অবুঝ_বউ পার্ট: ১৫

0
3711

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১৫

লেখিকা: সুলতানা তমা

পিচ্ছিটা সত্যি সত্যি আমার সাথে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লো, ফোনের দুপ্রান্তে দুজন আছি ও ঘুমাচ্ছে আর আমি নিশ্চুপ হয়ে ওর নিঃশ্বাস শুনছি….

একটা সপ্তাহ কেটে গেলো কাজের চাপে কোনদিকে সময় চলে গেছে বুঝতে পারিনি কিন্তু আমার কাজের এক ভাগও শেষ করতে পারিনি, এই এক সপ্তাহ সোহাগীর সাথে মাত্র দুবার কথা হয়েছে পাগলীটা বোধহয় অনেক রাগ করেছে, তাড়াতাড়ি মোবাইলটা হাতে নিয়ে ওকে ফোন দিলাম, সেই কখন থেকে রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না কি জানি কোনো সমস্যা হলো কিনা
–হ্যালো
–কি হলো এতোক্ষণ ধরে ফোন রিসিভ করছ না কেন
–শুনি নি আমি বারান্দায় ছিলাম
–মানে কি রাত প্রায় বারোটা বাজে আর তুমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছ ভয় করে না
–না এখন আর ভয় করে না
–আমার পিচ্ছি বউ বড় হয়ে গিয়েছে নাকি
–হয়তো
–রাগ করেছ
–কি কারনে রাগ করবো
–এক সপ্তাহ হয়ে গেলো তোমার সাথে তেমন কথা বলতে পারিনি প্লিজ রাগ করোনা আমি তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করছি তোমার কাছে যেন খুব শীঘ্রই ফিরে আসতে পারি
–রাগ করবো কেন তুমি কাজে ব্যস্ত আমি তো জানি রাগ করিনি
–তাহলে মিষ্টি করে একটা হাসি দাও
–হঠাৎ করে হাসা যায় নাকি
–ঠিক আছে এতো রাতে হাসতে হবে না হাসলে পেত্নীর মতো লাগবে হাহাহাহা
–হুম
–যাও ঘুমিয়ে পড়
–ওকে
ফোন রেখে মন শান্ত করতে পারছি না কেন যেন মনে হচ্ছে সোহাগী কোনো কিছু নিয়ে টেনশনে আছে, কিন্তু কি নিয়ে টেনশনে থাকবে ওর পাশে তো সবসময় আমি থাকছি আর আমার অবর্তমানে আমার পরিবার সাজিদ সবাই ওর খেয়াল রাখছে, আমি নেই তারমাঝে আবার ফোনে তেমন কথা হয়নি তাই হয়তো মন খারাপ এইটা ভেবেই নিজেকে শান্তনা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম

সকালে মুমুর ফোনে ঘুম ভাঙ্গলো
–হ্যালো
–ভাইয়া কেমন আছিস
–আর ভালো কাজের চাপে আমি তো একদম পিষে যাচ্ছি
–আর কতো দিন লাগবে
–জানিনা এখনো এক ভাগও শেষ হয়নি ওই বেটা ম্যানেজার কে দুলাই দিতে মন চাইতেছে
–ভাইয়া যতো তাড়াতাড়ি পারিস কাজ শেষ করে চলে আয়
–কেন রে কিছু কি হয়েছে
–না না কি হবে এমনি তোকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব
–তাহলে ভিডিও কল দে
–না সামনাসামনি দেখার অনুভূতিটাই অন্যরকম
–ঠিক আছে আর মাত্র একটা মাস দিন রাত কাজ করে সব গুছিয়ে বাংলাদেশে চলে আসবো
–ঠিক আছে
–সজিব কেমন আছে রে
–ভালো
–ঠিক আছে এখন রাখি
–ওকে
ফোন রেখে চুপ করে বসে আছি মাথায় কিছু ঢুকছে না সোহাগীর কথায় মনে হলো ও টেনশনে আছে আবার মুমুর কথায় কেমন যেন রহস্য আছে মনে হলো, তাহলে কি বাসায় কিছু হয়েছে….?

সারাদিন কাজে ব্যস্ত থাকি তাই সোহাগীকে ফোন দিতে পারিনা কিন্তু ও তো একবার দিতে পারে, সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে গভীর রাতে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফিরি তারপরও বাসায় এসেই ওকে ফোন দেই আর ও একদিন রিসিভ করলে তিনদিন রিসিভই করে না

আর মাত্র এক সপ্তাহ এর ভিতরে কাজ শেষ হয়ে যাবে আর কাজ শেষ হলেই সোহাগীর কাছে ফিরে যাবো, আচ্ছা আমি যে সোহাগীকে দেখার জন্য এমন চটপট করছি ও কি এমন করছে….?
মনে তো হয় আমাকে ভুলেই গেছে কারন সেদিন ও ফোনে বলেছিল “যতোদিন লাগে কাজ পুরোপুরি শেষ করে এসো সমস্যা নেই”
যদি সোহাগী আমাকে মিসস করতো তাহলে তো এই কথা না বলে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ওর কাছে ফিরে যেতে বলতো, ফোনটা বেজে উঠলো আম্মু ফোন দিয়েছেন, রিসিভ করলাম
–আম্মু কেমন আছ
–ভালো তুই
–আছি ভালো এক সপ্তাহ পর আরো বেশি ভালো থাকবো
–নাহিল তুই তাড়াতাড়ি চলে আয় থাকুক কাজ টাকা লস হলে হউক
–আম্মু কি হয়েছে
–না না কিছু না তোকে না দেখে কখনো এতোদিন থাকিনি তো তাই
–আম্মু তুমি আর মুমু না বাচ্চাদের মতো কথা বলো, এখন প্রিয় মানুষ দূরে থাকলে তাকে দেখার জন্য কতো পদ্ধতি আছে ভিডিও কল দিলেই তো হয়
–তোকে বলেছি চলে আসতে চলে আসবি আর খুব শীঘ্রই
–ঠিক আছে আম্মু
ফোন রেখে দফ করে সোফায় বসে পড়লাম, কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছি না মনে তো হচ্ছে সবাই আমার থেকে কিছু লুকাচ্ছে, আবার ফোন বেজে উঠলো মুমু ফোন দিয়েছে
–হ্যালো
–ভাইয়া
–কিরে তোর কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন কাঁদতেছিস কেন
–কিছুনা তুই দেশে আসবি কবে
–এইতো আর এক সপ্তাহ লাগবে
–এক সপ্তাহ বুঝি না এই এক সপ্তাহে যা ক্ষতি হবার হউক তুই সকালের ফ্লাইটেই দেশে আসবি
–কি বলছিস এসব
–যা বলেছি তাই করবি
–ঠিক আছে কিন্তু হয়েছেটা কি বলবি তো
–কিছু হয়নি বলছি আসতে চলে আসবি আর সকালের ফ্লাইটেই
–ওকে
মুমুর ফোন রেখে ভাবছি সাজিদ কে ফোন দিব কিনা, কি হয়েছে ও নিশ্চয় আমাকে বলবে তাই ফোন দিলাম
–হ্যালো
–সাজিদ সত্যি করে বলতো কি হয়েছে
–আরে আজব তো ফোন দিয়ে হুট করে বলছিস কি হয়েছে কোন ব্যাপারে বলবি তো আগে
–আমি জানি তুই সব জানিস
–আচ্ছা কোন বিষয় সেটা তো বলবি
–আম্মু আর মুমু বার বার ফোন করে দেশে যেতে বলছে তাও আবার কাজ রেখেই আগামীকাল সকালের ফ্লাইটেই যেতে বলছে তারমানে বাসায় কিছু হয়েছে
–আমি সবসময় তোদের বাসায় যাওয়া আসা করছি কিছু হলে তো আমি ঠিকি জানতাম
–সত্যি জানিস না
–আরে আন্টি হয়তো তোকে না দেখে থাকতে কষ্ট পাচ্ছেন এসব না ভেবে আন্টির কথা মতো চলে আয়
–সাজিদ আমার সোহাগী ঠিক আছে তো
–এইটা কেমন কথা নাহিল তুই তো প্রতিদিন ভাবির সাথে কথা বলছিস
–নারে এখানে আসার পর ওর সাথে তেমন কথা হয়নি
–হবে হবে সকালের ফ্লাইটে চলে আয়
–ওকে

একটু পর ফ্লাইট তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এয়ারপোর্ট চলে আসলাম হঠাৎ মনে পরলো সোহাগীকে তো জানাই নি আজ যে যাবো তাই ওকে ফোন দিলাম কিন্তু রিসিভ করছে না, অনেক্ষণ রিং বাজার পর রিসিভ করলো
–হ্যালো
–কি করো এতোক্ষণ লাগে ফোন রিসিভ করতে
–আমি একটু বাইরে এসেছি ফোনের আওয়াজ শুনিনি
–তুমি বাইরে গিয়েছ একা নাকি
–হ্যাঁ তাতে সমস্যা কি
–তোমার বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন কি কিছু লাগলে আম্মু বা সাজিদ কে বলতে
–আমার নিজের কোনো স্বাধীনতা নেই নাকি
–নাহ আছে যা খুশি করো কিন্তু আজ কি জানো
–আজ আবার কি রাখ তো ভালো লাগছে না
–হুম
ফোনটা কেটে দিলাম দিলো আমার মাথাটা নষ্ট করে, উনার স্বাধীনতা প্রয়োজন হেহ

এয়ারপোর্ট বসে আছি মাথা থেকে সব রাগ জেরে ফেললাম সোহাগীকে আজ দেখবো এই খুশিতে হঠাৎ মনে হলো আমি যে আজ দেশে যাচ্ছি সোহাগী তো জানেনা ওকে সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে, আম্মুকে তাড়াতাড়ি ফোন দিলাম
–কিরে কখন আসবি
–এইতো একটু পর ফ্লাইট, আম্মু
–কি কিছু বলবি
–আমি যে আজ যাবো সোহাগী কি জানে
–না
–ঠিক আছে ওকে বলোনা সারপ্রাইজ দিবো ওকে
–হুম ঠিক আছে
–আচ্ছা আম্মু রাখি

আর মাত্র এক ঘন্টা বাসায় পৌঁছে যাবো সোহাগীকে সামনাসামনি দেখবো ভাবতেই মনটা নেচে উঠলো, আবার সোহাগীর সেই খিলখিল করে হাসি শুনবো, আবার রোজ রাতে পাগলীটা ভয় পেয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে আমার বুকে ঘুমাবে, চোখ দুটু বন্ধ করে ফেললাম পিচ্ছিটার সেই হাসি কথা বলা সবকিছু অনুভব করছি…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে