খেলাঘর /পর্ব-৪৬

0
2154

খেলাঘর /পর্ব-৪৬
লেখা- সুলতানা ইতি

আর হা,আপনার বিপদের সময় আপনার পাশে আছি বলে এটা ভাববেন না আপনার সব অপরাধ মাপ হয়ে গেছে।আপনার বাবা মা ও আপনাকে ক্ষমা করেনি ওকে?যেমন আছেন তেমন থেকে সুস্থ হয়ে উঠুন!হাজবেন্ড সাজার চেষ্টা করবেন না’বুঝতে পেরেছেন?

ইভান আর একটা কথা ও বলেনি কিছু বলার নেই তার সারা দিন শুয়ে থাকতে হয় আর তার খাওয়া থেকে গোসল করানো পর্যন্ত সব মিথিলা ই করে এভাবে আর মেয়েটা কে কষ্ট দিতে পারবো না,

ইহান মিথিলা কে অফিস থেকে এক মাসের ছুটি দিয়েছে যদি ও মিথিলা ভাবছে ছুটি শেষে চাকরী টা ছেড়ে দিবে ইহান আর সাম্মির মাঝে মিথিলা থাকতে চায়না যতো দিন মিথিলা ইহানের চোখের সামনে থাকবে ততদিন সাম্মি আর ইহানের মাঝে কিচ্ছু ঠিক হবে না

মিথিলা এখন হসপিটালেই থাকছে মাঝে মাঝে আয়ান এসে কি লাগবে না লাগবে তা দেখে যায়।
ইহান আর সাম্মি তো সকাল বিকাল দুই টাইম আসে। মিথিলা নিষেধ করে এমন না আসতে। কিন্তু ইহান মিথিলার কথা কানে ও তোলে না।

ইভান আগের থেকে অনেক টা ভালো এখন নিজে নিজে শোয়া থেকে উঠে বসতে পারে কিন্তু হাটতে পারে না ডক্টর বলছে অনেক সময় লাগবে হাটার জন্য

দুপুরে ইভান কে ওষুধ খাইয়ে শুইয়ে দিলো ইভান চোখ বন্ধ করে আছে ঠিক ঘুমাচ্ছে কি না বুঝা যাচ্ছে না
পাশে মিথিলা ইহান সাম্মি বসে কথা বলছিলো

এমন সময় নায়া ক্যাবিনে ডুকলো
নায়া- বাহ সবাই দেখছি এক সাথে ই আছে? ইহান তুই ও এখানে?

নায়াকে দেখে সবাই উঠে দাড়ালো শুধু ইভানের কোন রেসপন্স নেই হয়তো ঘুমোচ্ছে

নায়া- ভাই তোর তো এখন বউ আছে তবু ও তুই এই মেয়েটার পিছনে ঘুরছিস কেনো বল?

ইহান- মুখ সামলে কথা বল তুই। নিজের মতো সবাকে ভাবিস না। মিথিলার পিছনে আমি কেনো ঘুরি তার এক্সপ্লেইন আমি তোকে দিবো না।

নায়া- আমি তোর এক্সপ্লেইন শুনতে ও চাই না
তার পর সাম্মি কে বল্লো
– এই যে মেয়ে স্বামি কে নিজের আঁচলে বাধতে শিখ নইলে পশকে যাবে

সাম্মি- স্যরি আপু,আপনার মুখে এই কথা মানায় না।যে বিবাহিত ছেলে কে বিয়ে করে আবার অন্য ছেলের সাথে পরকিয়া করে।

নায়ার চোখ গুলো আগুনের মতো জ্বলে উঠে
– সাম্মিইইইইই

ইহান- আমার স্ত্রীর সাথে এতো ঝোর গলা দিয়ে কথা বলার অধিকার আমি তোকে দিইনি। এটা হসপিটাল সাধারণ কমনসেন্স টুকু তোর নেই। রুগীর সামনে কি ভাবে কথা বলে হয় সেটা ও জানিস না।

সাম্মি যেন নিজের কান কে বিশ্বাস করাতে পারছে না,ইহান তাকে স্ত্রী বলেছে তা ও নিজ মুখে শব্দ টা বার বার সাম্মির মনে রিপিট হচ্ছে

নায়া- কে রুগী? এই শয়তান টা? এ তো ঢং করছে,এই উঠ একদম ঢং করিস না ইভান। উঠ শয়তান
নায়া এভাবে চিৎকার করে পুরো রুম মাথায় তুলছে

মিথিলা- শুনুন আপনার যদি কোন কথা বলার থাকে আপনি অপেক্ষা করুন উনি অসুস্থ উনার সাথে ঠান্ডা মাথায় কথা বলুন।

নায়া আগুন চক্ষু করে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বল্লো
– এই মেয়ে আমার আর ইভানে মাঝে তোকে ডেকেছি বল? ডাকিনি তো। তা হলে তুই এর মাঝে আসছিস কেনো।তুই কে?

মিথিলা- আমি যেই হইনা কেনো আপনার মতো মেন্টালি সিক না।একজন রুগীর সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় এই টুকু জ্ঞান আমার আছে।

নায়া – তোর মতো বাজারের মেয়ের কাছে থেকে আমার এখন জ্ঞান নিতে হবে?

নায়ার চেঁচামেচি তে ইভান জেগেই উঠে ছিলো তবু ও চুপ করে ওর কথা গুলো শুনছিলো কিন্তু এবার আর চুপ করে থাকতে পারেনি
– কাকে বাজারের মেয়ে বলছো? বাজারের মেয়ে কাদের বলে জানো? যারা স্বামিদের জামা কাপড়ের মতো চেঞ্জ করে।
অবশ্য বাজারের মেয়েদের ও একটা নিতি আছে তোদের মতো মেয়েদের সেই নিতি টুকু ও নেই

নায়া- মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ ইভান তুই আমার সাথে এ ভাবে কথা বলতে পারিস না। তোকে আমার জানা আছে

ইহান- তুই কি এখানে ঝগড়া করতে আসছিস?

নায়া- তুই তোর গার্লফ্রেন্ডের হয়ে চামচামি করিস না।।
তার পর নায়া ইভান কে বল্লো
– এই শুন আমার ডিভোর্স চাই তোর সাথে আমি আর সংসার করতে পারবো না

ইভান কিছু বলার আগেই ইহান বল্লো
– কেনো উনি পুরানো হয়ে গেছে বলে

ইভান- ইহান তুমি চুপ করো।আমি কথা বলছি,তুই না বললে ও আমি তোকে ডিভোর্স দিতাম জীবন টা বিষিয়ে দিয়েছিস, সব কিছু রেডি করে পাঠিয়ে দিস

নায়া আর কথা না বলে জ্বলতে জ্বলতে বেরিয়ে গেলো

মিথিলা এতোক্ষন নির্বাক দর্শকের মতো ছিলো
সাম্মি মিথিলা কে হাত ধরে বাইরে নিয়ে যায়
মিথিলা- কি হলো বাইরে আনলি যে

সাম্মি- তুই আর ইভানের কোন দায়িত্ব নিবি না, ওকে ওর মা বাবার কাছে পাঠিয়ে দে।এই মেয়ে টার মতি গতি ঠিক ভালো লাগছে না আমার। কখন আবার দেখবি ইভানের লাইফে ফিরে আসবে।

মিথিলা- ইভানের লাইফে নায়া ফিরুক না ফিরুক আমি কখনো ই ফিরবো না, খুব শিগ্রই আমি হসপিটাল থেকে রিলিজ নিয়ে ইভান কে ওদের বাড়িতে রেখে আসার চেষ্টা করবো

সাম্মি- চেষ্টা করবি মানে?

মিথিলা- ওর বাবা মা ওকে ক্ষমা করতে পারছে না রে
এভাবে আর ও অনেক কথা বলার পর সাম্মি আর ইহান বাড়ি ফিরে যায়

মিথিলা হসপিটাল থেকে রিলিজ নিয়ে সোজা ইভান কে নিয়ে তাদের বাসায় যায়

ইভান যদি ও বাসায় যেতে রাজি হয়নি,
মিথিলা স্টিক্টলি জানিয়ে দেয়
– দেখুন অনেক সময় পার করেছি আপনার পিছনে আর না আমার ভাই বোন কে নিয়ে আমার একটা সংসার আছে।আমি কিছুতেই আপনার জন্য সে দায়িত্ব থেকে বিছিন্ন হতে পারবো না

ইভান- তা হলে আমাকে আলাদা বাসায় নিয়ে যাও

মিথিলা- দেখুন আপনার দেখা শুনাতেপ্রব্লেম
হবে। আর মা বাবা কাছে নিজের ভুলের ক্ষমা ছেয়ে নিন। সম্পর্ক টা আগের মতো করার ট্রাই করুন।
এর পর ইভান আর কোন কথা বলেনি মিথিলার কথা মেনে নেয়

মিসেস আয়মন- প্রথমে নিষেধ করলে ও মিথিলা যুক্তিতে হার মেনে যায়

– দেখুন ইভান আপনাদের সন্তান,সন্তান ভুল করবেই। কিন্তু মা বাবা কে সেই ভুলের জের ধরে বসে থাকতে হয়না। সন্তানের ভুলকে ক্ষমা করতে হয়।তা ছাড়া উনি তার ভুলের শাস্তি পেয়েছে।
আপনি নিজের বুকে হাত দিয়ে একটা সত্যি বলুন তো। আপনি কি আপনার ছেলের জন্য কষ্ট পাচ্ছেন না?ছেলের জন্য লুকিয়ে কাঁদেন না? কাঁদেন তো। তা হলে তার ভুল ক্ষমা করতে ক্ষতি কিসের।

মিসেস আয়মন আঁচলে মুখ ঢেকে কান্না ছাপা দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়,মিথিলার সব কথা ই সত্যি।ফিরিয়ে দেয়ার মতো একটা কথা ও বলেনি

মিথিলা মিসেস আয়মনের দিকে তোয়াক্কা না করে ইভানের ওষুধ পাতি সব ঠিক করে ইভান কে দুপুরের ওষুধ খাইয়ে
তার পর নিজের বাসায় চলে আসে

নির্ঝরিণী – আপু তুই গোসল করে রেষ্ট নে ততক্ষনে আমার রান্না টা হয়ে যাবে

মিথিলা- তোকে তাড়াহুড়ো করতে হবে না আমি কোথাও যাচ্ছি না

মিথিলা আজ অনেক সময় নিয়ে গোসল করলো
এতো দিন হসপিটালে থেকে হাপিয়ে উঠেছে
আজ কেমন জানি ফ্রেশ ফ্রেশ লাগছে তার পর খাবার খেয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো

ইহানের আজ অফিসে অনেক কাজ ছিলো মাঝখানে জ্বামেলায় অফিসের কাজে মন দিতে পারেনি, তাই আজ সব কাজ এক সাথে করতে হলো
বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত সাড়ে এগারটা বেজে যায়

বাসায় গিয়ে দেখে প্রতিদিনের মতো আজ ও
সাম্মি জেগে বসে আছে
ইহান- সাম্মি তোকে না বলেছি আমার জন্য অপেক্ষা করার কোন দরকার নেই। তবুও তুই?

সাম্মি- রোজ তোকে খাবার গরম করে দেয়ার জন্য জেগে থাকলে ও আজ অন্য কারনে জেগে আছি

ইহান- কারন টা কি?

সাম্মি- তুই ফ্রেশ হয়ে আয় তার পর বলছি

ইহান – ওকে তবে তাই হোক
ইহান ফ্রেশ হয়ে এসে খেতে বসলো খেতে খেতে বল্লো
এবার তোর জেগে থাকার কারন টা বল

সাম্মি- ইহান আমি অনেক ভেবেছি আসলে তুই আর আমি এক সাথে সংসার করে শুখি হতে পারবো না

ইহান খাবার বন্ধ করে সাম্মির দিকে তাকিয়ে বল্লো
– তুই কি বুঝাতে ছাইছিস

সাম্মি- অরনি আমায় কিছু না বললে ও আমি বুঝতে পেরেছি ওর ইচ্ছে ছিলো তোর আর মিথিলার আবার এক হওয়া। আমি ও ভেবেছি আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়া ই ভালো। তাই আমি তোর কাছে ডিভোর্স চাই?

চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন

প্রিয় পাঠক আপনারা যদি আমাদের (গল্প পোকা ডট কম ) ওয়েব সাইটের অ্যাপ্লিকেশনটি এখনো ডাউনলোড না করে থাকেন তাহলে নিচে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এখনি গল্প পোকা মোবাইল অ্যাপসটি ডাউনলোড করুন => ??????

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.golpopoka.android

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে