ছায়া নীল ! ৩০.

0
1954

ছায়া নীল !

৩০.

Maria Kabir
চোখ খুলে দেখি আমি বড় ফুপুর বাসায় তার বেডরুমে শুয়ে আছি।
পাশের চেয়ারে বড় ফুপু বসে আছেন। আমি মনে করার চেষ্টা করছিলাম কী হয়েছিলো? শুধু মনে পড়ছে সিঁড়ি থেকে পরে গেলাম। বড় ফুপু বললেন
– সৌরভ তোকে এখানে রেখে গেছে।
আমি বললাম
– ও কই?
– আছে। তোকে কিছু বলতে বলেছে আমাকে।
– কী বলতে বলেছে?
ফুপু আমার পাশে বিছানার উপর বসলেন। আমার মাথা তার কোলে নিয়ে চুলে বিলি কাটতে কাটতে বলতে শুরু করলেন
– আমরা ৩ বোন। ৩ জনের মধ্যে মেজো সবথেকে সুন্দর। আমাদের দাদী সুন্দরী পছন্দ করতেন। তাই ওর আদর বাড়িতে একটু বেশি ছিলো। দাদীর আদরে আর আহ্লাদে ওকে কেউই শাসন করতে পারতো না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ওর আচার আচরণে অনেক পরিবর্তন আসতে শুরু করলো। যেহেতু ও সুন্দরী ছিলো তাই প্রেমপত্র থেকে শুরু করে ছেলেরা বিরক্ত করতে শুরু করলো।
মাত্র ১৬ বছর বয়সে বাসায় নালিশ আসতে শুরু করলো। প্রতিদিন একটা না একটা নালিশ আসতোই। এ বলতো, নূর কে ওই স্কুলে দেখেছে। আরেকজন বলতো পুরোন বাড়িতে… হাবিজাবি।
ওকে বাবা মা শাসন করেও কোনো ফল পাচ্ছিলো না। বিয়েও দিতে পারছেনা। বড় বোনের বিয়ে না দিয়ে তার ছোটো জনকে কীভাবে বিয়ে দেয়?
আর মানুষ হিসেবে ও মিষ্টভাষী। মিষ্টি কথায় মানুষকে খুব সহজে ভোলাতে পারে। আর ওর জাদু টোনার দিকে ঝোক ছিলো। এখনো আছে কিনা জানি না। প্রায় ঘুম থেকে উঠে দেখতাম ও আমার পাশে নেই। সকালে বাড়ি ফিরতো।
ফুপু থামলেন। হয়তোবা কথা গুলো গুছিয়ে নিচ্ছেন।
ফুপু আবার বলতে শুরু করলেন
– শ্মশানঘাট, গোরস্থান দিয়ে ঘুরে বেড়াতো। ওকে জিজ্ঞেস করলেই সব বলে দিতো। কোথায় যায়? কী করে? কেনো করে?
আমার বিয়ে হয়ে গেলো মামাবাড়ি তে।তাছাড়া উপায় ছিলো না।
তোর বাবা বিয়ে করার পর মা মারা গেলেন।
তোর মার সাথে মেজোর বেশ ভাব ছিলো। তোর মামাও এ বাড়িতে প্রায় এসে থাকতেন। তোর মামার সাথে মেজোর সম্পর্ক হয়ে গেলো। ভাবছিস আমি কীভাবে জানলাম?
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি প্রকাশ করলাম।
ফুপু বললেন
– মেজো আমাকে খুব ভালবাসতো। আমাকে সবকিছুই বলতো। সম্পর্কের এক পর্যায়ে মেজো প্রেগন্যান্ট হয়ে গেলো।
এখনকার যুগেই এটা একটা ভয়ংকর খবর। তাহলে তো বুঝতে পারছিস তখনকার যুগে ব্যাপার টা কেমন ছিলো?
আমি বললাম
– হ্যা।
– তোর মা কোনোভাবেই রাজি হলো না। তার ভাইয়ের সাথে মেজোর বিয়ে দিতে। কে বা চায় যে তার ভাইয়ের কপালে এরকম বাজে স্বভাবের মেয়ে থাকুক। এদিকে মেজোর ৫ মাস হয়ে গেছে। তোর মার ঘোর অসম্মতি তে বিয়েটা হলো। তোর মাই তোর নানাবাড়ির কর্তা। মেজো আর তোর মামা দূরে গিয়ে সংসার পাতলো। সৌরভ হলো, আমিই ওকে ২ বছর পর্যন্ত লালনপালন করেছি। আমরা ভেবেছিলাম বিয়ের পর মেজোর চরিত্রদোষ টা সেরে গেছে। তাই তাকে চোখেচোখে রাখা বন্ধ করলাম।
কিন্তু….
ফুপু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। বললেন
– সৌরভ অনেক কষ্টের মধ্যে বড় হয়েছে। এমন মা যেন কারো না হয়।
৫ বছরের ছেলেকে বাসায় একা রেখে চলে যেতো। আর ফিরত ২ / ৩ দিন পর। একদিন তো এক ছেলের সাথে ওকে পুলিশ ধরলো।
তারপর ওকে আমাদের বাসা থেকে ত্যাজ্য করে দেয়া হলো। আর এই খবর তোর মা তার ভাইকে জানালো। সেটা শুনে তোর মামা স্ট্রোক করলেন।
– আমার কোন মামা??
– তুই যে লাশ দেখেছিস সেটা তোর মামারই। মেজো ফরমালিন দিয়ে ওর লাশ এখনো রেখে দিয়েছে।
– এগুলা কী বলছেন?
– সত্যি বলছি। আমি সৌরভ কে বলেছিলাম তোকে ওখানে না রাখতে। তোর মার জন্য মেজো বিধবা হয়েছে। হয়তোবা তোর মামাকেই সত্যি ভালবাসতো। এইজন্য……
– কী ফুপু?
– তোর সাথে এমন খেলা খেলেছে। ওর মানসিকতার কোনো ঠিক নেই। যে, মেয়ে একটা লাশ নিয়ে দিনের পর দিন বাস করতে পারে সে তার ভাস্তির ক্ষতি করতে পিছপা হবেনা।

চলবে……!

#Maria_kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে