ফাগুণের নবধারা। পর্ব-১

0
2808

ফাগুণের নবধারা।

পর্ব-১

—শাহাজাদী হুমাশা।

ভোর রাত থেকে বৃষ্টি পড়ছে ঝিরি ঝিরি।গতকাল বিকেলেও ঝুম বৃষ্টি হয়েছে সন্ধ্যায় কমে আসার পর আর হয়নি।আমিনা বেগম ঘুম থেকে উঠে ফজরের নামাজ পড়েই রান্না ঘরের দিকে গেলেন আমিনা বেগম।ভোর ৬ টা বাজে নাজমুল সাহেব ঘুম থেকে উঠলেন।নামাজ পড়ে নিয়েই তিনি ঘুমিয়েছিলেন।উঠেই শুনতে পেলেন রান্না ঘর থেকে ঘি এর ঘ্রাণ আসছে। আস্তে আস্তে রান্না ঘরের দিকে গেলেন তিনি।উকি দিয়ে দেখতে পেলেন আমিনা বেগম পরোটা ভাজছেন।স্ত্রীর সামনে গিয়ে মোরায় বসলেন।আমিনা বেগম জিজ্ঞেস করলেন- তোমাকে চা দিবো? স্ত্রীর কথায় নাজমুল সাহেব মাথা দুলালেন তার মানে হ্যাঁ।

আমিনা বেগম পাশের চুলায় পানি ভর্তি করে কেটলিটা বসিয়ে দিলেন।এই মুহূর্তে নাজমুল ল্যান্ডফোনে কল এলো।নাজমুল সাহেব উঠে কল রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে কথা এলো।কথা শেষ করে তিনি ফোনটা নামিয়ে রাখলেন।স্ত্রীর সামনে গিয়ে আবার বসলেন এবং বললেন-

-এর জন্যই আজ সকাল সকাল ঘি তে ভাজা পরোটস হচ্ছে।
আমিনা বেগম হালকা হেসে বললেন রুকু ফোন দিয়েছিলো তবে?
নাজমুল সাহেব হ্যাঁ বললেন।

নাভিদ বারান্দায় বসে পাশের বাসার বারান্দায় চেয়ে আছে।বৃষ্টির ছাট গুলো তাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে এতে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।হঠাৎ পাশের বারান্দায় আকাশী রঙের সালওয়ার কামিজ পড়া মেয়েকে দেখে নাভিদের ধ্যান ভাঙলো।নড়েচড়ে বসলো সে।কিন্তু তার কাঙ্ক্ষিত আশায় জল ঢেলে দিয়ে বারান্দার মেয়েটি হেসে উঠলো।
– কি নাভিদ ভাই! যার জন্য অপেক্ষা করছেন সে আসেনি বলে মনঃক্ষুণ্ণ হচ্ছেন??
– না মানে কারো অপেক্ষা করছিনা।তুমি কেমন আছো নিধি?
– হয়েছে আমার থেকে আর লুকাতে হবে না।আমি ভালো আছি।তবে যার অপেক্ষা করছেন তার জ্বর।বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছেনা।
– ঠিকাছে ওর খেয়াল রেখো।
– আচ্ছা।
হঠাৎ বারান্দায় তাওয়াল পেঁচিয়ে নিঝুম এসে দাঁড়ালো ওকে দেখে নিধি উচ্চস্বরে হেসে দিলো।
– নাভিদ ভাই তোমার ভাইয়ের বুঝি কাপড় এর অভাব?
তাই তাওয়াল পড়েই বারান্দায় এসে পড়েছে?
অসম্ভব বিরক্তি নিয়ে নিঝুম নিধির দিকে তাকালো ওর ওই চেহারা দেখে নিধি আরো জোরে হেসে দিলো।নাভিদ কে উদ্দেশ্য করে বললো –
ভাইয়া তোকে মা ডাকছে রুকু আপুরা বাসায় আসবে আজকে।আর তুই আজকে অফিস যাবি না?
নাভিদ- না আজকে যাবোনা।শরীর ভালো লাগছেনা বাসায় বসেই কাজ করে ফেলবো।আমি যাচ্ছি আম্মার কাছে।
নাভিদ ওখান থেকে চলে গেলো।

নিঝুম নিধিকে হাসতে দেখে ভেংচি দিয়ে ওর মতো করেই হাসির অনুকরণ করলো যা দেখে নিধির পিত্তি জ্বলে যাবার উপক্রম। নিঝুমকে শাস্তি দিতে নিধি ভিতরে গিয়ে মগ ভর্তি পানি এনে নিঝুমের বারান্দার দিকে ছুড়ে মারলো।নিঝুম বেকুবের মত চেয়ে থেকে কিচ্ছুক্ষণ পর চলে গেলো।নিধিও ভিতরে চলে গেলো।
নিঝুম এর শোধ নিবেই।এর জন্য ফন্দি আটতে শুরু করলো।

জ্বরের ঘোরে সুমু কল্পনা করছে গতকাল বিকেলের ঘটনা।
ঝুম বৃষ্টির মাঝে নাভিদের হাত ধরে কুল্ফি খাচ্ছে আর বৃষ্টিতে ভিজছে।নাভিদ বারণ করলেও শুনছে না।একসময় নাভিদ জোর করে ওকে গাড়িতে এনে বসালো।শীতে কাঁপছে রীতিমতো।ওর ওড়নার এক কোণ চিপড়ে পানি নিংড়ে মাথা মুছে দিতে দিতে নাভিদ বললো-

-তুমি কি সারাজীবন বাচ্চাই থেকে যাবে সুমু?

কাঁপতে কাঁপতে সুমু বললো- শোনো আবার যেদিন ভিজবো সেদিন চা খেতে খেতে ভিজবো কেমন?
– আর এই উদ্ভট কাজ টা কোন কবি করতে বলেছে তোমায়?
– হুমায়ূন স্যার।হুমায়ূন আহমেদ স্যার বলেছে করতে।বৃষ্টির পানি টপ টপ করে চায়ে পড়বে আর আমরা সেই চায়ে হালকা করে চুমুক দিবো।দুটোর সংমিশ্রণ টা কেমন তা দেখবো।
– তুমি কি জানো সুমু তুমি যে পাগল?
– হ্যা জানি।এজন্যইতো তুমি আমায় ভালোবাসো।
– তাও ঠিক।
– বাড়ি চলো।
-হুম।

নাভিদ সুমুর সিটবেল্টটা পড়িয়ে দিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসে সিটবেল্ট বাধলো।গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাসায় রওনা হলো।
বাসায় আসার পর থেকেই সুমুর জ্বর।রাতে খায়নি।আর নাভিদের টেক্সটের রিপ্লাই ও দিতে পারেনি।গতকালের কথা ভেবেই সুমুর ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটলো।সুমুকে এভাবে হাসতে দেখে নিধি ভাবলো ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখছে হয়তো।

নাভিদ ওর মায়ের কাছে যেতেই আমিনা বেগম বলে উঠলেন বাবা তোমার সুমু বিলাস হয়েছে? নাভিদ মাথা চুলকে মুচকি হাসলো।
– তা নাস্তা কিছু করতে হবে না পেট ভরে গেছে?
– আম্মা ক্ষুদা লাগছে।
– নাস্তা করে বাজারে যাও রুকু আসবে আজকে।
বলেই আমিনা বেগম চলে গেলেন। নিঝুম রুকু আসার কথা শুনে যতটা খুশি হয়েছে তার চেয়ে বেশি খুশি হচ্ছে রুকুর সাথে ইলমা আসবে বলে। ইলমা রোকসানার ননদ।নিঝুম ইলমাকে বেশ পছন্দ করে।তার মতে ইলমার মত মেয়েই হয়না।ওর মনে হয় গভীর শান্ত চোখে দুষ্টুমি খেলা করে ইলমার।তার চোখ দুটোই যেনো ওকে আকর্ষণ করে বেশি।
নাভিদের ডাকে ঘোর কাটে ওর দুভাই মিলে বাজারের জন্য রওনা হয়।

চলবে-

—-