নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ১৫

0
2495

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ১৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই মেঘকে দেখে বেশ অবাক হলাম, রাতে ড্রিংক করে মাতাল হয়ে যাওয়া ছেলেটা কতো সুন্দর করে আয়না দেখে হেলেদুলে চুল আছড়াচ্ছে। কিছুক্ষণ শুয়ে শুয়ে ওর হেলেদুলে চুল আছড়ানো দেখলাম, এবার ওর মিটিমিটি হাসি দেখে আর কথা না বলে থাকতে পারলাম না।
আমি: ভাব দেখে তো মনে হচ্ছে বিয়ে করতে যাচ্ছ। (আমার কথা শুনে একনজর আমার দিকে তাকালো তারপর আবার আয়নার দিকে নজর দিলো)
আমি: কোথায় যাচ্ছ তুমি?
মেঘ: আন্দাজ করে নিয়েছ তো বিয়ে করতে যাচ্ছি, এখন আমি যা বলি না কেন তোমার বিশ্বাস হবে না কারণ তুমি আমাকে এক ফোটাও বিশ্বাস করো না।
আমি: সোজা উত্তর দাও কোথায় যাচ্ছ?
মেঘ: উত্তর না দিলে কি করবে শুনি।
আমি: তোমার ভাগ্য ভালো তোহা আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে নাহলে…
মেঘ: মেয়েটা বাবার কষ্ট একটু বুঝে। (ও হাসছে আর হাতের ঘড়িটা ঠিক করছে)
আমি: তারমানে শায়লা ঠিকি বলেছিল আজ তোমাদের বিয়ে।
মেঘ: হু তুমি যাবে নিমন্ত্রণ খেতে?
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: এখন আর মুখ গোমড়া করে রেখে লাভ নেই। (কিছু বলতে পারলাম না চোখ থেকে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। তোহাকে আস্তে করে সরিয়ে দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলাম, মেঘের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বারান্দায় চলে আসলাম)

সত্যিই তো এখন আর মুখ গোমড়া করে বা কেঁদে কি হবে আগেই তো বুঝা উচিত ছিল এভাবে হুট করে বিয়ে করা ঠিক হবে না। বিয়ে তো সারাজীবন এর বন্ধন এই বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার আগে হাজার বার ভাবা উচিত, আব্বু আর আমিতো ভাবিনি। অবশ্য আমাদের দোষ কোথায় আমি তো তোহার মা হওয়ার জন্য বিয়েটা করেছি আর আব্বু তো বুঝতে পারননি মেঘ এতোটা…
মেঘ: কি ভেবেছ আমি সত্যি শায়লাকে বিয়ে করতে যাচ্ছি? (পাগলের মতো কাঁদছিলাম আর বারবার চোখের পানি মুছার বৃথা চেষ্টা করছিলাম হুট করে মেঘ এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। ওকে ছাড়িয়ে দিয়ে ওর দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম)
মেঘ: তুমি সব দিকে চালাক শুধু আমার ভালোবাসা বুঝার সময় বোকা। (মেঘের দিকে অবাক হয়ে তাকালাম, মেঘ একদম আমার কাছে এসে দাঁড়ালো)
মেঘ: তোমাকে রাগানোর জন্য বলেছি বিয়ে করতে যাচ্ছি। বুঝনা কেন যে ছেলে ডিভোর্স পেপার ছিঁড়ে টুকরোটুকরো করে ফেলেছে সে ছেলে অন্য মেয়েকে বিয়ে করবে কিভাবে?
আমি: শায়লা যে বললো…
মেঘ: পাগলী বুঝার চেষ্টা করো ও আমাকে তোমার থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করছে। তোমার কি মনে হয় আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করেছিলাম? না কণা আমি সাইন করিনি, শায়লা আমার সাইন নকল করেছিল। (আমার দুচোখের পানি মুছে দিয়ে আমাকে ওর বুকে টেনে নিলো)
মেঘ: তুমি আমাকে যতোই ভুল বুঝ সত্যি তো এটাই আমি তোমাকে ভালোবাসি আর সারাজীবন বাসবো।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: রুহান আর আমাকে আব্বু পাঠাচ্ছেন আব্বুর বন্ধুর বাসায় বিয়েতে, তুমি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে তাই তোমাকে রাগানোর জন্য এমন হেলেদুলে চুল আছড়াচ্ছিলাম।
আমি: হু!
মেঘ: আর কেঁদো না আসছি। (মেঘ আমার কপালে চুমু খেয়ে চলে গেল। মেঘকে সত্যি বুঝা বড় কঠিন এই ভালো তো এই খারাপ)
মেঘ: এইযে!
আমি: আবার কেন এসেছ?
মেঘ: এভাবে শান্ত হয়ে আমার সব কথা শুনতে পারো না? তাহলেই তো আর ভুল বুঝাবুঝি হতো না। কাউকে ভুল বুঝার আগে তাকে কথা বলার সুযোগ দিতে হয় তুমি তো আমাকে কখনো বুঝিয়ে বলার সুযোগটা দাও না।
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: আসছি আর হ্যাঁ রাতের জন্য সরি আর কখনো ড্রিংক করবো না।
মেঘ চলে গেল, ওর বলা শেষ কথা গুলো ভাবছি। সত্যিই তো আমি মেঘকে কখনো কিছু বলার সুযোগ দেইনা সবসময় নিজের মতো করে ধরে নেই আর দুজনের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি, দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আজকের মতো যদি ওকে সবসময় বলার সুযোগ দিতাম তাহলে হয়তো এতোটা দূরত্ব আমাদের মাঝে তৈরি হতো না।
জোহা: আপু আপু…
আমি: হুম আয়।
জোহা: একটা কথা ছিল।
আমি: বল।
জোহা: আমার এখানে একদম ভালো লাগছে না আমি কানাডা চলে যাই প্লিজ।
আমি: আমাকে একা রেখে চলে যাবি?
জোহা: এই বাসায় তো শুধু জামেলা আর ভালো লাগেনা।
আমি: একটু মানিয়ে নে প্লিজ আর কয়েকটা দিন।
জোহা: হুম। (এসব অশান্তি আমারই ভালো লাগছে না জোহার তো মন খারাপ হবেই)

চাঁচি: শুধু নবাবজাদির মতো খেলে হবে কাজ করতে হবে না? (খাবার মুখে দিচ্ছিলাম চাঁচির কথা শুনে খাবার রেখে মা আর বাবার দিকে তাকালাম)
মা: তুমি কিন্তু আজকাল বেশি কথা বলছ আমার বৌমাকে দিয়ে আমি কাজ করাবো কিনা সেটা আমার ব্যাপার।
চাঁচি: ঠিক আছে তাহলে আমিই আমার বৌমাকে দিয়ে কাজ করাবো তখন কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারবে না। (চাঁচির কথা শুনে সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। এই মহিলা তো খুব চালাক, এই কথাটা বলেছেন যেন মা রেগে গিয়ে নিজের বৌমা বলেন আর উনি উত্তরে পপিকে দিয়ে কাজ করানোর কথা বলতে পারেন। আচ্ছা তাহলে তুমি এভাবে পপির প্রতি প্রতিশোধ নিতে চাইছ)
আব্বু: একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না?
চাঁচি: কোনো বাড়াবাড়ি হয়নি বউদের রেখে আমরা কাজ করবো কেন বৌমারা কিসের জন্য?
আমি: আপনাকে তো কেউ কাজ করতে বলে না বাসায় কাজের লোক আছে ওরা করে প্রয়োজন হলে আরো কাজের লোক আনবো।
চাঁচি: কাজের লোক কাজ করবে কেন…
আমি: আপনারা চুপ থাকুন উনাকে আমি দেখছি। (চাঁচির হাত ধরে টেনে উনার রুমের দিকে নিয়ে আসলাম)

চাঁচি: এসব হচ্ছে কি হাত ছাড়ো আমার। (উনার হাত ছেড়ে দিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম)
চাঁচি: কি করছ এসব?
আমি: আপনি যা চাইছেন তার উল্টোটা। খুব সখ পপিকে দিয়ে কাজ করানোর তাই না? প্রতিশোধ নিতে চান…
চাঁচি: হ্যাঁ আমি প্রতিশোধ নিতে চাই পপিকে আমি তিলে তিলে শেষ করে দিবো।
আমি: আপনার এই আশা কখনো পূরণ হবে না।
চাঁচি: হবে প্রয়োজন হলে অন্য বাসায় চলে যাবো।
আমি: তার আগেই যদি আপনাকে আমি জেলে পুরে দেই। (চমকে উঠলেন উনি)
আমি: চাইলে এখনি আমি আপনাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারি।
চাঁচি: আমি যে তোমার আব্বুর খুনের সাথে জড়িত তার কি প্রমাণ আছে তোমার কাছে?
আমি: সেদিন আপনি শায়লার সাথে ফোনে কথা বলছিলেন তখন আমি সব রেকর্ড করেছি, রেকর্ডে স্পষ্ট শুনা যায় শায়লা আব্বুকে খুন করিয়েছে আর আপনি এর সাথে যুক্ত আছেন। (উনি ভয়ে আতকে উঠলেন কথা বলতে পারছেন না শুধু ঘামছেন)
আমি: আমি যা যা বলি তাই করুন নাহলে কিন্তু…
চাঁচি: কি করতে হবে?
আমি: শায়লার সাথে কে কে যুক্ত আছে?
চাঁচি: মেঘ আর শায়লা এসব করছে।
আমি: মিথ্যে কথা মেঘকে তোমরা ফাঁসাচ্ছ।
চাঁচি: তুমি এমনিতে খুব চালাক শুধু মেঘকে বুঝার সময় বোকা।
আমি: মানে?
চাঁচি: মেঘ করছে এসব সবকিছু ওদের নামে করে নিয়ে তোমাকে লাথি মেরে ছুড়ে ফেলে দিবে।
আমি: মেঘ যে এসব করছে তার প্রমাণ কি?
চাঁচি: মেঘ আর শায়লার বিয়ে হচ্ছে আজ শায়লার অন্য একটি বাসায় চাইলে দেখে আসতে পারো। (উনার কথা শুনে আমার মাথা ঘুরতে শুরু করলো, তাহলে কি মেঘ আমাকে মিথ্যে বললো)
চাঁচি: তোহাকে ঘুমে রেখে নাশতা করতে এসেছিলে তো…
আমি: তোহা?
চাঁচি: হুম তোহা, গিয়ে দেখো তোহা রুমে নেই।
আমি: মানে তোহা কোথায়?
চাঁচি: শায়লার লোক এসেছিল তুলে দিয়েছি ওদের হাতে। দেখো এবার মেঘ তোহাকে নিয়ে ফিরে আসে কিনা।
আমি: আমার তোহা কোথায়?
চাঁচি: আরে ছাড়ো লাগছে।
আমি: তোহার জন্য না আমি খুন করতে দুবার ভাববো না। (উনার গলা চেপে ধরলাম, আমার হাত ছাড়ানোর জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করে যাচ্ছেন)
আমি: শায়লা তোহাকে নিয়ে কোন বাসায় আছে বলে দিন নাহলে আপনাকে আমি এখানেই খুন করবো। (উনি জুড় করে আমার হাত ছাড়িয়ে নিলেন তারপর হাপাতে হাপাতে বললেন..)
চাঁচি: বলার সুযোগ না দিলে বলবো কিভাবে আর একটু হলেই তো মারা যেতাম।
আমি: আপনার মতো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার চেয়ে মেরে ফেলাটাই ভালো।
চাঁচি: আমি গিয়ে এক্ষণি সবাইকে বলবো তুমি আমার গলা চেপে ধরেছিলে।
আমি: একটু শুনে যান..(উনি চলে যাচ্ছিলেন আমার কথা শুনে পিছন ফিরে তাকালেন)
আমি: এখান থেকে আর এক পা নড়লে এখনি পুলিশে ফোন করবো আর বলবো আপনি আমার তোহাকে কিডন্যাপ করেছেন।
চাঁচি: তুমি এতো…
আমি: খারাপ মেয়ে তাইতো? জানেন তো সন্তানের জন্য প্রত্যেক মা’ই খারাপ হতে দুবার ভাবে না।
চাঁচি: হুহ!
আমি: আপনি যে আব্বুর খুনের সাথে জড়িত এইটা বাবা জানেন আর উনার সম্মানের কথা ভেবেই আপনাকে পুলিশে দিচ্ছি না। এখন যদি বাবাকে গিয়ে বলি আপনি আমাদের তোহাকে কিডন্যাপ করেছেন তাহলে কেমন হবে?
চাঁচি: এমনটা করো না।
আমি: তাহলে চুপচাপ বলে দিন তোহা কোথায়।
চাঁচি: বলছি। (চাঁচির থেকে ঠিকানা নিয়ে চলে আসছিলাম আবার পিছন ফিরে তাকালাম)
আমি: আবার খারাপ কাজ করার আগে রেকর্ড এর কথাটা মাথায় রাখবেন কেমন?
হাসতে হাসতে চলে আসলাম। ভালোই বোকা বানিয়েছি উনাকে, আসলে তো আমার কাছে কোনো রেকর্ডই নেই।

শায়লা: মেঘ আমি ভাবছি তোহাকে তো আমার কাছে রাখবোই তোমাকেও আমার কাছে রেখে দিবো, বিয়ের পর তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।
মেঘ: মানে? (মেঘ হুট করে পিছনে তাকালো, আমাকে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। আমি চুপচাপ দরজাতেই দাঁড়িয়ে আছি, মেঘকে এখানে দেখতে হবে এইটা ভাবিনি। মেঘ আমার কপালে চুমু খেয়ে বলে এসেছিল আব্বু পাঠিয়েছেন বিয়েতে আর ও নিজেই এখানে বিয়ে করতে এসেছে)
মেঘ: কণা…
আমি: আজকেও কি তোমাকে কিছু বলার সুযোগ দিতে হবে?
মেঘ: আমার কথা তো শুনো…
আমি: সব তো নিজের চোখেই দেখছি আর কিছু বলার প্রয়োজন নেই। তোহা কোথায় আমার তোহাকে দিয়ে দাও আমি চলে যাচ্ছি।
শায়লা: তোহাকে তুমি কোন অধিকারে নিতে এসেছ?
আমি: বিয়ের দিন আমাকে যে অধিকার দেওয়া হয়েছিল সে অধিকারে।
শায়লা: এসব ভুলে যাও।
আমি: চুপ কর কেমন মা তুই? নিজের মেয়েকে কিডন্যাপ করে আনতে হয়…
শায়লা: একদম বাজে কথা বলবে না।
আমি: এখানে দাঁড়িয়ে তোদের নাটক দেখতে আমার ইচ্ছে হচ্ছে না তোহাকে ফিরিয়ে দে আমি চলে যাচ্ছি।
মেঘ: কণা শায়লা তোহাকে…
আমি: তোমার কাছে তো কিছু জানতে চাইনি কেন কথা বলছ? তোমার ডিভোর্স চাই তো দিয়ে দিবো তবে তোহাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।
মেঘ: আমি তো তোহাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতেই এসেছি।
শায়লা: কেন মিথ্যে বলছ মেঘ? তুমি তো একটু আগে বললে আমরা আবার এক হবো আ…
মেঘ: শায়লা প্লিজ অনেক নাটক করেছ আর করো না, বারবার তুমি আমাকে ফাঁসাচ্ছ আর কণা আমাকে ভুল বুঝে একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে।
শায়লা: আমি তোমাকে ফাঁসাতে যাবো কেন আজ আমাদের বিয়ে এইটা তো আমাদের দুজনের ইচ্ছেতেই হচ্ছে।
মেঘ: কিসের বিয়ে? তুমি আমাকে ফোন করে বলেছ তোহাকে কিডন্যাপ করেছ আমি আসলে দিয়ে দিবে, কণা শোনার আগেই আমি তোহাকে নিয়ে বাসায় ফিরতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি…
শায়লা: মেঘ কেন মিথ্যে বলছ এই মেয়েটার ভয়ে?
মেঘ: চুপ করো আর পারছি না…
আমি: চুপ করবে তোমরা দুজন? তোমাদের যা নাটক করতে হয় আমি চলে গেলে পর করো আমার তোহাকে ফিরিয়ে দাও।
শায়লা: তোহা আমার মেয়ে দিবো না আমি।
আমি: যদি তোহার বিনিময়ে সবকিছু তোকে দিয়ে দেই?
শায়লা: ভেবে দেখতে পারি।
আমি: পাঁচ মিনিট সময় দিলাম ভাব।
তোহা: নতুন আম্মু। (তোহা হুট করে কোথা থেকে যেন আসলো, আমাকে দেখেই দৌড়ে আসতে চাইলো কিন্তু শায়লা ওকে কোলে তুলে নিলো)
আমি: বলেছি তো সবকিছু দিয়ে দিবো।
মেঘ: শায়লা তোহাকে ছেড়ে দাও।
শায়লা: তোমরা দুজন এমন ভাবে বলছ মনে হচ্ছে আমি তোহাকে কিডন্যাপ করে আটকে রেখেছি আরে ও তো আমার মেয়ে।
আমি: তুমি ওকে ছাড়বে নাকি আমি পুলিশ নিয়ে আসবো?
শায়লা: পুলিশ আনলে ভালো হয়। পুলিশই নাহয় বলে দিবে তোহা কার কাছে থাকবে, ওর আসল আম্মুর কাছে নাকি নকল আম্মুর কাছে। (চুপচাপ সোফায় বসে পড়লাম এখন কি করবো? পুলিশ আনা যাবে না তাহলে তোহাকে শায়লার কাছেই থাকতে হবে। আমি এখ..)
মেঘ: কণা প্লিজ ভেঙে পড়ো না। (মেঘ আমার পাশে এসে বসতেই ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম)
শায়লা: তোহাকে দিতে পারি এক শর্তে তুমি মেঘকে এক্ষণি ডিভোর্স দিবে আর এখানে বসে আমাদের দুজনের বিয়ের সাক্ষী হবে।
মেঘ: শায়লা বেশি বাড়াবাড়ি করছ কিন্তু।
শায়লা: তাহলে তোহা আমার কাছেই থাকবে।
তোহা: আমি থাকবো না তোমার কাছে। (তোহা শায়লার হাতে কামর বসিয়ে দিলো, শায়লা ব্যথায় কুঁকড়ে গিয়ে তোহাকে ছেড়ে দিতেই ও দৌড়ে আমার কাছে চলে আসলো)
তোহা: নতুন আম্মু চলো।
আমি: আসছি ডিভোর্স পেপারটা আজ তোমার মুখে ছুড়ে মারবো। (মেঘকে কথাটা বলে বেরিয়ে আসলাম তোহাকে কোলে নিয়ে, পিছু পিছু মেঘও বেরিয়ে আসলো)

গাড়িতে এসে বসতেই মেঘও গাড়িতে উঠতে চাইলো, ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলাম।
মেঘ: কণা আমার কথা শুনো…
মেঘের ডাকে পিছু না চেয়ে চলে আসলাম।

বাসায় ঢুকতেই দেখি সবাই ড্রয়িংরুমে চিন্তিত হয়ে বসে আছে। আমাদের দেখেই মা তাড়াতাড়ি আমার কাছে আসলেন।
মা: কোথায় ছিলে তোমরা? তোহাকে না দেখতে পেয়ে তো আমরা সবাই ভয় পেয়ে গেছিলাম।
আমি: তোহাকে শায়লা নিয়ে গেছিল।
বাবা: কিন্তু কিভাবে?
আমি: হয়তো এ বাড়িরই কেউ শায়লাকে সাহায্য করেছে। (চাঁচির দিকে তাকিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালাম)
বাবা: মেঘ তুই ফিরে আসলি যে বিয়েতে যাসনি? (বাবার কথা শুনে পিছনে তাকালাম মেঘ দরজায় দাঁড়িয়ে আছে)
দাদী: কথা বলছিস না কেন? (মেঘ কারো কথার জবাব না দিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো, আমিও রুমে চলে আসলাম)

মেঘ: কণা আমার কথা শুনো প্লিজ। (তোহাকে বিছানায় দাঁড় করিয়ে পিছন ফিরতেই মেঘের সাথে ধাক্কা খেলাম, ও আমার একটা হাত ধরে ফেললো)
মেঘ: আমাকে বলার সুযোগ দাও প্লিজ।
আমি: আমার হাত ছাড়ো
মেঘ: তুমি কিন্তু আবারো ভুল করছ কণা। (ঠাস করে মেঘের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলাম, ও গালে হাত দিয়ে চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে)
আমি: এই থাপ্পড়টা তোমাকে আমার অনেক আগেই দেওয়া উচিত ছিল, দুমুখো সাপ একটা।
মেঘের দু চোখ থেকে পানি ঝরছে দেখেও আর দাঁড়ালাম না চলে আসলাম ওর সামনে থেকে…

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে