জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১২

0
2097

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১২

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

আব্বুর সাথে কথা বলতে বলতে কপি বানিয়ে ফেললাম, কপি নিয়ে আম্মুর কাছে গেলাম
–কপি নাও
–(কপি নিতে নিতে বললেন তোর গলার চেইন কোথায়)
–(এখন কি বলি মিথ্যে বলবো নাহ সত্যি টাই বলে দেই)
–চুপ হয়ে আছিস কেন কোন আকাম করতে গিয়ে চেইন হারিয়ে এসেছিস
–আম্মু কি বলছ এসব
–কেন সত্যি কথা শুনতে ভালো লাগে না
–আমার ফ্রেন্ডের ভাগ্নি হয়েছে বেবিটাকে চেইন দিয়ে এসেছি
–এজন্যই তো অলক্ষি বলি আমার সংসার ডুবাইবি তুই
–আমার চেইন আমি দিয়েছি এতে তোমার সংসার ডুববে কেন
–খুব বেড়ে গেছিস এখন মুখে মুখে কথা বলিস বলেই গরম কপি আমার দিকে ছুড়ে মারল, লাফ দিয়ে সরে যেতে গিয়ে আমার পায়ে পরে গেলো, যন্ত্রণায় চিৎকার দিয়ে উঠলাম কোনো ভাবে রোমে গিয়ে বুয়া খালার মলমটা পায়ে লাগালাম, খুব যন্ত্রণা করছে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লাম রাতে খেলামও না, সকালে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো
–এতো সময় ঘুমালে রান্না করবে কে
–আমার পা যন্ত্রণা করছে পারবো না
–ঠিক আছে আমিও তোর আব্বুকে ফোন করে বলছি কাল কোন আকাম করতে গিয়ে চেইন হারিয়ে এসেছিস (আর চুপ থাকতে ইচ্ছে হলো না)
–বলো গিয়ে আমার আব্বু তোমার মতো নোংরা মনের মানুষ না যে এসব বিশ্বাস করবে
–কি আমি নোংরা মনের মানুষ
–হ্যা নাহলে নিজের মেয়েকে ফেলে রেখে চলে যাওয়ার কথা ভাবতে পারতা না আমাকে এসব খারাপ কথা বলতে পারতা না
–ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি তুলিকে রেখেই যাচ্ছি

আর কিছু বললাম না বারান্দায় গিয়ে বসে রইলাম রিয়া ফোন দিলো
–কিরে হাসপাতালে যাবি
–আমাদের বাসায় আয় একটু
–কেন কোনো জামেলা হয়েছে
–পরে বলবো
–ঠিক আছে আসছি
বসে বসে ভাবছি কবে সবকিছু ঠিক হবে আদৌ কি এসব ঠিক হবে, আম্মু কি আগের মতো আমাকে ভালোবাসবে নাকি এমন খারাপ ব্যাবহার করে যাবে, তুলিটা বড় হয়েছে আম্মুর এসব ব্যবহার দেখে ও দিন দিন কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে আগের মতো হাসে না চুপচাপ থাকে, কি করবো আমি এই বাসা থেকে চলে যাবো কোথায় যাবো আমার তো যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই, এইসব আনমনে হয়ে ভাবছি তখন রিয়া আসলো
–কিরে কি হয়েছে
–কি আর সবসময় যা হয়
–হুম হাসপাতালে যাবি না
–পা পুরে ফেলছি কিভাবে যাবো
–কিভাবে পুরলি
–(কিছু বললাম না মৃদু হাসলাম জানি রিয়া আমার এই হাসি থেকে বুঝে যাবে)
–শ্রাবনকে ফোন দিছিলি
–না
–দিয়ে দেখ কি বলে যাওয়ার কথা বললে তো যেতে হবেই
–হুম
ওকে ফোন দিলাম
–হ্যালো
–হুম
–কি করো
–জানতে হবে না
–কেন
–রাত থেকে এখন পর্যন্ত একটা ফোন দিছ কেমন আছি জানতে চেয়েছ, জানতে চাইবা কেন আমি তোমার কে বলেই ফোন কেটে দিলো
ওকে কি করে বুঝাই আমি সমস্যায় আছি রাতে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরছিলাম তাই ফোন দিতে পারিনি

রিয়া: শ্রাবন তো রেগে আছে কি করবি
–হাসপাতালে যাবো
–পায়ের এই অবস্থা নিয়ে
–হুম
–একটা কথা বলি কিছু মনে করিস না
–বল
–তুই আমাদের বাসায় চল কিছু দিন থেকে আয় তোর মন ভালো হবে আন্টিও যদি একটু পাল্টায়
–আমারও এখানে আর ভালো লাগে না কিন্তু আব্বু রাজি হলে তো আর তোর পরিবার
–আঙ্কেল কে আমি রাজি করাবো আর আমাদের বাসায় আম্মু আমি কাজের মেয়ে ছাড়া কেউ নেই ভাইয়া আর আব্বু ব্যবসার কাজে বাইরে গেছেন
–ঠিক আছে আব্বুকে বলে দেখি
–এখনি বল রাজি হলে এখন চলে যাবো

আব্বুকে ফোন দিলাম
–আব্বু
–হ্যা আম্মু কেমন আছিস
–ভালো তুমি
–ভালো
–আব্বু একটা কথা বলতে চাই যদি অনুমতি দাও
–অনুমতি চাওয়ার কি আছে বল কি বলবি
–আব্বু আমার কিছু ভালো লাগছে না এক বাসায় থাকতে থাকতে কয়েকটা দিন রিয়াদের বাসায় থেকে আসি তুমি যদি অনুমতি দাও
–কিন্তু রিয়ার পরিবার
–রিয়াই বলেছে আর ওর ভাইয়া আব্বু বাহিরে আছে কোনো সমস্যা হবে না (রিয়া আমার কাছ থেকে ফোন নিলো)
–আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল
–ওয়ালাইকুম আসসালাম মা কেমন আছ
–ভালো আপনি ভালো আছেন
–ভালো
–আঙ্কেল আমি তমাকে বাসায় নিয়ে গেলে আম্মু খুব খুশি হবেন প্লিজ না করবেন না
–আমার মেয়েটা ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকি ও যেতে চাইলে নিয়ে যাও আমার আপত্তি নেই
–ঠিক আছে আমরা এখনি যাবো
–আচ্ছা
ফোন রেখে রেডি হয়ে বের হলাম, আম্মু ড্রইংরুমে বসে আছেন
–কোথায় যাওয়া হচ্ছে
–রিয়াদের বাসায়
–কেন
–কয়েকদিন থাকবো
আর কিছু বললো না মনে হলো উনি খুশি হয়েছেন

বাসা থেকে বেরিয়ে সোজা হাসপাতালে গেলাম, গিয়ে দেখি মা শ্রাবনকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন ও খাচ্ছে না
আমি: মা
মা: তুই এসেছিস দেখ ও কিছুই খাচ্ছে না সকাল থেকে এক কথাই বলতেছে তুই নাকি ওকে ভালোবাসিস না
রিয়া: আন্টি চলেন আমরা বাইরে যাই ওদের একা কথা বলতে দিন
রিয়া মা কে নিয়ে বাইরে চলে গেলো

আমি: রেগে আছ কেন
শ্রাবন: তুমি তো আমাকে ভালোবাস না তোমার উপর রাগ করবো কিভাবে
–কে বলছে ভালোবাসি না
–আমি হাসপাতালে কেমন আছি ওষুধ খেয়েছি কিনা একটা বার জানতে চাইছো, বাসায় গিয়ে তো ফোন দাও নি তো কি বুঝবো
— আমি রাতে পা পুরে ফেলছি যন্ত্রণায় কখন ঘুমিয়ে পড়েছি জানিনা তাই ফোন দিতে পারিনি (বাধ্য হয়ে পা দেখালাম)
–কিভাবে পুরছে
–কপি পরে গেছিল
–ওষুধ খেয়েছ
–না যাওয়ার সময় নিয়ে যাবো আর আমি কয়েকদিন রিয়াদের বাসায় থাকবো
–কেন
–এমনি
–মুখ দেখে তো মনে হচ্ছে কিছু খাওনি
–হুম রাত থেকে এখন পর্যন্ত কিছুই খাইনি
–এখানে খাবার আছে খাও আমাকেও খাইয়ে দাও
ওকে খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খাইয়ে দিলাম আমিও খেলাম
–রাগ কমেছে
–হুম
–না বুঝে আমার উপর কখনো রাগ করো না ইচ্ছে করে কখনো তোমাকে কষ্ট দিবো না
–হুম
–রেস্ট নাও আমি ডক্টরের কাছ থেকে আসি
–আচ্ছা
মা কে রোমে পাঠিয়ে রিয়াকে নিয়ে ডক্টর এর কাছে গেলাম, ডক্টর বলেছে আগামীকাল শ্রাবনকে রিলিজ করে দিবে, শ্রাবণের কাছে গেলাম
–মা একটু পাশের কেবিন থেকে আসছি
–কেন
–তোমার আদরের বউমা কাল একজন কে রক্ত দিছিল তাকে দেখতে যাবে হয়তো (পাশ থেকে শ্রাবণ বললো)
–রক্ত দেয়া তো দোষের কিছু না যা মা তুই দেখে আয়
–ঠিক আছে (শ্রাবনকে একটা মুখ ভেঙ্গছি দিয়ে চলে গেলাম)

সেই মেয়েটির কেবিনে গেলাম, আমাদের দেখেই আন্টি এগিয়ে আসলেন
–কেমন আছ মা তোমরা
–ভালো আপনি ভালো আছেন
–হ্যা ভালো, এইযে আমার মেয়ে শিলা যাকে তোমরা রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছ
–আপু কেমন আছেন
–ভালো তোমরা ভালো আছ
— জ্বী ভালো
–তোমাদের জন্যই আমি আজ বেঁচে আছি

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে