জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১২

0
1948

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১২

লেখিকা: সুলতানা তমা

সন্ধ্যার সময় ঘুম ভাঙ্গলো, বারান্দায় গিয়ে বসে রইলাম মাথাটা খুব বারি হয়ে আছে ভালো লাগছে না, হঠাৎ কারো আসার শব্দ পেলাম পিছনে থাকিয়ে দেখি শ্রাবন, এসে আমার পাশের চেয়ারে বসলো
দুজনেই নিরব হয়ে বসে আছি কারো মুখে কথা নেই থাকবে কিভাবে ও প্রতারণা করল আর আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেলো

হঠাৎ শ্রাবন আমার হাত ওর হাতের মুঠোয় নিল তারপর নিরবতা ভেঙ্গে বললো
–তমা আমার কথা গুলো শুন প্লিজ
–আর কিছু কি বাকি আছে
–হ্যা আছে
–বলে ফেলুন আমি হজম করার জন্য প্রস্তুত
–তমা প্লিজ আপনি করে বলো না আমার কষ্ট হয়
–আমি আপনি করে বললে কষ্ট হয় আর আপনি অন্য মেয়েকে ভালোবাসলে আমার বুঝি কষ্ট হয় না
–জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু আমার সব কথা শুনবা তো
–হুম বলুন
–প্লিজ আপনি বলো না
–হুম
–সকালে এই কথা বলার জন্য তোমাকে বাহিরে নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই নিপার বোন….
–হুম জানি এখন কি বলতে চাও বলে ফেলো

শ্রাবন বলতে শুরু করলো….
এখান থেকে কক্সবাজার চলে যাবার পর তোমার আম্মু জানায় তোমার বিয়ে হয়ে গেছে তখন আমি অনেক ভেঙ্গে পরি অসুস্থ হয়ে যাই প্রায় পাঁচমাস অসুস্থ থাকার পর একদিন বালুচরে হাটতে যাই তখন নিপার সাথে পরিচয় হয়, নিপা ঢাকা থেকে কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিল, ওর সাথে আস্তে আস্তে কথা হয় যখন ও ঢাকা ফিরে আসে আমাকে নাম্বার দিয়ে আসে, তখন থেকে ফোনে রোজ কথা হত আমি ওষুধ খেয়েছি কিনা কি করছি সবকিছুর খুঁজ রাখত নিপা, তোমার বিয়ের ছয়মাসের মাথায় আমি নিপার যত্নে সুস্থ হয়ে উঠি, তখন নিপা আমাকে প্রপোজ করে, তোমার বিয়ে হয়ে গেছে আর তো ফিরে পাবো না তাই আমি নিপার সাথে সম্পর্ক করি, তোমাকে ফিরে পাবার তিনমাস আগে নিপার সাথে আমার ব্রেকাপ হয়ে যায়, কারন ছিল আমি নতুন চাকরিতে জয়েন করেছি ওকে সময় দিতে পারতাম না আর ও আমাকে সন্দেহ করত, যখন রিয়ার সাথে কথা হয় আর জানতে পারি তুমি আমার জন্য আকাশকে মেনে নাওনি তখন অনেক কষ্ট পাই তারপর সিদ্ধান্ত নেই তোমার কাছে ফিরে আসবো, হ্যা ফিরে এসেছি কিন্তু নিপা এখন ওর ভুল বুঝতে পেরেছে তাই ও ফিরে আসতে চায়, সেদিন সকালে নাস্তা খাওয়ার সময় নিপা ফোন দিয়েছিল তাই তোমার সাথে এমন ব্যবহার করেছিলাম, তার দুদিন পর নিপা ফোন দিয়ে জানায় ওর আব্বু এক্সিডেন্ট করে মারা গেছেন, আর এখন নিপা এক্সিডেন্ট করেছে ওর তো কোনো ভাই নেই আমি এখন সাহায্য না করলে কে ওদের দেখবে বল, কিন্তু বিশ্বাস কর আমি এখন তোমাকে ভালোবাসি

একদমে কথা গুলো বলে ও থামলো
–তুমি আমাকে ভালোবাস কিন্তু নিপা যে তোমাকে ভালোবাসে
–জানিনা
–মাত্র পাঁচমাসে অন্য দিকে জড়িয়ে গেলা আর আমি কত যুদ্ধ করে তোমার জন্য অপেক্ষা করলাম
–তমা প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও
–হুম বাদ দাও নিপা কেমন আছে
–ভাল না এখনো জ্ঞান ফিরেনি তাই ডক্টর কিছু বলতে পারছে না
–হুম
–তমা প্লিজ ভুল বুঝ না
–ইচ্ছে হয়েছে অন্য দিকে সম্পর্ক করেছ তাতে ভুল বুঝার কি আছে, ভেবে দেখ এখন কি করবা
–কি করবো বলে দাও প্লিজ
–আমার জানা নেই সিদ্ধান্ত এখন তোমার
–তুমি কিছুই জান না
–কিভাবে জানবো তুমি আমাকে বেশি ভালবাস নাকি নিপা কে ভালবাস সেটা তো তুমিই ভালো জানো
–তোমার কি মনে হয়
–আমার মতে নিপা কে বেশি ভালবাস কারন আমাকে ভালবাসলে নিপার হাত ধরতে পারতে না আর আমাকে ভুলতে পেরেছ বলেই নিপা কে ভালোবাসতে পেরেছ
–তমা আমি তোমাকে ভালবাসি
–ভুল আমাকে ভালবাসলে কখনোই অন্য মেয়ের হাত ধরতে না বাদ দাও নিপা কে সুস্থ করে তুলো
–নিপা সুস্থ হলেই তো….
–হুম কি আর করার বিয়ে করে নিবা
–মানে
–খুব সহজ বিষয় নিপাকে ভালোবাস তাই ওকেই বিয়ে করবা
–আমি তোমাকে ভালবাসি
–এই ভুল একদিন ভাঙ্গবে তোমার তখন বুঝতে পারবে আমাকে ভুলতে পেরেছ বলেই নিপা কে ভালবাসতে পেরেছ
–তুমি কিন্তু বেশি বুঝতেছ
–ওহ তাই ঠিক আছে রিয়া কে ডেকে আনো দেখ ও কি বলে
–তুমি যদি আমাকে না বুঝ রিয়া কিভাবে বুঝবে
–আমি বুঝেছি তুমি নিপাকে ভালোবাস যাও ওকে সুস্থ করে তুল, ভয় পেয়ো না আমি তোমাদের জীবনের কাটা হবো না, আকাশ আর মেঘা কে যেভাবে মিলিয়ে দিয়েছি তোমাদেরও সেভাবে মিলিয়ে দিবো তারপর চলে যাবো অনেক দূরে
–তমা কি বলছ এসব
–যা সত্যি তাই বলেছি আমার জন্য অন্য মেয়ে কষ্ট পাবে সেটা আমি মানতে পারবো না
–তমা….
–প্লিজ আর কিছু শুনতে চাই না, আমার ভাগ্যকে আমি মেনে নিয়েছি, একটা কথা কি জানো আমার মতো মা হারা মেয়েদের রঙিন স্বপ্ন দেখাটা মানায় না, আমরা শুধু স্বপ্ন দেখতেই পারি পূরন করতে পারি না, আমাদের নিয়ে সবাই খেলা করতে পছন্দ করে, আম্মু বেঁচে থাকলে আমার জীবনে সৎমা আসতো না দুবছর আগে তোমাকে আমাকে আলাদা করতো না হয়তো আকাশের সাথে বিয়ে না হয়ে তোমার সাথে বিয়েটা হত, আসলে আমার কপাল পুরা তাই বার বার এমন হচ্ছে, যাই হউক আমি আমার ভগ্যকে মেনে নিয়েছি
–তমা….
–আমি এখন আর কিছু শুনতে চাচ্ছি না তুমি এখান থেকে যাও আমাকে একটু একা থাকতে দাও প্লিজ
–হুম

শ্রাবন চলে গেলো, বারান্দায় রেলিং ধরে দাড়িয়ে রইলাম চোখ থেকে বৃষ্টির মতো পানি ঝরছে, প্রকৃতিও আজ কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে আছে চারদিকে শুনশান নিরবতা, কোথাও কোনো আলোর রেখা নেই, প্রকৃতি মনে হয় মানুষের মনের অবস্থা বুঝে তাই তো আমার মনের আকাশের মতো প্রকৃতির আকাশেও আজ চাঁদ নেই, অমাবস্যায় ঢেকে আছে চারদিক ঠিক আমার মনের মতো…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে