ফাগুনের নবধারা পর্ব-৮

0
1397

ফাগুনের নবধারা
পর্ব-৮
শাহজাদি হুমাশা

জোহরের আযান শোনা যাচ্ছে।সবাই জুম্মার নামাজ পড়তে মসজিদে ছুটছে।আবিদদের বাড়ি এবং পাশের বাড়িটা মানুষে গমগম করছে। বৌ সাজানো হচ্ছে।
আজ এ বাড়িতে ২ টি বিয়ে।রুকু এ কদিন বেশ চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।প্রয়োজন ছাড়া রুম থেকে বের হয়না।আর কাউকে রুমে যেতেও দেয়না।বাচ্চাকেউ কাউকে দেখতে দেয়না।শুধু নীহারিকা এ রুমে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে। ইলমার বেশ কষ্ট হয় তার ভাবির জন্য।ইলমা তার মায়ের সাথে কথা বলা ছেড়ে দিয়েছে প্রায়।ইলমার মায়েরও বেশ খারাপ লাগছে কিন্তু তিনি নিরুপায়।

নামাজ পড়ে সবাই চলে আসছে।আবিদ ঠিক করেছে সে আজ পালাবে।একা নয় রুকু, নীহা এবং মেঘ কে নিয়েই।ব্যবস্থাও করে ফেলেছে।
বধূ বেশে বসে আছে ইলমা আর সুমু।পাশে নিধিও বসে আছে।সে আজ বেশ খুশি অবশেষে আজ তার আপির বিয়ে।তার ভালোবাসার মানুষটার সাথে।নিঝুম বেশ তদারকি করছে সবকিছুর।
নাভিদ বারান্দায় বসে আছে সুমুকে এক পলক দেখার জন্য কিন্তু সুবিধা করে উঠতে পারছেনা।সবাই কনেকে ঘিরে বসে আছে।

নাভিদ, আবিদ দুজনকেই বেশ লাগছে বর বেশে।ঠিক হয়েছে আগে নাভিদ আর সুমুর বিয়ে হবে এবং পড়ে আবিদ আর ইলমার।তাই সবাই যখন নাভিদ আর সুমুর বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে আবিদ সেই সময় পালাবে রুকুকে নিয়ে।কিন্তু রুকু কি রাজি হবে? রাজি না হলে নেই অপহরণ করবে প্রয়োজনে কিন্তু সে তার ভালোবাসাকে হারতে দিবেনা।কক্ষনো না।

নাভিদরা সুমুদের বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।আবিদ সেই সুযোগে রুকুদের বাসায় গিয়েছে।বাসায় বউ বরণ করতে রুকু আর কিছু আত্মীয়া রয়েছেন।আবিদকে আগেও দেখেছেন সবাই তাই খুব একটা কিছু মনে করেন নি কেউ।রুকুর রুমে ঢুকতেই রুকু চমকে যায়।
– আপনি এসময়ে এখানে কি করছেন??
– শোনো রুকু আমাদের হাতে সময় কম।তাই আমাদের এখনই করতে হবে যা করার।
এতক্ষণে আবিদের চোখ পড়লো রুকুর উপর।এমরোল্ড গ্রীণ কালারের বেনারসি পড়েছে রুকু।তাকে দারুণ লাগছে এই সাজে।
যদিও সে জানে রুকু সাজতে চায়নি।সবাই তাকে একপ্রকার জোর করেই সাজিয়েছে।শাড়িটাও আবিদেরই দেয়া। বড্ড কৌশলে এ শাড়ি রুকুর পর্যন্ত পৌঁছাতে হয়েছে তাকে।
রুকুকে কিছুক্ষণ মন ভরে দেখে নিলো আবিদ।পরক্ষণেই তারা দিতে শুরু করলো সে।রুকুতো কিছুই বুঝতে পারছেনা।আবিদ তাকে সবটা খুলে বললো।
– আমি পালাবো না।ইলমার কি হবে আপনি ভেবে দেখেছেন?? আমি এতটা স্বার্থপর হতে পারবোনা।
– আমি ইলমার ব্যবস্থা করেই এসেছি।
– মানে?!!
– কিছুক্ষণ পড়েই বুঝবে।

আবিদের কথা কিছুই বুঝতে পারলোনা রুকু।

এদিকে নাভিদ এবং সুমুর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে সবাই খেতে বসে গিয়েছে।ভিতরে বিয়ের পড়ের নিয়মগুলো হচ্ছে।নাভিদ এক দৃষ্টিতে সুমুকে দেখছে। তার জীবনের পুরোনো সময় গুলো মনে নেই তার তবে গত দুমাস সে সুমুর প্রতি অন্যরকম টান অনুভব করেছে।আর তার ফল স্বরূপ আজ তাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো।সুমুও ভাবছে একজীবনের কোনো পুণ্যর ফলে আজ তার ভালোবাসার মানুষটা তার হলো।কজনের এমন ভাগ্য হয়?!! শত ঝড়ঝাপটার পরও আজ তারা এক।এবং আজীবন এভাবেই এক হয়ে থাকবে।

সন্ধ্যে হতে চললো।নাভিদ বউ নিয়ে বাসায় এসেছে অনেক আগেই।বাড়িতে বেশ থমথমে পরিবেশ সবাই চিন্তিত। আবিদ, রুকু, ইলমা, নেহা, মেঘ কারোর কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না সবাই বেশ চিন্তিত।

ট্যাক্সিতে ইলমা বসে আছেন তার পাশে লাল রঙের পাঞ্জাবি পরা আরো একজন বসে আছে দেখতে বেশ সুদর্শন।ইলমাকে বেশ খুশি কিন্তু তবুও মনের গভীরে কোথায় যেন একটা সূক্ষ্ম চিন্তা রয়ে গিয়েছে।

ফাহিম ইলমাকে দেখে বলে উঠল চলো কিছু খেয়ে নেয়া যাক। কিছুক্ষণ পরেই এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাব তখন আমারা বেশিক্ষণ সময় পাবো না কিছু খাওয়া দাওয়ার জন্য কারণ আমরা ফ্লাইটে উঠবো আর এখনই যদি খেয়ে না নেই তাহলে তখন বেশ দেরী হয়ে যাবে।ইলমা ফাহিম এর কথায় সায় দিল কি তারা একটা রেস্টুরেন্ট এর কাছে ট্যাক্সি থামানো এবং সেখানে গিয়ে দুজনে বসে কিছু খেয়ে নিলো।

ফাহিম অপলক দৃষ্টিতে ইলমার খাওয়া দেখছে।সে ভাবছে আজ যদি ইলমা তার না হতো তবে জীবনের সুখগুলো অপ্রাপ্তিতে পরিণত হতো।ইলমা মনোযোগ দিয়ে খাচ্ছে।ফাহিম আবিদকে মনে মনে ধন্যবাদ জানালো।সেদিন যদি ফাহিম আবিদকে সবকিছু খুলে না বলতো তবে আজ তার ইলমাকে পাওয়া হতোনা।

চলবে……