আমার_প্রতিশোধ পার্ট: ০৭

0
2816

আমার_প্রতিশোধ

পার্ট: ০৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

আজ আমাদের বৌভাত আমাকে পার্লার থেকে সাঝিয়ে আনা হয়েছে চারদিকে অনেক মেহমান কিন্তু আমার মন একটু একা থাকতে চাইছে তাই ছাদে চলে আসলাম, ছাদের রেলিং ধরে আকাশের দিকে থাকিয়ে আছি আর ভাবছি আজ আম্মু আব্বু বেঁচে থাকলে কি আমার জীবনটা এমন হতো, তাসিন কে বিয়ে করেই হয়তো আমি সুখে থাকতাম, আজ বৌভাতের দিনে এমন মন খারাপ থাকতো না আমিও হতাম পৃথিবীর সুখি মানুষদের মধ্যে একজন, ফোন বেজে উঠলো স্কিনে থাকিয়ে দেখি ছোট মা রিসিভ করতে ইচ্ছে হচ্ছে না, করলেই তো প্রতিশোধ নিতে বলবে তাসিন কে কষ্ট দিতে বলবে কিন্তু ছোট মা কে কিভাবে বুঝাই তাসিন কে কষ্ট দিতে এখন আমার কষ্ট হয়, জানিনা কেন এমন হয় খুব বেশিই কষ্ট হয়, ফোন বাজতে বাজতে কেটে গেলো, একটু পর আবার বেজে উঠলো রিসিভ করলাম
–হ্যা ছোট মা বলো
–ফোন রিসিভ করছিস না কেন
–অনুষ্ঠানে আছি তো
–তোর কি মন খারাপ
–হ্যা একটু
–কেন
–আব্বু আম্মুর কথা মনে পরছে
–মনে পড়াটাই ভালো মনে পড়লেই তো প্রতিশোধ নিতে পারবি
–হুম
–শোন যে কথা বলতে ফোন দিয়েছি
–বলো
–চৌধুরী পরিবারের একটি নিয়ম আছে বৌভাতে স্ত্রী যা চায় স্বামী তাই দেয় তাসিন যখন তোকে বলবে কি চাস তখন বলবি বাড়িটা তোর নামে লিখে দিতে
–মানে বলো কি তাহলে তো তাসিন আমাকে লোভী ভাববে
–শোন এতো ভালো হয়ে প্রতিশোধ নেওয়া যায় না আর এই বাড়িতে তোরও অধিকার আছে এই বাড়ি তোর বাবা আর তাসিনের বাবা দুজন মিলে তৈরী করেছিল আর এখন তাসিনের বাবা একা দখল করে আছে
–তাই বলে…
–যা বলেছি তাই করবি শুধু বাড়ি না আস্তে আস্তে তোর সবকিছু তোর নামে লিখিয়ে নিবি
–আমার সবকিছু মানে
–তোকে বলা হয়নি তোর বাবা এই বাড়ির অর্ধেক, সিলেটে একটি বাংলো, আর দুইটা কম্পানি তোর নামে লিখে দিয়ে গিয়েছিল, তোর বাবা যখন খুন হয় তুই তখন ছোট তাই তাসিনের বাবা চালাকি করে সবকিছু উনার নামে করে নিয়েছে, এখন তুই বল তোর সবকিছু কি তুই ফিরিয়ে আনবি না
–আমার এসব সম্পত্তি চাই না আমি শুধু আমার আব্বু আম্মুর খুনের প্রতিশোধ নিতে চাই
–তোর তো ভবিষ্যৎ আছে তাই এসব তোকে ফিরিয়ে আনতে হবে
–হুম
–আমি যা যা বলি তাই তাই করবি মনে রাখিস আমি তোর ছোট মা আর মা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না
–ঠিক আছে
–এখন ফোন রেখে অনুষ্ঠানে যা সবার সাথে ভালো ব্যবহার কর
–আচ্ছা রাখি

ফোন রেখে ফিছন ফিরতেই দেখি তাসিন দাঁড়ানো খুব ভয় পেয়ে গেলাম ও কি সব শুনে ফেললো
–তাসিননন তততুমমি
–হ্যা তোতলাচ্ছো কেন আমি কি ভূত
–না মানে কখন এলে
–এইতো এই মাত্র তোমাকে নিচে খুঁজে না পেয়ে ছাদে আসলাম
–ওহ
–চলো আমার ফ্রেন্ডসরা এসেছে তোমাকে দেখবে
–হুম
–আর হ্যা প্লিজ অন্নি এমন কিছু করো না যেন আমি ওদের কাছে ছোট হয়ে যাই
–ঠিক আছে

তাসিন ওর সব ফ্রেন্ডদের সাথে একে একে পরিচয় করিয়ে দিল, তিনটা মেয়ে ফ্রেন্ড আর চারটা ছেলে ফ্রেন্ড, সবার সাথে কথা বলছি হঠাৎ কোথা থেকে একটি ছেলে দৌড়ে এসে তাসিন কে জরিয়ে ধরলো সাথে বাকি সবাই ওদের দুজন কে জরিয়ে ধরলো আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে দেখছি, তাসিন ছেলেটি কে সাথে নিয়ে আমার কাছে আসলো
–অন্নি ও আমার জানের দোস্ত সিয়াম (বুঝলাম জানের দোস্ত তাই এভাবে জরিয়ে ধরেছিল কিন্তু এই ছেলে আমার দিকে এভাবে হা করে থাকিয়ে আছে কেন আশেপাশে মশা মাছি থাকলে তো ওর মুখ দিয়ে ঢুকে অনায়াসে পেটে চলে যেতে পারতো হিহিহি)

যেদিকে যাচ্ছি সে দিকেই তাসিন এর ফ্রেন্ড সিয়াম যাচ্ছে জীবনে কোনো মেয়ে মানুষ দেখেনি নাকি আল্লাহ্‌ জানেন তাও আবার বন্ধুর বউ কে এভাবে দেখছে তাসিন দেখলে তো মেরেই ফেলবে

তাসিন কোথায় যেন গেছে আমি একা একা বাগানের দিকটায় গেলাম হঠাৎ সিয়াম এসে সামনে দাঁড়াল
–হাই ভাবি
–হাই
–আপনাকে একটি কথা না বলে শান্তি পাচ্ছি না
–কি কথা
–আপনি দেখতে খুব সুন্দর একদম পরীর মতো (হায় আল্লাহ্‌ এই ছেলের মতলব কি এসব কি বলছে)
–ভাবি চুপ হয়ে আছেন যে
–এমনি
–আপনার নাম্বারটা পেতে পারি না মানে মাঝে মাঝে একটু কথা বলবো আর কি
কিছু বলতে যাবো তখনি দেখি তাসিন এদিকে আসছে
–অন্নি আমার একটা জিনিস খুঁজে পাচ্ছি না রুমে চলো তো (এই কথা যে ও এমনি বলেছে বুঝতে পারছি তারমানে কি সিয়ামের সাথে কথা বলাতে তাসিন রাগ করেছে)

রুমে আসতেই তাসিন আমাকে ধাক্কা মেরে ভিতরে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো ওর চোখ দুইটা লাল হয়ে আছে
–এই সিয়ামের সাথে এতো কথা কিসের
–তোমার ফ্রেন্ডই তো
–তো কি হইছে অন্য ছেলের সাথে তুমি আলাদা কথা বলবা কেন
–বেশি করে বলবো
–(ঠাস) এই তাপ্পর এর কথা মনে রেখে কথা বইলো, তোমাকে ভালোবাসি তোমার দেওয়া সব কষ্ট সহ্য করতে রাজি আছি কিন্তু কোনো ছেলের সাথে কথা বললে খুন করে ফেলবো বলেই হনহন করে চলে গেলো

তাসিন চৌধুরী আমার গালে তাপ্পর দিয়েছ এর প্রতিশোধ তো আমি নিবোই, এই সিয়ামের সাথে কথা বলেই আমি প্রতিশোধ নিবো তখন বুঝবা অরনী কে তাপ্পর দেওয়ার ফল কি ভয়ানক

সন্ধ্যা নেমে এসেছে অনুষ্ঠান প্রায় শেষ মেহমানরা চলে যাচ্ছে আমি সুযোগ বুঝে পরী কে নিয়ে বাগানের দিকে গেলাম, বাগানের পাশেই লোকটি দাঁড়িয়ে আছে ওকে ইশারা দিয়ে পরীকে বললাম একটু দাঁড়াতে আমি আসছি, মেয়েটা কে রেখে আমি সরে গেলাম আর লোকটি এসে পরীর হাতে চকলেট দিয়ে কোলে করে নিয়ে গেলো…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে