ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ৪

0
4259

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ৪

#Rabeya Sultana Nipa

 

আয়ান- প্রাপ্তি এই বুকে যে মাথা রাখলে কিছু শুনতে পাচ্ছো?

প্রাপ্তি- হুম,, তোমার,,,,,,, ধ্যাত, লজ্জা পেয়ে আর কিছু না বলে প্রাপ্তি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। প্রাপ্তি আজ আয়ানের কাছাকাছি এই প্রথম গিয়েছে।এক অজানা ভালোলাগা কাজ করছে তার মনে।বার বার লুকিয়ে লুকিয়ে এসে আয়ান কে দেখছে।আয়ান সেই জায়গা এখনো থমকে দাঁড়িয়ে আছে।মনে হচ্ছে কিছুক্ষণের জন্য সে সপ্ন দেখছিলো।প্রাপ্তি তার সপ্নে এসে তার কাছে ধরা দিয়েছে।মেয়েটার মধ্যে এক মায়া ভরা নেশা কাজ করে।যেই নেশা আমি ছাড়তে চাই না।আয়ান কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রুম থেকে বেরিয়ে এসে ড্রইংরুমে বসলো।

আজাদ সাহেব -কি হয়েছে আয়ান এইভাবে নিস্তব্ধ হয়ে আছো কেন? কিছু হয়েছে?

আয়ান -চমকে উঠে,, কই না তো কিছু হয়নি।আসলে আমি কাল সকালে চলে যাবো।প্রাপ্তি আর রেশী দুইদিন থাকবে বলছে।তাই নিয়ে ভাবছি।
আজাদ সাহেব -কিছু না হলেই ভালো।তবে তুমি বাসায় একা থাকবে নাকি? তুমি এই দুই দিন এখান থেকে অফিসে গেলেই তো পারো।
আয়ান -আব্বু,এখান থেকে আসা যাওয়াটা আমার জন্য লং জার্নি। সমস্যা নেই দুই দিনেরি তো ব্যাপার। কথাটা বলে আয়ান নিজেই ভাবছে প্রাপ্তি ছাড়া থাকতে পারবো আমি? কিন্তু কি করবো বিয়ে পর পাগলী টা এই ফাস্ট আমার কাছে কিছু ছেয়েছে এই বাড়ীতে সেই দুইটা দিন থাকতে চায়।আমার সময় হয়ে উঠে না তাই ওর এই বাড়ীতে আসা হয়না।

পরের দিন সকাল বেলা আয়ান অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।প্রাপ্তি কোর্টটা এগিয়ে দিতে দিতে সত্যিই কি আপনি এই দুইদিন আসবেননা?

আয়ান -(কোর্ট পরতে পরতে)না আসলে কি তোমার মন খারাপ হবে?

প্রাপ্তি- (মন খারাপ করে নিছের দিকে তাকিয়ে)জানিনা!

আয়ান -মন কে জিজ্ঞাস করে ফোন দিও।ভেবে দেখবো।

প্রাপ্তি -আপনি বাসায় একা একা থাকবেন?

আয়ান -(প্রাপ্তির দিকে ফিরে মুছকি হেঁসে)বিশ্বাস নেই আমার প্রতি?

প্রাপ্তি -ওমা,,,,, ছিঃ ছিঃ কি বলেন? আমি বলতে চাইছি একা একা আপনার খারাপ লাগবে না?

আয়ান -(গলাটা নরম করে)তোমার গালে হাত দিই?

প্রাপ্তি মাথাটা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক বুজিয়ে নিছের দিকে তাকিয়ে আছে।

আয়ান দুই হাত দিয়ে গাল দুটো ধরে, আই লাভ ইউ।তোমাকে অনেক মিস করবো।
প্রাপ্তি আয়ানের হাত দুটো গাল থেকে নামিয়ে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে, আপনি আমায় কখনো ছেড়ে যাবেননা তো?

আয়ান -যদি যাওয়ার হতো আরো আগেই যেতাম।এই প্রাপ্তির মায়া ছেড়ে কোথাও গিয়ে এই ইকবাল মাহমুদ আয়ান শান্তি পাবেনা।

প্রাপ্তি -(আয়ানকে ছেড়ে দিয়ে) হয়েছে হয়েছে এইবার যান অফিসের দেরী হয়ে যাবে কিন্তু।

আয়ান অফিসে যাওয়া পর থেকেই প্রাপ্তির মন খারাপ হয়ে আছে।এইখান থেকে আয়ানকে অফিসে একঘণ্টা আগেই যেতে হয়েছে।আয়ানের অফিস এইখান থেকে দূরে। প্রাপ্তির আম্মু রান্নাঘরে রান্না করছে অরণী বসে বসে পেপার পড়ছে।প্রাপ্তি এসে তার আম্মুর কাছে রান্নাঘরে ঢুকতে যাবে তখনি অরণী বলে উঠলো, আপু এইদিকে দেখে যা আজকের পেপারে কি আসছে।অজ্ঞাত একটা মেয়েকে কেউ ধর্ষন করে মেরে ডোবায় ফেলে রেখেছে।অরণীর মুখের কথাটা শুনেই প্রাপ্তি মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।প্রাপ্তির আম্মু রান্নাঘর থেকে দৌঁড়ে এসে চিৎকার দিয়ে, অরণী তুই এইটা কি করলি?রেশীও দৌঁড়ে এসে ভাবীর কি হয়েছে? জ্ঞান হারালো কি ভাবে?

নিলিমা বেগম-অরনী আগে পানি নিয়ে আয়।রেশী একটু ধরোতো আপাদত সোপায় নিয়ে বসাই।

রেশী প্রাপ্তিকে ধরে সোপায় বসাতে বসাতে আমি কিছু বুজতেছি না ভাবীর কি হলো একটু আগেও তো ঠিকি ছিলো।

অরণী দৌঁড়ে এসে প্রাপ্তির চোখে মুখে পানি দাওয়াতে আস্তে আস্তে প্রাপ্তি চোখ খুললো।
নিলিমা বেগম আর রেশী পাশে তাকে ধরে বসে আছে।অরণী পানির গ্লাস নিয়ে তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।এইখানে কিছু না বলে নিজেকে নিলিমা বেগম আর রেশীর কাছ থেকে ছাড়িয়ে নিস্তব্ধ হয়ে নিজের রুমের দিকে হাঁটতে শুরু করলো।দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো প্রাপ্তি।অরণী কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।নিলিমা বেগম আর রেশী চুপ করেই বসেই আছে। রেশী মনে মনে ভাবছে ভাইয়া কে কি ফোন দিয়ে কথাটা বলবো?না শুনালে তো আবার আমাকেই রাগ দেখাবে।
আচ্ছা ভাবীর কি হয়েছে হঠাৎ?হয়তো সবাই জানে আমাকেই বলছেনা।
আকাশটা আজ কালো হয়ে আসছে।প্রাপ্তি মতো হয়তো তারও মন খারপ হয়েছে।আকাশ তো মন খুলে কাঁদতে পারে কিন্তু আমি তো পারিনা।আমার কেন লুকিয়ে কাঁদতে হয়।নাহ্ আজ আকাশের সাথে আমিও মন খুলে কাঁদতে চাই।কথাটা ভাবতেই প্রাপ্তি দৌঁড়ে ছাদে চলে গেলো।প্রাপ্তিকে এইভাবে ছাদে যেতে দেখে রেশী উঠে গিয়ে আয়ান কে ফোন দিয়ে সব বললো, অভ্রকে সব সামলাতে বলে আয়ান গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
ছাদে গিয়ে দোলনায় বসে আছে প্রাপ্তি বৃষ্টিতে ভেজার আশায়।আকাশে বিদ্যুৎচমকাচ্ছে,ঝিরঝির বৃষ্টিও পড়ছে চোখের পানি গুলোকে বৃষ্টির পানির সাথে মিশাইতে চাইছে।নিজের কষ্ট গুলোকে হয়তো বৃষ্টির সাথে ভাগ করতে চাইছে।মনে হচ্ছে এইতো সেইদিনের ঘটনা, কিন্তু না ওই ঘটানার পর ৩ টা বছর কেটে গেছে।এই ৩ টা বছরের একেক টা দিন কিভাবে কাটিয়েছে এইটা শুধু নিজেই জানে।কাউকে বুজতে দেয়নি কখনো বুজাতে চায়ও নি,কিন্তু মাঝ খানে আয়ান জীবনে চলে আসে।ছেলেটা আমার কাছ থেকে কিছুই পায়নি।উল্টো আমার কারণেই তাকে ঘর ছাড়তে হয়েছে। হারাতে হয়েছে সবার ভালোবাসা।সেইদিনের তারিখটা প্রাপ্তি কখনো ভুলতে পারবেনা এপ্রিলের ১০ তারিখ সকাল বেলা,ভার্সিটিতে যাবে বলে রেডি হচ্ছে প্রাপ্তি।প্রাপ্তি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে আর অরণী এইসএসচি ফাস্ট ইয়ার।সবকিছু ভালোই চলছিলো।প্রাপ্তির সব বন্ধুরা বলতো তোদের পরিবারের মতো আরেকটা পরিবার দেখিনি।একজনের প্রতি একজনে কি ভালোবাসা।সবাই বলে বোনে বোনে নাকি অনেক ঝগড়া হয় কিন্তু আমার আর অরণীর মাঝে কখনোই ছিলো না।অবশ্য অরণী একটু চঞ্চল প্রকৃতির।ওর একটা বাজে অভ্যাস আছে,সেটা হলো ছেলেদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরানো, ওর যে বাজে অভ্যাস আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে সেটা কখনোই ভাবিনি।

অরণী পিছন দিক থেকে এসে বললো, আপু তুই ভার্সিটিতে যাচ্ছিস?

প্রাপ্তি -হুম ক্লাস আছে,,কেন? তুই যাবিনা?

অরণী -না আপু আমার ভালো লাগছে না।তুই যা। আর শুন সাবধানে যাস।

প্রাপ্তি -কেন? কি হয়েছে? হঠাৎ এই কথা বলছিস?

অরণী -তোর মনে আছে সায়মনের কথা?

প্রাপ্তি -হুম মনে থাকবে না কেন? ওই ছেলে তো তোকে অনেক ডিস্টার্ব করতো একদিন তো তুই ভেবে আমাকেই ডিস্টার্ব করছিলো আমি বাসায় এসে বলাতে আব্বু থানায় ওর নামে ডায়রি করেছিলো। এখন তো জেলেই আছে।

অরণী -আরে সেই জন্যই তো বলছি,ওর বাবার টাকার খমতায় নাকি ছাড়া পেয়ে গেছে।তাই বলছি সাবধানে যাস।

প্রাপ্তি ওই নিয়ে তুই চিন্তা করিস না।ভাইয়া যাবে আমার সাথে।
আসিফ শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে প্রাপ্তির রুমে এসে কিরে প্রাপ্তি তোর হলো?

প্রাপ্তি -হ্যাঁ আমার হয়ে গেছে চলো।অরণী, আম্মু, আব্বু আমি আসি।

আজাদ সাহেব -আসিফ সাধানে যাস,আর অফিস থেকে একটু তাড়াতাড়ি বাসায় আসিস।
আসিফ -চেষ্টা করবো।(প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে) তুই আবার দাঁড়িয়ে পড়লি কেন? চল!

আসিফ প্রাপ্তিকে ভার্সিটির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।কেন জানি প্রাপ্তিকে রেখে আজ যেতে ইচ্ছে করছেনা।মনটা কেমন জানি খচখচ করছে।প্রাপ্তিকে বললে ও সব ঠাট্টা ভেবে উড়িয়ে দিবে।আসিফ মোটর সাইকেলটা নিয়ে একটু দূরে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়লো পিছন ফিরে প্রাপ্তিকে দেখতে যাবে তখন দেখে প্রাপ্তি নেই একটা মাইক্রো চলে যাচ্ছে।আসিফ ভাবলো প্রাপ্তি হয়তো ভার্সিটির ভিতরে ঢুকে গেছে ভেবে আসিফ অফিসের দিকে রওনা হলো।গাড়ীটা আসিফের পাশ দিয়ে যেতেই প্রাপ্তি বার বার হাত দিয়ে ইশারা করছে।প্রাপ্তির মুখটা বাঁধা তাই ডাকতে পারছিলোনা।আসিফ অফিসে গিয়ে পৌঁছানোর ২০ মিনিট পরেই প্রাপ্তির ফ্রেন্ড মেঘলা ফোন দিলো।
আসিফ প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে মেঘলার ফোন।ফোন রিসিভ করে কানে ধরে অফিসের ফাইলটা খুললো।

আসিফ -কি ব্যাপার মেঘলা হঠাৎ ফোন?

মেঘলা -ভাইয়া! প্রাপ্তি আজ ভার্সিটিতে আসবে না?

আসিফ -কি বলছো প্রাপ্তি ক্লাসে যায়নি।আমি ওকে নিজে নিমিয়ে দিয়ে আসলাম।ভালো করে খুঁজে আমাকে ফোন দাও।

মেঘলা আসিফের কথা মত ভার্সিটির সব জায়গায় খুঁজে আসিফ কে ফোন দিলো।

মেঘলা -ভাইয়া প্রাপ্তি তো কোথাও নেই।

আসিফ -(চিন্তিত হয়ে)কি বলছো আমি নিজে ওকে নামিয়ে দিয়ে আসলাম।আচ্ছা তুমি রাখো আমি দেখছি।প্রাপ্তির ফোনে অনেক বার কল দিয়েছে আসিফ।ফোন বেজেই যাচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছেনা।আসিফ বাসায় ফোন দিয়ে আজাদ সাহেবকে বললো থানায় যেতে।অরণী আসিফের ফোনে বলা কথা গুলো শুনে বুজার আর বাকী নেই সায়মন কিছু একটা করেছে।কথাটা ভাবতে অরণী চোখ বন্ধ করে সোপায় বসে পড়লো।ওরা যদি আপু কোনো ক্ষতি করে তাহলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা। সায়মের দলের ছেলে গুলোও ভালোনা।ওহ্ঃ আমি এখন কি করি।আচ্ছা আব্বু কি জানে সায়মন জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে।
নিলিমা বেগম মেয়ের কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। কি করবে বুজতে পারছেনা আমার মেয়েটা এইভাবে না বলে কোথাও যাবার মেয়ে ও না।ওর কোনো বিপদ হলো নাতো?নিলিমা বেগম উঠে গিয়ে অরণী কাছে এসে,অরণী! তুই কিছু জানিস প্রাপ্তি কোথায় যেতে পারে?

অরণী -আম্মু আপু তো এইভাবে কোথাও না বলে যায় না।আব্বু আর ভাইয়া আসুক দেখো তারা কোনো খোঁজ পায় কিনা।
এইভাবেই সকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে এলো প্রাপ্তিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি।আসিফ আর আজাদ সাহেব সব জায়গায় খুঁজেছে প্রাপ্তির ফ্রেন্ডদের বাসায়ও খোঁজ করা হয়েছে।এলাকাজুড়ে সবাই জেনে গেছে আজাদ সাহেবের মেয়ে প্রাপ্তিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।পাশের বাড়ীর মানুষ তো এসে নানান কথা বলাও শুরু করেছে।প্রাপ্তির মা! দেখো মেয়ে হয়তো কারো সাথে ভেগে গেছে।
অন্য একজন বলছে ঠিকি বলেছেন এখনকার মেয়ে কোথাও গেছে পষ্টিনষ্টি কারার জন্য দুইদিন গেলেই চলে আসবে।
আরেকজন বলছে কতোবার বলেছি আসিফের মা! মেয়ে বড় হয়ে বিয়ে দিয়ে দাও এতো পড়িয়ে লাভ কি।এখন দেখেছো মেয়ে চুনকালি মাখিয়ে চলে গেলো।এইভাবে একেকজন একেকভাবে বলেই যাচ্ছে। নিলিমা বেগম ড্রইংরুমের ফ্লোরে পাগলের মতো নিস্তব্ধ হয়ে চোখের পানি ঝরছে আর মানুষের কথা গুলো শুনছে।অরণী আর সহ্য করতে না পেরে সবার উদ্দেশ্য করে বলে ফেললো আপনার কি মানুষ? আমাদের এমন একটা সময় আপনারা এইসব কি বলছেন? হয়তো আমার আপুর অন্য কোনো বিপদআপদ ও তো হতে পারে।আপনারা সবাই এইখানে এসেছেন আমাদের মজা দেখতে? প্লিজ আপনার এখন এইখান থেকে যান।অনেক মজা দেখেছেন আর না।

চলবে,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে