ডুমুরের ফুল ১৯.

0
1980

ডুমুরের ফুল ১৯.

জাদিদ রান্নাঘরে এসে মোটামুটি অবাক হলো। রান্নাঘর সাজানো এমনভাবে যেন কেউ নতুন সংসার শুরু করবে। সবকিছু গোছানো।
ট্রলিতে চা বানানোর পাতিল খুঁজতে গিয়ে খেয়াল করলো এখানে মাঝারি থেকে খুব ছোটো আকারের পাতিল আছে। নতুন ঝকঝকে থালাবাসন।
সবচেয়ে ছোটো আকারের পাতিলে পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিয়ে জাদিদ হেমলতাকে ফোন দিলো।
হেমলতা রিসিভ করেই জিজ্ঞেস করলো
– চা খাওয়া শেষ?
– দুজনে একসাথে চা খেলে কেমন হয়?
হেমলতা অবাক হয়ে বললো
– জাদিদ, আমি ফরিদপুরে।
হেমলতার মনে হচ্ছে, জাদিদ কি পাগল টাগল হয়ে গেলো নাকি?
তা নাহলে আবোলতাবোল বলেই যাচ্ছে।
– শুনো হেম।
– বলো।
– আমি চা বানাচ্ছি, তুমিও বানাবে। তারপর আমরা একসাথে চায়ের মগে চুমুক দিবো। ব্যস একসাথে চা খাওয়া হয়ে গেলো। একসাথে চা খাওয়ার জন্য পাশাপাশি থাকতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। বুঝেছো?
– হ্যাঁ। তাহলে তো আমাকে এখন চা বানানোর জন্য রান্নাঘরে যেতে হবে।
– তোমাকে ১০ মিনিট সময় দিচ্ছি। ১০ মিনিট পরে আমি ফোন দিবো। ওকে?
– ওকে।

হেমলতা ফোন কেটে দিয়ে রান্নাঘরের গেলো।
জাদিদের চায়ের পাতি,চিনি খুঁজে পেতে বেশি সময় লাগলোনা।
কড়া লিকারের চা খাওয়ার অভ্যাস জাদিদের। লিকার একটু কম হলেই চা তার কাছে শরবত মনে হয়। চায়ের শরবত, বিশ্রী তার স্বাদ।
ফুটন্ত পানিতে চায়ের পাতি দিয়ে ২ মিনিট
ফুটালো।
চুলা নিভিয়ে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে পাতিল ঢেকে দিয়ে মোবাইলে সময় দেখলো জাদিদ। হেমলতার হাতে এখনো ৫ মিনিট সময় আছে। মেয়েটা ভারী বোকা।সবকিছুই এক্সপ্লেইন করে বলতে হয়। নরমাল কথাও মাঝেমধ্যে বুঝেনা আরতো প্যাচানো কথা।
হেম বোকা দেখেই তার মতো ছন্নছাড়ার সাথে সম্পর্কে আসছে। তার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে।
বোকা বলেই কি করছে নাকি অতিরিক্ত ভালোবাসে তাই?
এতো অল্প সময়ে অতিরিক্ত ভালোবাসা সম্ভব না। শুধু ভালোবাসা সম্ভব।
চায়ের মগ নিতে গিয়ে জাদিদের মন খারাপ হয়ে গেলো। প্রিয় মগটা ভুলে রেখে এসেছে।
এখন চা খেতে তার মন বসবে না।
হলুদ রঙের মগে চা নিয়ে রান্নাঘরের লাইট অফ করে রুমে এসে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসলো। আর মাত্র ১ মিনিট পরেই হেমলতাকে ফোন দিবে সে।
১ মিনিট আগেও ফোন দিতে পারে জাদিদ কিন্তু সে দিবেনা। কারণ হেমলতাকে সে কথা দিয়েছে ঠিক ১০ মিনিট পরে ফোন দিবে। এখন কথার হেরফের হয়ে গেলে হেমলতা কষ্ট পাবে।
হেমলতাকে বিনা কারণে কষ্ট দেয়ার মানেই হয়না।

হেমলতা চায়ের মগে দুই চামচ চিনি দিয়ে নাড়তে নাড়তে ভাবছে জানালা দিয়ে ভূত যদি উঁকি দেয়? রান্নাঘরের জানালার দিকে সন্ধ্যার পরে তাকাতে হেমলতার ভয় লাগে খুব।
বাড়ির এদিকটা বেশি নীরব। চায়ের মগ হাতে নিয়ে প্রায় দৌড়ে নিজের ঘরে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো হেম। ঘরের দরজা আটকে দেয়ার সাথে সাথেই জাদিদের ফোন আসলো।
ফোন রিসিভ করে জাদিদ বললো
– রেডি?
– হুম।
দুজনে প্রায় একসাথে চায়ের কাপে চুমুক দিলো। জাদিদ তৃপ্তির সাথে বললো
– একসাথে চা খেতে পাশাপাশি থাকতে হবে, এমন কথা নেই।
– বুঝলাম।
– তুমি কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওনি?
– নাহ। কে নিয়ে যাবে? নানী অসুস্থ আর বাবা অনেক ব্যস্ত। দেখোনা আমার মোবাইল টা দিয়ে যাওয়ার সময় হচ্ছেনা।
– জুবায়ের ফরিদপুরে আছে। আমি ওকে বলে দিবো। ও তোমাকে নিয়ে যাবে। আমাকে আগে বললেই পারতে আমি নিজে থেকেই তোমাকে ভর্তি করিয়ে দিয়ে আসতাম।
– সময় কই পেলাম? আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম আর তুমি তারপরের দিনই উড়াল দিলে।
– তাছাড়া উপায় ছিলোনা। আর আমি জুবায়ের কে বলে দিচ্ছি তো।
– না না লাগবেনা। আমিই দেখি নানীকে বলবো।
– আরে ফ্রেন্ড তো।
– আমার মাত্র ১ জন ছেলে ফ্রেন্ড, সে তুমি।
– আমি তোমার ফ্রেন্ড?
হেমলতা হেসে বললো
– আচ্ছা ফ্রেন্ড থেকেই তো রিলেশনশীপে?
– হ্যাঁ।
– সেটাই তো বললাম।
– আমার আগামীকাল ওরিয়েন্টেশন ক্লাস।
– তাহলে ঘুমাও।
– কেবলই ঘুম থেকে উঠেছি।
– পুরো রাত জেগে থাকবে।
হেমলতার ভাবতেই কেমন লাগছে। জাদিদের সাথে কি সারারাত জাগতে হবে তাকে? পুরো রাত না ঘুমিয়ে থাকবে কীভাবে? এদিকে জাদিদকেও তো না করা যাবেনা।

মনোজ সাহেব ভাতের লোকমা মুখে দিবেন আর তখনই ড্রয়িংরুমে ভয়ংকর শব্দ হলো।
ভাতের লোকমা প্লেটে আবার রেখে এঁটো হাতেই ড্রয়িংরুমে আসলেন।
ড্রয়িংরুমে রাখা বেশ দামী টি – টেবিলের কাচটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
কাজটা কে করেছে মনোজ সাহেবের বুঝতে বাকি রইলোনা।
সোফায় পা দুলিয়ে তার স্ত্রীর একমাত্র ভাই বসে আছে। ক্লাস নাইনে পড়া ছেলে এধরনের কাজ করে কীভাবে?
ইচ্ছাকৃতভাবে কাজটা করেছে যেন মনোজ সাহেব রেগে গিয়ে খারাপ ব্যবহার করবেন। তারপর স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য হবে। বাসায় রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে যাবে। ব্যস, রাকিবের প্ল্যান সাকসেসফুল হবে।
মনোজ সাহেব কিছু না বলেই আবার খেতে বসে গেলেন।
কিছু বলতে গেলেই তার স্ত্রী জোঁকের মতো ধরবে তাকে। সকালে হেমলতার কাছে যেতে হবে তাকে।
ভাতের রেখে দেয়া লোকমাটা মুখে পুড়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।

জাদিদের দাদী রহিমা পোলাও এর গামলায় পানি ঢেলে দিলেন। মেহমানদের জন্য তিনি নিজ হাতে পোলাও, গরুর মাংস, রোস্ট, ডাল রান্না করেছিলেন।
মেয়েটা দেখতে খারাপ ছিলোনা। ছেলের বউ হিসেবে একদম মানানসই ছিলো। কিন্তু তার হতভাগ্য ছেলেটা তার ঘুম থেকে ওঠার আগেই পালিয়েছে।
সব খাবারে পানি ঢেলে দিয়ে রাগ কমানোর চেষ্টা করছেন রহিমা। কিন্তু কোনোমতে কমছেনা।
পাত্রীপক্ষের লোকজন তাকে যা তা শুনিয়ে গেছে। অপমানের সীমা আজকে পেরিয়ে গেছে। আশেপাশের বিল্ডিংয়ের লোকজনও উঁকি দিয়ে কী ঘটছে দেখেছে।
অনেকে তো হাসছিলো।
নিজের বাড়ির সামনেই নিজেকে অপমান হতে হলো তাও যদি চার দেয়ালের মধ্যে হতো। হয়েছে রাস্তার ধারে। পাত্রীর বাবা ডেকে নিয়ে……
রহিমা আর ভাবতে পারছেননা।
দূর সম্পর্কের এক বোন আছে তার নগরকান্দা থাকে। ভোর হলেই ওখানে চলে যাবেন। এই অবাধ্য ছেলের ভাত খাওয়ার ইচ্ছা আজকে মরে গেছে তার।

রাত ২ টা বেজে ৪৫ মিনিট।
জাদিদ অনরগল কথা বলেই যাচ্ছে। হেমলতা ঝিমুচ্ছে আর জাদিদের কথা শুনছে।
জাদিদের গল্প করতে বেশ ভালো লাগছে।
– হেম তুমি নানুকে পটিয়ে ঢাকায় চলে আসো।
– আহা, কতো সহজ তাই না।
– ইশ তুমি যদি এখানে থাকতে আমার পাশে। তাহলে গল্প করতে অনেক ভালো লাগতো। দুজনে এক রুমে আরামে গল্প করতাম।
– তোমার সাথে এতো রাতে আমি এক রুমে বসে গল্প করবো?
– হ্যাঁ করবে।
– মানুষ কী বলবে শুনি?
– কী বলবে?
– এতো বাচ্চা সেজোনা জাদিদ। দিনের বেলা রাস্তায় একসাথে দাঁড়িয়ে কথা বললেই লোকজন সেটাকে মহৎ পর্যায়ে নিয়ে যায় আর যদি…..
জাদিদ বললো
– তুমি তো মেয়ে অতো বোকা না।
– শুনো আমরা মেয়েরা এগুলো ভালো জানি বা আমাদের ভালো জানতে হয়।
– আমি তোমাকে গল্প করার কথা বলেছি শুধু। আর কিছুই না। আর আমি তো ওসব ভাবিও না। আমার কাছে তোমার কপালে চুমু দেয়াটাই চাঁদে পা ফেলার সমান।
যদিও চাঁদে পা রাখা অনেক ঝামেলার। আমরা স্বাভাবিকভাবে যেভাবে হাঁটি ওভাবে হাঁটলে…….

– জাদিদ আবার শুরু করলে?
– প্লিজ, হেম এটুকু বলতে দাও।
– আচ্ছা বলো।

চলবে……

” লেখিকা মারিয়া কবির এর সকল লেখা দ্রুত পেতে অবশ্যই এ্যাড হোন তার ফেসবুক পেইজ ‘Maria Kabir -মারিয়া কবির’(এখানে পেইজ লিংক) এর সাথে।

২০২০ বই মেলায় প্রকাশ পেতে যাচ্ছে মারিয়া কবির এর প্রথম উপন্যাস ‘যেখানে সীমান্ত তোমার আমার’।
মারিয়া কবির এর নতুন সব গল্প উপন্যাস পেতে আমাদের।সাথেই থাকুন।
ধন্যবাদ।


© Maria Kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে