অবুঝ_বউ পার্ট: ১০

0
4009

অবুঝ_বউ

পার্ট: ১০

লেখিকা: সুলতানা তমা

সোহাগীকে বিছানায় শুয়ে দিয়েই ওর মিষ্টি দুইটা ঠোটে আমার ঠোট ডুবিয়ে দিলাম….

সকালে দরজায় টোকার শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো
–ভাইয়া উঠ ভাবির স্কুলের সময় হয়ে যাচ্ছে
–উঠতেছি
ঘুম ঘুম চোখে সোহাগীর দিকে তাকালাম চুপ করে আমার বুকে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে আছে এমনি ও বাচ্চা এখন আরো বাচ্চা বাচ্চা লাগছে হাহাহাহা পিচ্ছি বউ আমার
–সোহাগী উঠ
–উহু পরে
–স্কুলে যেতে হবে তো
–যাবো না
–ঠিক আছে না গেলে রাতে যা করেছিলাম এখনো তাই করবো (সোহাগী লাফ দিয়ে উঠে বিছানায় বসলো তারপর আমার দিকে কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো ওর চোখে স্পষ্ট ভয়ের চিহৃ, শুধু একটু বেশি সময় নিয়ে ঠোট চুষাতেই ওর এমন অবস্থা এর চেয়ে বেশি কিছু করতে গেলে তো পিচ্ছি ভয়েই আমার কাছে আসবে না)
–আমি স্কুলে যাবো
–তুমি এতো ভয় পাচ্ছ কেন
–(নিশ্চুপ)
–আরে শুধু ঠোট চু….
–আমার দম বন্ধ হয়ে আসে
–তুমি আসলেই পিচ্ছি
–(চুপ করে আমার দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছে)
–আচ্ছা আর এমন করবো না কিন্তু আমার কথা না শুনলে করবো এর চেয়ে বেশি কিছু
–সব কথা শুনবো
–ঠিক আছে এখন ফ্রেশ হয়ে নাও
–হুম
সোহাগী বিছানা থেকে নামতেই ওর হাত ধরে টান দিয়ে আমার বুকের সাথে জরিয়ে ধরলাম তারপর ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম
–রোমান্স কি এবার শিখেছ তো আরো অনেক আছে আস্তে আস্তে সব শিখাবো
–এইটা রোমান্স
–তো কি
–কচু
সোহাগী আমার বুকে কয়েকটা কিল দিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো

নাশতা করতে যাবো এমন সময় মুমু এসে আমার হাত ধরে টানতে টানতে ওর রুমে নিয়ে গেলো
–কিরে কি হয়েছে
–ভাইয়া তুই আব্বু আম্মুকে মিথ্যে বললি কেন
–কি মিথ্যে
–সজিবকে তুই পছন্দ করেছিস এইটা
–ওহ আব্বু যদি রেগে যান
–রেগে গেলে যাবেন কিন্তু আমি কোনো মিথ্যা দিয়ে সম্পর্ক তৈরী করতে চাই না, মিথ্যা দিয়ে তৈরী ভালোবাসার সম্পর্ক বেশি দিন স্থায়ী হয় না
–ঠিক আছে আমি এখনি আব্বুকে সত্যিটা বলে দিব
–ভাইয়া আমি সজিব কে সত্যি ভালোবাসি
–তো কান্না করার কি আছে আমি তো ওদের সাথে কথা বলে সব ঠিক করে ফেলেছি সোহাগীর পরিক্ষার পর বিয়ে
–থ্যাংকস ভাইয়া
–আরে পাগলী কান্না করছিস কেন চল নাশতা করে সোহাগীকে স্কুলে নিয়ে যেতে হবে
–হুম চল

নাশতা করতে করতে আব্বুকে বললাম
আমি: আব্বু রাগ করোনা একটা কথা বলি
আব্বু: বল
আমি: আসলে সজিবকে আমি পছন্দ করিনি মুমু সজিবকে ভালোবাসে
আব্বু: (মুমুর দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছেন)
আমি: আমি সজিবকে দেখেছি আমার পছন্দ হয়েছে আর ওদের পরিবারের সবাই খুব ভালো
আব্বু: আমি ওকে আগেই বলেছিলাম পড়াশুনা শেষ না করা অব্দি যেন এসব….
আম্মু: আহ বাদ দাও তো নাহিল যদি পছন্দ করতো তাহলে কি বিয়ে দিতে না তাছাড়া আমাদের মেয়ে যেখানে সুখি হবে আমরা তো সেখানেই দিব তাই না
আব্বু: ঠিক আছে বিয়ের তারিখ ঠিক করে পেলো
সোহাগী: আমার তো সামনে পরিক্ষা আমি আপুর বিয়েতে মজা করতে পারবো না
আব্বু: দেখ পিচ্ছি মেয়ের কান্না
আম্মু: তোমার পরিক্ষার পরই বিয়ে হবে
সোহাগী: তাহলে ঠিক আছে (একটু আগেই কান্না করে দিছিল এখন আবার হাসছে কি মেয়েরে বাবা)

ড্রাইভ করছি আর সোহাগীর বকবক শুনছি প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় ওর বকবক না শুনলে যেন এখন ভালো লাগে না, পাগলীটা পারেও বকবক করতে এইটা ওইটা নিয়ে কতো কি বলে আর আমি মুগ্ধ হয়ে শুনি
–নাহিল স্টপ স্টপ
হঠাৎ কারো মুখে স্টপ স্টপ শুনে তাড়াতাড়ি গাড়ি থামানোতে গাড়ি জুরে ঝাঁকুনি খেলো, আমার মাথা গিয়ে গাড়ির গ্লাসে লেগেছে সোহাগীর দিকে তাকিয়ে দেখি কপাল ফেটে রক্ত ঝরছে মেয়েটা ভয় পেয়ে আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল, সামনে তাকিয়ে দেখি মৌরি হাসছে তারমানে ও গাড়ি থামাতে বলেছিল, সোহাগীকে বসিয়ে রেখে গাড়ি থেকে নেমে মৌরির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম
–তুমি গাড়ি থামাতে বলেছিলে
–হ্যাঁ
–এভাবে হঠাৎ করে কেউ বলে
–ভালোই তো হয়েছে তোমার পিচ্ছি বউয়ের কপাল থেকে রক্ত ঝরেছে হাহাহাহা
–(ঠাস ঠাস করে একদমে কয়েকটা থাপ্পড় দিলাম)
–নাহিল
–একদম চুপ তোকে আজ খুন করতাম তোর ভাগ্য ভালো সোহাগীকে নিয়ে হসপিটালে যেতে হবে নাহলে….
–এর জবাব তুমি পাবে
–যা খুশি করিস

তাড়াতাড়ি সোহাগীকে হসপিটালে নিয়ে আসলাম, বাইরে বসে আছি ডক্টর সোহাগীর মাথায় ব্যান্ডেজ করছে খুব ভয় করছে পাগলীটার খারাপ কিছু যদি হয়ে যায়
–কপালটা একটু কেটে গেছে সিরিয়াস কিছু না এখনি বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন
–থ্যাংকস ডক্টর
–আপনার কপাল থেকেও তো রক্ত ঝরছে চলুন আমার সাথে
ডক্টর আমার মাথায়ও ব্যান্ডেজ করে দিল, সোহাগীকে নিয়ে কোনো ভাবে বাসায় আসলাম
আম্মু: কিরে তোদের এই অবস্থা কেন
আমি: তেমন কিছু না আম্মু
আম্মু: দুজনের কপালেই ব্যান্ডেজ আর তুই বলছিস কিছুনা
আমি: আমার কিছু হয়নি সোহাগীকে কিছু খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দাও
আম্মু: আমার বৌমার কি হয়েছে
আমি: আম্মু কান্না করোনা তো আগে ওকে ওষুধ খাওয়াও

বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম আমার কপাল একটু কেটেছে তাতেই খুব যন্ত্রণা হচ্ছে সোহাগীর তো বেশি কেটেছে ওর তো অনেক বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে, এই মৌরিকে বুঝাবো সোহাগীর কপাল থেকে রক্ত ঝরানোর মজা

আম্মু সোহাগীকে ওষুধ খাইয়ে রুমে দিয়ে গেলেন, ও এসেই আমার পাশে শুয়ে পড়লো, আমি ওর গালে আলতো করে ধরে বললাম
–কষ্ট হচ্ছে
–হুম
–(কিছু না বলে ওকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম খুব কান্না পাচ্ছে আমার জন্য সোহাগী কষ্ট পাচ্ছে)
–তোমার ওই বন্ধুটা পঁচা ওর সাথে আর কথা বলোনা
–আচ্ছা তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করো
সোহাগীকে বুকে জরিয়ে ধরে চুলে হাত বুলিয়ে দিতেই ও ঘুমিয়ে পড়লো সাথে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম

আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো দরজা খুলে দেখি আপু আর দুলাভাই বুঝলাম না ওদের কে খবর দিল
আপু: সোহাগীর এখন কি অবস্থা
আমি: ভালো ঘুমাচ্ছে কিন্তু আপনি জানলেন কিভাবে
দুলাভাই: তখন থেকে শুধু বলছে সোহাগীর জন্য নাকি ওর কেমন লাগছে তোমাকে অনেক বার ফোন দিয়েছি রিসিভ করনি তাই তোমার আম্মুকে ফোন দেই উনি বলেছেন
আমি: ওহ আমি ঘুমে ছিলাম আপু ভিতরে আসেন
আপু সোহাগীর মাথার পাশে গিয়ে বসলেন চোখে পানি চিকচিক করছে নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে
দুলাভাই: ইসসসস আমার শালীকার কপালটা ফেটে গেছে (সোহাগীর ব্যান্ডেজে হাত বুলিয়ে দিয়ে কথাটা বলেই হাত নিচের দিকে নামাতে শুরু করলো বুকের কাছে নিতেই হাতটা ধরে ফেললাম)
আমি: আপনার শালীকা এখন আর একা নেই ওর হাজবেন্ড আছে তাই ওর কপাল কেটে গেলে বা বুকে ব্যাথা হলে সেটা ওর হাজবেন্ডই হাত বুলিয়ে দেখবে আপনার কষ্ট করতে হবে না
আমার দিকে কিছুক্ষণ রাগি চোখে তাকিয়ে হনহন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো, আপু বেড়িয়ে যাওয়ার সময় একটা হাসি দিয়ে বললো
–তুমিই পারবে আমার বোনটাকে আগলে রাখতে

রাতে বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেট টানছি আর ভাবছি মৌরিকে কিভাবে শাস্তি দেওয়া যায় তখনি সোহাগী ডাক দিল, রুমে এসে দেখি পাগলী এই অবস্থায় বই নিয়ে বসেছে
–এই অবস্থায় পড়তে বসেছ
–ভালো ভাবে না পড়লে স্বপ্ন সত্যি করবো কিভাবে আর আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ
আর কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে ওর পাশে বসলাম তারপর ওকে আমার কোলে শুয়ে দিলাম ও আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিল, হাহাহাহা এমন টিচার আর স্টুডেন্ট কি আদৌ আছে

সোহাগী আমার কোলে শুয়ে পড়ছে মাঝে মাঝে আমার চোখে ওর চোখ পড়তেই চোখ টিপ দিচ্ছি হিহিহি, আমি বুঝিয়ে দেই একটা সোহাগী বলে আরেকটা ধমক দিলেই আমার গাল ধরে টেনে মিষ্টি হাসি দেয় আর আমি এই সুযোগে ওর কপালে আমার ঠোটের উষ্ণতা ছুঁয়ে দেই…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে