মন ফড়িং ♥ ৬.

0
2965
মন ফড়িং ♥ ৬.
মন ফড়িং ♥ ৬.
মন ফড়িং ♥
৬.
ইখলাস সাহেব বিকট  শব্দে হাসতে শুরু করলেন।সেই শব্দ অদ্রির কানে অসহ্য লাগছে। হাসির শব্দ তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে। মানুষ কীভাবে এতো বিকট শব্দে হাসতে পারে? অদ্রি কী করবে ভেবে পাচ্ছেনা। বিছানা থেকে নেমে দরজার দিকে এগিয়ে যাবে ঠিক তখনই দেখলো ইখলাস সাহেব তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে একটা দড়ি ঝুলছে। দাঁত কিটমিট করে বলল
– খুব আনন্দে আছো তাই না?
অদ্রির গলা দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে হেচকা  টান দিলেন ইখলাস সাহেব।
দম বন্ধ হয়ে আসছে অদ্রির। দুহাত দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছেনা। ইখলাস সাহেবের হাত কোনোভাবেই ছাড়াতে পারছেনা। আস্তে আস্তে অদ্রির হাত অবশ হয়ে আসছে।নিশ্বাস নেয়ার ক্ষমতা সে হারিয়ে ফেলছে।
চোখে অন্ধকার শুধুই অন্ধকার, আলোর রেখার কোনো চিহ্ন নেই। গভীর অন্ধকারে ধীরে ধীরে সে তলিয়ে যাচ্ছে।এই গভীরতার কোনো পরিমাপ তার কাছে হয়তোবা নেই।
অদ্রির মনে হলো গলায় চেপে থাকা দড়িটা আস্তে আস্তে আলগা হচ্ছে।
অদ্রির বিছানার পাশে টুল নিয়ে রীতা বসে আছেন। অদ্রি ঘুমের ঘোরে আবোলতাবোল বকছে। একটু আগেই সে জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছিলো। হাত পা এমনভাবে নাড়াচাড়া করছিলো ; মুরগী জবাই করার পর যেমনটা করে। তার আগে বেশ হাসছিলো, শব্দ করে না মুচকি হাসি। অদ্রি ম্যাডামের হাসি এই প্রথম সে দেখেছে। মানুষটা যে এরকম কেনো? প্রশ্নের উত্তর তাকে খুব খোটায়। কিছু একটা বলছিলো, ঠোঁট নড়াচড়া করছিলো। হয়তোবা ভালো কোনো স্বপ্ন দেখছিলো।
এখন একটু স্বাভাবিক আছে।এঠো চায়ের কাপ নিতে এসেই রীতা দেখে যে, অদ্রি ম্যাডাম বমি করছে। ম্যাডামের এই অবস্থা দেখে রীতা দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরে ফেলেন। তারপর বমি করা শেষ হবার পর তাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে খাবার পানি আনতে যায়। খাবার পানি নিয়ে এসে দেখেন অদ্রি গভীর ঘুমে নিমগ্ন। বমির জায়গাটা এখনও অপরিষ্কার। মোছার সময় পাইনি তা না, ম্যাডামের পাশ থেকে সরতেই তার ভালো লাগছেনা। এটা ঠিক যে ম্যাডামের সাথে তার কথাবার্তা খুব কম হয় কিন্তু রীতা তার প্রতি আলাদা স্নেহ অনুভব করে। ম্যাডাম তার মেয়ের বয়সে। একটা মাত্র ছেলেটা তার স্বামীর কাছে।
স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়েছেন কিন্তু ছেলেটার জন্য তার মনটা পোড়ে। এখানে তো সে বেশ আছে কিন্তু ছেলেটা?
ম্যাডাম পুরো রাত না খাওয়া, সকালেও কিছুই খাননি। ওই অবস্থায় লাল চা?
ম্যাডামের  ভাসা ভাসা চোখ দুখানা গর্তে চলে গেছে। মুখখানা শুকিয়ে ছোটো হয়ে গেছে।
নাজমুল সাহেব এলকোহলের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বেশ তৃপ্তি নিয়ে বলল
– তোর দাদীকে পারমিশন দিয়ে দিলাম বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য।
নিদ্র হাত লেগে থাকা লাল রঙের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় বলল
– পারমিশন দিয়ে দিলা?
– yes ! my dear son.
– তোর দাদী বলে সম্বোধন করলা ক্যান?
– কারণ সে আমার কথা শোনে নাই।
– তাই বলে মা বলবা না?
গ্লাসে এলকোহল ঢালতে ঢালতে বললেন
– না, বলবো না।
নিদ্র অনুভূতিহীন স্বরে বলল
– আচ্ছা মনে পড়ে, ফরেইনার বিয়ে করার কারণে দাদীকে তেজ্য করা হয়েছিলো?একমাত্র তোমার কারণে? তোমার এ ধরণের কাজে তার বাবা কসম দিয়েছিলেন যেন, মরা মুখও দেখতে না আসে। তোমার জন্য সে তার স্বপ্নের চাকরি ছেড়ে দিয়ে এখানে চলে আসেন।
– my dear son, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা বন্ধ করবি?
– আমি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছিনা।
– আমাকে শিখাতে আসছো তুমি?
– তোমাকে তো দাদীই কিছুই শিখাতে পারেনি। আমি তো কিছুই না।
– বেশ বড় বড় কথা বলছো, সাহস এতো কই থেকে আসে? আমার টা খাও আমার টায় পড়ো তার উপর বড় বড় কথা!
– আমি তোমার টা খাইও না পড়িও না। শুধু এখানে থাকি।
– থাকছো কেনো বাবা? চলে যাও।
– যাবো, একটা কথা ছিলো।
– যেহেতু চলে যাবি সেহেতু ডিসকাউন্ট হিসেবে একটা না অনেক গুলো কথা বলতে পারবি।
– দাদীর পা ধরে মাফ চেয়ে নিও।
নিদ্র কথাটা শেষ করেই বাবার সামনে থেকে উঠে চলে আসলো।
আজ দুদিন যাবত ঘুম ছাড়া কোনো প্রকার রেস্ট না নিয়েই কাজ করেছে নিদ্র। হাতের একপাশে লাল রঙ লেগে আছে। কোনোভাবেই উঠাতে পারছে। বেশ মোটা অংকের ডলার পেয়েছে, অবশ্য খাটাখাটুনি তো আর কম হয়নি। আগামীকালও কাজ আছে। একটানা কাজ করলে বাংলাদেশে যাওয়ার ডলার যোগাড় হয়ে যাবে। ব্যাংকে কিছু আছে। আর দাদীর খরচ নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই।
বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে চোখ বুজে নতুন দম্পতির ফ্ল্যাট ডেকোরেশান কীভাবে করেছে ভাবছে। নতুন দম্পতির ঘনিষ্ট মূহুর্তের ছবি গুলো কোনো দ্বিধা ছাড়াই তাকে দেখতে দিয়ে দিলো। আর তার সামনেই চুম্বন করতেও দ্বিধাবোধ করেনি৷ এইখানকার কালচারই এরকম। নিদ্র এই কালচারের মধ্যেই বড় হয়েছে তারপরও তার কেনো যেন এসব ভালো লাগেনা। যদি তার মা সাথে থাকতো তাহলে হয়তোবা সে এদের মতোই হতো৷ রাস্তাঘাটে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করছে কিন্তু কোনো লাজ শরম নাই। তারও লজ্জাশরম থাকতো না। যার তার সাথে বেডে যেতো।
লাস্টের কথাটা মনে পড়াতে নিদ্রের নিজের কাছেই বিশ্রী লাগলো। হঠাৎ মৌরির কথা মনে পড়লো। মেয়েটার চরিত্র আর এদেশের মানুষের চরিত্র এক।
অদ্রির কাছে গিয়ে কি বলবে সে?
সরাসরি বলে দিবে, চলুন আমার সাথে?
আর বললেই কি আসবে? যদি তা না হয় তাহলে সে কী করবে?
আর ফিরবেই না এখানে।
একাকী এই সময় অদ্রি পাশে থাকলে ভালোই কাটতো। মাঝেমধ্যে তার মাঝেও একপ্রকার তৃষ্ণা জাগে। আসলে সেও রক্ত মাংসের মানুষ। আশেপাশে এরকম দেখে কেইবা এরকম একাকী জীবন কাটাতে চাইবে?
সে মিছে আশায় দিন কাটছে।
দরজায় টোকার শব্দে নিদ্রের চিন্তায় ছেদ পড়লো। নিদ্র চুপচাপ পরে রইলো বিছানায়। দরজায় টোকার শব্দটা তীব্র হচ্ছে। হতে থাক, তার বাবা পুরোপুরি মাতাল অবস্থায় এই কাজ করছেন। দরজা খোলা মানেই বিপদ, মহাবিপদ। সারারাত তাকে জাগিয়ে রেখে বাজে ভাষায় কখনো, কখনো সাধু ভাষায় লেকচার দিবে।
সকালে তার কাজ আছে এখন তাকে ঘুমাতে হবে।
চলবে…….!
© Maria Kabir