তারপর একদিন । সেদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল । কেউই বলতে গেলে আসে নি । একটা ফরম জমা দিতে হবে বলে আমি এসেছিলাম । না হলে আমিও আসতাম না । হেডফোনে গান শুনছিলাম আর বৃষ্টি দেখছিলাম ।
এমন সময় দেখি মুক্তা আমার দিকে আসছে । প্রথম ওকে ইগনোর করা চেষ্টা করি । কিন্তু লাভ হয় না । ও আমার সামনে এসেই বসে । ইশারায় হেড ফোন খুলতে বলে । একসময় ছিল ওর সাথে কথা বলার জন্য মন টা সবসময় অপেক্ষা করে থাকতো । কিন্তু আজ প্রেক্ষাপট ভিন্ন ।
আমি উঠে চলে যেতে চাইলাম । ও আমার পথ আটকালো । বললাম “সমস্যা কি ?”
“ তোমার সমস্যা কি ? আমাকে কিছু বলার সুযোগ তো দিবে নাকি ! অন্তত ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ তো দিবে ?”
“ ক্ষমা চেয়ে কি করবা তুমি ? কোন দরকার আছে ?”
“ আছে ।‘
“ কোন দরকার নাই । কোন লাভ নাই । কারন আমি কোন দিন তোমাকে ক্ষমা করবো না । কোন দিনও না ।তোমার মত মেয়ের সাথে কথা বলতেও আমার ঘৃণ্ণা হচ্ছে । পথ ছাড়ো । যেতে দাও ।“
মুক্তা কিছু বলতে গিয়েও আটকে গেল ।এতো কঠিন কথা শুনে ওর অভ্যাস নেই । দেখলাম ওর চোখে দেখলাম পানি জমতে শুরু করেছে ।
জল ভরা চোখ নিয়ে ও বলতে লাগল “একথা সত্যি যে তোমার সাথে আমি মিশতে শুরু করেছিলাম বাজী ধরেই । কিন্তু বিশ্বাস কর তোমার সাথে মিশার সময় আমার মন আস্তে আস্তে বদলাতে শুরু করেছিল । আমি সত্যি সত্যি আমাদের রিলেশন টা স্থায়ী করতে চেয়ে ছিলাম । আমি তোমার উপর সত্যি সত্যি ফল করতে শুরু করেছিলাম ।ইনফ্যাক্ট আই হ্যাভ অলরেডি ফলেন ইন লাভ উইথ ইউ । আর এই কয়দিনে আমি আরো বেশি বেশি তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছি ।তৌহিদ প্লিজ আমার কথা টা বিশ্বাস কর ।“
খুব ইচ্ছা করছিল মুক্তার কথা গুলা বিশ্বাস করি ! কিন্তু বেলতলায় একবার যাওয়াই ভালো ।
“কথা শেষ হয়েছে তোমার?”
ও কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো আহত চোখে ।
“তুমি বিশ্বাস করছ না আমার কথা ?”
“করার কোন কারন নেই । আর শোন তোমার কেবল মনে হচ্ছে যে তুমি আমার প্রেমে পড়েছ । আসলে তা কিন্তু না । সারা জীবনে তুমি কখনও কারো কাছ থেকে রিজেক্টেড হও নি তো তাই তোমার এমন মনে হচ্ছে । আমি করেছি । তোমার আগে পিছে সব সময় তুমি ছেলেদের ঘোরাফেরা করতে দেখেছ ! আমি করছি না তাই আমার প্রতি তোমার আকর্ষন জন্মেছে । আর এটাকে আর যাই বলুক ভালবাসা বলে না!”
“তৌহিদ ……. “
মুক্তা আরো কিছু বলতে চাইছিল কিন্তু আমি ওকে সুযোগ দিলাম না ।

গাড়ি থেমে গেছে । মনেহয় চলে এসেছি । হাসপাতালে…..।হাসপাতাল আমার কোন কালেই পছন্দ না । কিন্তু এই হাসপাতাল টাকে ঠিক হাসপাতালের মত মনে হচ্ছে না । মনে হচ্ছে কোন নির্জন বাগান বাড়িতে চলে এসছি । পুরো হাসপাতাল জুরে এক আলো আধারির খেলা ।
মুক্তাকে রাখা হয়েছে চার তালার কোন একটা কেবিনে । লিফটে থেকে বের হয়ে যেন অন্য জগতে চলে এলাম । চারিদিকে আলোর বন্যা । পুরো করিডরে অসংখ্য মানুষ । তার মধ্যে আমাদের ক্লাসের অনেকে আছে ।
আমাদের কে আসতে দেখে দেখলাম এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক আমাদের দিকে এগিয়ে এল ।
“তুমি তৌহিদ?”
আমি কোন কথা বললাম না । কেবল একটু মাথা নাড়লাম ।
“এসো আমার সাথে ।“
আমি খ্যাল করলাম করিডরের প্রত্যেকটা চোখ আমার দিকে নিবদ্ধ । কেমন জানি অসস্তি লাগছিল আমার । ভদ্রলোক আমাকে মুক্তার কেবিনে নিয়ে গেল ।
মুক্তা তখন চোখ বন্ধ করে আছে । একজন ডাক্তার যেন কি একটা কাগজ দেখছিলেন ।
আমাদের ঢুকতে দেখে বললেন “আর কিছুক্ষনের মধ্যে সেন্স আসতে পারে ।“
ভদ্রলোক বললেন ডক্তর, “এ হল তৌহিদ।“
“ ওকে ফাইন । ও কেবিনেই থাকুক । সেন্স ফিরে যদি ওকে দেখে তাহলে পেসেন্ট মেন্টালি সাপোর্ট পাবে । আর এখনে কাররো থাকার দরকার নেই । ওকে ? আর কোন সমস্যা হলে তো আমরা আছি ।“
এই কথা বলে ডাক্তার চলে গেলেন ।
ভদ্রলোকও চলে গেলেন । তবে চলে যাওয়ার আগে আমাকে বললেন “আমার মেয়েটা খুব জেদি । যখন যা চেয়েছে তাই পেয়েছে তো তাই এমন হয়েছে । জোর দিয়ে কিছু বলার অধিকার তো আমার নেই কেবল তোমাকে অনুরোধ করতে পারি ।“
বলতে বলতে ভদ্রলোক কেঁদে ফেললেন । আমি খুব অসস্তির মধ্যে পড়লাম ।
“মুক্তা সারা জীবন যা চেয়েছে আমি তাই ওকে এনে দিয়েছি । কিন্তু এবার ও এমন কিছু চেয়েছে যা আমার সামনে থাকা সত্তেও আমি ওকে এনে দিতে পারছি না ।“
আমি কি বলব বুঝতে পারছিলাম না । ভদ্রলোক আর কিছু বলতে পারলেন না । আস্তে আস্তে চলে গেলেন । আমি মুক্তার পাশে এসে বসলাম । মুক্তার মুখ টা কি নিশ্পাপ লাগছে । সাদা ধবধবে বিছানায় শুয়ে আছে । আমি কিছুক্ষন ওর দিক থেকে চোখ ফেরাতেই পারলাম না । এই পরীর মত মেয়েটা আজ আমার জন্য এই বিছানায় শুয়ে আছে ।
যতই মুক্তার উপর রাগ থাকুক ওকে ভাল তো আমি ঠিক বেসেছিলাম । জীবনের প্রথম ভালবাসার অনুভূতি তো ওর হাত ধরেই পেয়েছি । ওকে এই অবস্থায় দেখে মনের মধ্যে শান্তি কি আর লাগে ? কেন জানি নিজেকে বড় অপরাধী মনে হয় । আজ আমার কারনেই ও এখানে ।
সত্যিই সকাল বেলা ওর সাথে একটু বেশি খারাপ ব্যবহার করা হয়ে গেছে । এতো টা কঠিন আচরন না করলেও চলতো । অন্তত ভালবাসার এই দিনে তো এমন করা ঠিক হয় নি ।

সেদিনের পর মুক্তা প্রায়ই আমার সাথে কথা বলতে চাইতো । ক্ষমা চাইতো । এমন কি আমার সব বন্ধুদের কেও ও কনভেন্স করে ফেলেছিল । তারা সবাই আমার কাছে ওর সুপারিশ নিয়ে আসতো । কিন্তু আমি এসব পাত্তা দিতাম না । ওকে এড়িয়ে চলতাম ।
তবে আজ সকালে ক্লাসে আসার সময় মিজান আমাকে বলল যে আজ মুক্তা কোন সিন ক্রিয়েট করতে পারে । সত্যি তাই করল ও । কারনও ছিল ।
আজ ভেলেনটাইন । ভালবাসার দিন । ক্লাস শেষে বের হতে গেলাম মুক্তা পথ আটকালো ।
“তৌহিদ তুমি কি এখনও আমাকে ক্ষমা করবা না ! অন্তত আজ ভালবাসার দিনে ?”
মুক্তার মুখ দেখে মনে হচ্ছিল যেন ও সত্যি কথা বলছে । আমার ইগো আর সেল্ফ রিস্পেক্ট, যাতে ও চরম ভাবে আঘাত করেছে, কিছুতেই ওর কথা বিশ্বাস করতে দিলো না । বরং ওর কথা শুনে মেজাজ টা আরো খারাপ হয়ে উঠল ।
“ শোন ভালবাসা কি জিনিস সেটা তোমার মত মেয়ে কোন দিন বুঝবে না । বুঝতে পারবেও না । আর আমি সারা জীবন যদি একা একা মরেও যেতে হয় তবুও তোমার মত মেয়ের কাছে যাবো না ।“
“ বিশ্বাস করো……”
“বিশ্বাস ? তোমাকে ? নো ওয়ে । পথ ছাড়ো । আমার কাজ আছে ।“
মুর্তির মত কিচ্ছুক্ষন মুক্তা দাড়িয়ে থাকলো । তারপর আমাকে বলল “তুমি তো বিশ্বাস করলে না । আমি তোমাকে সত্যি ভালবাসি । আর তোমাকে ছাড়া বেঁচে থাকতে আমি পারবো না । এটা আমি তোমাকে বুঝিয়ে দেবো ।“
আমি হেসে ফেললাম ।
“মরে যাবে তুমি ? আমার জন্য ? হা হা হা !”
আমি হাসতে থাকি । পুরো ক্লাস তখন আমাদের দিকে তাকিয়ে । তখন আমার মজাই লাগছিল ।
মুক্তা আর কিছু বলল না । দেখলাম ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল । কাঁদতে কাঁদতেই ও চলে গেলো । মিজান পাশেই ছিল । আমার কাছে এসে বলল “এভাবে না বললেও পারতিস !”
সত্যি কি তাই ? নিজের কাছে প্রশ্ন করলাম এভাবে না বললেও কি পারতাম ? তখন এই প্রশ্নের উত্তর জানা ছিল না । এখন ? এই কেবিনে বসে ? এখনও কি ঐ প্রশ্নটার উত্তর আমি জানি ? যখন মিজানের কাছ থেকে প্রথম খবর টা শুনি কেঁপে উঠেছিলাম । কিন্তু পরক্ষনেই আমার ঈগো মাঝখানে চলে এসছিল । আর ঈগোর কাছে আমার সব কিছু পরাজিত হয়েছিল কিন্তু এখন এই পরিস্থিতি তে আমি কি করব ? যেখানে একদিকে রয়েছে মুক্তার ভালবাসা আর ওর বাবা কান্না সাথে ওর জন্য আমার মনের বন্ধ করে রাখা স্বপ্ন । আর অন্য দিকে আমার ঈগো । কোন দিকে যাবো আমি ? হঠাত্ দেখলাম মুক্তার চোখের পাতা যেন একটু কেঁপে উঠল ।
কি যেন মনে হল, ইচ্ছা হল ওর হাতটা ধরি ।
ওর হাতটা ধরলাম । মনে হল যেন ওর হাতটা খানিকটা কেঁপে উঠল । ওর হাতটা আর ছাড়লাম না ।
মনে মনে বললাম প্রথম বার ভূল করেছিলাম তোমাকে ভালবেসে । দ্বিতীয় বার ভূল করেছিলাম তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে । আর তৃতীয় ভূলটা করতাম যদি আজ তোমার হাত টা না ধরতাম ! কিন্তু আমি সে ভূল করিনি । এই দেখো তোমার হাতটা আমি ধরেছি ।
জানি না আমার হাত ধরার জন্যও কিনা অথবা ওর এমনিতেই এখন সেন্স ফেরার সময় হয়েছিল । ও চোখ মেলল । ও হয়তো আশা করেছিল আমি আসবো না । ওর চেহারা কেমন জানি একটা শান্তির ছায়া দেখতে পেলাম ।
ও কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে চাইল । আমি ইশারায় কথা বলতে মানা করলাম । কথা না বললেও ও ওর দুর্বল হাত দিয়ে আমার হাত চেপে ধরতে চাইলো । আমি বুজতে পারছি ও বল পাচ্ছে না তবুও হাতটা চেপে ধরা চেষ্টা করেই যাচ্ছে ।
আমি এবার আমার দুহাত দিয়ে ওর হাত খানি ধরলাম । ওকে আশ্বাস দিলাম যে এই হাত ছুটে যাবে না । আমি ওর হাত ধরে ওর পাশে বসে আছি । আর ও পলকহীন চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে । যেন পলক ফেললেই আমি হারিয়ে যাবো ।
ওর দিকে তাকিয়ে থাকতেই দেখলাম ওর চোখ দিয়ে অশ্রুর ধারা নিচে নেমে চলেছে । নিরব অশ্রু দিয়ে যেন বলতে চাইছে আমি তোমাকে সত্যিই ভালবাসি । এই প্রান দিয়েই ভালবাসি । হঠাত্ লক্ষ্য করলাম যে আমার চোখ দিয়েও পানি পড়ছে । সাথে সাথে ওর প্রতি আমার যত রাগ ছিল ওই চোখের পানি দিয়ে সব ধুয়ে মুছে চলে গেল । মুক্তার ভালবাসার কাছে আমার ঈগো পরাজিত হল । সবাই দোয়া করবেন যেন এমন একজন কে পাই। সবার লাইফ টা এমনই হোক।

বিঃদ্রঃ গল্পটি কাল্পনিক ছিলো। কল্পনা ও ভাবনা থেকে গল্পটি লেখা,। কেমন হয়ছে সবাই জানাবেন আর ভালো থাকবেন সবসময়। আল্লাহ হাফেজ ❤
,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,(তৌহিদ),,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে