ছোটঘরের ভালোবাসা পর্বঃ ০৫

0
671

ছোটঘরের ভালোবাসা পর্বঃ ০৫
– আবির খান

ভারসিটিতে….
আবির ভিতরে ঢুকে হেটে যাচ্ছে, ঠিক তখনই আবিরের পায়ের সামনে কে যেন কলার ছোকলা ছুড়ে মারে। ফলে আবির সবার সামনে খুব হাস্যকর ভাবে পরে যায়। সবার আগে হাসাটা শুরু করে রিয়া। সাথে সেখানে থাকা সবাই।

রিয়াঃ দেখুন আপনাদের টপার বন্ধু কিভাবে পরে গিয়েছে। সেতো হাটতেও জানে না। তাও আবার কলার ছোকলার উপর পরেছে। হাহা। গেও কোথাকার। ছোটলোক কোথাকার। হুহ আসছে টপার হতে।

এভাবে রিয়া সবার সামনে আবিরকে খুব অপমান আরো অনেক খারাপ কিছু বলে।

আবির এসব শুনে সেখান থেকে তারাতারি উঠে চলে যায়। সেদিন আবির ক্লাসে যায়নি সোজা বাসায় চলে গেলো।

সানজিদাঃ রিয়া আবিরের সাথে তুই এটা কি করলি??

রিয়াঃ কই কিছুই করি নিতো।

সানজিদাঃ কেন তুই ওর পায়ের সামনে কলার ছোকলা ফেলে দিস নি??

রিয়াঃ কই না তো..

সানজিদাঃ মিথ্যা বলবি না। আমার আরেক ফ্রেন্ড দেখেছে ওই আমাকে সব বলেছে।

রিয়াঃ হ্যা ফালাইছি। কারণ আমার থেকে সবাই ওকে বেশি পাত্তা দিচ্ছিলো তাই।

সানজিদাঃ আসলেই তুই তোর নামের মতো। হিংসুটে।

রিয়াঃ হ্যা আমি হিংসুটেই। আমি এমনই।

সানজিদাঃ এই আবিরের কাছেই একদিন তোর আসতে হবে দেখিস। ওর মতো ভালো ছেলে আর একটাও হয়না। তুই আর ওর সাথে এমন করবি না। নাহলে কিন্তু আমি আর তোর সাথে কোনদিন কথাই বলবো নাহ।

রিয়াঃ বাহ!!! এতো ভালোবাসা ওই ছোটলোক গেওয়ের জন্য??

সানজিদাঃ হ্যা। তোর তা মনে হলে তাই।

রিয়াঃ হাহাহা।

আবির আজকের এই কাহিনির জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছে। মনটা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছে। ভালো লাগছে নাহ এই যান্ত্রিক শহরে। এ শহরের মানুষগুলো অনেক খারাপ। সবাই সবার সার্থ নিয়ে থাকে। এতো অপমান আবিরের সহ্য হচ্ছে না। রাগে দুঃখে চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে অশ্রুতে।

আবির তার চাচার বাসায় চলে যায়। চাচি আবিরকে অসময়ে দেখে অবাক হয় বটে কিন্তু আবিরের মুখের অবস্থা দেখে আবিরকে কোন প্রশ্ন করার ইচ্ছে আর হয়নি তার। আবির নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরে। আর থাকবে না সে এখানে। ভালো লাগে না তার এ শহরের মানুষগুলোকে। এসব ভাবতে ভাবতে এক সময় আবিরেএ চোখের পাতাগুলো লেগে যায়। আর হারিয়ে যায় ঘুমের দেশে।

হঠাৎ ঘুমের মাঝে আবির কারো হাতের স্পর্শ পায় তার মাথায়। আবির চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে এ আর কেউ নয় মায়া। আবির উঠে বসে।

আবিরঃ তুমি এখানে কি করো??

মায়াঃ মা বলল তুমি নাকি আজকে ক্লাস না করেই চলে এসেছো??

আবিরঃ হুম।

মায়াঃ কেন??

আবিরঃ ভালো লাগছিল না তাই।

মায়াঃ আমাকে বলা যায় না??

আবিরঃ মায়া ইচ্ছে করছে না। আর তুমি শুনেও বা কি করবে। তাছাড়া আর ভালো লাগে না এই শহরে। ভাবছি যেখান থেকে এসেছি সেখানেই চলে যাবো।

মায়াঃ আর তোমার বাবা মার স্বপ্ন???

আবির কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। মাথা নিচু করে তাকিয়ে আছে। আসলেইতো বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরন না করেই সে চলে যাবে??

মায়াঃ তুমি শুয়ে পরো। আমি মাথায় বিলি দিয়ে দিচ্ছি। তোমার ভালো লাগবে।

আবির আর কি করবে বাধ্য ছেলের মতো শুয়ে পরে। আসলে আবিরেরও ভালো লাগছিলো মাথায় বিলিকাটা। গ্রামে আবিরের মা এভাবে করতো রাতে। আর আবির শান্তিতে ঘুমাতো।

মায়া বিলিকাটছে আর বলছে,
মায়াঃ ভারসিটিতে কিছু হয়েছে না?? আবার সেই মেয়েটা কিছু করছে না??

আবিরঃ হুম। (আস্তে করে বলল)

মায়াঃ আসলে ওই মেয়েটা ভালো না। তুমি যে ভালো ছাত্র তাই হয়তো তার সহ্য হয়না। তোমার মনে রাখতে হবে তুমি স্বপ্ন পূরন করতে এখানে এসেছো। এসব ঝামেলা একটু আক্টু আসবেই। তাই বলে পালালে চলবে??

আবির ভাবছে, তাইতো সে তো কাপূরুষ না যে এভাবে পালিয়ে যাবে। নাহ তকে লড়াই করে টিকে থাকতেই হবে।

আবিরঃ মায়া তুমিতো অনেক পেকে গেছো। পাকনা বুড়ি।

মায়াঃ কি আমি পাকনা বুড়ি। যাও আর বিলিকেটে দিবো না।

আবিরঃ আরে মজা করছি তোমার সাথে। না আসলেই তুমি ঠিক বলেছো। আমাকে পালালে চলবে না। ধন্যবাদ তোমাকে আমাকে আবার সাহস দেওয়ার জন্য।

মায়াঃ ধুর মনের মানুষকে কেউ ধন্যবাদ দেয় নাকি।

আবিরঃ কি বললে??

মায়াঃ না কিছু না। চলো খেতে যাবে।

আবিরঃ নাহ আজ খিদে নেই। খাবো নাহ।

মায়াঃ যেতে বলছি না উঠো। না উঠলে কিন্তু আমি…

আবিরঃ কি করবে??

মায়াঃ আমি কান্না করবো। আম্মুকে বলবো তুমি আমাকে মেরেছো।

আবির মায়ার কথা শুনে এক লাফে উঠে বসে।

আবিরঃ আমি তোমাকে কখন মারলাম??

মায়াঃ হুম মারোনি। যদি না আসো তাহলে মিথ্যা বলবো। এখন যাবা কিনা বলো??

আবিরঃ আচ্ছা চলো।কিন্তু মায়া তুমি আমার এতো খেয়াল রাখো কেন??

মায়াঃ জানি না ভালো লাগে। (লজ্জা পায়)

আবির হয়তো মনে মনে এসবের উত্তর পেয়ে যায় যে কেন মায়া এমন করে।

এরপর আবির খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পরে।

পরেরদিন ভারসিটিতে,
আবির এবার খুব সাবধানে ঢুকে ক্লাসে চলে যায়। ক্লাস করে বের হচ্ছে, হঠাৎই রিয়া কোথা থেকে এসে যেন আবিরের সাথে ইচ্ছা করে ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে যায়। আর,

রিয়াঃ ওহ তুই আবার আমাকে ধাক্কা দিয়েছিস। গতকালকের বদলা নিচ্ছিস??তাই বলে একটা মেয়েকে এভাবে সবার সমনে ধাক্কা দিবি ছোটলোক??

সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।

আবির কোন ভাবে নিজেকে সংযত করে রেখেছে।

রকিঃ কি হয়েছে রে রিয়া?? এনি প্রব্লেম?? (রকি ওদের ক্লাসের বখাটে ছেলে)

রিয়াঃ দেখনা দোস্ত আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। বদলা নিচ্ছে।

রকিঃ কিহ দাড়া।

বলেই রকি আবিরের কলার ধরে আর ওকে মারতে থাকে। আবির কিছুই বলতে পারছেনা। কিন্তু হঠাৎই রকি আবিরের মাকে নিয়ে গালি দিয়ে ফেলে। সাথে সাথে,

আবির যেন এক অন্য আবিরে পরিনত হয়ে যায়। আবির খপ কর রকির হাতটা ধরে কষিয়ে রকিকে একটা ঘুষি মারে। সাথে সাথে রকি সেখানেই পরে যায়। রকি আর উঠে নি। আবিরের এক ঘুষিতেই রকি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। উপস্থিত সবাই আবিরকে দেখে ভয়ে অবস্থা খারাপ।

আবিরের কপালের রগ দুটো খারা হয়ে আছে। চোখ গুলো আগুনে মতো লাল হয়ে আছে। আবিরের মাসল গুলো ফুলে আছে। হাতের রগ গুলো যেন লাফাচ্ছে।

আবির রকির দিকে তাকিয়ে বলছে,
আবিরঃ আমি সব সহ্য করতে পারি কিন্তু আমার মাকে নিয়ে যে বিন্দু মাত্র খারাপ কথা বলবে তাকে আমি শেষ করে দিবো।

বলেই আবির সেই অগ্নি দৃষ্টিতে রিয়ার দিকে তাকায়। রিয়া আবিরকে দেখে রীতিমতো কাপছে। আবিরের যে এরকমও একটা রূপ আছে তা ও কোনদিন ভাবে নি। আবিরের চোখের দিক আর না তাকিয়ে থাকতে পেরে রিয়া ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে আর সেখানেই দাড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষন পর রিয়ার কাধে কেউ হাত রাখে। রিয়া প্রচন্ড ভাবে ভয়ে কেপে উঠে।

সানজিদাঃ আবির চলে গিয়েছে। আর ভয় পাস না।

রিয়া তাকিয়ে দেখে আবির সত্যিই নেই।

রিয়াঃ দোস্ত একটু পানি দে তো।

সানজিদা রিয়াকে ওর পানির ফ্লাক্সটা দেয়। রিয়া তারাতারি ঘটঘট করে পানি খেয়ে নেয়। আবিরের সেই রূপ দেখে রিয়ার ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছিলো।

সানজিদাঃ আবিরের এক ঘুষিতেই রকির কি অবস্থা দেখেছিস। শুন কারো দূর্বল জায়গায় কাউকে আঘাত করতে হয়না। তাহলে তার আসল রূপটা বের হয়ে আসে। এখন যদি আবির তোকেও মারে??(রিয়া ভয় দেখানোর জন্য)

রিয়া ভয়ে কাপছে। কারণ সে যা করেছে আবিরের সাথে তার জন্য তার কপালে খারাপ আছে সে তা ভালোই জানে।

সানজিদাঃ কি হলো কিছু বলবি না।

রিয়া কথা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলে,

রিয়াঃ আমার একটু কাজ আছে বলেই রিয়া টয়লেটের দিকে যেতে নেয়। চোখে মুখে পানি দিবে বলে।

রিয়া হেটে যাচ্ছে ঠিক সেই মুহুর্তেই কে যেন রিয়াকে টেনে কোথাও নিয়ে গেলো আর তার মুখ চেপে ধরলো দেয়ালের সাথে। রিয়া তাকিয়ে দেখে এ আর কেউ নয় আবির। খুব রাগী লাগছে ওকে। মনে হচ্ছে রাজ্যের সব রাগ আজ ওর মধ্যে। আবির সেই রাগ নিয়ে বলতে শুরু করে,

আবিরঃ আমি কি তোমার কোন ক্ষতি করেছি??আমি যদি ভালো ছাত্র হই তাতে তোমার কি??তোমাকে আমি এখন পর্যন্ত ইচ্ছে করি একবারও ধাক্কা দিয়েছি??তাহলে কি কারনে?? কেন???এভাবে আমার পিছনে লেগেছো??(জোরে চিৎকার করে বলল)

আবিরের রাগ আরো বেড়েই যাচ্ছে। রাগ আর ধরে রাখতে না পেরে রিয়া পিছনের দেয়ালে একটা জোরে ঘুষি মারে। রিয়া ভয়ে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করছে কিন্তু কোন লাভ হচ্ছেনা। আবির আবার বলতে শুরু করে,

আবিরঃ তুমি হয়তো অনেক সুন্দরী হবে। তাই বলে এতো অহংকারী এতো হিংসা?? আজ তোমার জন্য আমার নিস্পাপ মাকে গালি খেতে হয়েছে।বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরন করতে এসেছি আমি। আমি দেখতে অবশ্যই ভালো কিন্তু তাই বলে আমি বোকা নই। যা ইচ্ছে তাই করবে আমার সাথে। তুমি আজ মেয়ে বলে না হলে দেখতে তোমার কি হাল করতাম। বলো কেন এসব করছো??কেন??

আবির রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের মাঝে দূরত্ব নেই বললেই চলে। রিয়াও আবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। আবির রিয়াকে দেখে এখন কেমন জানি লাগছে তাই ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়।

আবির রিয়ার মুখ থেকে হাতটা সরিয়ে নিতেই রিয়া আবিরের ঠোঁটে তার গভীর পরশ বুলিয়ে দেয়। আবির কল্পনা কেন জীবনেও ভাবে নি যে রিয়া এমন কিছু করবে এইমুহূর্তে। আবিরের জীবনে এই প্রথম অনুভূতি এই পরশের। আবিরের সব রাগ যেন নিমিষেই হারিয়ে যায়। রিয়া আবিরকে সরি বলে দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়।

আবির ওর ঠোঁটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে জীবনে প্রথম এখানে কারো স্পর্শ পেয়েছে তাও আবার রিয়ার মতো পরীর কাছ থেকে। মেয়েটা করলো কি আবিরের এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। কেন করলো এটা!!!

এদিকে রিয়া,
আমি এটা কেন করলাম?? কিসের টানে??কি জন্যে??ও এখন কি ভাববে আমার নামে??ওর রাগটা কমানোর জন্যই এই কাজটা করেছি। ভয়ে মাথায় যা আসছে তাই করছি। কিন্তু ওকেই কেন করলাম। জীবনে প্রথম কাউকে। তাও আবার ওকে। ছেলেটা আমার কতো কাছে ছিলো। নাহ যা করছি করছি। এভাবে না করলে হয়তো ওর কাছ থেকে ছুটতে পারতাম নাহ। নাহলে এতোক্ষনে মার খেতাম নিশ্চিত।

আবিরের মাঝে এক অজানা অনুভূতির কাজ করছে। কিন্তু তা কি সে ভেবে পাচ্ছে না।রিয়াকে আবিরের অনেক ভালো লাগতো কিন্তু আজকের পর থেকে আবির আর রিয়াকে নিয়ে ভাবয়ে চায়না। রিয়ার মতো মেয়েকে তার ভালো লাগতে পারে না। যার ভিতরটা শুধু অহংকার আর হিংসা দিয়ে ভরা।

রিয়া সোজা বাসায় চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে আবিরকে নিয়েই শুধু ভাবতে থাকে। রিয়া আজ যা করেছে তা হয়তো আবেগের বসে করে ফেলেছে। কিন্তু আবির কাছে আসতেই তার বুকের ভিতরটা কেমন জানি লাফালাফি শুরু করে দিয়ে ছিলো। কিন্তু হঠাৎই রিয়ার খারাপ লাগছে। সে আয়নার সামনে গিয়ে বসে। নিজেকে প্রশ্ন করে।

রিয়াঃ রিয়া তুই কবে থেকে এতো খারাপ হয়ে গেলি??আসলেই আবির ঠিক বলেছে, কেন ওকে এভাবে সবার সামনে অপমান করছি।আমিও তো ওর জায়গায় হতে পারতাম। ক্লাসে এতো ছেলে থাকতে কেন যে ওর সাথেই আমি এরকম করি। আজ আমার জন্য ওর মা খারাপ কথা শুনেছে।

এরমধ্যেই রিয়ার বাবা চলে আসে,

বাবাঃ রিয়া মা ভিতরে আসতে পারি??

রিয়াঃ আসো বাবা।

বাবাঃ কিরে এভাবে বসে আসিস??কিছু হয়েছে??

রিয়া আয়নার সামনে থেকে উঠে ওর বাবার কাছে গিয়ে বসে।

রিয়াঃ বাবা আমি কি অনেক খারাপ??

বাবাঃ না মা তুইতো আমার কলিজার টুকরা। তোর মতো ভালো মেয়ে আর একটাও হয় না।

রিয়াঃ না বাবা আমি অনেক খারাপ। আমার নাকি হিংসা বেশি।

বাবাঃ হুম এটা বলতে পারিস। তুই জানিস ছোটকালে কারো কোন কিছু দেখে তার থেকে দামি জিনিস তুই কিনেই ছাড়তি।

রিয়াঃ দেখেছো বলছিনা আমি ভালো না।(মন খারাপ করে)

বাবাঃ কেন মানুষ ইচ্ছা করলেই নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে। তুইও নিজেকে পরিবর্তন কর মা।

রিয়াঃ আমি কি পারবো বাবা??

বাবাঃ অবশ্যই পারবি তুই আমার মেয়ে না।

এরপর রিয়া ওর বাবার কোলে মাথা রেখে অনেক কথা বলে। বাবা ছাড়া যে ওর আর কেউ নেই এই পৃথিবীতে।

এদিকে আবিরও বাসায় চলে যায়। রুমে গিয়ে দেখে মায়া কি যেন নিয়ে বসে আছে।

আবিরঃ কিরে এখানে কি করো??

মায়াঃ আছে আছে। আগে তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। কথা আছে।

আবিরঃ আচ্ছা বসো তুমি আমি আসছি।

আবির ফ্রেশ হয়ে এসে মায়ার সামনে বসে।

আবিরঃ হুম এখন বলো কি কথা।

মায়া আবিরের হাতে দুইটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দেয়।আবির ব্যাগ খুলে দেখে তার জন্য টি-শার্ট,প্যান্ট, জুতা।

আবিরঃ এসব কি??(আশ্চর্য হয়ে)

মায়াঃ আমার তরফ থেকে গিফট। আর একটা গুড নিউজ আছে।

আবিরঃ কি??

মায়াঃ আমার দুই বান্ধবী তোমার কাছে পড়তে রাজি হয়েছে।

আবিরঃ কি বলো সত্যি।

মায়াঃ আরে হ্যা।

আবিরঃ আর এগুলো কিসের জন্য??

মায়াঃ এগুলো কিনে দিয়েছি কারণ তোমার জামা কাপড় গুলো ভালো না। পরলে তোমাকে খুব বাজে দেখায়। তাই আমি নিজে আজ নিজের টাকা দিয়ে এসব কিনে দিয়েছি। এগুলো পরে ভারসিটিতে বা পড়াতে যাবে।

আবিরঃ কি দরকার ছিলো এসবের মায়া??

মায়াঃ ফ্রী দেইনি। টিউশনির টাকা পেলে আমাকে ট্রিট দিতে হবে।

আবিরঃ আচ্ছা আচ্ছা দিবো। জানো সত্যিই তোমার মতো ভালো আর কেউ হয়না। তুমি দেখতেও যেমন সুন্দর ঠিক তেমনি সুন্দর তোমার মনটাও।

মায়া আবিরের কথা শুনে অনেক লজ্জা পাচ্ছে।

মায়াঃ হয়েছে হয়েছে আর পাম দিতে হবে। এখন এই টাকাটা নেও আর সেলুন থেকে চুলগুলো ঠিক করে আসো। কিরকম এলোমেলো হয়ে আছে।

আবিরঃ চুলও ঠিক করতে হবে??

মায়াঃ জ্বি। এখন তারাতারি যান।

আবির আর কি করবে মায়ার কথা মতো চলে যায় সেলুনে। একদম টিপটপ হয়ে আসে। এখন চুলগুলো আগের চেয়ে অনেক সুন্দর লাগছে। আর ফেইসটাও আগের চেয়ে অনেক ক্লিন হয়ে গিয়েছে।

এরপর আবির বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে দেয়ে অনেকক্ষন পড়ে এবং ঘুমানোর আগে মায়ের সাথে কথা বলে রিয়ার আজকের কান্ড মনে করতে করতে ঘুমিয়ে পরে।

প্রতিদিনের মতো আজও মায়ার ডাকে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে মায়ার দেওয়া জামা কাপড় পরে নেয়। আজ আবিরের গেটাপ দেখে মায়ার চোখই যেন সরছে না আবিরের থেকে। একদম ঢাকার ছেলে লাগছে। আবিরও অবাক হয়ে যাচ্ছে নিজেকে দেখে। পোশাক যে মানুষকে এভাবে পরিবর্তন করতে পারে তা আবিরের জানা ছিলো না।

মায়াঃ ভাইয়া তুমি আজ ভারসিটিতে যেও না।

আবিরঃ কেনো??

মায়াঃ আজকে তোমাকে দেখে মেয়েরাতো সব পাগল হয়ে যাবে তাহলে আমার কি হবে??

আবিরঃ অন্য মেয়েরা পাগল হলে তোমার কি??

মায়াঃ না মানে ইমম আমার কিছু না। কিন্তু আমার দেওয়া জামা কাপড় দেখে ওরা কেন পাগল হবে??

আবিরঃ তাহলে কে পাগল হবে হুম??

মায়াঃ কেন আমি।

আবির হাসতে হাসতে শেষ মায়ার কথা শুনে।

আবিরঃ তাহলে চলো তোমাকে পাবনা রেখে আসি হা হা হা।

মায়া আবিরের হাসির দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ হয়ে।

আসলেই আজ আবিরকে যা লাগছে না। চোখ ফিরানো যাচ্ছে না।আবিরের চাচা চাচিও আবিরকে দেখে অবাক। আবির নাস্তা করে ভারসিটিতে চলে যায়। অবশ্য মায়াতো যেতেই দেতে চাচ্ছিলো না। কিন্তু আবির অনেক কষ্ট করে এসেই পরেছে।

আবির ভারসিটিতে ঢুকতেই আবিরকে…..
চলবে….?

কোন ভুল হলে জানাবেন, এবং মাফ করবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে