ছোটঘরের ভালোবাসা পর্বঃ ০৪

1
779

ছোটঘরের ভালোবাসা পর্বঃ ০৪
– আবির খান

পর্বঃ ০৪
আবির এরপর ঘুমিয়ে পরে। অনেকক্ষন পর হঠাৎ আবিরের ঘুমটা ভেঙে যায়। আবির চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে কে যেন বসে আছে। আবির ভাবে সে হয়তো স্বপ্ন দেখছে। তাই চোখটা আবার মুছে তাকায়। না এখনো সে দেখতে পাচ্ছে, তার মাথার কাছে কেউ বসে আছে। আবির এক লাফে উঠে বসে।

আবির দেখে এ আর কেউ নয় মায়া। বেশ সুন্দর করে সেজে বসে আছে। মনে হয় ঘুরতে যাবে।

আবিরঃ কি মায়া ঘুরতে যাবে মনে হয়??এতো সুন্দর করে সেজে এসেছো যে??

মায়াঃ না কোথাও যাচ্ছি না।

আবিরঃ তাহলে এখানে এভাবে সেজেগুজে বসে আছো যে??

মায়াঃ বারে তুমি ভুলে গেছো মনে হয়। আমাকে না আজ পড়াবে??তাই পড়তে এসেছি।

আবিরঃ বলো কি!!!! ঢাকায় মেয়েরা পড়তে আসলে বুঝি এভাবে সেজেগুজে আসে??

মায়াঃ আরে নাহ।

আবিরঃ তাহলে তুমি???

মায়াঃ আরে এমনি এসেছি। সাজতে ইচ্ছা করেছে তাই সেজে আসলাম।

আবিরঃ ধুহ পড়তে আসলে কেউ এভাবে সেজে আসে?? পাগল একটা।

মায়াঃ হুম তোমার জন্য।(আস্তে করে বলল)

আবিরঃ কিছু বললে নাকি??

মায়াঃ হুম বলেছিতো যে এইযে এতো সেজে আসলাম, তা আমাকে কেমন লাগছে তাই তো বললেন নাহ। তা আমায় কেমন লাগছে??

আবিরঃ হুম ভালোই লাগছে। কিন্তু এরপর পড়তে আসলে ভুলেও এভাবে সেজেগুজে আসবে না। নরমাল ভাবে আসলেই হবে।

মায়াঃ হুহ। ঠিক আছে। বেটা কিছুই বুঝে না কার জন্য সেজেছি।

আবিরঃ আচ্ছা তুমি বসো আমি একটু ফ্রেশ হয়ে আসি।

মায়াঃ আচ্ছা।

আবিরঃ তুই বইগুলো বের করে রাখ আমি আসছি।

মায়াঃ তুমি তুই করে কেন বলো??তুমিই করে বলবা আমাকে। তুমিই শুনতেই ভালো লাগে।(অভিমানী কণ্ঠে)

আবিরঃ তুই আমার বোন এর মতো তোকে তুই করে বললে সমস্যা কি??

মায়াঃ বোনের মতো বোনতো আর নাহ। এই যে একটু আগেও তো তুমি করে বলছিলে তখনই কত ভালো শুনা গেছে। ঢাকায় তুই টুই চলে না। তুমিই ভালো শুনায়। তাই তুমি করেই বলবা।

আবির মায়ার কথা শুনে মাথা চুল্কাচ্ছে। মেয়েটা বলে কি!!

মায়াঃ কি ঠিক আছে??

আবিরঃ জ্বি ম্যাম ঠিক আছে। এখন আপনি বইগুলো বের করেন আমি আসছি।

মায়াঃ আবার আপনি কেন??তুমি তুমিইইইই।

আবিরঃ মাফ চাই।

বলেই আবির ফ্রেশ হতে চলে গেলো। কিছুক্ষনপর ফ্রেশ হয়ে এসে মায়াকে পড়াতে শুরু করলো। কিন্তু মায়া পড়া রেখে শুধু আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

আবিরঃ কি হলো তুই ওহ সরি তুমিইই এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেনো পড়া রেখে??

মায়াঃ আচ্ছা ভাইয়া তুমি এতো সুন্দর কেন??গ্রামে থেকেও কত সুন্দর তুমি।

আবিরঃ এ কেমন কথা??আমি সুন্দর না অসুন্দর তা দিয়ে তোর কি ওরে তোমার কিইইই??

মায়াঃ না এমনি জিজ্ঞেস করলাম। আসলে তোমার মতো একটা বিএফ চাই। একদম তোমার মতো কিউটি হতে হবে।

আবিরঃ এসব বিএফটিএফ ভালো না। পড়ায় মন দে এক্সাম এর আর বেশি দিন বাকি নেই।

মায়াঃ তুমি এমন কেন??পঁচা অনেক তুমি। (অভিমানী কণ্ঠে)

আবিরঃ মায়া…. পড়াতো। নাহলে কিন্তু চাচিকে ডাক দিবো।

মায়াঃ আচ্ছা বাবা পড়ছিতো। আর তুমি কিন্তু আবার তুই করে বলছো।

আবিরঃ আচ্ছা বাবা আর বলবো না। এবার পড়ো।

এরপর মায়া তার অজানা অনুভূতি নিয়ে আবিরের কাছে অনেকক্ষন পড়ে। কিন্তু এরমাঝে আবিরকে বিব্রত করতে একটুও পিছপা হয়নি। আবিরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, আবির কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয় না এইসব আরকি।

আবিরঃ মায়া তুমি যদি এভাবে পড়ো তাহলে কিন্তু আমি আর কাল থেকে পড়াবো না। প্লিজ বোন এরকম করিস নাহ। চাচি আমাকে বকা দিবে।

মায়াঃ আমি আবার কি করলাম। (মিটমিট হেসে)

আবিরঃ ধুর এখন যাতো।

মায়াঃ আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি।

মায়া চলে গেলে আবির ওর মাকে ফোন দেয়।

মাঃ হ্যালো বাবা কেমন আছিস??রাতে খেয়েছিস??

আবিরঃ না মা, একটু পরেই খাবো। তুমি খেয়েছো??

মাঃ হ্যা বাবা খাইছি।

আবিরঃ মা তোমার কথাটা এরকম শুনাচ্ছে কেন??তুমি কি অসুস্থ??

মাঃ না না বাবা। ওই একটু ঠান্ডা লাগছে। তুই চিন্তা করিস না।

আবিরঃ মা তোমাকে কতবার বলছি এতসকালে গোসল করবা না তাও তুমি কথা শুনো না।

মাঃ সকাল সকাল গোসল না করলে বাবা আমার যে ভালো লাগে না। এই গোসলে যে অনেক শান্তি।

আবিরঃ কি যে বলো তুমি।

মায়াঃ ভাইয়া….মায়ার ডাক।

আবিরঃ মা এখন রাখি তাহলে মায়া ডাকছে। তুমি ঠিক মতো ঔষধ খেও।

মাঃ আচ্ছা আচ্ছা।

মায়াঃ ভাইয়া খেতে আসেন। আব্বু ডাকছে।

আবির দেখে মায়া আবার নরমাল ড্রেস পরেছে।

আবিরঃ তা এখন আবার ড্রেস চেঞ্জ করলে কেন?? ওই ড্রেস পরেই খেতে।

মায়াঃ বারে, ওটাতো শুধু আপনার জন্য পরেছি। সবার সামনে কি আর ওভাবে যাওয়া যায় নাকি।

আবিরঃ আমার সামনেই কেন এভাবে আসতে হবে??

মায়াঃ ও আপনি বুঝবেন নাহ। সময় হলে সব বুঝবেন। এখন তারাতারি আসেন খেতে।

আবিরঃ আচ্ছা যাও আসছি।

আবির খেতে যায়।

চাচাঃ আয় বাবা বস। কেমন গেলো আজকের প্রথম ক্লাস??

মায়াঃ যা গেসে না আব্বু জানো….

আবির মায়াকে থামিয়ে দেয়।

আবিরঃ চাচা অনেক ভালো গেসে।

চাচাঃ আচ্ছা। শুন ভালো মতো পড়া লেখা করবি কোন সমস্যা হলে আমাকে বলবি।

আবিরঃ আচ্ছা চাচা। তবে একটা কথা ছিলো চাচা।

চাচিঃ এখন হাতে টাকা পয়সা নাই। টাকাটোকা দিতে পারবো না।

চাচাঃ আরে ওকে বলতে তো দেও আগে। বল বাবা।

আবিরঃ চাচা আমি কয়েকটা টিউশনি করাতে চাই। যা টাকা আসবে তাতেই আমার খরচ চলে যাবে। এমনিতেই আপনাদেরকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি। তার উপর আবার যদি আমার খরচও আপনাদের কাছ থেকে নেই তাহলে জিনিসটা অনেক খারাপ হয়।

চাচাঃ ছি ছি বাবা কি বলছিস। তা কেনো, আমি থাকতে তোর হাত খরচের জন্য আবার টিউশনি করতে হবে কেন?? না না তুই শুধু পড় বাবা।

চাচিঃ এই তোমার এতো সমস্যা কেন হ্যা??ও পড়াতে চাচ্ছে পড়াবে। তুমি এতো কথা বলো কেন। আবির তুই টিউশনি করবি।

আবিরঃ জ্বি চাচি। চাচা প্লিস আপনি না কইরেন নাহ।

চাচাঃ আচ্ছা করিস। কিন্তু পড়া লেখার যেন কোন ক্ষতি না হয়।

আবিরঃ জ্বি চাচা।

মায়াঃ তাহলে আমার দুইটা বান্ধবী কে তো আবির ভাইয়া পড়াতে পারে। ওরা ভালোই টাকা দিবে তাকে।

আবিরঃ তাহলে মায়া তুমি প্লিজ একটু কথা বলে দেখ ওরা পড়বে কিনা আমার কাছে।

মায়াঃ আচ্ছা আমি কথা বলে দেখছি। তবে আমাকে কিন্তু পড়াতেই হবে।

আবিরঃ হ্যা অবশ্যই।

এরপর আবির খাওয়া দাওয়া করে নিজের রুমে গিয়ে অনেকক্ষন পড়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে…
মায়াঃ ভাইয়া ও কিউটের ডিব্বা উঠো। আর কত ঘুমাবা??

আবির মায়া এরকম ডাকাডাকিতে তারাতারি উঠে পরে।

মায়াঃ কি ঘুম হলো??

আবিরঃ আচ্ছা মায়া তুমি প্রতিদিন আমাকে ডাকতে আসো কেন বোন??আর এতো সকালেই বা তুমি কিভাবে উঠো?? আমি শুনেছি ঢাকার মেয়েরা নাকি অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমায়।

মায়াঃ হুম বাট তোমার এই ঘুমন্ত কিউট ফেইসটা দেখার জন্য তারাতাড়ি ঘুম থেকে উঠি।

আবির কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না।

আবিরঃ তোমার স্কুল কয়টায়??

মায়াঃ ৯ টায়। কেন???

আবিরঃ তাহলে গিয়ে স্কুলের জন্য রেডি হও যাও।

মায়া আবিরের এভাবে বলাতে একটু অভিমান করে।

মায়াঃ তুমি অনেক পঁচা। যাও তোমার সাথে আর কথা নাই।

আবিরঃ আচ্ছা। যাও আমিও আর তোমার সাথে কথা বলবো না। এই যে আড়ি। (মজা করে)

মায়াঃ আরে আরে আমিতো মজা করছিলাম। তোমার সাথে কথা না বললে কার সাথে বললবো বলো??

আবিরঃ কিন্তু আমিতো মজা করছি না। আড়ি মানে আড়ি।

মায়া এবার কাদো কাদো ভাব করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।

আবিরঃ আরে আরে আমিও মজা করছিলাম।বোকা মেয়ে। হা হা।

মায়াঃ সত্যি তো??

আবিরঃ হ্যা বাবা সত্যি। বোকা মেয়ে। ভাই বোন একটু মজা করবো না। হা হা।

মায়াঃ হুহ আমি কি তোমার আপন বোন নাকি। চাচাতো বোন। বুঝছো। পঁচা একটা।

বলেই মায়া চলে গেলো।

আবিরঃ ও কি বলে গেলো কিছুই বুঝলাম না ধুহ। যাই তারাতাড়ি ভারসিটির জন্য রেডি হই।

এরপর আবির তার ভারসিটিতে চলে যায়।

ভারসিটিতে….
আবির ভিতরে ঢুকে হেটে যাচ্ছে, ঠিক তখনই….

চলবে….?

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে