রহস্য পর্ব-৩

0
1832

রহস্য পর্ব-৩
#Sabiha_Rahman_Susmita

শোহিনী মৃত্যুর ২দিন পর

রফিক কে খুব বিমর্ষ দেখাচ্ছে।
আজমল সাহেব ছুটিতে আছেন।তবুও বাধ্য হয়ে রফিক ফোন করলো আজমল সাহেব কে।

-হ্যালো স্যার,আসসালামু আলাইকুম।

– ওয়ালাইকুম আস সালাম।

-স্যার,একটা খারাপ সংবাদ আছে।

-আহ হা,আমাদের এই জীবনে খারাপ সংবাদ ই তো সঙ্গী। বলো শুনি কি সেই খবর।

-স্যার,২দিন আগে শোহিনী নামের এক মেয়ে, “অর্কিড লুম” এ আত্মহত্যা করেছিল মনে আছে?

-হুম।সে কেইস তো ক্লোজ করে দিয়েছি।

-হ্যাঁ স্যার।কিন্তু, আজকে ভোরবেলায় সেই বাসায় আগুন লেগেছিল।অজিত বাবু এবং তার স্ত্রী রমা দেবী ২জন ই মারা গেছেন।কিন্তু মৃত্যু টা খুবই অদ্ভুতভাবে হয়েছে। স্পটে না গেলে বুঝতে পারবেন স্যার।

– কি বলছো এসব!?ভোরের দিকে এই ঘটনা ঘটেছে,আর এখন বিকাল ৩টায় আমাকে জানাচ্ছো?

-ইয়ে না মানে স্যার আপনি ছুটিতে, তাই আর বিরক্ত করতে চাইনি।কিন্তু আমি স্পটে গিয়ে দেখে আসার পর মনে হলো আপনাকে জানাই।
আমি জায়গা টা সিল গালা করে দিয়েছি। আর ফোর্স পাহাড়ায় আছে সেখানে। লাশ এখনো আগের অবস্থাতেই আছে।

-আচ্ছা,তুমি স্পটে চলে যাও।আমি এখনি আসছি।

স্পটে গিয়ে আজমল সাহেব খেয়াল করল বেশ কিছু গাড়ির মাঝে একটি অচেনা সরকারী গাড়ি ও আছে,সামনে গিয়ে গাড়ির প্ল্যাট দেখে বুঝতে পারলো গাড়ি টা PBI ( পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন) এর।আজমল সাহেবের পেটের ভাত যেন চাল হয়ে গেলো।

দ্রুত ১৩ তলার শোহিনীদের ফ্ল্যাটে ঢুকেই এক হ্যাঙলা পাতলা মাঝারি আকৃতির এক ইয়াং ছেলের সাথে দেখা।ছেলেটি তাকিয়ে আছে লাশ দুটোর দিকে।
ছেলেটির দিকে খেয়াল করতে গিয়েও আর খেয়াল করতে পারলো না অদ্ভুত লাশ দুটোর দিকে দেখে।
রফিক ঠিকই বলেছিল,মৃত্যু টা খুবই অদ্ভুত।
অজিত বাবু এবং রমা সেন দুজনেই একই দড়ি তে ফাঁসিতে ঝুলেছেন।ঘরের সিলিং এ একটা ফ্যান ঝুলানোর খালি এংগেল আছে,সেখানে তারা একটি রশি ঢুকিয়ে রশির দুই প্রান্তে ২জন ঝুলেছেন ফাঁসিতে,দেখতে ঠিক দাঁড়িপাল্লার মত লাগছে। আজমল সাহেবের মুখ যেন পুরাই হা হয়ে গেছে, “আপনি তাহলে আজমল সাহেব?” কথা টা শুনে যেন সম্বিত ফিরে পেলো আজমল সাহেব।হঠাত করে থতমত খেয়ে বলল-হ্যাঁ,আমি।আপনার পরিচয় টা?
হ্যাংলা মতো ছেলেটা বলল- আমি,সারজিল আলম বিকি,ইনভেস্টিগেটর অফ পিবিআই। আমাকে আজ সকালে এই কেইস এ এসাইন করা হয়েছে।আশা করছি আপনার কাছ থেকে সার্বিক সহযোগিতা পাবো।

-ওহ!সিউর সিউর।(পানসে হাসি দিয়ে বলল আজমল সাহেব)

সারজিল আলম বিকি,দেখতে শ্যামলা,হ্যাংলা পাতলা, কিছুটা লম্বা একটা ছেলে।এ বছর বিসিএস এ ফার্স্ট হয়ে জয়েন করল PBI তে। ফিজিক্যাল ফিটনেস খুব একটা ভালো না,কিন্তু মেধার জোরে আজ সে এখানে।

বিকি আস্তে ধীরে ফ্ল্যাট টা থেকে বের হয়ে ছাদে উঠতে লাগল,এই উঠতি শহরে এরকম ১৪ তলা বিল্ডিং হাতে গুনা যায়।তাই ছাদে উঠে শহর টা কিছুটা দেখতে চায় বিকি।
ছাদে উঠতে উঠতে ভাবতে লাগল,বাসাটায় আগুন ধরেছিল,কিন্তু লাশ দুটো অক্ষত।কারণ রুমের দরজা আটকানো ছিল।তার মানে অন্য রুমগুলাতে ইচ্ছাকৃত আগুন লাগানো হয়েছে।এখনো পোস্ট মর্টেম করতে দেয়া হয়নি,লাশ গুলো নামিয়ে পোস্ট মর্টেম এ পাঠাতে বলা হয়েছে।তার আগে লাশগুলোর বিভিন্ন এংগেলের ছবি ও পুরো ঘর থেকে ইম্পর্ট্যান্ট জিনিস ও ফিংগার প্রিন্ট নিয়ে নিতে বলা হয়েছে ফরেনসিক টিম কে।ইতোমধ্যে তারা কাজ শুরু করে দিয়েছে।

ছাদে উঠেই চোখে পরল একটু দূরে একটা বিল্ডিং আর একদম কাছেই আরেকটা ১৪ তলা বিল্ডিং।সেই বিল্ডিং এর উপরে কোনো একটা মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার আছে। ছাদে একটা ছেলে একমনে এই “অর্কিড লুম” এর দিকে চেয়ে আছে। বিকি কে দেখেই যেন নড়েচড়ে বসল,উঠে ছাদ থেকে নিচে নেমে চলে গেলো। ছেলেটার হাবভাব কেমন যেন অদ্ভুত ঠেকলো বিকির কাছে।

শোহিনীর বাড়ির সকলে মারা গেলেও মোহিনীর লাশ কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।বিকি ভাবছে প্রথমে মোহিনীকে খুঁজে বের করতে হবে,তাহলে শোহিনীর মৃত্যু নিয়ে কিছুটা জানা যাবে।তারপর শোহিনীর মৃত্যু নিয়েই আগাতে হবে।
হঠাত মনে হলো,শোহিনীর পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট টা দরকার।

নিচে গিয়ে আজমল সাহেবের কাছে শোহিনীর পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের খবরাখবর জানতে চাইতেই তার মুখ নীল বর্ণ ধারণ করল।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে