স্যার যখন স্বামী সিজন২ পার্ট_১৭

0
2907

স্যার যখন স্বামী সিজন২
পার্ট_১৭
#লিখা জান্নাতুল ফেরদৌস

২ বছর পর,,,

“উফ এভাবে কে বেল বাজাচ্ছে?আসছি…..।”

দরজা খুলার পর,,

“ম্যাডাম আপনার জন্য একটা চিঠি আসছে।”
“আমার জন্য।কে পাঠিয়েছে?”
“তা তো বলতে পারব না।ম্যাডাম এইখানে একটা সাইন করুন।”
“ও,,দেন।”

এরপর চিঠিটা হাতে নিলাম।আজব কে পাঠাল আমাকে চিঠি। দেখতেই হচ্ছে।প্রেরকের নাম দেখতে গিয়েও আর দেখা হল না। কারণ সেই মূহুর্তে নিপা কল দিয়ে বসল।
.
.

নিপা- “আপু তুমি এখনো আসছ না কেন?তানু খুব কাঁদছে।ওকে সামলাতে পারছি না।তাড়াতাড়ি বাসায় আস।”

তমা- “এইতো আসছি।ওয়েট কর একটু।”

নিপা- “হুম তাড়াতাড়ি আস।”

চিঠিটা রুমে রেখে এসে তাড়াতাড়ি ফারিদ স্যারের বাসায় চলে গেলাম।
.
.
নিপা- “আপু দেখো কেঁদে কি অবস্থা করেছে?মেয়েটাকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছি না।নাও এবার ওকে কোলে নাও।”

তমা- “দিপা আপু কই।মেয়েকে ফেলে উনি কোথায় গেলেন?”

নিপা- “আপু শাওয়ার নিতে গেল এখন?ওকে কোলে নেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই ও আপুর কাপড়ে ইয়ে করে বারোটা বাজিয়ে দিছে।পাজি মেয়ে একটা।”

তমা- “যা এইভাবে বলবি না।দেখি বাবু আসো তো আমার কোলে।”

কি কিউট বাবুটা।পৃথিবীর সব বাবুরাই হয়ত এইরকম কিউট হয়।দিপা আপুর ৫ মাসের মেয়ে তানু।ওকে নিয়ে এইখানে আসার পর ওকে সারাদিন কোলে নিয়ে রাখা আমার একটা দায়িত্ব হয়ে পড়েছে।ভালোই লাগে ওকে কোলে নিয়ে হাঁটতে,ওর সাথে গল্প করতে।ওকে দেখলে আমার নিজের বাবুটার কথা খুব মনে পড়ে।ও যদি এই দুনিয়ায় আসত তাহলে ওকেও আমি এইভাবে কোলে নিয়ে হাঁটতাম।

ফারিদ- “তমা কখন আসলে?”

তমা- “এইতো এখন।”

ফারিদ- “তানু তোমার কোলে আসলেই কেমন শান্ত হয়ে যায়। ভালোই চিনে তোমাকে। ”

তমা- “তাইতো মনে হয়।”(লজ্জামুখে)

ফারিদ- “আর তুমি যে তানুকে কত ভালোবাস তা দেখলেই বুঝা যায়।”

তমা- “ছোট বাবুদের খুব ভালো লাগে।ভালো না বেসে পারি কিভাবে?”

ফারিদ- “ইশ আগে বিয়েটা করে ফেললে তুমি এতদিনে আমার ২ বাবুর মা হয়ে যেতে। সমস্যা নাই,চল আজকেই বিয়েটা করে ফেলি।এরপর বছর গড়াতেই তোমাকে আমার বাবুর আম্মু বানাব।”

তমা- “লজ্জায় ইচ্ছে করছে আমি মাটির নিচে ঢুকে যায়।নিপার সামনেই উনি এইসব কি বলছেন।উনার লজ্জাশরম নেই বললেই চলে।কখন কার সামনে কি বলতে হয় এতটুকুও আক্কেলও উনার নেই।”

শাওয়ার শেষ করে দিপা আপু বাইরে আসলেই আমি তাড়াতাড়ি করে আপুর কোলে তানুকে দিয়ে দৌড়ে চলে আসলাম।

ক্লাস নেওয়ার সময় আমার মুখের দিকে উনি হা করে তাকিয়ে থেকে আমাকে লজ্জা দিবে আর বাসায় আসলে এইরকম উল্টাপাল্টা কথা বলে আমাকে আরো লজ্জায় উনি ফেলে দেন।বুড়োর বয়স যত বাড়ছে ততই নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছে।
.
.
কালকের থেকেই প্রচুর বৃষ্টি পড়ছে।বৃষ্টির পানিতে গাছের পাতা থেকে শুরু করে সবকিছু পরিষ্কার আর সতেজ মনে হচ্ছে।এইরকম মেঘলা ঘন বৃষ্টির দিনে প্রকৃতি দেখতেই বেশ ভালোই লাগে।অন্য কোন কাজে আর মন বসে না।গরম কফি নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখাটা আসলেই মনোমুগ্ধকর।

মেঘ- “তমা, এই তমা আমি যাচ্ছি।”

তমা- “যাও”

মেঘ- “কিরে মা,আজকে ভার্সিটি যাবি না।”

তমা- “না মামণি।আজকে বাসায় থাকবো। যেতে ভালো লাগছে না।”

মেঘ- “তোর না আজকে ম্যাথ ক্লাস আছে।তুই না গেলে ফারিদ অনেক রাগ করবে সেটাতো জানিস।”

তমা- “……”

মেঘ- “তমা ফারিদের রাগ সম্পর্কে তোর ভালোভাবে জানা আছে।কেন শুধু শুধু ওর রাগটা উঠাতে চাস তুই?যা তাড়াতাড়ি রেডি হ গিয়ে।”

তমা- “……..”

মেঘ- “তমা, এই তমা আমার কথা কি কানে যাচ্ছে না।আমার কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন?”

তমা- “তোমার কোন কথার উত্তর দিতে আমার ভালো লাগছে না মামণি।মামণি আমি উনার খাইও না পড়িও না।আমার পার্সোনাল বিষয় নিয়ে বাইরের কেউ ইন্টারফেয়ার করোক সেটা আমি মোটেও পছন্দ করি না।আমার যখন ভার্সিটি যেতে ইচ্ছে করবে আমি যাব নাহলে যাব না।ওই ব্যাটার ইচ্ছামত চলতে আমি বাধ্য নয়।”

মেঘ- “ছিহ তমা,ও তোর শিক্ষক হয়।শিক্ষকদের নিয়ে এইভাবে কথা বলতে নেই।ফারিদ যা করে বা করছে তোর ভালোর জন্যই করছে।”

তমা- “আর ভালো ভেবে কি হবে।সব শেষ। আমার আর কোনদিন আর ভালো হবে না।এইরকম নিঃস্ব,আর অসহায়ভাবে সারাজীবন কেটে দিতে হবে।”(মনে মনে)

মেঘ- “তমা, কি ভাবছিস।”

তমা- “কিছু না মামণি।আজকে ভালো লাগছে না।একটা দিন নিজের মত করে কাটাতে চাই প্লিজ।তোমার দেরি হচ্ছে না।”

মেঘ- “ও হ্যারে মা,খেয়াল ছিল না।আমি গেলাম।জোর করছি না তোর উপর।ফারিদ রাগ করবে তাই যেতে বলছিলাম।যেতে ভালো না লাগলে বাসায় থাক।”

তমা- “……”

মেঘ- “সাবধানে থাকিস, আসি”

এর ত্রিশ মিনিট পর বৃষ্টির বেগ আরো বৃদ্ধি পেল।বাইরের রাস্তায় এইসময় এক প্রেমিক প্রেমিকাকে দেখলাম।ছাতা হাতে নিয়ে তারা একে অপরের হাত ধরে গল্প করছে আর একটু পর পর লাজুক দৃষ্টিতে একে অপরকে দেখছে।মনে হচ্ছে কি অফুরন্ত প্রেম একে অপরের জন্য।কিন্তু এদেরকে দেখে আমার মনে হচ্ছে এদের মধ্যে আসলে কোন ভালবাসায় নেই যা দেখা যাচ্ছে শুধু এক মিথ্যা ভালবাসা দেখানো অভিনয় করার নাটক।আর যা দেখা যাচ্ছে না তা আমি দেখতে পারছি।আজকে যে ভালবাসায় তারা নিজেদের মাতিয়ে রেখেছে কালকে সে ভালবাসার জন্য তারা আফসোস করবে।বলবে কেন এত বড় ভুল করলাম তোমাকে ভালবেসে।আগের মতন তোমাকে আর ভালবাসতে ইচ্ছে করে না।তোমার থেকেও হাজারগুণ ভালো লাইফ পার্টনার আমি ডিজার্ভ করি।দিনশেষে এই সামান্য কথায় এতদিনের গড়ে তুলা একটু একটু করে জমে উঠা ভালবাসা এমনেতেই শেষ হয়ে যায়। আসলে দুনিয়াতে ভালবাসা বলতে কিচ্ছু নেই।ভালবাসা মানেই একরাশ কষ্ট, বেদনাকে আকড়ে ধরে জীবনটাকে পাড়ি দেওয়া।

উফ মাথা ব্যথা করছে এইসব কথা ভেবে।ইচ্ছে করছে একটু ঘুমাই গিয়ে।এইরকম দিনে বেটাইমে ঘুমাটানো আসলেই মজার।পুরোটা সকাল ইচ্ছেমতন ঘুমালাম।দুপুরে বাসার টুকিটাকি কাজ করতে করতে বিকেল গড়াল।এখনো অঝড় ধারায় বৃষ্টি পড়ছে।ইচ্ছে করছে এই বৃষ্টির পানিতে গিয়ে ভিজে আসি।হঠাৎ চোখটা গেল কদম গাছটার দিকে।এমন দিনে কদম গাছের ফুলগুলো কি পরিমাণ সুন্দর লাগে।গাছটার দিকে তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে করে।

একটু পরেই আমার সেদিনের চিঠিটার কথা মনে হল।চিঠিটা তো পড়েই দেখলাম না।তাড়াতাড়ি করে বইয়ের পৃষ্ঠায় লুকানো চিঠিটা বের করে পড়তে লাগলাম।

প্রিয় তিলোত্তমা,,
কেমন আছ?আশা করি তুমি তোমার ফারিদ স্যারকে নিয়ে বেশ ভালোই আছ।আর কিছুদিনের মধ্যেই তোমরা বিয়ে করতে যাচ্ছ খবরটা জেনে খুব খুশি হলাম।ফারিদ স্যার তোমাকে অনেক সুখে রাখবে।তিলোত্তমা জানো তুমি সুখে থাকলেও আমি সুখে নেই।তোমার চোখের সেই ঘৃণা আজও আমার চোখে ভাসে।শান্তিতে ঠিকভাবে ঘুমাতে পারি না আজ কতটা বছর।আমার একটা ভুলের কারণে তোমার লাইফটা শেষ হয়ে গেছে আর তার সাথে আমি তোমাকে ভালোবাসার অধিকারটা হারিয়ে ফেলেছি।সত্যি বলতে শুধু ভালোবাসলেই হয় না ভালোবাসার মানুষটাকে শক্ত করে আগলে ধরে রাখতে হয়।বিপদের দিনেও তার হাত ছাড়তে হয় না।কিন্তু আমি সেটা পারিনি।বিপদের দিনে তোমার হাতটা ছেড়ে দিয়েছি শুধু নিজেকে বাঁচানোর জন্য।কিন্তু ওই ঘটনার পর আমি ডিপ্রেশনে চলে যায়। এরপর মা আমার এই অবস্থা দেখে সুমার সাথে আমার বিয়েটা করে দেয়।মা ভেবেছিল হয়ত আমি এবার আগের মতন হয়ে যাব।কিন্তু জানো সুমা মেয়েটা আমাকে বড্ড ভালোবাসে।অথচ আমি কারোর ভালোবাসায় ডিজার্ভ করি না।ভয় হয় তোমার সাথে যা হয়েছে সেই একি ঘটনা যদি আমার কারণে ওর সাথে হয় তাহলে আমি আর বাঁচতে পারব না।তাই আস্তে আস্তে সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলাম।বিয়ের বাড়িতে তোমাকে দেখে খুব খুশি হয়েছিলাম।ভেবেছিলাম তোমার কাছে মাফ চাইলে তুমি আমাকে মাফ করে দিবে।কিন্তু তুমি আমাকে মাফ কর নি।হয়ত কোনদিনও তা পারবে না।আমার মতন পাপীকে আসলে মন থেকে মাফ করা যায় না তাই সেদিন হয়ত আমাকে তুমি ফিরিয়ে দিয়েছিলে।এরপর রাজশাহীতে আসার পর আমার অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে।তিলোত্তমা আর পারছিলাম না নিজেকে সামলাতে।তাই নিজেকে নিজে শেষ করে দিলাম।জানি ওইপারেও আমার জন্য শান্তিতে থাকা কষ্টকর হবে।কিন্তু কি করব বল খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার।তাই শেষ পর্যন্ত আমাকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হল।পারলে এই পাপীকে মাফ করে দিও।

ইতি
তোমার কষ্টের পাপীদার
.
.
তানভীর এটা তুমি কি করলে?কেন করতে গেল এই পাপ কাজ।আল্লাহ…..বলে চিৎকার করে উঠলাম।ওকে আমি মাফ করতে পারি নি এটা সত্য কথা কিন্তু তাই বলে ও এইরকম পাপ কাজ করবে।ও আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা।আর ভালোবাসার মানুষ এইরকম কাজ করলে কি করে নিজেকে ঠিক রাখব।কেন আমি সেইদিন ওকে মাফ করে দিলাম না। ওইদিন যদি ওকে ফিরিয়ে না দিতাম তাহলে হয়ত আজ ও জীবিত থাকত।চিৎকার করে কাঁদতে থাকলাম।কি হয়ে গেল এইসব!
.
.
ছাদে এসে দুইহাত মিলে বৃষ্টির পানিতে ভিজতে থাকলাম।এমন বৃষ্টির দিনে তানভীর আমাকে প্রপোজ করেছিল।সেদিনটা খুব স্পষ্টভাবে আমার চোখে এখন ভেসে উঠছে।

তমা- “কি ব্যাপার আমাকে এইখানে নিয়ে এলে কেন?”

তানভীর – “আসলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল।”

তমা- “তাহলে বলে ফেল এই বলে খোলা বিশাল মাঠটার দিকে একবার চোখ বুলালাম।”

তানভীর – “…….”

তমা-” কি ব্যাপার অনেক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি।তখন থেকেই শুনে আসছি কিছু বলবে।কি বলবে তাড়াতাড়ি বলে ফেল।আকাশটা মেঘলা লাগছে।মনে হয় এখনি বৃষ্টি নামবে।

তানভীর – “তমা, নার্ভাস লাগছে।”

তমা- “আমার সামনে কথা বলতে তোমার নার্ভাস লাগছে।আমি কি বাঘ নাকি ভাল্লুক।আজব।হেয়ালি না করে যা বলতে চাও বলে ফেল।”

তানভীর-“আসলে,আমি..আমি,আসলে..আসলে,আমি..

তমা -” মাথা ফাটিয়ে দিবো একেবারে।কথা আটকিয়ে যাচ্ছে কেন?এই যা বলতে না বলতে বৃষ্টি নেমে গেল।এখন বাসায় যাব কি করে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে