রোমান্টিক_অত্যাচার-২ পর্ব-১৬

0
3037
রোমান্টিক_অত্যাচার-২
পর্ব-১৬
লেখিকাঃ #Israt_Jahan
ধারনাঃ #Kashnir_Mahi
-“মেহেরুনকে বিছানার উপর থেকে তুলে আমার সামনে দাড় করালাম। সত্যি বলতে ওর আকর্ষণীয় শরীরের উপর আমার নজর গেলেও তার থেকে বেশি আকৃষ্ট হয়েছি আমি ওর রূপে।শারীরিক গঠন,ওর সৌন্দর্য ওর কণ্ঠস্বর সব মিলিয়ে আমি সত্যি ওর মোহে পড়ে যাচ্ছি। ওর প্রতি আমার উন্মাত্ততা শুধু বেড়েই চলছে।তা থেকে আমি কোনোভাবেই নিজেকে নিজের বশে আনতে পারছিনা। ও পবিত্র, ও দীপ্তিময়ী, মায়াবিনী। ঠিক যেন সদ্য ফোটা লাল গোলাপের মত পবিত্র সে। ওকে যে এভাবে আমার অপবিত্র করতে বিবেকে বাঁধা দিচ্ছে।মনে হচ্ছে ওকে শুধু এক রাতের সঙ্গিনী হিসেবে নয় আমার জীবনের শেষ রাত পর্যন্ত ওকে আমার সঙ্গিনী হিসেবে চায়।
ফালাক মেহেরুনের দুই বাহু চেপে ধরে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে এমন চিন্তাভাবনা করছে।আর মেহেরুন ফালাকের কাছ থেকে ছুটে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।মেহেরুন যতই অস্ত্রচালনা জানুক কিন্তু একজন যোয়ান পুরুষের শক্তিবলের কাছে একজন নারীর শক্তিবল সর্বদাই তুচ্ছ হয়।মেহেরুন তার শরীরের সমস্ত শক্তি খরচ করেও ফালাকের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে পারছেনা।কাঁদতে কাঁদতে মেহেরুন ফালাককে বলল,
-“দয়া করে আমাকে আপনার স্পর্শ থেকে মুক্তি দিন।আমি আপনার মত ঘৃণ্য মানুষের অপবিত্র স্পর্শ সহ্য করতে পারছিনা।
পারছিনা আমি আপনার নারী দেহের প্রতি লোভী দৃষ্টি সহ্য করতে।এর থেকে আমাকে হত্যা করুন।আমি কোনোদিনও কোনো পর পুরুষের সামনে যাইনি।
কোনো পর পুরুষ আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
সেখানে আপনার মত নিকৃষ্ট মানবের স্পর্শে আমার পুরো দেহে আগুন জ্বলে উঠছে।ঘৃণা হচ্ছে আমার। দয়া করে আমাকে আপনার মত পাপিষ্ঠের হাত থেকে মুক্তি দিন।জীবিত থাকতে আমি দেখতে পারবোনা একজন পাপিষ্ঠ পর পুরুষ আমার শরীর ভোগ করছে। এর থেকে আমার মৃত দেহকে আপনি আপনার ভোগের সামগ্রী রূপে গ্রহণ করুন।আপনার কাছে এটা একটা মৃত্যু পথযাত্রীর শেষ চাওয়া।
মেহেরুনের এমন ধরনের কথা শুনে ফালাক তার চাহিদার কথা ভুলে গেল। মেহেরুনের কথাগুলো এতটাই বিষাক্ত ছিল যে তার মত দয়া মায়াহীন এক হিংস্র পশুর সমতুল্য মানুষ হয়েও তার হৃদয়ে কথাগুলো আঘাত করেছে।সে বুঝতে পেরেছে যে সে কতটা ঘৃণ্যতম ব্যক্তি হলে কেউ তাকে এমন কথা বলতে পারে যে মৃতদেহ কে তার ভোগের সামগ্রী রূপে গ্রহণ করতে।কথাগুলো শুনে হিংস্র চাহনিতে মেহেরুনের দিকে তাকাল ফালাক। তারপর আপনা আপনি ই মেহেরুনের বাহুদ্বয় সে নিজের অজান্তে ছেড়ে দিল। কিছুসময় মেহেরুনের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে রইল।এই প্রথম সে কোনো নারীর থেকে তার প্রতি এমন ধরনের বাক্য(কথা) শুনলো।যা শোনার পর তার মনে হচ্ছে, আল্লাহর সৃষ্টি পৃথিবীর সবথেকে নিকৃষ্টতম জীব শূকরের থেকেও সে বেশি নিকৃষ্ট জীব।ফালাকের মনে হচ্ছে সে তার বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে।মেহেরুনের কথার উত্তর সে কি দিবে ভেবে পাচ্ছেনা বা এখন তার কি করা উচিত তাও ভেবে পাচ্ছেনা।কিছুসময় এভাবে চুপ থাকার পর ফালাক কথা বলল,
-“নিজের কক্ষে চলে যাও।
মেহেরুন ফালাকের কথা শুনে বেশ অবাক হল।সে যা জানে ফালাকের সম্পর্কে তাতে ফালাক এতক্ষণ চুপ না থেকে তার উপর আক্রমণ করার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে মেহেরুনকে নিজের কক্ষে চলে যেতে বলছে।তাই অবাক চোখে মেহেরুনের ফালাকের দিকে তাকিয়ে রইল।এদিকে ফালাক সেটা খেয়াল করল যে মেহেরুন এখনো তার স্থান ত্যাগ করেনি।তাই সে আবার বলল,
-“আমি যা বলেছি তোমার কি তা বোধগম্য হয়নি?
আমি এক কথা পুনরায় ব্যক্ত করা অপছন্দ করি।
ফালাকের কথা শুনে মেহেরুন আর এক মুহূর্ত সময় অতিবাহিত না করে দৌড়ে তার নিজের কক্ষে চলে গেল এবং খুব দ্রুত কক্ষে দরজা বন্ধ করে দিল। মেহেরুন ভাবছে ফালাক এখন তাকে ছেড়ে দিলেও পরে যদি আবার তার উপর আক্রমণ করে তাই সে কক্ষের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানার এক কোণায় বসে রইলো।আজ রাতে মেহেরুন ঘুমাবেনা এমনটাই ভেবে নিয়েছে সে। এদিকে মেহেরুন যখন ফালাকের কক্ষ থেকে দৌড়ে চলে এল ফালাক সেই দৃশ্য খুব ভালো করে অবলোকন করলো।ওর কাছে ঐ দৃশ্য দেখে এটাই মনে হল যে সে একজন মানুষ হয়ে কতটা ভয়ংকর হলে তার থেকে কেউ এভাবে পালিয়ে যেতে পারে।কাঠের আরামদায়ক কেদারায় বসে ফালাক মেহেরুনের বলা কথা ভাবতে লাগলো।বারবার ওর কানে মেহেরুনের একটা কথাই বাজছে,” এর থেকে আমার মৃত দেহকে আপনি আপনার ভোগের সামগ্রী রূপে গ্রহণ করুন”।এই বাক্যটি ফালাককে অবাক করেছে।নিজের চরিত্রের ইতিহাস নিয়ে সে এখন নিজেই ভাবছে।এতকাল সে এটা ভেবে গর্বিত হতো যে বাঘের থেকেও সবাই তাকে বেশি ভয় পায়।আর আজকে তার এই চরত্রটাই বেশি ভাবাচ্ছে।কিছুসময় পর ফালাক তার কিছু দাসীকে ডেকে পাঠালো।
-“রাজকন্যা মেহেরুন শুধু এই রাজমহলের অতিথি নয়।তার থেকেও বেশি কিছু।
ফালাকের এই কথাগুলো শুনে দাসীগুলো একে অন্যের মুখের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে।প্রথমত তারা অবাক হয়েছে রাজকন্যা মেহেরুনকে তখন রাজা ফালাকের কক্ষ থেকে ঐ ভাবে বেরিয়ে আসতে দেখে যে রাজা ফালাক তার কোনো ক্ষতিই করেনি।আর দ্বিতীয়ত তারা অবাক হল এই মুহূর্তে ফালাকের বলা কথাগুলো শুনে।তারপর ফালাক আবার বলা শুরু করলো,
-“তোমরা এভাবে একে অন্যকে দেখছো কেনো? আমি তোমাদের যে কথাগুলো বলার জন্য ডেকে পাঠিয়েছি সেগুলো মনযোগ দিয়ে শোনো।তোমাদের মধ্যে কয়েকজন রাজকন্যা মেহেরুনের খাস দাসী হবে। সর্বদাই তার সাথে থাকবে। সামান্য পরিমাণ কষ্টও তার হতে দিবেনা।আর প্রতিটা মুহূর্তে সে কি করছে না করছে তার প্রত্যেকটা সঠিক তথ্য আমাকে জানাবে।বুঝতে পেরেছো তোমরা?
-“জ্বী মহারাজ।বুঝতে পেরেছি।
-“হুম।এখন তোমরা রাজকন্যার কাছে যাও। দেখো সে কি করছে,তার কি প্রয়োজন।
-“ঠিকআছে মজারাজ, আসছি।
-“ও হ্যা,আর একটা বিষয়। তার কক্ষে যতরকম ধারালো অস্ত্র বা বস্তু আছে সবকিছু সেখান থেকে সরিয়ে ফেলবে।এমন কোনো বস্তু তার কক্ষে রাখবেনা যা দ্বারা তার মৃত্যু ঘটতে পারে বা তার শরীরের কোনো ক্ষতি আর আঘাত হতে পারে।
তারপর কিছু দাসী মেহেরুনের কক্ষের সামনে গেল।বেশ কিছুক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কাচ্ছে কিন্তু মেহেরুন কোনোভাবেই দরজা খুলছেনা।দাসীগুলো বাধ্য হয়ে ফালাককে এই খবর জানালো।ফালাক কক্ষের সামনে এসে বেশ কয়েকবার মেহেরুনকে ডাক দিল কিন্তু মেহেরুন তাতে কোনো সাড়া দিলনা। ফালাক রাগে যখন দরজা ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত তাকে জানালো তখন মেহেরুন ভয় পেয়ে দ্রুত দরজা খুলে দিল।তখন মেহেরুনের মুখসহ পুরো শরীর কাপড়ে ঢাকা।মেহেরুনের এমন ব্যবহারের জন্য ফালাক রাগে ফেটে পড়লেও মেহেরুনের কান্না মাখা চোখ দুটো দেখে আর কিছু বলতে পারলোনা।শুধু ভয়ানক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো।তারপর সেখান থেকে ফালাক তার নিজের কক্ষে চলে এল দাসীদের মেহেরুনের সঙ্গে থাকতে বলে।দাসীগুলো মেহেরুনকে বলছিল,
-“রাজকন্যা!আল্লাহ্ পাক হয়তো আপনার দিকে দয়ার দৃষ্টিতে দেখেছে। আপনিই প্রথম নারী যে রাজা ফালাকের কাছ থেকে নিজের সম্মানসহ অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসতে পেরেছেন।
-“হাহ্…….কতখন আল্লাহর এই দয়ার দৃষ্টি থাকবে আমার প্রতি?
-“জানিনা।তবে মনে হচ্ছে সম্রাট ফালাকের মাথায় অন্য কোনো পরিকল্পনা আছে।না হলে এতক্ষণে আপনার পরিণতি ভয়াবহ হওয়ার কথা ছিল।কারণ সে একবার কারোর প্রতি রেগে গেলে তাকে অক্ষত রাখেনা।সেখানে আপনার উপর বিন্দুমাত্র শব্দ সে উচ্চারণ করলোনা। আচ্ছা রাজকন্য আপনি কি আবার গোসল করেছেন?
-“হ্যা।আমার মরে যেতে ইচ্ছা করছে।তার মত নিকৃষ্ট,পাপিষ্ঠ আর ঘৃণ্য মানুষের স্পর্শ আমার পুরো শরীরকে অপিবত্র করে ফেলেছে।আমার মনে হচ্ছে এখনো আমার শরীর ঘৃণাতে খসে পড়ছে।আমার পিতামাতা কি হালে আছে কি হচ্ছে তাদের সাথে আমি কিচ্ছু জানতে পারছিনা।
পিতামাতার কথাগুলো বলতে গিয়ে মেহেরুন চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। দাসীগুলো কথা বলা শুরু করলো,
-“রাজকন্যা!আপনার ভাগ্য ঐ সব রাজকন্যার থেকে সহস্য ভাগ ভালো। কারণ আপনি এখনো জানতে পারছেন তারা জীবিত আছে।আর এর পূর্বে যেসব রাজ্য দখল করেছে সম্রাট ফালাক সেইসব রাজ্যের রাজকন্যা বা রাজপুত্রদের সামনে তাদের পিতামাতাদের সে হত্যা করেছে আবার পিতামাতার সামনে তার সন্তানদের হত্যা করেছে।যখন পিতামাতার সামনে তার সন্তানদের নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে তখন ঐ সব পিতামাতার আহাজাড়ি দেখলে আমাদের নিজেদের প্রাণ বেরিয়ে আসার উপক্রম হত।
-“কতটা নিষ্ঠুর,কতটা হদয়হীন সে।একদিন সে ও পিতা হবে তার সন্তান জন্ম নিবে।আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে বলছি,সে ও একদিন সন্তানহারা হবে।সে ও বুঝবে সন্তানহারানোর কষ্ট কতটা তীব্রতর।
-“রাজকন্যা থামুন।এসব কথা বাহিরের কারো কানে গেলে সোজা সম্রাটের কানে পৌঁছে যাবে।
-“যাক।গেলে কি হবে?মৃত্যু নিশ্চিত করবে এই তো? আমিও তাই চাইছি।
সেদিন সারারাত কাটলো মেহেরুনের চোখের পানি ফেলে।এদিকে ফালাকের রাত কাটলো বিভিন্নরকম চিন্তাভাবনা করে।চিন্তার মূল বিষয়বস্তু ছিল মেহেরুনকে কেন্দ্র করে। অতঃপর সকালবেলা আলোচনাসভাতে বসলো রাজা ফালাক।
-“আমি সবসময় স্পষ্টভাবে কথা বলা পছন্দ করি।আর সেভাবেই নিজেকে গড়ে তুলেছি।তাই যা বলার সরাসরি স্পষ্টভাবেই বলে দিতে চাই আপনাদের সবাইকে।আজকে আলোচনাসভার মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে আমার বিবাহ।
রাজা ফালাকের মন্তব্য শুনে আলোচনা সভায় উপস্থিত সকল ব্যক্তিবর্গ হতভম্ব হলো।একে অন্যের সাথে কানাকানি শুরু হলো। যে রাজা আজীবন অন্যায়ভাবে নারীদের অসম্মান করে।আর তার চিন্তাচেতনা ছিল সে আজীবন এমনভাবেই নারীদের নারীত্ব স্বাদ গ্রহণ করবে সে কিনা আজ বিবাহ করতে চাইছে?আর সেটা কাকে?রাজা ফালাক আবার কথা বলতে শুরু করলো।
-“আপনারা আমার সিদ্ধান্তে কি খুশি হয়েছেন নাকি তার থেকে বেশি অবাক হয়েছেন?
সেনাপতি এবার কথা বলে উঠলো,
-“সম্রাট আপনি যে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা তো আমাদের জানাননি?
-“কি বলতে চাইছো তুমি? আমার সকল সিদ্ধান্ত তোমার থেকে শুনে নিতে হবে?
-“না সম্রাট।আমি তা বলতে চাইনি।আসলে আপনি কখন কাকে আপনার সহধর্মিণী রূপে বেছে নিয়েছেন তা তো আমরা জানতে পারলাম না।তাই আর কি প্রশ্নটা করে ফেলেছি।
-“হুম জানতে পারবে এখন। আমি আপনাদের সবাইকে এই মুহূর্তে জানাচ্ছি যে শেরপুর রাজ্যের রাজা জাভেদ খানের একমাত্র রাজকন্যা মেহেরুনকে আমি আমার সহধর্মিণী রূপে তাকে পছন্দ করেছি।এবং অতি শীঘ্রই আমরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছি।যদিও শেরপুর রাজ্যের রাজা এখন আমি তবুও আপনাদের চেনার খাতিরে এভাবেই রাজকন্যার পরিচয়টা দিলাম।
আলোচনাসভায় উপস্থিত একজন সদস্য প্রশ্ন করলো,
-“সম্রাট বিবাহের দিন তারিখ কবে?তা কি ধার্য হয়েছে?
-“না।বিবাহের দিন তারিখ ধার্য হবে আমার পালকপিতার সাথে আলোচনা করে।
মন্ত্রীসাহেব?
-“জ্বী মহারাজ।
-“আমার পিতাকে খবর জানান যে আমি তার কাছে আসছি।
-“ঠিকআছে মহারাজ। এক্ষণি জানাচ্ছি।
[ #Violent_Fancy_Topic_Off ]
আজকের মত মাহি এই পর্যন্তই গল্পটা পড়লো।
-“আশফি?তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?প্লিজ গান টা নামাও।যে কোনো সময় গুলি বেরিয়ে যেতে পারে। নিজেকে সামলাও।
-“নিজেকে সামলানোর মত অবস্থাতে রাখোনি তুমি।আমি সহ্য করতে পারছিনা ঐ দৃশ্য।তোমার শরীরে অন্য কোনো পুরুষের ছোঁয়া পড়েছে। তা আমি মেনে নিতে পারছিনা।তুমি যতক্ষণ আমার সামনে থাকবে ততক্ষণ আমার ঐ দৃশ্যগুলো চোখের সামনে ভাসবে।আর তা আমার পক্ষে সহ্য করা অসম্ভব।
তার থেকে তোমাকে আমি মেরে ফেলবো।তাতে আমার শান্তি হবে।
-“না আশফি!!!তুমি ভুল করছো।আশফি??
রাতে ঘুমের মধ্যে মাহি স্বপ্ন দেখে চমকে উঠলো।
-“হায় আল্লাহ্।আমি এ কেমন ধরনের স্বপ্ন দেখলাম।এমন স্বপ্ন আমি কোনোদিনও দেখিনি। কতটা ভয়ংকর ছিল স্বপ্নটা। আশফি আমাকে শুট করলো?যা আমি মনের ভুলেও কখনো ভাবিনা।
মাহি শুয়া থেকে উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিল। মাহির উঠে যাওয়ার শব্দ পেয়ে আশফি চোখ মেলে তাকালো।
-“মাহি?কি হয়েছে?
মাহি তখনও বসে হাপাচ্ছিল।কোনো কথার উত্তর দিতে পারছিলনা। আশফি তা লক্ষ করে মাহির কাছে উঠে গেল।
-“কি হয়েছে ডিয়ার? তুমি এভাবে হাপাচ্ছ কেন? তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?
-“উহহ্…..কি ভয়ংকর ছিল স্বপ্নটা।
মাহি কথাটা বলে আশফির মুখের দিকে তাকাল। স্বপ্নে আশফির যে ভয়ংকর রূপটা দেখেছিল মাহি। সেই মানুষটাই আশফি কিনা তা ও বোঝার চেষ্টা করছিল ওর মুখের দিকে তাকিয়ে।কিন্তু এই আশফির মুখটা দেখে বোঝা যাচ্ছে যে ও কতটা সিরিয়াস মাহির প্রতি। মাহির মুখে সামান্য ঘাম আর ওর হাঁপানো দেখে যে আশফি এতটা আতংকিত হয়েছে সে কি করে পারবে মাহিকে কোনদিন শুট করতে?এই আশফির ভেতরে যে মাহিকে হারানোর প্রবল আতংক কাজ করে।সে কখনোই মাহিকে মেরে ফেলতে পারেনা।এগুলোই ভাবছিল মাহি।এর মাঝে আশফি কথা বলল,
-“স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছো?
-“হুম।
-“আহারে।আমার কাছে এসো।
আশফি মাহিকে কাছে টেনে ওর বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরলো।তারপর বলল,
-“ইশ…..তোমার সারা শরীর তো ঘেমে ভিজে গেছে।নাইটিটা ও ভিজে হয়ে আছে ঘেমে। কি এমন স্বপ্ন দেখেছ বলো তো? এভাবে ঘেমে একাকার হয়ে গেছ।
-“আশফি!স্বপ্নটা এতোটাই বাজে ছিল যা আমি মুখেও আনতে পারছিনা।প্লিজ আমাকে ফোর্স করোনা ওটা বলার জন্য।
-“ওকে। ফোর্স করছিনা। আমার মাহির যে কাজে কষ্ট হতে পারে সেইরকম কোনো কাজ করতে পারি? পানি খেয়েছ?
-“হুম।আশফি?তুমি আমাকে নিজের থেকেও অনেক বেশি ভালোবাসো?
-“গাধার মত এমন একটা প্রশ্ন করলে যে প্রশ্নের উত্তর একটা বাচ্চাও বলে দিতে পারবে।
-“উফ বলো না?
-“তোমার কি মনে হয়?
-“প্লিজ?
-“ওকে ওকে,বলছি। নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি কিনা বলতে পারছিনা তবে তোমার মাঝেই আশফির প্রাণটা রয়েছে।তোমার মাঝেই আশফির আত্মাটা বসবাস করছে।তুমি যতদিন এই আশফির বুকে থাকবে ঠিক ততদিন আশফি জীবিত থাকবে।
মাহি আশফির মুখটা চেপে ধরলো।তারপর বলল,
-“প্লিজ এমন ধরনের কথা বলোনা।আমি বেঁচে থাকতে আমার চোখের সামনে তোমার কোনো ক্ষতি আমি সহ্য করতে পারবোনা। মরেই যাব আমি।
-“এখন তুমি কেন এমন ধরনের কথা বলছো?
-“সরি।
-“ইটস ওকে।তাহলে আমার জায়গায় তোমাকে বসিয়ে একবার ভেবে দেখো তো আমার ব্যাপারটা।
আমার কেমন লাগতে পারে এমন হলে?
-“হুম।
-“হুম কি হ্যা।এমন উদ্ভট কথাবার্তা হুটহাট কেন বলো?এগুলোই চিন্তা করো নাকি সারাদিন?
-“না।এসব চিন্তা কেন করবো?
-“না করলে এসব কথাবার্তা কেনো বলো?এখন উঠো এই নাইটি টা চেঞ্জ করে এসো।এটা একদম ভিজে গেছে।কি পরিমাণ ঘেমেছে মেয়েটা!
মাহি উঠে সাদা রঙের ওয়ারড্রপটা থেকে একটা নাইটি নিল।তারপর আশফির সামনেই নাইটিটা খুলে ফেলল।সেই মুহূর্তে আশফির চোখ দুটো আটকে গেলো মাহির উপর।আগে থেকেই আশফি মাহির দিকে চেয়ে ছিল।হঠাৎ করে মাহি এমনভাবে নাইটি খুলে ফেলাতে আশফি কিছুটা বেঘোরেই চলে গেল। তখন ও আশফি বিছানাতে বসে ছিল।মাহি যখন নাইটি পড়তে লাগলো তখন আশফি উঠে গিয়ে মাহির পেছনে দাড়ালো।মাহি তখন বলল,
-“কি হয়েছে?কিছু বলবে?
-“হুম।বেশি গরম লাগলে ওটা পড়তে হবেনা।
মাহি বোঝার চেষ্টা করলো আশফি কেন ওকে বারণ করছে।মাহি কিছু বলবে বুঝতে পেরে আশফি আগে কথা বলল,
-“না,আসলে নিচে তো কর্সেট টা আছেই।
-“তো?নাইটি পড়লে কি সমস্যা?আমার এতোটা ও গরম লাগছেনা।
-“আমার লাগছে খুব।
আশফির কথা শুনে মাহি আশফির চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।আশফি মাহির খুব কাছে গিয়ে দাড়ালো।তারপর কিছুক্ষণ দুজনে তাদের চোখে ভালোবাসা বিনিময় করলো।চোখে ভালোবাসা বিনিময় শেষে আশফি আচমকা মাহি কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিল। মাহির আর বুঝতে বাকি নেই আশফি এখন কি চাইছে।তাই আশফির ভালোবাসার ডাকে মাহি ও সাড়া না দিয়ে থাকতে পারলোনা।দুজনের শত ভালোবাসার মাঝেও হঠাৎ করে মাহির চোখ থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।সেই মুহূর্তে আশফি মাহির শরীরের সর্বাঙ্গে জড়িয়ে ছিল। আশফির ঠোঁটের স্পর্শে মাহির সারা শরীর ভরে যাচ্ছিল।আশফি দেখতে পাইনি তখন মাহির চোখের পানিটুকু। এতো ভালোবাসা পাওয়ার পরও মাহি কেন এমন ধরনের স্বপ্ন দেখলো সেই কথাটাই মাহির বারবার মনে পড়ছিল ঠিক যতবার আশফি মাহিকে ভালোবাসছিল।
চলবে……..

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে