হঠাৎ_পাওয়া_পর্ব_৩

0
3009

হঠাৎ_পাওয়া
পর্ব_৩
Written by Avantika Anh
বাড়ি ফিরার আগ অব্দি অর্নব আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিলো কিন্তু অভি ভাইয়া আর বাকীরা পাশে ছিলো বলে পারে নি ।
.
.
গাড়িতে সবাই আসার সময়ের মতো বসলাম ।
রাজ- ওই তোর কি কিছু হইছে ?
আমি- না তো
রাজ- সত্যি বল
অভি- আরে কিছু হয় নি (কথা ঘুড়াতে)
রাজ- বাহ আমাগো থেইকা বেশি ওরে চিন্তাছোস দেখতাছি ।
আমি- ভাইয়া আমার একটা নিউ বান্ধবী হইছে নাম নিলা নাম সুন্দর না নামটা (রাজ ভাইয়ার গফ নিলা)
রাজ- না না আমার বইন তো খুব ভালো ও কখনোই এসব করবে না
আমি- হুমম থেংকু ভাইয়া
.
.
কিছু সময় পর……
আমি- ভাইয়া বিয়া কর না বিয়া খাইতে মন চাইতাছে ।
রাজ- এই না আপুর বিয়া খাইলি আবার কেমনে
আমি- এবার তোর টা খামু চাকরিও তো করস বিয়াটাও কর
রাজ- না এখনি করুম না তুই কর
আমি- হুহ না
রাজ- হেহে মামা রে কমু তোর বিয়া করার ইচ্ছা হইছে
আমি- মাইরালামু
রাজ- কাইট্টালামু
অভি- তোমরা এতো ঝগড়া করো কেনো ?
রাজ- এই মোটিই ঝগড়াটে
আমি- আমি মোটি তুই‌ মোটা হাতি
রাজ- এ্যা হইছে অভি তুই বল তো আনহা মোটা কি না ?
অভি- ইয়ে আনহা তো পাতলা
আমি- থেংকু অভি ভাইয়া লাভ ইউ ফর দিস
অভি- কিইইইইই
আমি- কি বেশি না আমি সবাই কেই বলি
রাজ- হেহে অভির মনে মনে লাড্ডু ফুটছিলো মনে হয়
আমি- কি কস সত্যি অভি ভাইয়া ?
অভি- না না
.
.
এভাবে আড্ডা চলতে থাকলো ।
.
বাড়ি ফিরে নিজের উপরই রাগ উঠছিলো “আমি এক সময় এমন একজনকে ভালোবেসেছি যে এরকম মানসিকতার” । এই সব ভাবছিলাম
.
সকালে কলেজের জন্য বের হচ্ছিলাম । বাইরে দেখি অর্নব দাড়ায় রাগ উঠে গেলো । তাই আবার বাড়ির ভিতরে ঢুকলাম । তারপর পিছনের গেট দিয়ে বের হয়ে গেলাম ।
.
আমি ভাবছি, ” এর কি ভিমরতি ধরলো? “
.
“এখন উল্টা রাস্তা দিয়া যাওয়া লাগবো । এতো ঘুরা রাস্তা।”
.
.
আমি যাচ্ছি । রাস্তা টা একটু ফাঁকা । দেখি সামনে অনেক গুলো কুকুর । আমি ভয়ে শেষ ।
.
দাড়ায় আছি কুকুর গুলো যাওয়ার অপেক্ষা করছি । হঠাৎ কে জানি পিছন থেকে ডাক দিলো । পিছনে তাকিয়ে দেখি অভি ভাইয়া ।
.
অভি- তুমি এখানে যে ?
আমি- কলেজ যাচ্ছি
অভি- কোন কলেজ
আমি- …………… কলেজ
অভি- এই রাস্তা দিয়ে তো বেশি দূর অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে ।
আমি- ওই রাস্তায় অর্নব ছিলো । ওই হালার কি যে হইছে খালি এখন আমার পিছনে লাগছে । এই ওই পোলার জন্য আমাকে এতো ঘুরে ঘুরে যেতে হচ্ছে । তার উপর এই বান্দর মার্কা কুকুর গুলো সরে না ।
অভি- হাহা এটা তো খুব প্যারা মূলক ব্যাপার ।
আমি- আপনি কই যাচ্ছেন?
অভি- অফিস
আমি- ও জ্বলদি পালান । আমি অপেক্ষা করি এই বান্দর গুলো থুক্কু কুকুর গুলো যাওয়ার ।
অভি- আমি হেল্প করতে পারি ?
আমি- আপনার দেরি হবে থাক‌
অভি- না অফিস শুরু হতে দেরি আছে । আমি রোজ ৩০ মিনিট আগে যাই ।
আমি- উকে চলেন
.
অভি ভাইয়া হেল্প করলো । কলেজে….
মিমি রে গেটেই পাইলাম ।
.
মিমি- ছেলেটা কে রে ? হ্যান্ডসাম তো
আমি- রাজ ভাইয়ার ফ্রেন্ড
মিমি- দোস্ত তোর সাথে সেই মানাবে ।
আমি- যা ভাগ তুই ই নে
মিমি- আমার বফ টা না থাকলে আমিই নিতাম । তোর তো নাই তুই নে ।
আমি- প্রেম ভালোবাসা ভালো না
মিমি- হুহ ওই অর্নব হালাটা কই থেইকা যে আইছিলো । ওর জন্য আমার রোমান্টিক দোস্ত টা আনরোমান্টিক হয়ে গেছে ।
আমি- কে কইছে আমি আনরোমান্টিক ? আমি অনেক রোমান্টিক বাট সব শুধু আমার বরের জন্য
মিমি- বাহ বাহ কিয়া বাত
আমি- দোস্ত
মিমি- কি
আমি- অর্নব আবার পিছে পড়ছে । জান্নাত হেরে ছেকা দিছে এই জন্য বিয়ে বাড়িতে…………(সব বললাম)
মিমি- কই ওই পোলা ওরে তো মাইরা ফালাম
আমি- হ মার
মিমি- ওই হারামি আমি জেলে যামু তো
আমি- মোর লাইগা এইটুকু পারবি না?
মিমি- কালামেইল
আমি- হ চল ক্লাসে দেরি হচ্ছে ।
মিমি- চল
.
ক্লাসে…..
রুম ফাঁকা
আমি- আজ কি ছুটি ছিলো ?
মিমি- মনে তো পড়ছে না । মনে হয় ছিলো নইলে এতো ফাঁকা কেনো ?
আমি- চল বাড়ি যাই
মিমি- চল
.
হঠাৎ উপর থেকে ফুল পড়তে শুরু হলো ।
আমি- দোস্ত পালা
মিমি- কেন মজাই তো লাগছে
আমি- তুই থাক আমি পালাই ।
.
দরজার দিকে যেতেই সিনিয়র একটা ভাইয়া ।
.
আমি- ভাইয়া সাইড দেন আমি যাই ।
ভাইয়া- দাড়াও আনহা
আমি- কেনো আমাদের আজ মনে হয় ছুটি নাহয় কেউ একজন তার ক্রাশ কে প্রপোজ করবো ।দেখেন না এসব
ভাইয়া- এসব তোমার জন্য
আমি- এ্যা
ভাইয়া- আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি । সেই কলেজের প্রথম থেকে
আমি- সরি ভাইয়া
ভাইয়া- কি কমতি আমার মাঝে ?
আমি- আমি প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাস করি না ।
ভাইয়া- আমি বিয়ে করবো শুধু রাজি হও
আমি- না সম্ভব না সরি ।
.
বলে সেদিনের জন্য চলে গেলাম বাড়ি ।
.
পরেরদিন…..
অর্নব আজ আর দাড়িয়ে নেই । তাই ঠিক মতো কলেজে গেলাম । ওই ভাইয়াটাও আর বিরক্ত করে নি ।
.
দিন পার হতে লাগলো । আমার এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হলো । তারপর শুরু হলো এডমিশনের কষ্ট । এই কয়েকদিন অর্নব অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু আমি এড়িয়ে গেছি ।
.
ভার্সিটি তে এক্সাম হলো । একটা ভালো ভার্সিটিতেই চান্স হলো ।
.
কিছুদিন পর শুরু হলো আরেক প্যারা । আম্মু , আব্বুসহ পরিবারের সবার ই বিয়ের ভুত ধরলো । তারা বিয়ে করবে না তাদের ভুত ধরছে আমার বিয়া দেওয়ার ।
.
আজ নাকি পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে । আজ একটা এটা পছন্দ না হলে কাল আরেকটা আসবে নাকি । আজব ব্যাপার
.
পাত্র টা আর কেউ না অভি ভাইয়া ।
আমাদের একান্তে পাঠানো হলো ।
আমি- আপনি ??????
অভি- ইয়ে মানে
আমি- আমি শকড
অভি- তোমাকে বলছিলাম তোমাকে ভালো লাগে । তারপর তোমার সাথে এই ক’দিন অনেক কথাই হলো । তাই মনে হলো তুমিই পার্ফেক্ট
আমি- কিন্তু আমি কখনো এভাবে তো ভাবি নি ।
অভি- একজন নাহয় একজনকে তো বিয়ে করবাই তা আমি হলে দোষ কি ?
আমি- তা ঠিক
অভি- তোমার টাইম লাগলে ভাবতে পারো । চিন্তা করো না অনেক ভালোবাসবো ।
.
.
আমি কিছু বললাম না । আম্মু আব্বুর নাকি পাত্র খুব ভালো লেগেছে । রাজ ভাইয়ার ফ্রেন্ড তাই তারা বেশি রাজি । আমিও না করলাম না তাই । বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো ।
.
পরে শুনলাম পরেরদিন যেই পাত্র টি আসার কথা ছিলো সে নাকি অর্নব । রাতে অর্নবের মেসেজ পেলাম ।
অর্নব- তুমি কেনো এমন করলে?
আমি- কোনো জবাব দিলাম না ।
.
রাতে অভি ফোন দিলো…
আমি- হুম অভি ভাইয়া বলেন
অভি- এখন তো ভাইয়া বলা ছেড়ে দাও বিয়েও তো ফিক্স
আমি- হোক আগে তারপর
অভি- বান্দর একটা তুমি
আমি- হিহি আপনি তাইলে বান্দরের হবু বর
অভি- হুম তো
আমি- আমি ঘুমাম কাল ভার্সিটি আছে ।
অভি- কাল আমার সাথে যেও কয়টায় যাবা
আমি- ৮:৩০ এ বের হবো
অভি- ওকে
.
.
সকালে…..
অভি গাড়ি নিয়ে এসেছে ।
.
.
অভি- উঠো
আমি- না
অভি- কেনো
আমি- হেটে যাবো । হাটা স্বাস্থের জন্য ভালো ।
অভি- চলো আমিও হাটি ।
আমি- ওকে ।
.
.
আমি আর অভি হাটছিলাম ।
.
দুজনেই চুপচাপ । কিন্তু এই নিস্তব্ধতা ভাঙলো । কারণ সামনে অর্নব দাড়িয়ে ছিলো ।
.
চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে