তারা রাতের সন্তান ৪র্থ এবং শেষ পর্ব

0
5037

তারা রাতের সন্তান ৪র্থ এবং শেষ পর্ব
.

.
মিলি কন্ঠটা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল। এর মানে কী? মিথিলা বেঁচে আছে! তাহলে রাতের ঐ পুরো ঘটনা, তার সমস্যাগুলোর পেছনে মিথিলার মৃত আত্মার দেওয়া সুক্ষ ব্যাখ্যাগুলো কী ছিল! মিলি মুহূর্তেই আবার মাথায় তীব্র থেকে তীব্রতর যন্ত্রনা অনুভব করে।
.
এর মধ্যে মিথিলা মিলির ঘরে প্রবেশ করে। মিলিকে দেখেই মুচকি হাসি দিয়ে বলে, কিরে মিলি? তুই নাকি রাতে জোরে চিৎকার করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিলি? কিছু দেখে ভয় পেয়েছিলি নাকি? মিলি আমতা আমতা করে উত্তর দেয়, না। কিছু না। কিছু না। আমি এখন ঘুমাব। মিলির চারপাশ তীব্র অন্ধকারে ছেয়ে যায়। মিলি অনেক কষ্টেও চোখ খোলা রাখতে পারে না। গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় সে।
.
মিলি আবার যখন চোখ খুলে তখন প্রায় দুপুর। মিলির মাথার পাশে মিথিলা বসে রয়েছে।
মিলি চোখ খুলতেই মিথিলা বলে উঠল, তোর তো সকাল থেকে কিছুই খাওয়া হয়নি। এইভাবে চলতে থাকলেতো তোর শরীর আরও খারাপ হয়ে যাবে। মিলি যেন কোনো ঘোরের মধ্যে রয়েছে। ঘোরের মধ্যেই শান্ত স্বরে বলে, বাবা-মা হাসপাতালে। তাদের কী খবর? খালার জন্য খাবার দেওয়া হয়নি। মিথিলা বলল, এসব নিয়ে তুই ভাবিস না। অনিক গেছে হাসপাতালে। কল করেছিল, তোর বাবা-মায়ের অবস্থা আগের মতোই আছে। কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমি খাবার দিয়ে যাচ্ছি তুই খেয়ে নে।
.
এই বলেই মিথিলা ঘর থেকে চলে গেল। মিলি ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে গেল। ওয়াশরুমে যেতেই মিলির গতরাতের সব ঘটনা স্পষ্ট মনে পড়ল। মিলি বুঝল গতরাতে তার সাথে যা ঘটেছে তা কিছুতেই স্বপ্ন বা তার কল্পনা হতে পারে না। পুরো ঘটনাটাই বাস্তব। কিন্তু মিথিলা যদি মারা যায় তাহলে বাড়িতে এটা কে? আর মিথিলা যদি বেঁচে থাকে তাহলে গতরাতে খাটের নিচে যার সাথে কথা হলো সে কে? মিলির মাথায় কিছুই ঢুকছে না। মিলি বেশ সাবধাণতার সাথে হাত-মুখ ধুলো। হাত-মুখ ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখল তার বিছানার উপর খাবার আর পানির গ্লাস রাখা। মিথিলা কুকুরের মতো খাটের নিচে ঝুকে কিছু একটা শুকছিল আর নাক ছিটকাচ্ছিল। মিলিকে দেখেই সে স্বাভাবিক ভাবে বিছানায় উঠে বসে। বলে, মিলি খেয়ে নে। আর কোনো বিষয়ে অধিক দুঃশ্চিন্তা করা ভালো না। অধিক দুঃশ্চিন্তায় সমস্যার সমাধানতো হয়ইনা উল্টো আরও বেশি জট পাকে। তাই ঠান্ডা মাথায় সব কিছু চিন্তা কর।
.
মিথিলা ঘর থেকে চলে যায়। মিলি ধীরে-সুস্থে খাবার শেষ করে। এখন তার হঠাৎ করেই রাতের পুরো ঘটনাটা স্বপ্ন বা ভ্রম বলে মনে হচ্ছে। দিন যা দেখায় তা বাস্তব। রাতের অধিকাংশই মায়া। মিলি মিথিলার সাথে আবার স্বাভাবিক ভাবে স্বাভাবিক বিষয়ে গল্প করতে শুরু করে। মিথিলার এত মাস পরে হঠাৎ বাড়ি ফেরার ঘটনাটা বেশ আগ্রহ নিয়েই শুনে সে। অনিক যেহেতু হাসপাতালেই রয়েছে এছাড়া মিলির শরীরটাও তেমন ভালো না তাই সে সারাদিন বাড়িতেই রইল হাসপাতালে আর গেল না। সন্ধ্যাঁ হতেই মিথিলা রাতের খাবার নিয়ে চলে গেল হাসপাতালে। বাড়িতে শুধু একা রয়ে গেল মিলি।
.
মিথিলা যাওয়ার আগে বলল, বাড়ির চাবিটা আমি নিয়ে যাচ্ছি। বাড়ির বাহির থেকে তালা দিয়ে যাচ্ছি। তুই চিন্তা করিস না। আমি দ্রুতই চলে আসব। মিলি কিছুই বলেনি। মিথিলা চলে যাওয়ার পর সে চুপচাপ নিজের ঘরে এসে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়ল।
.
মিলি যেই চোখ বন্ধ করবে। হঠাৎ মিলিকে অবাক করে দিয়ে খাটের নিচ থেকে সেই মিথিলার কন্ঠ ভেসে আসল:
-হায় বোকা মেয়ে! তোকে এত করে বুঝালাম তাও তুই শয়তানের ধোকা আর মায়া থেকে বাঁচতে পারলি না! লালত তোর মতো মেয়ের জন্য। একটা শয়তান ও তার মায়া ধারা সৃষ্ট একটা শয়তানকে তুই এখনও তোর ভাই আর বান্ধবী ভাবছিস! তোর জন্য ধ্বংস।
.
মিলি চমকে উঠে। এবার তার মনে হচ্ছে খাটের নিচে যে মেয়েটা কথা বলছে সেই আসল মিথিলা। যাকে শয়তান খুন করেছে। তার ভাই অনিকের আত্মাও সে (শয়তান) ধ্বংস করে দিয়েছে। সারাদিন মিলি যাদের সাথে কাটালো তারা আসলে শয়তান ছিল। শয়তানের মায়া! মিলি বেশ উত্তেজিত হয়ে বলে:
-রাতের বেলা মনে হয় তুই সত্য আর দিনের বেলা মনে হয় তারা সত্য? এখন আমি কী করব বল তুই?
-তুই কী এখন আমায় বিশ্বাস করছিস?
-হ্যাঁ করছি।
-তাহলে শোন তোকে এখন নিজেকে বাঁচিয়ে শয়তানকে ধ্বংস করতে হবে।
-কিন্তু কিভাবে?
-শোন তাহলে। তোর বাড়িতে এখন কেউ নেই। তোর ভাইয়ের ঘরের আলমারিটার ভেতর একটা ব্যাগ রয়েছে। সেই ব্যাগটাতে একটা মালা রয়েছে। সেই মালাটাই এখন পারে তোকে রক্ষা করতে। তবে সাধারণ ভাবে সেই মালাটা পড়লে তোর লাভ হবে না। তোকে একটা নিয়ম মেনে সেই মালাটা পড়তে হবে। আগে তুই সেই মালা এবং ব্যাগটাকে এই ঘরে নিয়ে আয়। ব্যাগটার ভেতরে ২টা মরা কাক রয়েছে। এছাড়াও আর বেশ কিছু অন্য উপকরণও রয়েছে শয়তান উপাসনার। সবগুলো এই ঘরে এনে তুই মেঝেতে রাখবি। তার পর সেগুলোর উপর সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে শুয়ে পড়বি। আমি যেই মন্ত্র পড়তে বলব সেই মন্ত্র পড়বি। তারপর এই মালাটা পড়বি।
-তার মানে তুই আমাকে শয়তানের উপাসনা করতে বলছিস?
-এখন তোর হাতে আর কোনো উপায় নেই। এখন তোকে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হবে। সেই উপসনা আর মালার বদৌলতে তুই হয়ে যাবি শয়তানের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। তখন তুই নিজেই শয়তানকে ধ্বংস করতে পারবি। তোর ভাইয়ের আত্মা আবার ফিরে আসবে তার শরীরে। তোর বাবা-মা আবার সুস্থ হয়ে যাবে। হ্যাঁ আমি আর কখনও ফিরে আসব না। আমার আত্মাটা মুক্তি পেয়ে যাবে। আমি শুধু তোকে নিয়েই ভাবছি মিলি।
.

.
মিথিলার কথায় এবার মিলি পুরোপুরি ভরসা পেল। সে দ্রুত বিছানা থেকে নেমে অনিকের ঘরে যেতে নিয়ে নিজের পায়ের সাথে হোছট খেয়ে উপর হয়ে মেঝেতে পড়ে গেল। গতরাতে যেখানে আঘাত পেয়েছিল সেখানেই আবার আঘাত পাওয়ায় পুনরায় সে অজ্ঞান হয়ে গেল। যখন জ্ঞান ফিরল সাথে সাথেই খাটের নিচ থেকে মিথিলার কন্ঠ ভেসে আসল, কোনো কাজেই তাড়াহুড়া করা ভালো না। তুই আধা ঘন্টা ধরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছিস। দ্রুত তোর ভাইয়ের ঘর থেকে সেই ব্যাগটা নিয়ে আয়। দ্রুত সব কাজ কর। নাহলে সেই শয়তানটা আবার বাড়িতে চলে আসলে তুই আর কিছুই করতে পারবি না। আজ রাতেই তোকে সে খুন করে ফেলবে।
.
মিলি দ্রুত উঠে তার ভাইয়ের ঘরে যায়। আলমারি খুলে সেই ব্যাগ নিয়ে তার ঘরে ফিরে আসে। জামা-কাপড় ছেড়ে সম্পুর্ণ নগ্ন হয়ে মেঝেতে সেই সকল যাদুর উপকরণ সাজিয়ে রাখে। সাথেসাথেই সেই উপকরণের উপর উপুর হয়ে শুয়ে পড়ে সে। তার মাথাটা থেকে কিছুটা দূরে সেই মালা। খাটের নিচ হতে মিথিলা একটা মন্ত্র উচ্চারণ করতে বলে। মিলি যেই মন্ত্র উচ্চারণ করতে যাবে হঠাৎ তার ঘরের চাপিয়ে দেওয়া দরজা খট করে খুলে যায় আর ঘরের আলো জ্বলে উঠে। মিলি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মিথিলা দাঁড়িয়ে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে মিলির দিকে তাকিয়ে আছে। মিথিলা বলল, এসব কী করছিস মিলি? শয়তানের উপাসনা কেন করছিস? এসব থামা। উঠে আয় বলছি। মিলি অবাক হয়। তার মনে হয় এইতো মিথিলা, তাহলে খাটের নিচে কে! সাথে সাথেই খাটের নিচ থেকে অবিকল মিথিলার কন্ঠে ভেসে আসে, মিলি, ও খোদ শয়তান। আমার রূপ নিয়ে তোকে আবার ধোকায় ফেলছে। আমি যে মন্ত্রগুলো বলছি দ্রুত সেগুলো পাঠ কর। এরপর সেই মালাটা পড়ে নে। তাহলেই তুই শক্তিশালী হবি এবং এই শয়তানকে ধ্বংস করতে পারবি। খাটের নিচ থেকে এই কন্ঠের কথা শুনে দরজার সামনে থাকা মিথিলা বিস্ময়ের কন্ঠে বলল, মিলি ওর কথা শুনিস নে। খাটের নিচে যে আছে সে একটা শয়তান। সে তোর শরীরে প্রবেশ করতে চাইছে। তুই যদি মন্ত্রটা পড়িস আর মালাটা পড়িস তাহলে তোর আত্মা শয়তানের কাছে উৎসর্গ হয়ে যাবে। আর তোর দেহে এই শয়তান বাস করবে। এবার মিলি ক্রুদ্ধ কন্ঠে দরজার সামনে থাকা মিথিলাকে বলল, চুপ কর ধোকাবাজ। আমি এখন সবকিছু জানি তোর জন্য আজ আমাদের সোনার সংসারের এই অবস্থা। তুই মিথিলা না। মিথিলার ছদ্মবেশী শয়তান। আমার বান্ধবী মিথিলাকে তুই খুন করেছিস। তার আত্মা এখন আমার ঘরের খাটের নিচে। সে আমাকে সব কথা বলেছে। তুই আমার ভাইয়ের দেহ থেকে আত্মা চুরী করে তার দেহে আশ্রয় নিয়েছিলি। ভয় দেখিয়ে আমার বাবা-মাকে প্যারালাইসড করেছিস। আমার বান্ধবীকে খুন করে তারই ছদ্মবেশে আজ সারাদিন আমার সাথে ছিলি। এখন আমি কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলব। তোরই শয়তানী বিদ্যা দিয়ে তোকেই ধ্বংস করব। প্রতিশোধ নিব সবকিছুর।
.
মিলির এই কথাশুনে দরজার সামনে থেকে মিথিলা চেচিয়ে বলে উঠল, হায় আফসোস মিলি! তুই শয়তানের ধোকা বুঝতে পারছিস না! এটা কাঁটা তোলার বিষয় না। এই জাদু হলো আগুন। আগুন দিয়ে কখনো আগুন নিভানো যায় না। আগুন নেভাতে লাগে পানি। বিশ্বাস কর আমিই মিথিলা এবং বেঁচে আছি। তোর ভাইয়ের শরীরে শয়তান প্রবেশ করতে পারেনি। তাই সে তোর শরীরে প্রবেশ করতে চাইছে এখন। টানা ৩ রাত তোর ভাই শয়তানের উপাসনা করে। আর এক রাত উপাসনা করলেই শয়তান তোর ভাইয়ের শরীরে প্রবেশ করে যেত। তোর ভাইয়ের ৩ দিন উপাসনার পর শয়তান এই বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়। এবং আরেক রাতের অপেক্ষায় থাকে যে রাতে সে তোর ভাইয়ের শরীরে প্রবেশ করবে। তাই তোর বাবা-মাকে ভয় দেখিয়ে সে দিনেই প্যারালাইসড করে দেয়। আমি তোদের এই বাড়িতে যেদিন আসি সেদিনই বুঝতে পারি এ বাড়িতে শয়তানের উপাসনা হয়। সেদিন তুই চলে গেলি হাসপাতালে আর রাত করে তোর ভাই আসলো বাড়িতে। এই রাতের জন্যই শয়তান অপেক্ষা করেছিল। আমি তোর ভাইকে এই যাদুবিদ্যার ভয়ংকর রুপ খুলে বলি। শয়তান পৃথিবীতে আসলে কী ভয়ংকর পরিণতি হতে পারে বলি। তাকে ভয় দেখাই এবং সে কোথা থেকে এই বিদ্যা শিখেছে এবং এই বিদ্যা কতদিন ব্যবহার করেছে জানতে পারি। এরপর আমার লেখা বই, “তারা রাতের সন্তান” পড়তে দেই। এতে তার মায়া কেটে যায়। সে তার ভূল বুঝতে পারে এবং তার দেহ এবং মনকে পবিত্র করে। তোর ভাই বলেছিল সে যে যাদুবিদ্যা করে এটা জানলে তোরা কষ্ট পাবি। তাই তোকে আমি এই কথাগুলো জানাইনি। আমি ভেবেছিলাম শয়তানের উপাসনা বন্ধের পর সে বোধ হয় চলে গেছে। কিন্তু আমি
ভূল ছিলাম। শয়তান এই বাড়িতেই ছিল। তোর ভাই যেহেতু এ সম্পর্কে সচেতন ছিল তাই অন্য একটা শরীর খুঁজছিল। আর তাই আমার কন্ঠ নিয়ে সে তোকে বোকা বানাচ্ছে। একবার ঐ মালা তুই গলায় পড়লে কী ভয়ংকর কান্ড যে ঘটতে পারে এ সম্পর্কে তোর কোনো ধারণাই নেই।
.
মিলি এবার বেশ বিভ্রান্তীতে পড়ে গেল। কে আসল মিথিলা আর কে মিথ্যা কথা বলছে! এমন সময় খাটের নিচ থেকে মিথিলার কন্ঠ: -হায় আফসোস, লালত তোর মতো বোকা মেয়ের জন্য। আমি মারা গেছি, তোর ভাইয়ের অস্বাভাবিক ব্যবহার , তোর মা-বাবার হঠাৎ প্যারালাইসড হওয়ার এত সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়ে তোকে বুঝালাম। তার পরেও তুই শয়তানের বাধা আর মায়ার ছলে আটকে রইলি! নিজের ও পরিবারের ভালো চাস তো এখনি মন্ত্রটা পড় আর মালাটা পড়। ধ্বংস করে দে শয়তানদের।
.
খাটের নিচ থেকে মিথিলার কন্ঠটা মন্ত্র পড়া শুরু করল। মিলি বলল, যা হোক দেখা যাবে। আমি মন্ত্র পড়ছি। সাথে সাথেই মিলি মন্ত্র উচ্চারণ শুরু করল। এইদিকে দরজার পাশের মিথিলা বারবার চেচিয়ে তাকে মন্ত্র পড়তে নিষেধ করছে। কোনো এক অজানা কারণে সে মিলির কাছ পর্যন্ত পৌছাতে পারছে না। মিলি মন্ত্র পড়া শেষে মালাটা হাতে নিল। সে ভাবছে মালাটা পড়বে কী পড়বে না। খাটের নিচ থেকে মিথিলার কন্ঠ বারবার বলছে , দ্রুত পরে নে মালাটা। মালাটা পড়ার সাথে সাথেই তোর সমস্ত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। দরজার পাশে থাকা মিথিলা বলছে, খবরদার মিলি মালাটা পরিস না। মালাটা আমার অনেক আগেই নষ্ট করে দেওয়া উচিত ছিল। মালাটা পড়ার পর কী ভয়ংকর বিপদ যে আসতে চলেছে তোর জীবনে, তা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।
.
প্রচন্ড মানসিক চাপে মিলির মাথা ব্যথা করতে শুরু করে। এমন সময় হঠাৎ করে ঘরের দরজা দিয়ে দুইজন মানুষ ঢুকে। অনিক এবং একজন বেশ বৃদ্ধ লোক। লাঠি ভর করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বৃদ্ধ লোকটা। লোকটার হাতে একটা পলিথীন ব্যাগ। ব্যাগে কিছু একটা রয়েছে। মিলি সম্পুর্ণ নগ্ন। হঠাৎ অনিক এবং এই লোকটাকে দেখে মিলি লজ্জা পেয়ে যায়। শোয়া থেকে উঠে একটা তোয়ালে নিজের শরীরে পেঁচিয়ে নেয়। সেই লোকটা তার হাতের লাঠি দিয়ে দুটি মরা কাক সহ শয়তানের উপাসনার বাকি উপকরণগুলো আঘাত করে এলোমেলো করে দেয়। এরপর চোখ বন্ধ করে একটা মন্ত্র পড়ে। সাথে সাথেই একটা বিকট চিৎকার দিয়ে খাটের নিচ থেকে একটা ভয়ংকর কালো ছায়া বেড়িয়ে আসে। অবয়বহীন একটা ভয়ংকর ছায়া। কোথায় সেই মিথিলার কন্ঠ। ভয়ংকর কর্কশ কন্ঠে চিৎকার করে বলে, ধ্বংশ তোদের জন্য। সেই বিকট চিৎকারে ঘরের বাকি সবার যেন রক্ত জমতে শুরু করল। মিলি এবার বুঝতে পারল দরজার পাশে যেই মেয়েটা দাঁড়িয়ে রয়েছে সেই আসল মিথিলা। সেই সত্যবাদী। তার খাটের নিচে থেকে মিথিলার রুপে যে তাকে ধোকা দিচ্ছিল সেই আসল শয়তান। এই মালাটা যদি সে পড়ে ফেলত তাহলে নিশ্চই শয়তান এখন তার শরীরে থাকত। ভাগ্যিস মিথিলা সঠিক সময়ে চলে এসেছিল। আর সে কি না শয়তানের ধোকায় পড়ে মিথিলাকে সন্দেহ করছিল! সে লজ্জীত বোধ করল এবং চোখে চোখে মিথিলার কাছে ক্ষমা চাইল।
.
সেই ভয়ংকর কালো ছায়াটা আবার একটা বিকট চিৎকার দিয়ে বলতে শুরু করল, আমি তোদের পায়ে পড়েছিলাম যে আমাকে তোরা পৃথিবীতে আহ্বান কর! আহ্বান করলিই যখন তখন শরীর দিলি না কেন? শয়তানের সঙ্গে ছলনা? প্রথমে তোর ভাই আমার উপাসনা করে আমার রুহকে পৃথিবীতে নিয়ে আসল। কিন্তু ঐ মেয়েটার কথা শুনে তার শরীরে আমাকে জায়গা দিল না! আর আজ আরেকটা শরীরে প্রায় ঢুকে যাচ্ছিলাম আর তখন তোরা আমায় আবার ধোকা দিলি। কারও শরীরে প্রবেশ করবার আগে তাকে মায়া করা যায় না বলে এতক্ষণ আমি কোনো মায়া করিনি। তাই তোরা বেঁচে ছিলি এতক্ষণ। আমাকে যখন শুধু শুধুই ফিরতে হবে তাহলে তোদের ধ্বংস করেই ফিরব।
.

সেই বৃদ্ধ লোকটা এবার একটু মুঁচকি হেসে সেই পলিথীন ব্যাগটা থেকে এক মুঠ মাটি নিল। আর বলতে লাগল,” আর কী এমন অপবিত্র শক্তি আছে যে এই মাটিকে ভয় পায় না? আর কোন এমন শয়তানী শক্তি আছে যেটা এই মাটির ক্ষমতার কাছে তুচ্ছ না? কবরের মাটি কী শয়তানের ভয়ের কারণ না? এই পবিত্র মাটি কোনো শয়তানকে স্পর্শ করার পর সেই শয়তান কী মুহুর্ত সময় পেয়েছে নিজের শক্তি দেখানোর জন্য? ধ্বংস হোক অশুভ শয়তানের। শান্তিরা ফিরে আসুক।” এই বলেই সেই মাটিটা ছুরে মারল সেই শয়তানের ভয়ংকর ছায়ার দিকে। শয়তান সাথে সাথেই আর্তনাদের একটা বিকট চিৎকার করে। যেই চিৎকারে ঘরের সকল বাল্ব, কাঁচের জানালা, গ্লাস ফেটে যায়। পুরো ঘরে নেমে আসে অন্ধকার। এই সেই অন্ধকার যে অন্ধকার আলোর সুসংবাদ দেয়, সমস্ত অশুভ থেকে বেঁচে থাকার মন্ত্রনা দেয়, জীবনকে করে তোলে পবিত্র। বাঁচায় কালো যাদুর মতো ভয়ংকর বিদ্যা থেকে।
এ যেন সবার কাছে এখন পবিত্র অন্ধকার।
.
মিলি, মিথিলা, অনিক আর সেই বৃদ্ধলোক চার জন্যেই শয়তান চলে যাওয়ার পর বাড়ি থেকে রাস্তায় নেমে আসে। মিথিলা সকাল বেলা মিলির ঘরে গিয়েই আঁচ করতে পেরেছিল এই বাড়ি এখনও শয়তানের ছায়া থেকে মুক্ত হয়নি। তাই অনিককে একটা আশ্রমে পাঠিয়ে দিয়েছিল তখনি। কিন্তু মিথিলা তখনও জানতোনা যে আজরাতেই শয়তান এই বাড়ির কারও শরীরে প্রবেশ করবে। এই বৃদ্ধ তান্ত্রিক কয়েক যুগেরও বেশি সময় ধরে শয়তানী শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করছেন। তিনিই আজ শেষে এসে শয়তানকে তার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলেন। অনিক সব কিছুর জন্য মিলির কাছে ক্ষমা চাইল। মিলি মিথিলাকে কৃতজ্ঞতা জানাল। মুহুর্তেই হাসপাতাল থেকে তাদের খালা কল দিয়ে জানালেন, তাদের বাবা-মা হঠাৎই স্বাভাবিক হয়ে গেছেন। তারা কেউই কথাটা শুনে অবাক হলো না। যেন এটাতো হওয়ারই ছিল।
.
.
* * * * * সমাপ্ত * * * * *
লেখক : Masus_Rana
.
.
.
[ গল্পতো শেষ। গল্পের শুরু থেকে এই পর্যন্ত ৪টা পর্ব মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ এবং ভালোবাসা।]

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে