নীরবে_ভালোবাসি পার্ট: ১১

0
2754

নীরবে_ভালোবাসি

পার্ট: ১১

লেখিকা: সুলতানা তমা

চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি সবাই একবার আমার দিকে তাকাচ্ছে তো আবার পপির দিকে তাকাচ্ছে। মেঘ হুট করে এসে আমার হাত চেপে ধরলো।
মেঘ: এসব কি হ্যাঁ কি করেছ এইটা? বলছ না কেন? (মেঘের ধমকে ভয়ে চুপসে গেলাম, বাবা এসে মেঘের হাত সরিয়ে দিয়ে আমাকে উনার কাছে নিয়ে আসলেন)
বাবা: বৌমা তুমি হঠাৎ…
আমি: বাবা পপি রুহানকে ছোট থেকে ভালোবাসে তাই আ…
চাঁচি: তাই উনি ওদের বিয়ে দিয়ে মহৎ কাজ করেছেন।
বাবা: তুমি চুপ করতো।
চাঁচি: কেন চুপ করবো বিয়েটা কি ছেলেখেলা? বড়লোকের মেয়ে বলে আমাদের বাড়ির ছেলে মেয়ের জীবন নিয়ে খেলবে নাকি?
বাবা: কণা মা…
আমি: বাবা প্লিজ আপনি বিশ্বাস করুন পপি রুহানকে ভালোবাসে। হ্যাঁ রুহান এখন পাগলামি করছে কিন্তু দেখবেন কিছুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
বাবা: পপি তুই রুহানকে ভালোবাসিস?
পপি: (নিশ্চুপ)
আমি: পপি বলে দাও ভালোবাসার কথা লুকিয়ে রাখতে নেই।
মেঘ: কিন্তু রুহান তো পপিকে ভালোবাসে না পপি কি সুখী হবে?
দাদি: নিজের বোনের সুখ খুঁজছিস অথচ নিজেই নিজের বউকে সুখী করছিস না কি অদ্ভুত। (দাদির কথায় মেঘ কেমন করে যেন তাকালো আমার দিকে)
পপি: আমি ঠিক রুহানের ভালোবাসা জয় করে নিবো দেখো তোমরা।
মা: এভাবে সুখী হওয়া যায়না মা।
বাবা: যা হবার হয়েছে এখন শুধু ওদের জন্য দোয়া কর সুখী হয় যেন।
চাঁচি: তুমি মেনে নিলে?
বাবা: হ্যাঁ, না মানার কি আছে ওরা তো ভুল কিছু করেনি ভালোবাসে তাই বিয়ে করেছে।
পপি: আব্বু…(পপি গিয়ে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো, যাক বাবা সবাই তো মেনে নিলো)
চাঁচি: আমি এই বিয়ে মানি না।
মা: কেন মানবে না আমার মেয়ে কম কিসে?
চাঁচি: সে কথা নয় আসলে..(এই মহিলাকে থামাতে হবে নাহলে জামেলা বাড়বে। উনার পাশে এসে আস্তে আস্তে বললাম..)
আমি: চুপচাপ মেনে নিন নাহলে দাদিকে বলে দিবো আপনি আমার আর মেঘের ডিভোর্স করানোর জন্য চক্রান্ত করছেন। একবার বলে দিলে কিন্তু দাদি আপনাকে আর রুহানকে ঘাড় ধাক্কা…(উনার রাগি চাহনি দেখে থেমে গেলাম কিন্তু এখন উনি মানতে বাধ্য)
দাদি: এই তোরা কি ফিসফিস করছিস?
আমি: ওই তো দাদী চাঁচিকে বলছিলাম আমাকে একটু হেল্প করতে ওদের বাসরঘর সাজাতে হবে না?
চাঁচি: না আমি…(আবার কথা বলছেন এখন কিন্তু বলেই দিবো। চাঁচি চুপচাপ দাঁড়িয়ে রাগে ফুঁসছেন আর বেলুনের মতো ফুলছেন হিহিহি)
দাদি: হ্যাঁ বাসরঘর সাজাতে হবে তো, কিন্তু মেঘের পছন্দ আমি জানতাম বলে কিভাবে কিভাবে সাজাতে হবে বলে দিয়েছিলাম রুহানের পছন্দ তো জানিনা। (তারমানে সেদিন বাসরঘর মেঘের পছন্দ অনুযায়ী দাদি সাজিয়েছিলেন, মেঘ আর আমার পছন্দে এতো মিল। মেঘের দিকে তাকালাম ও আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছে যেন কোনো কিছুর জন্য মেঘ অনুশোচনায় ভোগছে)
দাদি: আমি সবকিছুর ব্যবস্থা করে নিচ্ছি তোরা যা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে আর পপিকে জোহার রুমে নিয়ে যা এখন।
জোহা: ঠিক আছে দাদি। (জোহা পপিকে নিয়ে ওর রুমের দিকে চলে গেল, আমিও রুমের দিকে পা বাড়ালাম)

ফ্রেশ হয়ে এসে ফোনটা হাতে নিলাম সন্ধ্যা হয়ে আসছে অনেক কাজ বাকি তার আগে আম্মুকে ফোন করা প্রয়োজন। আম্মুকে ফোন দিতেই রিসিভ করলেন।
আম্মু: আমাকে ভুলে গেলি।
আমি: না আম্মু একটু বিজি ছিলাম তাই…
আম্মু: হয়েছে হয়েছে বড় হয়ে গেছ তো বিজি তো থাকবাই। পড়াশুনা চলছে নাকি শশুড় বাড়িতে লক্ষী বৌমা সেজে বসে আছ? (সত্যি তো পড়াশোনার প্রতি তো একদম সময় দিচ্ছি না)
আম্মু: পরীক্ষা কিন্তু সামনে আমি মনে করিয়ে দিলাম।
আমি: তুমি টেনশন করোনা তো আমি ঠিক সামলে নিবো।
আম্মু: আমার ছোট মেয়েটা এখন বড় হয়ে গেছে এখন সবার সাহস জোগাতে পারে। (হ্যাঁ আম্মু আমি সত্যি অনেক বড় হয়ে গেছি, আব্বুকে হারানোর যন্ত্রণায় রোজ লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদি কিন্তু কাউকে বুঝতে দেইনা, মেঘের অবহেলায় আমি একটু একটু করে শেষ হয়ে যাচ্ছি কিন্তু কাউকে বুঝতে দেইনা আমি সত্যি অনেক বড় হয়ে গেছি আম্মু। আমি আর তোমার সেই ছোট্ট কণা নেই)
আম্মু: কণা কথা বলছিস না কেন?
আমি: বলতেছি তো আম্মু।
আম্মু: খুনির কোনো খুঁজ পেলি?
আমি: না তবে চিন্তা করোনা খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবো।
আম্মু: ওহ! (বেশ বুঝতে পারছি আম্মু কাঁদছেন, চুপচাপ ফোনটা কেটে দিলাম)

আম্মুকে ইচ্ছে করেই বলিনি আমি যে খুনী কে জানতে পেরেছি। বললে আম্মু দেশে আসতে চাইতেন তাই…
মেঘ: কণা তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছ..(বারান্দায় দাঁড়িয়ে কাঁদছিলাম মেঘ আসাতে তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে নিলাম)
মেঘ: তুমি কাঁদছ কেন?
আমি: নাতো।
মেঘ: মিথ্যে বলোনা কণা প্লিজ।
আমি: আব্বুর কথা মনে পড়ছে তাই।
মেঘ: শুধু কি তাই? (মেঘের চোখের দিকে তাকালাম কিভাবে বুঝাই ওকে, ওর অবহেলা গুলো যে আর নিতে পারছি না আমি)
মেঘ: বলো আমাকে কি হয়েছে? (মেঘ দুহাত দিয়ে আমার দুগালে ধরে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে)
আমি: তোমাকে বলে কি হবে তুমি তো আমাকে বুঝই না। ছাড়ো আমাকে আ…
মেঘ: ছাড়বো না। (মেঘ আমাকে ওর বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলো, আমিও তো চাই ওর এই বুকে মাথা রেখে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে কিন্তু মেঘ.. একবার আমাকে চায় তো একবার শায়লাকে চায়)
আমি: ছাড়ো বলছি।
মেঘ: চেষ্টা করোনা কারণ আমি না ছাড়লে তুমি কখনো যেতে পারবে না।
আমি: কেন করো আমার সাথে এরকম। (মেঘকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলাম, ও আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো)
কতোক্ষণ মেঘ আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল বলতে পারবো না, চোখ বন্ধ করে ওর বুকের সাথে মিশে ছিলাম। আচমকা মেঘ আমাকে ছেড়ে দিলো।
মেঘ: আজ তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
আমি: কি সারপ্রাইজ?
মেঘ: পাগলী সারপ্রাইজ আগে থেকে বলে দেয় নাকি। (মেঘ হনহন করে চলে গেল কিছুই বুঝতে পারলাম না কিসের সারপ্রাইজ দিবে)

পপি আর রুহানের বিয়ের খুশিতে মা আজ রাতের জন্য অনেক খাবার রান্না করছেন সাথে আমি মাকে হেল্প করছি।
মা: বৌমা তোমার আর রান্না করতে হবে না শরীরের যা অবস্থা করেছ যাও গোসল করে নাও।
আমি: আগে কখনো রান্না করিনি তো তাই একটু সমস্যা হচ্ছে।
মা: হ্যাঁ গলায় গালে ময়দা লাগানো হাতের কি অবস্থা করেছ পাগলী মেয়ে যাও গোসল করে নাও, মেঘ যদি দেখে ওর বউকে দিয়ে আমি রান্না করিয়ে বউয়ের এই হাল করেছি তাহলে তো রেগে যাবে।
আমি: কেন আমি কি বসে বসে খাওয়ার জন্য এসেছি নাকি? বউরা রান্না করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে খাবে এটাই তো নিয়ম। (মা আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন)
আমি: কি হলো মা?
মা: একদম লক্ষী বৌমার মতো কথা গুলো বলেছ। একদিন ঠিক এভাবেই মেহমান এসেছিল রান্না করতে রাত হয়ে গিয়েছিল, তোমার মতোই শায়লা টুকটাক কাজ করেছিল। পরে রুমে গিয়ে মেঘের সামনে কান্নাকাটি করে বলেছে বাবার বাড়িতে এর আগে কখনো এতো কাজ করেনি আর আমার ছেলেটা রেগে গিয়ে বাড়ির সবাইকে বকেছিল।
আমি: ভয় নেই মা মেঘ আমাকে এতোটা ভালোবাসে না তাছাড়া আমি এমন কোনো কাজ করবো না যেন আমার জন্য এই পরিবারের কেউ ছোট হয় আর আপনি তো মা।
মা: হয়েছে পাকনা বুড়ি এবার থেকে পড়াশুনোয় মন দাও কাজ করতে হবে না। তোমার মা ফোন করে বলেছেন তোমাকে শাসন করতে।
আমি: আম্মু কখন ফোন করেছিলেন?
মা: সকালবেলায়।
জোহা: আপু নাও তোমার মেয়েকে উফফ এতো দুষ্টু।
তোহা: আমি যাবো না পঁচা মেয়ের কাছে। (তোহার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম আমার মেয়ে আমার কাছে আসতে চাইছে না উল্টো জোহার গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে)
আমি: কেন আমি কি করেছি মামুনি?
তোহা: তুমি আজ একবারো আমাকে কোলে নাওনি। (সত্যি তো এতো জামেলার মধ্যে মেয়েটাকে একটু আদরও করা হয়নি)
আমি: আম্মু ফ্রেশ হয়ে এসেই তোমাকে কোলে নিবো। (রুমের দিকে পা বাড়াতেই কলিংবেল বেজে উঠলো আমিই দরজা খুলতে আসলাম)

দরজা খুলে আগে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালাম রাত সাড়ে আটটা বাজে আর এখন শায়লা এসেছে এই বাসায়।
আমি: এতো রাতে তুমি?
শায়লা: তোহাকে দেখতে এসেছি মেয়েটার জন্য মন কেমন করছিল।
আমি: তোমার আবার মনও আছে নাকি আর শর্তের কথা ভুলে গিয়েছ নাকি?
শায়লা: ভুলিনি শুধু একবার ওকে দেখে চলে যাবো। (শায়লা আমাকে ঠেলে ভিতরে চলে আসলো)
আমি: শুধু দেখবে কোলে নিতে পারবে না।
জোহা: আপু আমি আছি তো তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।
আমি: না আগে ও এ বাসা থেকে বের হবে তারপর আমি রুমে যাবো।
শায়লা: এতো রাতে আমি ফিরে যেতে পারবো না।
মা: মানে তুমি এই বাসায় থাকবে নাকি? (শায়লা কিছু না বলে চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসে রইলো। এই মেয়ে তোহাকে দেখতে এসেছে এই কথা তো একফোঁটাও সত্য না তাহলে কেন এসেছে ও কি মতলব ওর)
আমি: শায়লা তুমি এক্ষণি বের হও।
শায়লা: উকিলের কাছে গিয়েছিলাম উকিল বলেছে আমি চাইলেই তোহাকে আমার কাছে নিয়ে যেতে পারবো। (ফল কাটার চাকুটা হাতে নিয়ে ঘুরাচ্ছে আর নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর কথা শুনে আমার মাথা ঘুরতে শুরু করলো কি বলছে এসব ও? সত্যি কি উকিল এই কথা বলেছে)
শায়লা: কিন্তু আমি তোহাকে নিবো না কারণ তোহা তোমার কাছেই ভালো থাকবে তবে হ্যাঁ তার বিনিময়ে আমাকে কিছু দিতে হবে।
আমি: কি চাও তুমি?
শায়লা: সেটা নাহয় হিসেব করে পরে বলবো। ভয় নেই আমি এখানেই আছি তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো আর হ্যাঁ মেঘকে বলো আমি এসেছি। (মা আমাকে ইশারা দিয়ে রুমে চলে যেতে বললেন চুপচাপ রুমের দিকে চলে আসলাম)

রুমে ঢুকতেই দেখি মেঘ আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে ওর হাসি দেখে রাগ আরো বেড়ে গেল।
মেঘ: বাব্বাহ্ পরী আজ এতো রেগে আছে কেন?
আমি: (নিশ্চুপ)
মেঘ: তুমি বোধহয় আর কখনো রান্নাঘরের ধারেকাছে যাওনি।
আমি: এতো বকবক করো নাতো তোমার শায়লা এসেছে ওর কাছে যাও।
মেঘ: শায়লা এই সময়? (ওর কথার উত্তর না দিয়ে গোসল করার জন্য বাতরুমে চলে আসলাম)

গোসল করে রুমে আসতেই বিছানায় চোখ পড়লো বেগুনী রঙের একটা শাড়ি রাখা সাথে ছোট একটা চিরকুট। “শাড়িটা পড়ে নিও” চিরকুট সহ শাড়িটা ছুড়ে ফ্লোরে ফেলে দিলাম। এতো নাটক করে কিভাবে ও ভাবতেই পারছি না।

নিচে আসতেই মেঘ আমার দিকে রাগি চোখে তাকালো। বাহ্ মেঘ আর শায়লা পাশাপাশি বসে আছে কোথায় আমি রাগ দেখাবো উল্টো ও রেগে আছে। মেঘের দিকে আর তাকালাম না মায়ের কাছে রান্নাঘরে চলে গেলাম।
মা: পপি আর রুহান এসেছে?
আমি: হ্যাঁ সবাই আছে ড্রয়িংরুমে।
মা: খাবার গুলো টেবিলে নিয়ে যাও।
আমি: হুম।
মা: বৌমা কি হয়েছে?
আমি: কিছু নাতো।
মা: শায়লা এসেছে বলে মন খারাপ করে রেখেছ?
আমি: মেঘ শায়লাকে ভালোবাসে তাছাড়া এ বাড়িতে ওদের মেয়ে আছে শায়লা তো আসবেই। আমি কে রাগ করার?
মা: জানিতো মেঘের উপর অভিমান করে আছ। (মায়ের কথার কোনো জবাব দিলাম না, অভিমান কার উপর করবো যে আমাকে ভালোই বাসে না)

খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার রুমে চলে গেল, আমি পপিকে নিয়ে রুহানের রুমে আসলাম। পুরো রুম খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। দাদী বুড়ো হলেও পছন্দ আছে বলতে হয়। পপিকে খাটে বসিয়ে দিয়ে রুহানের পাশে এসে দাঁড়ালাম রুহান চুপচাপ সোফায় বসে আছে।
আমি: রুহান…
রুহান: (নিশ্চুপ)
আমি: ক্ষমা করে দিও আমাকে এভাবে ব্ল্যাকমেইল করতে চাইনি কিন্তু এছাড়া কোনো উপায় ছিল না। পপি তোমাকে ভালোবেসে দিনের পর দিন কষ্ট পাচ্ছে তাছাড়া তুমি যা চাইছ তা সম্ভব না তাই এই কাজ করতে হলো। আজ হয়তো পপিকে মেনে নিবে না কিন্তু একদিন ঠিক মেনে নিবে। আর তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে এবার থেকে নাহয় সবটুকু ভালোবাসা পপিকে দেওয়ার চেষ্টা করো।
রুহান: তোমার কথা শেষ হলে আসতে পারো।
পপি: ভাবি কাকে কি বুঝাচ্ছ ও তোমার কথার কিছুই বুঝবে না উল্টো অপমান করবে।
আমি: সমস্যা নেই একটু অপমানিত হলাম নাহয়।
রুহান: আমার মাথা ঠিক নেই তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না প্লিজ তুমি চলে যাও।
আমি: হ্যাঁ চলে যাচ্ছি তোমার কাছে শুধু একটা অনুরোধ আমি যে কষ্টের আগুনে পুড়ছি সে আগুনে পপিকে পুড়তে দিওনা।
চোখের পানি মুছতে মুছতে চলে আসলাম ওদের রুম থেকে। স্বামী অন্য কোনো মেয়েকে ভালোবাসে এইটা নিজ চোখে দেখতে হয় এইটা বোধহয় একটি মেয়ের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কষ্ট। আমি আর পপি দুজনই এই একি কষ্টে ভুগছি।

রুমে এসে দেখি মেঘ শাড়িটা হাতে নিয়ে বসে আছে তোহা তো বিছানায় নেই।
আমি: তোহা কোথায়?
মেঘ: জোহা নিয়ে গেল বললো ওর কাছেই থাকবে।
আমি: ওহ।
মেঘ: কোথায় যাচ্ছ?
আমি: তোহার কাছে।
মেঘ: দাঁড়াও বলছি। (মেঘ এসে আমার হাত ধরে ফেললো)
আমি: কি হচ্ছে এসব?
মেঘ: জোহা নিয়ে গেছে এখন তুমি নিয়ে আসতে গেলে জোহা কি ভাববে?
আমি: ঠিক আছে যাবো না হাত ছাড়ো।
মেঘ: খাবে না? তখন তো তোহাকে খাইয়ে দিয়েছ তুমি খাওনি।
আমি: খিদে নেই।
মেঘ: শাড়িটা পড়লে না?
আমি: শায়লা তো পাশের রুমেই আছে ওকে গিয়ে দিয়ে এসো পড়ে দেখাবে তোমাকে। (মেঘ আমার গালে ঠাস করে থাপ্পড় মারলো, গালে হাত দিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম)
মেঘ: নিজে গিয়ে তোমার জন্য শাড়ি এনেছি আর তুমি শায়লাকে দিতে বলছ?
আমি: হ্যাঁ বলছি একদম চিৎকার করবা না বলে দিলাম।
মেঘ: কণা তুমি কিন্তু সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছ।
আমি: সীমা তো ছাড়িয়ে যাচ্ছ তুমি, ঘরে এক স্ত্রী থাকা অবস্থায় প্রাক্তন স্ত্রীকে বাসায় আসতে দিচ্ছ থাকতে দিচ্ছ আমার সাথেও সময় কাটাচ্ছ শায়লার সাথেও সময় কাটাচ্ছ। পেয়েছ কি তুমি আমাকে যা খুশি করবে আর আমি মেনে নিবো।
মেঘ: আমি শায়লাকে আসতে বলিনি।
আমি: তাহলে ওকে বাসা থেকে বের করে দাওনি কেন নাকি রাতে ওর কাছে…
মেঘ: কণা…(মেঘ আমার দুগালে অনেক গুলো থাপ্পড় বসিয়ে দিলো)
আমি: মেরে ফেলো আমাকে আর পারছি না এসব সহ্য করতে। নিজের স্বামীকে অন্য মেয়ের সাথে দেখার চেয়ে মরে যাওয়াই ভালো।
মেঘ: চলো আমার সাথে।
আমি: আমার হাত ছাড়ো কোথাও যাবো না আমি। (মেঘকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। বাতরুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম)
মেঘ: কণা প্লিজ দরজা খুলো উল্টাপাল্টা কিছু করো না। বিশ্বাস করো আমি শায়লাকে ভালোবাসি না আমি শুধু তোমাকে ভালোবাসি।

মেঘ এখনো ডাকছে আর দরজায় ধাক্কাচ্ছে ওর ডাকে সাড়া না দিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে ভিজতে থাকলাম। এই শাওয়ারের পানিই নাহয় আমার চোখের পানি গুলোকে ধুয়ে দিয়ে যাক। আর পারছি না খুব কষ্ট হচ্ছে আস্তে আস্তে শাওয়ারের নিচে বসে পড়লাম, পাগলের মতো কাঁদছি হয়তো এই কান্না আমার কষ্ট গুলোকে কিছুটা হলেও হালকা করে দিবে…

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে