ডুমুরের ফুল ১৪.

0
1975

ডুমুরের ফুল ১৪.

মিসেস জয়নাবের ব্লাড প্রেশার চেক করে নাদিয়া চিন্তিত হয়ে বললো
– আপনি আবার কোনো বিষয় নিয়ে টেনশন করছেন? আপনাকে বারবার নিষেধ করেছি টেনশন না করতে। প্রেশার বেড়ে যায়।
মিসেস জয়নাব শুকনো মুখে বললেন
– হেমলতা খুব অসুস্থ। মেয়েটা কার মতো বোকা হয়েছে কে জানে! কিছু হয়ে গেলে দুলির কাছে কী জবাব দিবো আমি?
– ওতো এখন সুস্থ আছে। আর দোলা জানে ওর মা হেমকে ফুলের মতো করে আগলে রেখেছেন। আর হেম ওর মায়ের মতো বোকা হয়েছে।
– নাদিয়া, তোমার বন্ধবীটা আমাকে কীভাবে ফেলে রেখে গেলো বিশাল দায়িত্ব ঘাড়ে দিয়ে।
– খালাম্মা, এতো ভেবে লাভ কী বলুন? উল্টো আপনার কিছু হয়ে গেলে হেমের কী হবে ভাবতে পারেন? দুলাভাই তো ওকে ভালোবাসে কিন্তু দ্বিতীয় স্ত্রীর জন্য কিছুই করতে পারবেননা। তাই চিন্তা বাদ দিয়ে নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন।
– ওকে ভালো ছেলের হাতে দিয়ে দিতে পারতাম। তাহলে শান্তিতে মরতে পারতাম।
– খালাম্মা এই যুগে আপনি কীভাবে বুঝবেন কে ভালো কে খারাপ? বিয়ের পর ছাড়া কোনো পুরুষের আসল রূপ দেখা যায়না। তারচেয়ে চিন্তা করুন ও যেন নিজে কিছু একটা করতে পারবে কিনা। তাহলে বিয়ের পর জামাই খারাপ হলেও ডিভোর্স টা দিয়ে ঝামেলা শেষ করতে পারে। তা নাহলে দাঁতে কামড় দিয়ে সংসারে পড়ে থাকতে হবে।
– সামনে ইউনিভার্সিটি এডমিশন এক্সাম। ভেবেছিলাম ঢাকায় কোচিং করতে পাঠাবো কিন্তু যে পরিমাণ বোকা ওরে মানুষ বেইচা খাবে তাও বুঝবে না।
– তাহলে এখানেই তো দিতে পারেন।
– হেমলতা তেমন ভালো স্টুডেন্ট না আবার দোলার মতো ফাঁকিবাজ হয়েছে। মায়ের যতো বাজে স্বভাব আছে সব পেয়েছে। আর মানুষ যা বলে তাতেই বিশ্বাস করে। কেউ যদি ওকে বলে, তোমার জন্য আমি এভারেস্টের শীর্ষে উঠে দোয়া করে এসেছি। হেম সেটাই বিশ্বাস করবে।
– তাহলে আমাদের ফরিদপুরেই তো ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিকেল কলেজ আবার রাজেন্দ্র কলেজ তো আছেই। ভালো কিছু করতে পারলেই হলো।
– দেখি। রাতে ঘুমের মেডিসিন দিওতো। ঘুম আসবেনা মনে হচ্ছে।
নাদিয়া ঘুমের আর প্রেশারের মেডিসিন দিয়ে যাওয়ার সময় বলে গেলো
– আমি ডিউটি করে সকালের দিকে বাসায় যাওয়ার সময় আর একবার এসে প্রেশার চেক করে যাবো। তখন যদি দেখি প্রেশার হাই তাহলে আমি আর আসবোনা।
মিসেস জয়নাব মুচকি হেসে বললেন
– দোলার অভাব টা তোকে দেখলে কিছুটা কমে। আর তুই যদি বলিস এই কথা?
– কী করবো বলুন? আপনি নিজেই তো বাধ্য করেছেন বলতে।

মনোজ সাহেব রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুমের মধ্যে মনে হলো কেউ একজন তার পাশে এসে বসেছে। ধবধবে সাদা শাড়ি আর সুন্দর একটা ঘ্রাণ নাকে আসছে তার। কোমড় অবদি চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। মনোজ সাহেব ঘ্রাণে বুঝতে পারলেন কে এসেছে!
– দোলা
– বলো
– এবার এতো দেরিতে আসলে?
– তোমার উপর রাগ হয়েছে খুব আমার।
– কী করেছি বলো?
– হেমকে তুমি আগের মতো আদর করোনা। দেখা করতেও যাওনা তেমন।
– দেখা করিনা কারণ এদিকে আবার আরেকজন সংসারে অশান্তি শুরু করে। কিন্তু ভালোবাসা কমেনি।
– মেয়েটা আমার খুব কষ্ট পায়। দেখোনা বোকার মতো কী করে বসে আছে। যদি কিছু হয়ে যেতো!
– তোমার মতোই বোকা হয়েছে হেম।
– হেম আমার পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।
– তুমি আর হেমলতা আমার পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার।
– আমি তো হারিয়ে গিয়েছি অনেক আগেই!

দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে জাদিদ বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠে দরজা খুলে দিলো।
জাদিদের দাদী হাসি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলেন
– তোর বাপ কইরে?

– বাবা তো রুমেই।
জাদিদ এমনভাবে কথাটা বললো যেন ও কিছুই জানেনা।
– রুমে থাকলে তোরে জিগাইতাম?
– আমি তো ঘুমায় ছিলাম। তোমার ডাকে ঘুম ভাঙলো।
– ওরে ফোনে ধরায় দে!
জাদিদ ওর বাবার নাম্বারে কল দিয়ে ওর দাদীর কানে ধরলো।
নাম্বার যে বন্ধ বৃদ্ধা বুঝতে পেরে বললেন
– আবার টেরাই কর।
জাদিদ ৬ বার ট্রাই করার পর বৃদ্ধা চিন্তিত স্বরে বললেন
– বাড়ি থেকে পালিয়ে গেলো নাকি?
জাদিদ ভ্রু কুঁচকে বললো
– পালাবে কেনো?
বৃদ্ধা কিছু একটা বলতে গিয়েও বললেন না।
জাদিদ দরজা আটকে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো। আর ভাবতে লাগলো, বাবা পালালো। কিন্তু গেলো কই?

আজকে মনে হয়না সারাদিন কোনো খাবার পাওয়া যাবেনা এই বাসায়। দাদী খুব বেশি চিন্তিত আছেন তার ছেলে পালিয়ে গেলো নাকি?
ব্যাগপত্র গুছিয়ে আবাসিক কোনো হোটেলে উঠে গেলেই হলো। আশেপাশের হোটেল থেকে খাবার খেয়ে নিয়ে দুপুরের বাসে উঠে গেলেই হবে।

জাদিদ ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ব্যগপত্র চেক করে দেখে বের হবে তখনই বৃদ্ধা পেছন থেকে ডেকে বললেন
– কীরে যাস কই টোপলা নিয়ে?
– আজকে আমার ঢাকা যাওয়ার কথা দাদী।
– ওহ, তোর বাপ জানে?
– হ্যাঁ।
জাদিদ দ্রুত পা বাড়িয়ে বের হয়ে গেলো। বেশিক্ষণ থাকা যাবেনা। ভয়ংকর কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে।

জাদিদ বারবার ঘড়ি দেখছে আর সময়ের হিসাব করছে। ৩২ মিনিট ৩০ সেকেন্ড হয়ে গেছে কিন্তু ওর খোঁজ নেই। ১৫ মিনিট নাকি লাগবে তার আর এখন ৩২ মিনিটও পার হয়ে যাচ্ছে।
আবার কবে আসবো তার কোনো ঠিক নাই।

প্রিয় মানুষ গুলো বুঝি এমনই হয়। উইকনেস টা জানার পরেই কষ্ট দিতে শুরু করে। জানে যে ওকে না দেখে আমি ঢাকায় গিয়ে শান্তি পাবোনা। তাই মনে হয় ও আসবেনা। না আসুক, আমার অপেক্ষা করার কথা তাই করবো। বাস ছাড়ার সময় হলে চলে যাবো।
জাদিদ নিজেকে গালি দিয়ে বললো
– শালা, কী দরকার ছিলো ওকে জানিয়ে দেয়া উইকনেসের কথাটা?
এখন বুঝো ঠ্যালা।

ইমরান মোল্লা ধলার মোড়ে দাঁড়িয়ে নদীর
স্রোত দেখছেন। দারুণ আবহাওয়া, হালকা ঠান্ডা বাতাস। এখন এক কাপ চা নিয়ে যদি জাদিদের মা আসতো। তাহলে বেশ আনন্দ হতো। জাদিদের আম্মা আর জাদিদ দেখতে একইরকম। একজনকে দেখলেই অন্যজনকে দেখা হয়ে যায়।
এখানে বেশিক্ষণ থাকা যাবেনা, আশেপাশের মানুষ কীভাবে যেন তাকিয়ে আছে।
ইমরান মোল্লা এবার নদী গবেষণায় যাওয়ার প্ল্যান করলেন। স্কুল জীবনের এক ফ্রেন্ড ওখানে বেশ ভালো পদের জব করে ওখানে। আজকের দিনটা না হয় ওখানেই কাটানো যাক।

চলবে…..

© Maria Kabir

” লেখিকা মারিয়া কবির এর সকল লেখা দ্রুত পেতে অবশ্যই এ্যাড হোন তার ফেসবুক পেইজ ‘Maria Kabir – মারিয়া কবির’(এখানে পেইজ লিংক) এর সাথে।
২০২০ বই মেলায় প্রকাশ পেতে যাচ্ছে মারিয়া কবির এর প্রথম উপন্যাস ‘যেখানে সীমান্ত তোমার আমার’।
মারিয়া কবির এর নতুন সব গল্প উপন্যাস পেতে আমাদের।সাথেই থাকুন ধন্যবাদ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে