মন ফড়িং ❤১২.

0
2718

মন ফড়িং ❤

১২.

আসমা জামান রান্নাঘরে নিদ্রের জন্য খাবার তৈরি করছেন। প্রায় ১ সপ্তাহের মতো হয়েছে ছেলেটা কোনোরকমে খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। তারপরও সে মুখ ফুটে কিছু বলছেনা। নিজের কষ্ট হবে তারপরও তাকে কষ্ট দিবেনা। নাজমুলের তো খোঁজ পাওয়াই দায়। এতো ড্রিংক করতে শুরু করেছে যে কোনো হুশ থাকেনা। সারাদিন বাইরে বাইরে ঘুরে বেড়ায় আর রাতে নিজের ঘরে বসে এলকোহল গিলবে!
নিদ্র বেশ ক্লান্ত হয়ে বাসায় পৌঁছে দেখলো দাদী রান্নাঘরে! মনে মনে খুব খুশি হলেও ভাবভঙ্গিতে প্রকাশ না করে বললো
– দাদী এসবের কি দরকার ছিলো?
আসমা জামান ভেংচি কেটে বললেন
– আমি না করলে করবে টা কে?
– তা অবশ্য ঠিক! তা কী কী রান্না হচ্ছে?
– চিকেন স্যুপ, চিকেন ব্রোস্ট আর আপনার পছন্দের সালাদ।
নিদ্র তৃপ্তির হাসি দিয়ে বললো
– তাহলে আমি দ্রুত ফ্রেশ হয়ে আসি?
– অবশ্যই। আর তোর বাবাকে ডেকে আন।
নিদ্র বেশ ক্লান্ত স্বরে বললো
– আপনার ছেলে আপনিই ডেকে আনুন।
– আমি তো ডেকেছিলাম, আমার কথা কে শোনে!
– আমি দেখছি।

গোসল সেরে চুল মুছতে মুছতে নাজমুল সাহেবের রুমের দিকে এগিয়ে গেলো। রুমের দরজা বন্ধ ভেতর থেকে। এর অর্থ বাবা ভেতরে!
– বাবা, চলো একসাথে খেতে বসি।
দরজায় টোকা দিয়ে কথাটা বেশ কয়েকবার বললো। কোনো।সাড়াশব্দ না পেয়ে দরজায় বেশ জোরে টোকা দিতে লাগলো। বাবার কিছু হলো না তো? দিনের এই সময়টাতো সে বাসায় থাকেনা। আজকে এইসময় বাসায় তার উপর কোনো সাড়াশব্দ নেই।
নিদ্রের খুব চিন্তা হচ্ছে।
রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে দাদীকে জিজ্ঞেস করলো
– দাদী, বাবা কখন থেকে দরজা লক করে এভাবে আছে?
– সেই ১২ টা থেকে।
– আমাকে বলবে না?
– আরে ও তো এমন প্রায়ই করে।
– কিন্তু তার রুমে সাড়াশব্দ পাওয়া যায় কিন্তু আজকে একেবারেই নিখোঁজ অবস্থায় আছেন।
– সব রুমেরই তো এক্সট্রা চাবি আছে। সেটা দিয়ে খুলতেই পারিস।
– বাবার রুমের এক্সট্রা চাবি তার কাছেই রাখেন।
– তাহলে লক খোলার মিস্ত্রী নিয়ে আয়। আমি ততক্ষণে ডাকাডাকি করে দেখি।
নিদ্র দ্রুত মিস্ত্রীর খোঁজে বের হলো। আসমা জামান ছেলের চিন্তায় রান্নাবান্না বন্ধ করে তার রুমের দরজায় টোকা দিলেন। নরম স্বরে বললেন
– বাবা নাজমুল শোন তো!বাবা আয় একসাথে খেয়ে নেই। বাবা, এমন করিস না।
আসমা জামান কাঁদতে শুরু করলেন। ছেলে মরে গেছে নাকি কে জানে?
নিদ্র পাগলের মতো লোক খুঁজছে। প্রায় ১ ঘণ্টা হতে চললো কিন্তু একজন মানুষ সে পেলো না।
একজনকে বেশ চড়া ভাড়ায় পেলো। নিদ্রের জমানো ডলারের বেশ খানিকটা খরচ হয়ে গেলো। কিছুই করার নেই তার।
বাসায় এসে দাদীকে বাবার রুমের দরজার সামনে বসে কাঁদতে দেখে নিদ্র হকচকিয়ে গেলো।
আধা ঘণ্টা চেষ্টা করার পর লক খুলতে সক্ষম হলো।
দরজা খুলে নিদ্র তার বাবাকে দেখে অবাক! নাজমুল সাহেব তার রকিং চেয়ারে হাতে বই পড়ার মতো করে নিয়ে বসে আছেন। বেশ মনযোগ দিয়েই বই পড়ছেন। নিদ্র তার বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে পাশে দাঁড়ালো। নাজমুল সাহেব ছেলের দিকে না তাকিয়ে বললেন
– আমার বই পড়ায় বিরক্ত কেনো করছো তোমরা?
নিদ্র ঠান্ডা স্বরে বললো
– তুমি উল্টো করে বই কেনো পড়ছো কেনো বাবা?
নাজমুল সাহেব ইতস্ততভাবে বললেন
– সে তুমি বুঝবেনা। now get lost my dear son!
নাজমুল সাহেব পুরোপুরি নেশা অবস্থায় আছেন সেটা নিদ্র বুঝতে পেরে চুপচাপ রুম ছেড়ে বের হয়ে আসলো।
মিস্ত্রীকে তার ডলার বুঝিয়ে দিয়ে দাদীকে বললো
– খাবার দাও তো দাদী!
আসমা জামান রান্নাঘরে ফিরে এসে স্যুপের বাটি খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

রিতা ছাদে পাটি বিছিয়ে বসে আছেন। অদ্রি ঘুমুচ্ছে আর লিলি কী করছে তার জানা নেই। মেয়েটাকে তার চোখে চোখে রাখা উচিৎ। এটা ঠিক খুব বেয়াদব মেয়েটা। কিন্তু মেয়েটার ক্ষতি হলে তার খারাপ লাগবে,খুব খারাপ লাগবে!

রশিদ সাহেব তার স্ত্রীকে বললেন
– একটা মতামত দাও তাও।
– বলো।
– নাজমুলকে দাওয়াত করলে কেমন হয়? বড়লোক মানুষ দাওয়াতে না আসলেও গিফট পাঠাবে এটা আমি শিওর।
– দাওয়াতে আসবেনা তাহলে গিফট কেনো নিবা? লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়বা!
– ছোটো মেয়েটার শ্বশুরবাড়ি তো দামী গিফট দেয়া দরকার। খোঁটা শুনতে হবে ওর। আমরা না হয় লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়লাম কিন্তু ও তো ভালো থাকুক।
– মেয়েটাও আছে এতো বড়লোক ছেলের সাথে প্রেম কেনো করতে হবে?
– প্রেম কি বলে কয়ে হয় নাকি? আর আমাদের চাওয়া তো একটাই ছেলে মেয়ে ভালো থাকুক। আর ছোটো হচ্ছি নিজেদের লোকের কাছেই। অন্ততপক্ষে ওর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে তো হেয় হতে হবেনা।
– তাহলে করো দাওয়াত আর অদ্রির বাসায় কবে উঠবো আমরা?
– ওই বাড়ি রঙ করাতে হবে তারপর আমরা উঠবো।
– মেয়েটাকে বিয়ে দেয়া দরকার।
– তা দরকার কিন্তু আমি তো ওকে এসব বলতে পারছিনা। তুমি একটা কাজ করতে পারবা?
– বলো!
– ওকে একটু বিয়ের কথা বলে দেইখো তো কী বলে?
– আমার সাথে তো তেমন চেনাজানা নাই। ও আমার কথায় বিরক্ত হবে।
– বিরক্ত হলেও প্রকাশ করবেনা।

অদ্রির ঘুম ভেঙে গেলো। ঘড়িতে রাত ২ টা বেজে ৪৫ মিনিট। পানির পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। টেবিলে আজকে পানি রাখা নেই। লাইট জ্বালিয়ে খুঁজে নিজের রুমে পানি না পেয়ে নিচে নামার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হলো।
অদ্রির মনে হচ্ছে নিদ্রের ঘরের দরজার সামনে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। ওইদিকটার লাইটটা বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বালানো হচ্ছেনা। লিলিটার যে কী হয়েছে আল্লাহ জানে!

চলবে……!

© Maria Kabir