ধর্ষিতা_বউ পার্ট:৩২

0
3635

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট:৩২

#Rabeya Sultana Nipa

 

__গাঁয়ে হলুদের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে।অভ্র আর আকাশ আসিফকে রেডি করিয়ে ড্রইংরুমে নিয়ে আসলো।সবাই রেডি হয়ে বেরিয়ে এলো। রেশীকে দেখে অভ্র হা করে তাকিয়ে আছে।আয়ান সবাইকে ড্রইংরুমে দেখতে পেয়ে প্রাপ্তিকে না দেখে, অরণী! তোমার আপু কই তাকে তো দেখছিনা? নিলিমা বেগম এসে এই মেয়েটা যে কি করছে আল্লাই ভালো জানে।

আয়ান- তোমরা সবাই ছাদে যাও আমি প্রাপ্তিকে নিয়ে আসছি বলেই আয়ান প্রাপ্তির রুমের দিকে এগুতেই প্রাপ্তি রুম থেকে বেরিয়ে এলো।প্রাপ্তিকে দেখে আয়ান হা করে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে।তার মনের অপ্সরী তার চোখের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।সবাইও কম অবাক হয়নি প্রাপ্তিকে দেখে।সুমি আয়ানকে এইভাবে থাকতে দেখে আয়ানের কাছে এসে, হা বন্ধ করো, না হলে মশা ঢুকে যাবে।
আয়ান লজ্জা পেয়ে মন না চাইলেও প্রাপ্তির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিলো।

নিলিমা বেগম -কিরে,,, প্রাপ্তি! এতো দেরী হলো কেন?

প্রাপ্তি -রেডি হতেও তো সময় লাগে তাইনা।তোমরা সবাই দাঁড়িয়ে আছো কেনো? চলো!

সবাই ছাদে চলে গেলো। নিহাদ বার বার অভ্র আর রেশীর দিকে তাকাচ্ছে।রেশী চুপচাপ হয়ে অরণীর সাথে বসে আছে।অভ্র আয়ানের সাথে বিভিন্ন কাজে হেল্প করছে।সবাই একে একে আসিফকে হলুদ লাগাচ্ছে আর মিষ্টি খাওয়াচ্ছে।আজাদ সাহেব আয়ান আর অভ্রকে ডেকে নিয়ে যা যা নিয়মনীতি আছে সব কিছু তাড়াতাড়ি শেষ করবে।রাত যেনো বেশি না হয়।

অভ্র -আংকেল আপনি চিন্তা করবেন না। আমরাতো আছিই।

ঝিনুক নিহাদের অস্বাভাবিক আচরণ দেখে,ঝিনুক চুপ করে না থেকে,এই তোমার সমস্যা কোন জায়গায় বলোতো? আসার পর দেখছি গোয়েন্দাগিরি তে নাম লিখিয়েছো।তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি এইখানে আসিফের বিয়ের ইনজয় করতে আসোনি।এসেছো গোয়েন্দাগিরি করতে। চোখ গুলোকে একবার এই দিকে আরেকবার ওই দিকে করছো। সবাই কি ভাববে বলোতো?

নিহাদ -চুপ করবে? চোখ গুলো কোথায় নিয়ে থাকো সেটা বলো? ওইযে আয়ানের পাশের ছেলেটার দিকে তাকাও! ওকে চিনতে পারো কিনা দেখো?

ঝিনুক বিরক্তিকর ভাব নিয়ে তাকাতেই আশ্চর্য হয়ে, অভ্র!

নিহাদ -হুম অভ্র!

ঝিনুক – ও এইখানে কিভাবে? আমিতো কিছুই বুজতেছিনা।ওর সাথে তুমি কথা বলনি।দাঁড়াও আমি গিয়েই ওর সাথে কথা বলছি।কথাটা বলেই ঝিনুক উঠতেই নিহাদ হাত ধরে, বসো এই খানে।ওর সাথে আমার দেখা হয়েছে কিন্তু ও আয়ানের সামনে আমাকে না চিনার ভাব করছে।কিন্তু কেনো সেটাই বুজতে পারছিনা।

ঝিনুক -কিন্তু অভ্র এইখানে কার রিলেটিভ হয়? প্রাপ্তিদের?

নিহাদ -না! তোমার ছোটো ভাইয়ের।মানে আয়ানের বেষ্ট ফ্রেন্ড। আয়ানের হয়েই সে এই বাড়িতে।

ঝিনুক -তাহলে সমস্যা নেই! একজন আরেক জনের ফ্রেন্ড হতেই পারে।জীবনে চলার পথে কত মানুষ আসে আর যায়।তবে অভ্রকে অনেক দিন পরে দেখে আমার খুব ভালো লাগছে।ছেলেটার সহ্য শক্তি অনেক।ওর জায়গা অন্য কেউ থাকলে সেইদিনের অপমানে ভেঙে পড়তো। কিন্তু অভ্র নিজের জীবনকে নতুন ভাবে সাজিয়ে নিয়েছিলো। তবে মেয়েটা জানতেই পারলোনা মেয়েটা অভ্রকে বিয়ে না করে কত বড় ভুল করেছে।অভ্রর মতো এইরকম ছেলে কয়জনের ভাগ্যে জুটে।

নিহাদ -(একটু চুপ করে থেকে)আচ্ছা ঝিনুক আমি যদি বলি সেইদিনের মেয়েটা আজ এইখানেও আছে তুমি কি অবাক হবে?

ঝিনুক-(একটু জোর গলায়)কিহ্! অবাক হবোনা মানে?ওই মেয়েকে পেলে আমি আগে এইটা জিজ্ঞাস করতাম অভ্রর কোন দিকে কম আছে ? অভ্রকে কেনো সেইদিন সবার সামনে অপমান লাঞ্ছনা সহ্য করতে হয়েছে?মানুষে সামনে হাঁসির পাত্র বানিয়েছে কেনো?সেইদিন অভ্রর মা বাবাকে কতোটা হেনস্থা হতে হয়েছে।কই মেয়েটা! আমাকে একবার দেখিয়ে দাওতো।আজকে মেয়েটা আমার সব প্রশ্নের আনসার দিতেই হবে।

নিহাদ-ঝিনুক! প্লিজ এখন চুপ করো।তুমি এখন কোনো ঝামেলা করোনা প্লিজ।ওদের বিয়েটা মিটে যাক তারপর না হয় এইসব নিয়ে কথা বলা যাবে।

ঝিনুক -তুমি আগে এইটা বলো মেয়েটা কে? আমি মেয়েটা কে দেখতে চাই।

নিহাদ -রেশী! আয়ানদের সাথে যে মেয়েটা থাকে সেই মেয়েটা।

ঝিনুক নিহাদের কথা শুনে অবাক হয়ে, কি বলো রেশী?আচ্ছা আয়ান কি এই মেয়ের ব্যাপারে সব জানে?

নিহাদ -সেটা তো জানি না।

আয়ান প্রাপ্তিকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো নিচে যাওয়ার জন্য।ইশারা করে আয়ান নিচে চলে গেলো।প্রাপ্তিও নিচে নিজের রুমে আসতেই দেখে আয়ান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন টিপতেছে।আয়ানকে দেখে নিজের কোমরে হাত দিয়ে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে এখন তোমার ডাকার সময়? সবাই কি ভাববে বলো তো? সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে আমাকে এইখানে আসতে হয়েছে।
আয়ান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাঁসছে।প্রাপ্তির কথা শেষ হতেই আয়ান প্রাপ্তিকে হেছকা টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে এসে প্রাপ্তি কোমর জড়িয়ে ধরে মহারানী তুমি আমার জন্য সেজেছো কিন্তু আমার সামনেই আসছোনা।লজ্জা পাচ্ছো?

প্রাপ্তি -মোটেও না।লজ্জা পাওয়ার কি আছে?

আয়ান সেটাই তো। তাহলে দূরে দূরে থাকছো কেনো?

প্রাপ্তি কিছু না বলে চুপ করে আছে আর মনে মনে ভাবছে আয়ানকে কি করে যে বুজাই।

প্রাপ্তি -চলো না উপরে যাই। সবাই হয়তো আমাদের খুঁজছে।

আয়ান -পালাতে চাইছো তাই তো। ওকে যাও।

আকাশ এইপাশ ওপাশ তাকিয়ে, সুমি! আয়ান কোথায়?

সুমি-প্রাপ্তি ও তো দেখছি এইখানে নাই।হয়তো দেখো দুই জনে লুকিয়ে প্রেম করছে।রেশী! যাওতো ওদের কে ডেকে নিয়ে আসো।

রেশী মুচকি হাঁসি দিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুজিয়ে উঠে সিঁড়ির দিকে এগুতেই, অভ্র ও আসিফের কাছে যাচ্ছিলো এমন সময় রেশী অভ্রর সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতেই অভ্র ধরে ফেললো।রেশী লজ্জা পেয়ে নিজেকে অভ্রর কাছ থেকে ছাড়িয়ে সরি ভাইয়া আমি দেখতে পাইনি।

অভ্র -আমার মনে হয় তুমি ইচ্ছে করেই আমার সাথে ধাক্কাটা খেয়েছো(হাঁসি চেপে রেখে)কি! ঠিক বলছিতো?

রেশী -(ভয়ে ভয়ে,) না না ভাইয়া বিশ্বাস করুন আমি আপনাকে একদম দেখতে পাইনি।আমি তো ভাইয়া আর ভাবীকে ডাকতে যাচ্ছিলাম।

অভ্র-তাই! তার মানে তুমি ভালোবাসার মাঝ খানে ডিস্টার্ব করতে যাচ্ছিলে?

রেশী -না ভাইয়া সত্যি বলছি আমি ইচ্ছে করে যাচ্ছি না।সুমি ভাবী আমাকে বললো তাদের ডেকে আনতে।

অভ্র -না তুমি মিথ্যা বলছো। ছিঃ রেশী এইটা কি তুমি ঠিক করছিলে।দুজন মানুষ একান্তে সময় কাটাচ্ছে আর তুমি,,,,,,, আমি ভাতেই পাচ্ছি না।(রেশীকে খেপানোর জন্য কথা গুলো বলেই অভ্র মিটমিট করে হাঁসতে থাকলো)

রেশী অভ্রর কথা শুনে নিজেকে খুব ছোটো মনে হচ্ছে।ওনি কেনো আমায় এইগুলো বলছে? আমি কি ইচ্ছে করে যাচ্ছিলাম নাকি।ওরাই তো আমাকে যেতে বললো।কেন ওনি বিশ্বাস করছেন না।কথা গুলো ভাবতেই রেশীর চোখের কোনে পানি এসে গেছে।
অভ্র -সেই দিন আমিও কান্না করেছিলাম।হয়তো এইকান্না আমি কাউকে দেখাতে পারিনি।তোমরা মেয়েরা যখন যেভাবে খুশি কাঁদতে পারে।কিন্তু আমরা ছেলেরা কখনোই কাঁদতে পারিনা।নিজেদের যন্ত্রণা গুলো নিজেদের মনের কঠোরেই রাখতে হয়। রেশী! কেনো সেইদিন আমাকে এতো কষ্ট দিলে?(সব কথা মাঝে এই কথা একটু জোরে মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো)

রেশি কথাটা শুনেই মুখটা উঠিয়ে অভ্রর দিকে তাকিয়ে, ভাইয়া আপনি কিছু বলছিলেন?

অভ্র (বিব্রতভাব নিয়ে)না তোমাকে না!কোথায় যাচ্ছিলে যাও।

রেশী -না আমি যাবো না।

অভ্র -ঠিক আছে চলো আমি সহ যাচ্ছি।
রেশী আর কথা বাড়ালো না।নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে শুরু করলো।

চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে