জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৯

0
2210

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ৯

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

–কলেজে যাওয়ার জন্য আম্মুর কাছে টাকা চাইতে ভালো লাগে না
–ঠিক আছে যাওয়ার সময় দিয়ে যাবো
–হুম
চার দিন কিভাবে যেন কেটে গেলো আব্বু চলে গেলেন, সন্ধ্যায় বারান্দায় বসে আছি রিয়া ফোন দিল
–কিরে ভুলে গেলি
–নারে আব্বু আসছিলেন বাসায় তাই তোকে ফোন দেয়া হয়নি কলেজেও যাইনি জানিস তো আব্বু পাশে থাকলে সব ভুলে যাই
–হুম আজ শ্রাবণের দেয়া এক সপ্তাহ শেষ
–তুই জানলি কিভাবে
–শ্রাবণ আমাকে সব বলেছে এখনো সময় আছে রাজি হয়ে যা নাহলে ও খারাপ কিছু করে বসবে
–তুই ওকে বুঝিয়ে বল খারাপ কিছু যেন না করে আমি ভেবে দেখি
–ওর ফোন বন্ধ কিভাবে বুঝাব
–আচ্ছা ফোন রাখ ভালো লাগছে না ভেবে দেখি
ফোন রেখে শুয়ে পরলাম কিছু ভালো লাগছে না ছেলেটা কি সত্যি আমাকে ভালোবাসে, সত্যি না হলে তো এমন পাগলামো করত না আমার কি করা উচিত মেনে নিব, পরে যদি সমস্যা হয় আম্মু জানতে পেরে যদি জামেলা করে, দুর পরে যা হবার হবে যে আমাকে এতো ভালোবাসে তাকে আর কষ্ট দিতে চাই না সকালেই ওকে বলবো আমি রাজি, এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম বুঝতেই পারিনি, সকালে রিয়ার ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো
–কিরে এতো সকালে ফোন দিলি
–তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আয়
–কেন কি হয়েছে
–শ্রাবণ হাতের রগ কেটে সুইসাইড করতে চাইছিল এখন হাসপাতালে আছে
–কোন হাসপাতাল
রিয়ার কাছ থেকে হাসপাতালের নাম জেনে তাড়াতাড়ি গেলাম, একজন মহিলা কাঁদতেছেন উনি মনে হয় শ্রাবণের মা আর
শ্রাবণের কয়েকটা ফ্রেন্ডস দারিয়ে আছে, রিয়া আসলো
–এবার শান্তি পেয়েছিস
–আমি কি করলাম
–একটা ছেলে তোকে এতো ভালোবাসে রাজি হলে কি এমন হতো
–আমি তো ওকে কষ্ট দিতে চাই না বলেই রাজি হইনি
–হ্যা এখন আর ওর কষ্ট হবে না মারা গেলেই সব শান্তি
–রিয়া প্লিজ চুপ কর
–কেন চুপ করব ওর যদি কিছু হয়ে যায় ওর আম্মুর কি হবে
–ওর কিছু হবে না আমি ওকে ভালোবাসি আমার ভালোবাসা দিয়েই ওকে সুস্থ করে তুলবো
–সত্যি ওকে ভালবাসিস
–হুম কাল রাতে অনেক ভেবে দেখেছি পরে যা হবার হবে ও আমাকে এতো ভালোবাসে যখন আমিও ওকে অনেক ভালোবাসব
–আমি সবসময় তোর পাশে থাকবো
ডক্টর শ্রাবণের কেবিন থেকে বেরিয়ে আসলো
আমি: ডক্টর শ্রাবণের কি অবস্থা
ডক্টর: ডান হাতের কব্জির রগ অনেকটা কেটে গেছে অনেক রক্ত ঝরেছে তো সুস্থ হতে কিছু সময় লাগবে আর রোগীর পাশে কান্নাকাটি করবেন না
আমি: এখন কি ওকে দেখতে পারবো
ডক্টর: হ্যা তবে বেশি মানুষ একসাথে যাবেন না
রিয়া আমি আর শ্রাবণের আম্মু ভিতরে ঢুকলাম, ও আমার দিকে থাকিয়ে আছে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে মাথা নিচু করে দারিয়ে রইলাম
শ্রাবণ: আম্মু তোমার বউমার উপরে রেগে আছ তাই না (খুব অভাক হলাম ওর কথা শুনে কেমন ফাজি ছেলে)
ওর আম্মু: এমন লক্ষী বউমার উপরে কি রেগে থাকা যায় (যাক বাবা মা ছেলে দেখি এক রকমই এখনি বউমা ডাকতেছে)
মারে প্রথম তোর উপরে অনেক রেগে ছিলাম তোর কারনে আমার ছেলে মরতে বসেছিল তাই কিন্তু তোকে দেখার পর সব রাগ চলে গেছে তুই সত্যি অনেক লক্ষী একটা মেয়ে আমার ছেলের পছন্দ আছে (আমার মাথায় হাত বুলিয়ে উনি এসব বললেন)
শ্রাবণ ইশারা দিয়ে বললো ওর আম্মুকে সালাম করতে আমিও সালাম করলাম, রিয়া দেখি মুচকি মুচকি হাসতেছে দিলাম ওর পায়ে এক লাত্তি
রিয়া: তমা আন্টি তো সকাল থেকে কেঁদেই যাচ্ছেন এখনো কিছু খাননি তুই এখানে থাক আমি আন্টিকে নিয়ে গিয়ে কিছু খাইয়ে আসি আর তোদের জন্য ও নাস্তা নিয়ে আসি
আমি: ওকে যা
রিয়া আর আন্টি চলে গেলো
–এই যে আমার পাশে কি একটু বসা যাবে
–হুম (ওর পাশে গিয়ে বসলাম)
–এতো চুপ হয়ে আছ কেন
–যা কান্ড করেছ চুপ হয়ে থাকবো না তো কি করব
–তোমার কারনেই তো এমন করতে হলো আগে রাজি হয়ে গেলেই হত
–এখনো তো রাজি হইনি
–আর মিথ্যে বলতে হবে না তোমার চোখ ই বলে দিচ্ছে আমাকে ভালোবাস কি না, কেঁদে কেঁদে তো চোখ ফুলিয়ে ফেলছ
–যা করেছ কাঁদবো না তো কি হাসব
–দোষ তোমারই তুমি রাজি হউনি তাই এমন করতে হয়েছে
–হুম যদি খারাপ কিছু হয়ে যেত
–হাত কাটার পর তো ভেবেছিলাম মরেই যাবো আর তোমাকে দেখা হবে না কিন্তু বেচে গেছি হয়তো তোমার ভালবাসার কারনেই
–হইছে এগুলা বাদ দাও আর এমন করবা না কখনো
–এখন তো তুমি আছ আর এমন করার প্রশ্নই আসে না
–হুম
–একটা বার লাভ ইউ বল না প্লিজ
–পারবো না
–পারবা যখন হাতে ব্যাথা পেয়ে কাঁদবো তখন
–নিজেই হাতে ব্যাথা দিবা নাকি
–হ্যা লাভ ইউ না বললে হাতে ব্যাথা দিব আর কাঁদবো
ওর দিকে রাগি চোখে থাকালাম কেমন ফাজি ছেলে, তখন আব্বু ফোন দিলেন
–কেমন আছ আব্বু
–ভালো তুই কোথায়
–হাসপাতালে আসছি আমার একটা ফ্রেন্ড অসুস্থ
–তোর আম্মুকে বলে আসবি না
–আম্মু ঘুমে ছিল তাই আর জাগাইনি
–ঠিক আছে
–আব্বু আম্মুকে একটু বলে দাও আমার বাসায় যেতে বিকেল হবে
–আচ্ছা
ফোন রেখে শ্রাবণের দিকে থাকালাম ফাজিলটা হাসতেছে
–হাসতেছ কেন
–আমার জন্য শশুড় আব্বুর কাছে মিথ্যে বললা তাই
–এখনি শশুড় বানিয়ে ফেলছ আর মিথ্যে বললাম কই
–এক সময় তো শশুড় হবেই এখন থেকে ডাকলে সমস্যা কি আর আমি তো তোমার ফ্রেন্ড না এটা মিথ্যে না
–ফ্রেন্ড না বলে কি বলা উচিত ছিল
–“আব্বু তোমার জামাই আমার জন্য হাত কেটে হাসপাতালে ভর্তি আছে দেখতে আসছি” ঠিক এভাবে
–তুমি আসলেই একটা ফাজিল
–যাই বলো আমার শশুড় আব্বু কিন্তু অনেক ভালো
–আবার শশুড় ডাকো শুধু তোমার কাটা হাতে ব্যাথা দিব
–ঠিক আছে উনাকে শশুড় ডাকবো না তোমাকে বউ ডাকবো
–আল্লাহ কোন ফাজিল এর পাল্লায় পরলাম

আন্টি আর রিয়া চলে আসলো
আন্টি: মা তুমি এখানে একটু থাকতে পারবা বাসায় যেতে হবে বিকেলে চলে আসবো
আমি: ঠিক আছে
রিয়া: আমাকেও বাসায় যেতে হবে তুই থাক এখানে আর খাবার গুলা রাখ খেয়ে নিস ওকে ও খাইয়ে দিস
আমি: ঠিক আছে

আন্টি আর রিয়া চলে গেলো
শ্রাবণ: খিদে লাগছে খাইয়ে দাও
–পারবো না নিজে খাও
–আমার হাত তো কাটা কিভাবে খাবো
–হাত কাটার সময় মনে ছিল না
–আমি তো কাটছিলাম মরার জন্য কিন্তু মরিনি, মরে গেলে ভালই হত কাটা হাত নিয়ে কষ্ট করে খেতে হত না
–হইছে আর মৃত্যু কামনা করতে হবে না খাইয়ে দিচ্ছি
–হাত কেটে ভালই হইছে
–কেন
–তোমাকে ফেলাম সাথে তোমার সেবা যত্ন ফ্রি
–তোমার ভিতরে যে কয়টা ফাজিল বাস করে আল্লাহ জানেন, চুপ করে খাও আর একটা কথাও বলবা না…….

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে