শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ৩০/অন্তিম পর্ব

0
3165

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ৩০/অন্তিম পর্ব

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফা সাইন করছে দেখে বুকের ভিতর কেমন যেন ব্যথা অনুভব হচ্ছে। সবকিছু কেমন যেন অন্ধকার হয়ে আসছে, মনে হচ্ছে এখনি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাবো। তাড়াতাড়ি নীলিমার হাতটা চেপে ধরলাম।
নীলিমা: ভাইয়া কি হয়েছে বসো এখানে
প্রিতি: ভাবি (বসতে যাবো তখন প্রিতির চিৎকার শুনে সামনে তাকালাম, আলিফা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে)
নীলিমা: ভাইয়া যেও না পরে যাবে
আমি: ছাড় আমাকে (তাড়াতাড়ি আলিফার কাছে আসলাম)
আমি: আলিফা কি হয়েছে
আব্বু: মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গেছে পানির ছিটা দে। (আলিফার চোখে মুখে প্রিতি নীলিমা অনেক্ষণ পানি ছিটিয়ে দিলো কিন্তু জ্ঞান তো ফিরছে না)
ছোটমা: রিয়ান ডক্টর কে ফোন কর তাড়াতাড়ি
রিয়ান: ঠিক আছে
আব্বু: বৌমা কে বরং রুমে নিয়ে গিয়ে শুয়েদে
আমি: ঠিক আছে
নীলিমা: ভাইয়া তুমি কোলে করে নিবে কিভাবে তোমার শরীরই তো ঠিক নেই
আমি: কিছু হবে না।

আলিফাকে এনে বিছানায় শুয়ে দিলাম। নিথর হয়ে শুয়ে আছে, কি হয়েছে ওর কিছুই বুঝতে পারছি না।
রিয়ান: ভাইয়া ডক্টর এসেছে
আমি: হুম (দূরে এসে দাঁড়িয়ে আছি, ডক্টর আলিফাকে দেখছে। কেন যেন খুব ভয় হচ্ছে)
আব্বু: ডক্টর কি হয়েছে আমার বৌমার
ডক্টর: কিছুক্ষণের মধ্যেই জ্ঞান ফিরে আসবে উনাকে একটু একা থাকতে দিন। সবাই নিচে আসুন।
আব্বু: ঠিক আছে চলুন।

ড্রয়িংরুমে আসতেই আব্বু ডক্টর কে জিজ্ঞেস করলেন
আব্বু: ডক্টর আমার বৌমার খারাপ কিছু হয়নি তো
ডক্টর: না না খারাপ কিছুনা বরং খুশির খবর আছে
আব্বু: মানে
ডক্টর: আপনি তো দাদা হবেন (কথাটা আমার কানে বার বার বাজছে, সত্যি কি)
আব্বু: সত্যি
ডক্টর: হ্যাঁ তবে এই অবস্থায় মেয়েটাকে কোনোরকম টেনশন দেওয়া ঠিক হবে না। অতিরিক্ত টেনশন করার কারণেই আজ উনার এই অবস্থা হয়েছে, দেখবেন আর যেন কোনো…
আব্বু: না না আর কোনো টেনশন করতে হবে না আমার বৌমাকে
ডক্টর: ঠিক আছে আমি ওষুধ লিখে দিয়ে যাচ্ছি, উনাকে সাবধানে রাখবেন
আব্বু: সাবধানে তো রাখবোই আমি দাদা হবো সাবধানে না রাখলে হবে। (ডক্টর ওষুধ লিখে দিয়ে চলে গেলো। ডক্টর যেতেই প্রিতি লাফিয় উঠলো)
প্রিতি: হুররেরে আমি ফুঁপি হবো
রিয়ান: মনে হচ্ছে এতোক্ষণ ডক্টর এর জন্য লাফটা দিতে পারছিলি না
প্রিতি: একদম ঠিক ধরেছ
আব্বু: নীলিমা ওইযে পেপারটা দেতো আমার হাতে (আব্বু ডিভোর্স পেপারটা দেখিয়ে দিলেন, নীলিমা পেপারটা এনে আব্বুর হাতে দিতেই আব্বু ছিড়ে ফেললেন)
আব্বু: এইটার আর কোনো প্রয়োজন নেই
চাচ্চু: একদম ঠিক।

সবাই খুশি শুধু আমি খুশি হবো নাকি কষ্ট পাবো ভেবে পাচ্ছি না। এই শেষ মুহূর্তে এসে এমন একটা খবর শুনতে হবে ভাবতেও পারিনি। এতোক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে বসে সবার আনন্দ দেখছিলাম। আর এখানে থাকতে পারবো না উঠে দাঁড়ালাম।
রিয়ান: ভাইয়া কোথায় যাচ্ছ মিষ্টি খেয়ে যাও প্রিতি মিষ্টি আনতেছে।
রিয়ানের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে চলে আসলাম।

আলিফার পাশে বসে আছি এখনো ওর জ্ঞান ফিরেনি। আলিফার একটা হাত আমার দুহাতের মুঠোয় আনলাম। আমার খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু সেটা কি খুশির কান্না নাকি কষ্টের বুঝতে পারছি না। প্রত্যেকটা মেয়ে যেমন মা হতে চায় প্রত্যেকটা ছেলেও তো বাবা হতে চায়, আমিও চেয়েছিলাম কিন্তু এমন একটা মুহূর্তে বাবা হবার খবরটা শুনবো কখনো ভাবিনি। আমি এখন আনন্দে কাঁদবো নাকি কষ্টে কাঁদবো কিছুই তো বুঝতে পারছি না।
আমি: রাগিণী তুমি বলে দিবা এখন আমি কি করবো। আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছে। (আলিফার হাতের উপর মাথা রেখে কাঁদছি, হঠাৎ মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। তাকিয়ে দেখি আলিফার জ্ঞান ফিরেছে)
আমি: আলিফা তুমি ঠিক আছ তো
আলিফা: হ্যাঁ এভাবে কাঁদছ কেন মনে হচ্ছে আমি মারা গে…
আমি: চুপ কি বলছ এসব (আলিফার মুখ চেপে ধরলাম, ও জোর করে সরিয়ে দিলো)
আলিফা: তো কি বলবো এমন ভাবে মাথা ঠুকিয়ে কাঁদছ মনে তো হচ্ছে…
আমি: আবার বলতেছ
আলিফা: সত্যি করে বলো কি হয়েছে (আলিফা প্রেগন্যান্ট এইটা কি ওকে বলবো। বলার পর আলিফা কি করবে। হয়তো রাতুলকে ভালোবাসা সত্বেও আমার কাছে থেকে যাবে। কিন্তু আমি তো ওকে এভাবে চাইনা। যদি ভালোই না বাসবে তাহলে ও আমার হ…)
আলিফা: কি হলো চুপ হয়ে আছ কেন
আমি: কিছু হয়নি তো, তুমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলে তাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম
আলিফা: অজ্ঞান হবো না আবার ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে গিয়ে তো আমার নিঃশ্বাস আটকে যাচ্ছিল
আমি: কেন তুমি ডিভোর্স চাও না (আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
আলিফা: এখনো কি বুঝতে পারছ না
আমি: না আর এভাবে বুঝতে চাইও না আমি, তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই
আলিফা: না আমি ডিভোর্স চাই না শুনেছ তুমি
আমি: প্লিজ আস্তে চিৎকার করো তুমি অসুস্থ
আলিফা: অসুস্থ এইটা মনে আছে তোমার, তুমি পারলে কিভাবে আমার এই অবস্থায় ডিভোর্স পেপার এনে আমার হাতে দিতে
আমি: ডিভোর্স চাওনা কেন
আলিফা: আরে বোকা আমি তোমাকে ভালোবাসি তাই ডিভোর্স চাই না। আর কিভাবে কতোবার বুঝাবো তোমাকে এইটা
আমি: হুম
আলিফা: রিফাত আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি তোমার কাছে থাকতে চাই। আমি এতোদিন এভাবে বলিনি ঠিকি কিন্তু অনেক ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করেছি তোমাকে। কারণ আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে বুঝবে কিন্তু তুমি বুঝনি উল্টো ভেবে নিয়েছ আমি রাতুলকে ভালোবাসি
আমি: তারমানে কি তুমি রাতুলকে ভালোবাস না।
“আলিফা আলিফা” হঠাৎ ডাক শুনে দরজায় তাকালাম রাতুল এসেছে। আলিফার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে রুম থেকে বেরিয়ে আসলাম। খুব তো এতোক্ষণ বলেছে আমাকে ভালোবাসে এখন রাতুল এসেছে দেখি রাতুলকে কি বলে।

সবাই মিষ্টি খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত, কতোক্ষণ এই আনন্দ থাকবে সেটা তো আলিফার উপর…
রিয়ান: ভাইয়া এখানে একা বসে আছ কেন নাও মিষ্টি খাও
আমি: কিসের মিষ্টি খাবো হ্যাঁ সবাই পাগল হয়ে গেছ নাকি। যে মেয়েটা আমাকে ভালোই বাসে না তাকে নিয়ে এতো আনন্দ কিসের
আব্বু: আলিফা তোকে ভালোবাসে কিনা এইটা আমি জানিনা, আনন্দটা আমার পরিবারে নতুন মেহমান আসবে এইটার জন্য
রিয়ান: আব্বু কে বলেছে ভাবি ভাইয়া কে ভালোবাসে না। ভাইয়া অনেক বোকা তাই ভাবির ভালোবাসা বুঝতে পারেনি।
আমি: কি বলতে চাইছিস
রিয়ান: এটাই যে তুমি অজতা চিৎকার করলেই ভাবির ভালোবাসা মিথ্যে হয়ে যাবে না। আমি জীবনে অনেক বোকা দেখেছি কিন্তু তোমার মতো একটাও দেখিনি। আমি দূর থেকে বুঝতে পেরেছি ভাবি তোমাকে ভালোবাসে আর তুমি…
আমি: হ্যাঁ আমি শুধু বোকা তাই ওর ভালোবাসা বুঝিনি কিন্তু তুই কি তুই তো আমার থেকে বড় বোকা
রিয়ান: মানে
নীলিমা: রিফাত ভাইয়া থামো বলছি
প্রিতি: আজব তো তোমরা কি এখন ঝগড়া করবে নাকি
ছোটমা: তোরা ভুল বুঝছিস রিফাত এসব নিজ থেকে করছে না, ও কষ্টে এমন করছে।
আলিফা: আর কষ্টে এমন করতে হবে না ছোটমা (হঠাৎ আলিফার কন্ঠ শুনে পিছনে তাকালাম, ও রাতুলের হাত ধরে নিচে নেমে আসছে)
আমি: আলিফা তুমি অসুস্থ নিচে…
আলিফা: মনের অসুখের চেয়ে বড় অসুখ আর নেই রিফাত। অনেক হয়েছে আজ সবকিছু ঠিক করতে দাও।
আমি: মানে
আলিফা: রাতুল আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই
রাতুল: বলো
আলিফা: যদি কখনো পারো আমায় ক্ষমা করে দিও। আমি তোমাকে ভালোবাসতাম কিন্তু হুট করে রিফাত আমার জীবনে এসে সবকিছু উলটপালট করে দিয়েছে। একসাথে চলতে গিয়ে কখন যে ওকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি নিজেও জানিনা। রাতুল এইটা কি রিফাত এর ভালোবাসার জাদু নাকি বিয়ে নামক বন্ধন এর জাদু আমি জানিনা। শুধু এইটুকু জানি আমি রিফাতকে ভালোবেসে ফেলেছি, ওকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারিনা। আমি রিফাতের কাছে থাকতে চাই। রাতুল যদি কখনো পারো…
রাতুল: আলিফা ভালোবাসা তো কাউকে বলে আসে না। মানুষের মন খুব অদ্ভুত কখন কাকে ভালোবেসে ফেলে তা সে নিজেও বুঝতে পারেনা। আমি প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলাম তুমি রিফাত ভাইয়াকে ভালোবাস কিন্তু আমি তোমাকে নিজ থেকে কিছু বলিনি যদি ভুল বুঝ এই ভেবে। হ্যাঁ এইটাও সত্যি আমি তোমাকে যেমন ভালোবাসতাম এখনো তেমনই ভালোবাসি। তুমি চাইলে আমি তোমাকে এখন গ্রহণ করতাম এমনকি তুমি প্রেগন্যান্ট জেনেও গ্রহণ করতাম। কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমার শরীরকে নয়। আ…
আলিফা: রাতুল একটু আগে তুমি কি বললে, আমি প্রেগন্যান্ট মানে কি।
রাতুল: কেন তুমি জানোনা আমি তো বাসায় এসেই দেখলাম সবাই মিষ্টি খাচ্ছে, রিয়ান তো এই খবরটা দিয়ে আমাকে মিষ্টিও খাইয়ে দিয়েছে
আলিফা: রিফাত তুমি আমার থেকে এতো বড় একটা কথা লুকিয়ে রাখলে
ছোটমা: ওর কোনো দোষ নেইরে মা ডক্টর তো বললেনই কিছুক্ষণ আগে তখন তুমি অজ্ঞান অবস্থায় ছিলে (আলিফা কিছুক্ষণ চুপ থেকে রাতুলের কাছে গিয়ে ওর হাত দুটু ধরলো)
আলিফা: রাতুল প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিও
রাতুল: কাঁদছ কেন তুমি যদি রিফাত ভাইয়ার কাছে ভালো থাকো তাহলে তো আমি খুশি হবো। আলিফা আমি তোমাকে ভালোবাসি এর মানে এই নয় যে তোমাকে আমার কাছেই থাকতে হবে আমিই শুধু তোমাকে ভালো রাখতে পারবো, তুমি যেখানেই থাকো যার সাথেই থাকো তুমি শুধু ভালো থাকলেই আমি খুশি। আর আমি এই কয়দিনে বুঝেছি এই বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ তোমাকে ভালোবাসে, আর রিফাত ভাইয়া তো তোমাকে তার জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসে, আমার বিশ্বাস তুমি উনার কাছে অনেক ভালো থাকবে।
আলিফা: রাতুল তুমি এতো সহজে মেনে নিবে আমি ভাবতেও পারিনি
রাতুল: আর কেঁদো না প্লিজ (রাতুল আলিফার চোখের পানি মুছে দিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো)
রাতুল: আলিফা নাহয় বাচ্চা মেয়ের মতো তাই কাঁদছে কিন্তু আপনি কাঁদছেন কেন
আমি: স্বার্থপরের মতো তোমার থেকে আলিফাকে কেড়ে নিলাম আমায় ক্ষমা করে দিও ভাই
রাতুল: আপনি কোথায় কেড়ে নিলেন, আলিফা নিজেই তো আপনার কাছে থাকতে চেয়েছে আর আমি তো খুশি মনে আপনাকে দিচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা আপনি আপনার ভালোবাসার জোরে আলিফাকে নিজের করে পেয়েছেন।(আর কিছু বলতে পারলাম না রাতুলকে জরিয়ে ধরলাম। কোনো মানুষ নিজের ভালোবাসা কে এভাবে দিয়ে দিতে পারে আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না)
রাতুল: ভাইয়া আর কান্না নয়, আর হ্যাঁ আলিফা খুব ভালো মেয়ে ওকে কখনো কষ্ট দিবেন না। (রাতুল চলে যেতে চাইলো আব্বু এসে ওকে জরিয়ে ধরে কেঁদে দিলেন)
রাতুল: সবাই এতো কাঁদছ কেন, কেঁদো না প্লিজ।
রাতুল আব্বুকে ছেড়ে দিয়ে আলিফার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো “ভালো থেকো, আর আপনাদের সবার কাছে আমি একটা জিনিসই চাই, এই পাগলীটাকে সবাই আগলে রাখবেন প্লিজ”
রাতুল কথাটা বলেই বেরিয়ে গেলো।

সবাই নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ ভাবতে পারিনি রাতুল এভাবে নিজের ভালোবাসাকে সেক্রিফাইজ করবে। এতোটা ভালো মানুষ কিভাবে বাসতে পারে। রা…
আলিফা: রিফাত
আমি: হুম
আলিফা: আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ
আমি: ক্ষমা তুমি কেন চাচ্ছ ভুল তো আমার তুমি এতোবার বুঝানোর পরও আমি তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারিনি
আলিফা: আই লাভ ইউ রিফাত (আলিফা এসে আমাকে জরিয়ে ধরলো, ওর তো দেখি লজ্জা নেই সবার সামনে)
আব্বু: এই সবাই চোখ বন্ধ করো আমার ছেলে আর বৌমা রোমান্স করছে (আব্বুর কথা শুনে আলিফা লজ্জা পেয়ে আমাকে ছেড়ে দিলো)
আমি: আব্বু তুমি না
আব্বু: আমি কি, আমি তোদের বন্ধু বুঝেছিস।
আমি: হুম বুঝেছি তোমার মতো বাবা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
আব্বু: হয়েছে হয়েছে সবকিছু তো ঠিক হয়ে গেলো এবার নতুন করে সবকিছু শুরু করো। দুজন মিলে সুন্দর করে জীবনটা সাজাও অনেক অনেক শুভ কামনা রইলো আমার ছেলে আর বৌমার জন্য।(আব্বুকে এসে জরিয়ে ধরলাম। সত্যি এমন বাবা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার যা সবার ভাগ্যে থাকেনা। আমি সত্যি অনেক লাকি)
আব্বু: হয়েছে এবার রুমে যা আমার আলিফা মা’টা তো অসুস্থ। আর বাকি সবাই যার যার রুমে যাও।
রিয়ান: তুমি কোথায় যাচ্ছ (চলে আসতে চেয়েছিলাম হঠাৎ রিয়ানের কথা শুনে তাকালাম, ও নীলিমার হাত ধরে আছে। সবাই তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে)
রিয়ান: কি ভেবেছিলে আমি ভাইয়ার মতো বোকা যে তোমার ভালোবাসা বুঝবো না (নীলিমা ভয় পেয়ে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকিয়ে তাকালো)
আমি: আমার দিকে তাকাচ্ছিস কেন আমি কিছু বলিনি
রিয়ান: ভাইয়া কিছু বলেনি আমাকে। সবসময় আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকো, আমার দিকে তাকালে দুচোখে পানি ছলছল করে, আমি শাড়ি পড়া পছন্দ করি তাই শাড়ি পড়ো আমি কিছু বুঝিনা নাকি।
আব্বু: কি হচ্ছে একটু বলবি রিয়ান
আমি: আব্বু আমি তোমাদের বলছি, আমাদের নীলিমা রিয়ানকে তিনবছর ধরে ভালোবাসে কিন্তু নিলা মারা যাওয়াতে ভয় পেয়ে কাউকে বলেনি।
আব্বু: এতে ভয় পাওয়ার কি আছে, কিরে ছোট তোর কোনো আপত্তি আছে নীলিমা আমার ছেলের বউ হলে
চাচ্চু: একদম না
রিয়ান: এই পাগলী কাঁদছ কেন
নীলিমা: আসলে রিয়ান ভাইয়া আ….
রিয়ান: এক থাপ্পড় দিয়ে গালে দাগ বসিয়ে দিবো, হাব্বিকে কি কেউ ভাইয়া ডাকে। ছোটমা তোমার মেয়েকে এইটুকুও শিখাওনি
ছোটমা: তুই সব শিখিয়ে নে
আব্বু: হাহাহা চলোরে সবাই চলো আমার ছেলে আর বৌমাদের রোমান্স করার সুযোগ দাও (সবাই চলে গেলো আমি রিয়ানের পাশে এসে দাঁড়ালাম। নীলিমা এখনো ভয় পেয়ে আছে)
রিয়ান: ভাইয়া ও তোমাকে বলতে নিষেধ করলো আর তুমিও বললে না
আমি: আসলে নীলিমা বলছিল তুই নাকি অন্য কাউকে ভালোবাসিস
রিয়ান: সেদিন ছাদে তোমার আর নীলিমার মধ্যে কি কথা হয়েছে আমি সব শুনেছি
আমি: কিন্তু তুই তো হসপিটালে ছিলি
আলিফা: আমি ওকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম, আমি আগেই আন্দাজ করেছিলাম নীলিমা ওকে ভালোবাসে। তাই আমি চাইছিলাম রিয়ান সব নিজে শুনোক
রিয়ান: নীলিমা তুমি অজতা একটা ভুল ধারনা নিয়ে এতোটা কেঁদেছ। সেদিন আমি ফোনে আই লাভ ইউ বলেছি এইটা শুনেছ তারপর কি কি বলেছি এইটা না শুনেই চলে এসেছিলে। আসলে সেদিন আমি আমার একটা বন্ধুকে প্রপোজ শিখিয়ে দিচ্ছিলাম আর তুমি….
নীলিমা: এই কথাটা এতোদিন বললেই হতো আমি এতো কাঁদতাম না
রিয়ান: আসলে আমি এই দিনটার অপেক্ষা করছিলাম, ভাইয়া ভাবির মিল হলেই আমি তোমাকে প্রপোজ করবো ভেবে রেখেছিলাম
আলিফা: তাহলে আর দেরি করছ কেন তাড়াতাড়ি প্রপোজ করে ফেলো।

রিয়ান পকেট থেকে রিং বের করে নীলিমার সামনে হাটু গেড়ে বসলো।
রিয়ান: নীলিমা উ…
নীলিমা: হয়েছে হয়েছে আর প্রপোজ করতে হবে না আমি এমনিতেই তোমার বউ হবার জন্য পাগল হয়ে আছি
রিয়ান: তুমি আসলেই একটা পাগলী (রিয়ান উঠে নীলিমাকে জরিয়ে ধরলো। আমি আলিফার কানের কাছে ফিসিফিস করে বললাম)
আমি: আলিফা চলো
আলিফা: দাঁড়াও না ওদের রোমান্স দেখতে দাও
আমি: ছোট ভাইয়ের রোমান্স দেখাচ্ছি তোমাকে।
আলিফা: এই কোলে নিচ্ছ কেন।

আলিফাকে কোলে করে এনে রুমে দাঁড় করালাম।
আলিফা: এই দরজা বন্ধ করছ কেন
আমি: রোমান্স করবো তাই
আলিফা: একদম কাছে আসবে না
আমি: সরি মানতে পারলাম না (আলিফাকে এসে জরিয়ে ধরলাম)
আমি: লাভ ইউ পাগলী
আলিফা: শেষ পর্যন্ত রাগিণী তোমারই হলো
আমি: হুম (আলিফাকে জরিয়ে ধরে খুব কাঁদছি। সত্যি তো এতোকিছুর পর শেষ পর্যন্ত রাগিণী আমারই হলো)
আলিফা: রিফাত কাঁদছ কেন আর কান্না নয় প্লিজ
আমি: হুম আর কান্না নয় এখন থেকে শুধু রোমান্স আর রোমান্স (আলিফাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওর মিষ্টি দুইটা ঠোঁটে আমার ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণ পর আচমকা ওকে ছেড়ে দিলাম)
আলিফা: কি হলো
আমি: ভাবছি
আলিফা: কি
আমি: শুধু কি বাচ্চার মাম্মি কে আদর করবো নাকি বাচ্চাকেও তো করতে হবে
আলিফা: মানে।

আলিফার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মৃদু হেসে হাটু গেড়ে বসে পড়লাম। একহাত দিয়ে আলিফার কোমর জরিয়ে ধরে আরেক হাতে আলিফার পেটের শাড়ি সরিয়ে দিয়ে ওর পেটে আলতো করে একটা চুমু দিলাম। আলিফা লজ্জায় দুহাত দিয়ে মুখ ডেকে ফেলেছে দেখে উঠে দাঁড়ালাম। ওর দুহাত মুখ থেকে সরিয়ে দিয়ে আমার কোমরে রাখলাম। আলিফার কোমর জরিয়ে ধরে ওকে টান দিয়ে আমার আরো কাছে নিয়ে আসলাম।
আমি: বলতো আমার আব্বু হবে না আম্মু হবে
আলিফা: আমার তো ছেলে চাই
আমি: কিন্তু আমার তো মেয়ে চাই
আলিফা: উহু ছেলে হবে
আমি: না মেয়ে হবে
আলিফা: ছেলে
আমি: মেয়ে
আলিফা: আচ্ছা যাও মেয়েই হবে
আমি: আচ্ছা যাও ছেলেই হবে।
দুজনেই একসাথে হেসে উঠলাম। এই ঝগড়া, খুনসুটি, ভালোবাসা, রাগ, অভিমান চলবে সারাজীবন….

#সমাপ্ত??

(পুরো গল্পটি কাল্পনিক ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর হ্যাঁ ভালো না লাগলে প্লিজ এড়িয়ে চলুন বাজে মন্তব্য করবেন না। আর যারা ধৈর্য নিয়ে আমার এমন পঁচা মার্কা গল্প পড়েছ তাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। নতুন গল্প নিয়ে খুব শীঘ্রই আসছি সাথেই থাকুন টাটা?)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে