গল্প খোলা চিঠি পর্ব ০৬

0
974

গল্প খোলা চিঠি পর্ব ০৬

??আরহামের বয়স চার প্রায় শেষ!
আসাদ তাকে স্কুলে দিবে বলে ভাবছে,
আসাদ নীলিমাকে বলে– “নীলু”
নীলিমাঃ হুম বলো,,,
আরহামের জন্য কয়েকটা স্কুলের ফর্ম নিয়ে এসেছি,
দেখো কোনটাতে দিবা,
নীলিমা : তোমার কাছে যেটা বেটার মনে হয় দাও,
আমি এতো বুঝিনা,
আসাদঃ হুম আচ্ছা, আরহাম কোথায়?
নীলিমাঃ মনে হয় ওর ছোট বাবার ঘরে,
আসাদঃ ওহ্!!!

আসাদ নিজেই আরহামকে ছোট বেলা থেকেই আজাদকে ছোট বাবা বলে ডাকতে শেখায় যদিও নীলিমা এতে আপত্তি জানায়,
আসাদ মনে মনে বলে–
“আপত্তি করো না নীলু!
ওর আসল বাবাতো আজাদই!
আমিতো শুধু মাত্র সার্টিফিকেট!!!

★পরদিন সকালে,
আসাদ খুব সকালে বাইরে গিয়েছিলো,
কারন রাতে বেলা আরহাম তার কাছে পিজা খেতে চেয়েছিল,
আসাদ হাসে আর বলে-
“মায়ের মতো পিজা পাগল হয়েছে ছেলেটা!
অনেক রাত হওয়াতে আসাদ এনে দিতে পারেনি,
আসাদ সকালে এনে দিবে বলেছিলো,
তাই তার এতো সকালে বাইরে যাওয়া,,

★সকাল দশটা,
আসাদ এখন ও বাইরে,
আসাদের বাসার পাশেই একটা ভালো স্কুল আছে,
সেখান থেকে সকালে দুজন মিস এসেছে আরহামকে সেই স্কুলে দিবে কিনা?

এর মধ্যে একজন মিস নীলিমার পরিচিত,
তার বান্ধবীর বোন হয় সে,
তো নীলিমাকে দেখে বলে—
তুমি এখানে?
জ্বি আপু এটা আমার বাসা,
আর আরহাম আমার ছেলে,
ওওও তাই? অনেক কিউট তোমার ছেলে!
নীলিমা হাসে,,,

তাদের কথোপকথনের মাঝখানে আজাদ আসে তার রুম থেকে বের হয়ে,
আজাদ মিসদের সালাম দিয়ে আরহামের কোলে নিয়ে নীলিমার পাশে গিয়ে বসে,
নীলিমা আজাদ সম্পর্কে কিছু বলবে তার আগেই সেই মিস বলে ওঠে—-
“”এই বুঝি তোমার হাজবেন্ড?
ছেলে তো একেবারে বাবার ডুবলিকেট হয়েছে”
পাশের মিস সাথে সায় দিয়ে বলে-
“ঠিক বলেছো তুমি একবারে বাবার মতো দেখতে,,,

★এই কথা বলার ঠিক আগ মুহূর্তে আসাদ এসে দরজার সামনে হাজির,
কথাটা শুনা মাত্রই তার হাত থেকে পিজার বক্সটা নিচে পরে যায়,
নীলিমা দরজার কাছে দৌড়ে আসে আর আসাদের হাতটা ধরে তাদের সামনে এনে বলে–
“”না আপু,
এ আমার হাজবেন্ড আসাদ চৌধুরি,
আর ও হলো আমার দেবর আজাদ চৌধুরি,

মিস বলে– “ওহ্ সরি,
কিছু মনে করো না নীলিমা!!
তোমার বেবি দেখতে ঠিক তার চাচার মতো,
আসলে কারো চাচার সাথে চেহারার এতো মিল হয় আমি এর আগে কখনো দেখিনি তো তাই এমন ভুলটা হলো!!!
সরি প্লিজ মাইন্ড করোনা,,

★★★

হুম ভুল,,,
আসলেই কি ভুল ছিলো তার ধারনা নীলু?
না সে রাইট ছিলো,
আর এমন রাইট ওপিনিয়ন ফিউচারে আরো অনেকেই দিতে পারে,
আমি না সত্যিই আর নিতে পারছিলাম না এই বিষের মতো সত্যটাকে,,,
তাইতো এমন করে চলে যাওয়া!
কি করতাম বলো/
প্রতিদিন একটু একটু করে মরার চাইতে একদিনে মরে যাওয়াটা ভালো নয় কি???

নীলিমা চিঠির দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে,
চিঠির বাকি অংশ পড়ছে,,,,

★জানো নীলু?
সেইদিন সারারাত আমি ঘুমাইনি,
শুধু তোমার মুখের দিকে চেয়ে ছিলাম,
অনেক মায়া লাগছিলো তোমাকে,
ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করছিলো না একটু ও,
তবুও কিছু করার ছিলো না আমার নীলু,
কারন আমার দম আটকে আসছিলো,
প্রতিনিয়ত এমন সিচুয়েশন এর ফেইস করতে করতে আমি ক্লান্ত!!!

_ ফিউচারের জন্য নিজেকে কিছুতেই প্রস্তুত করতে পারছিলাম না,
তাই সেই রাতেই ডিসিশন নিলাম আমাকে চলে যেতে হবে তোমাদের মাঝ থেকে,
হুম অনেক কষ্ট হচ্ছিলো এমন ডিসিশনে কিন্তু ভেবে দেখলাম তোমার আর আমার ছেলের জন্য এটাই সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত,
কারন আমি আর নিতে পারছিলাম না,

আরহামকে আমি অনেক ভালেবাসি,
এক মুহূর্তের জন্যেও আমার মনে হয়নি ও আমার ঔরসজাত নয়,
কিন্তু সময় এবং পরিস্থিতি বারবার আমাকে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছে,
আমাকে বার বার মনে করিয়ে দিয়েছে আমি একজন ফলস্ বাবা,,,
আমি একজন ইউজলেস হাজবেন্ড!

★কিন্তু আর না নীলু!!
তাই আমাকে যেতে হবে,
তবে কেমন করে?
কিছুতো একটা করতে হবে,
কিন্তু কি সেটা?
অনেক ভেবে একটা প্ল্যান করলাম—-

★পরদিন সকালে তোমাকে আর আরহামকে তোমাদের বাসায় এই বলে পাঠালাম তোমার আম্মু অসুস্থ তোমাকে যেতে বলেছে,
তুমি ও আমার এক কথায় বিশ্বাস করে চলে গেলে,
আমি জানতাম আমি মিথ্যে বলে তোমাকে কেন পাঠালাম এটা তুমি ভাববে বাট বিকেল ছাড়া আসবে না কারন তোমার আম্মু তোমাকে না খেয়ে আসতে দিবেনা,
তাই নিশ্চিন্ত ছিলাম,

★আমাকে তোমায় মিথ্যে বলে পাঠানোর সাফাই দিতে হবে না কারন ততোক্ষণে আমি হয়তো তোমাকে সাফাই দিবার অবস্থায় থাকবো না,
তুমি যাবার পর আমি আজাদের সাথে কিছু কথা বলি আর আজই সে জানতে পারে আমাদের বাবুর বাবা যে আমারই ছোট ভাই সেটা আমি বাবুর জন্মের আগে থেকেই জানি,

★তোমাকে ধন্যবাদ তুমি আমার কথা রেখেছো,
আজাদকে বলোনি আমি যে সবটা জানি!
ও জানলে হয়তো কখনো আমার সামনে দাঁড়াতে পারতো না লজ্জায়,,,
আবেগে হোক বা বয়সের দোষে হোক কাজটা সে করে ফেলেছে এই নিয়ে তার চোখে মুখে একটা অপরাধ বোধ সব সময় আমি দেখেছি তাই হয়তো কিছুই ওকে আগে বলতে পারিনি,,,

★যাই হোক আজাদ অবাক হয় শুনে,
আর এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরে—
“”তুমি সব জানো ভাইয়া?
“”কেমন করে সহ্য করেছো এতো গুলো বছর?
আমাকে মাফ করে দাও ভাইয়া আমি ভুল করেছি প্লিজ মাফ করে দাও””
–এই বলে আমার পা জড়িয়ে ধরে—

আমি বললাম–
“”ধুর বোকা মাফ চাইছিস কেনো?
আমি তো তোর উপর রাগ না,
আমি রাগ আমার নিয়তির উপর!
এখানে নীলিমা বা তোর কোনো দোষ নেই,
আমি নীলুকে অনেক আগেই মাফ করে দিয়েছি,
সাথে তোকেও,
লক্ষি ভাই আমার কাঁদিস না,,
আজ থেকে তোর অনেক দায়িত্ব তাই তোকে অনেক স্ট্রং হতে হবে ভাই আমার!!!!


(চলবে)

লেখা : মুসকান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে