শেষ_পর্যন্ত পার্ট: ৮

0
2617

শেষ_পর্যন্ত

পার্ট: ৮

লেখিকা: সুলতানা তমা

আলিফাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরে বাইরে তাকিয়ে আছি, ও রাতের আকাশ দেখছে আর আমি ভাবছি এই পাগলীটাকে আর কখনো কষ্ট দিবো না অনেক ভালবাসবো ওকে অনেক….

–রিফাত ছাড়ো আমাকে
–কেন আমার কাছে থাকতে ভালো লাগছে না তোমার
–তোমাকে কিভাবে বুঝাই আমি রাতুলকে ভালোবাসি আমি ওকে ভুলতে পারবো না, তুমি তো আমার কোনো কথাই শুনছ না উল্টো জিদ করছ
–সত্যি রাতুলকে ভুলতে পারছ না আমার ভালোবাসা কি তোমার কাছে কিছুই না
–আমি তো সেটা বলছি না, কেন তুমি এমন পাগলামি করছ আমি রাতুলকে ভালোবাসি ও দেশে ফিরে আসলে আমি ওর কাছে ফিরে যাবো তখন তো তুমি কষ্ট পাবে (ওকে ছেড়ে দিয়ে দূরে এসে দাঁড়ালাম)
–রিফাত বুঝার চেষ্টা করো কাউকে ভালোবাসলে তাকে ভুলা যায় না তুমি কি নিলাকে ভুলতে পেরেছ, আমি কিভাবে রাতুলকে ভুলে যাবো তুমিই বলো
–(নিশ্চুপ)
–রিফাত তুমি খুব ভালো ছেলে তাই আমি চাই না তুমি এখন আমাকে ভালোবেসে পরে কষ্ট পাও
–তোমার কথা শেষ হলে আমি একটা কথা বলি
–হুম বলো
–ভবিষ্যৎ এ তুমি রাতুলের কাছে চলে যাবে এইটা ভেবে তো আমি তোমাকে এখনি ছেড়ে দিতে পারবো না, এখন আমি তোমাকে যেমন ভালোবাসি তেমনই ভালবাসবো পরে যদি আমার ভাগ্যে কষ্ট লিখা থাকে তাহলে কষ্ট পাবো কিন্তু ভবিষ্যৎ এর ভাবনা ভেবে বর্তমানে নিজেকে কষ্ট দিতে পারবো না আর আমার হাসি কষ্টের সাথে আমার পুরো পরিবারের হাসি কষ্ট জরিয়ে আছে তাই আর কখনো তোমাকে ভুলে যেতে বলোনা
–তারমানে এতোক্ষণ অযতাই বকবক করেছি
–হতে পারে

ওর সাথে অযতা বকবক করতে ইচ্ছে হচ্ছে না খাটে এসে শুয়ে পড়লাম সবসময় রাতুল রাতুল করে ভালো লাগে নাকি নিজের বউয়ের মুখে অন্য ছেলের নাম শুনতে
–এইযে রিফাত সাহেব ভুলে গেছেন নাকি (পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখি আলিফা কোমরে হাত দিয়ে রাগি চোখে তাকিয়ে আছে)
–কি ভুলবো
–তোমার তো সোফায় ঘুমানোর কথা
–হুহ সখ কতো বউ রেখে প্রতিদিন গিয়ে সোফায় ঘুমাবো খেয়ে কাজ নেই তো
–তুমি সোফায় যাবে কিনা
–এতো রেগে যাচ্ছ কেন যাচ্ছি তো (এই রাতের বেলা রাগানোর চেয়ে সোফায় ঘুমানোই ভালো তাই ভদ্র ছেলের মতো এসে সোফায় শুয়ে পড়লাম)
–আমার রাগ কে তাহলে ভয় পাও
–এমন ডাইনীকে সবাই ভয় পাবে
–কি বললে আমি ডাইনী
–একদম না আমি তো বলেছি আগামীকাল থেকে এই সোফা আর আমাদের রুমে থাকবে না
–থাকবে না কেন
–কেউ কি জেনেশুনে সতিন ঘরে রাখতে চায়
–সোফা তোমার সতিন
–অবশ্যই এইটা আছে বলেই তো আমাকে তোমার থেকে এতো দূরে থাকতে হয়
–ছেলেদেরও সতিন হয় জানতাম না
–আসলেই তো সতিন তো হয় মেয়েদের, আচ্ছা তাহলে ছেলেদের কি হয় রাগিণী
–আবার রাগিণী ডাকছ
–বলোনা ছেলেদের কি হয়
–জানিনা ঘুমুতে দাও আর একটাও কথা বলবা না
–ওকে
সোফায় শুয়ে শুয়ে রাগিণীর ঘুমন্ত মুখটা দেখতে দেখতে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম

সকালে কে যেন চিৎকার করে ডাকলো আমাকে তাড়াতাড়ি উঠে বসে পাশে তাকিয়ে দেখি ছোটমা
–ছোটমা এভাবে চিৎকার করে কেউ ডাক দেয় আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম
–তো কি করবো তোর বউ ড্রয়িংরুমে বসে কাঁদছে আর তুই এখানে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিস
–কি রাগিণী কাঁদছে
–রাগিণী কে
–তোমাদের বউমা, কিন্তু ও কাঁদছে কেন
–নিচে গিয়ে নিজেই শুন কিন্তু তুই সোফায় কেন বলতো
–তোমার কি মনে হয় তোমাদের বউমা অন্য কাউকে ভালোবাসা সত্যেও আমাকে ওর পাশে জায়গা দিবে
–শুন বিয়ের আগে এমন অনেক কিছুই থাকে এখন ও তোর বউ তাই তোর অধিকার তোকে নিজেই বুঝে নিতে হবে
–এসব অধিকার পরে দেখা যাবে আগে নিচে চলো রাগিণী কাঁদছে কেন গিয়ে দেখি
–চল

ড্রয়িংরুমে এসে তো আমি অবাক আলিফা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে সবাই কান্না থামানোর চেষ্টা করছে আব্বু মুখ গোমরা করে বসে আছেন
আমি: আব্বু কি হয়েছে
প্রিতি: সেটা তো তুমিই ভালো জানবে
আমি: মানে
আব্বু: তুই বউমার গায়ে হাত তুলেছিস কোন সাহসে
আমি: মানে
আব্বু: তুই বউমাকে থাপ্পড় দিয়েছিস কেন
আমি: কখন আর কে বললো
আলিফা: আমি বলেছি রাতেই তো থাপ্পড় দিলে আমি আব্বুর কাছে যাবো বলাতে
আমি: কি বলছ এসব
ছোটমা: নিয়ম অনুযায়ী তো আজ তোদের যেতেই হবে তাই বলে তুই ওর গায়ে হাত তুলবি দুদিন মাত্র হয়েছে বিয়ের আ….
আমি: ছোটমা তুমি বিশ্বাস করছ এইটা
আব্বু: বউমা বলেছে বিশ্বাস না করার কি আছে
আমি: ওহ তোমাদের বউমাই এখন সব ঠিক আছে, আলিফা রুমে এসো

রুমে এসে ওর জন্য অপেক্ষা করছি ওকে তো জিজ্ঞেস করতেই হবে কেন মিথ্যে কথা বললো
–কেমন দিলাম রিফাত চৌধুরী (রুমে এসেই হাসতে শুরু করলো, ইচ্ছে হচ্ছে একটা থাপ্পড় দিয়ে ওর মিথ্যে কথাটা সত্যি করে দেই কিন্তু পারবো না ভালোবাসি যে)
–সবার সামনে তোমার মুখটা যা লাগছিল না হিহিহি
–আলিফা কেন বললে এমন মিথ্যে কথা
–তুমি আমাকে আব্বুর কাছে যেতে দিচ্ছ না আর ওখানে না গেলে আমি রাতুলের সাথে কথা বলতে পারবো না তাই মিথ্যে বলেছি যেন আজই যেতে পারি, জানো তো আমি রাতুলের জন্য হাজারটা মিথ্যে কথা বলতে পারি
–আমি তো বলেছিলাম আজ নিয়ে যাবো আর তুমি কিনা… তুমি তো বুঝতে পারছ না তোমার একটা মিথ্যে আমাকে সবার কাছে কতোটা নিচে নামিয়ে দিয়েছে, সবাই ভাববে আমি তোমাকে নিলার থেকে কম ভালোবাসি তাই গায়ে হাত তুলতে পেরেছি কিন্তু আমি তো তোমাকে ঠিক ততোটাই ভালোবাসি নিলাকে যতোটা ভালোবাসতাম, হ্যাঁ প্রথম আমি তোমাকে নিলার থেকে ছোট করে দেখেছি কিন্তু এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি নিলা তো বেঁচে নেই ও আমার মনের মধ্যেই আছে আ….
–শুনো এসব ভালোবাসার কথা আমাকে বলে লাভ নেই রাতুলের জন্য এমন মিথ্যে আমি হাজারটা বলতে পারবো
–আলিফা চুপ কর আর একবার রাতুল নামটা নিলে কিন্তু
–কি করবে হ্যাঁ আমি ভয় পাই নাকি তোমাকে
–একটা থাপ্পড় দিয়ে তোমার মিথ্যে কথাটা সত্যি করে ফেলবো
–হুহ পারবে না
–ওকে
–কি হলো এভাবে আসছ কেন আমার দিকে
–(কোনো কথা না বলে ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আর ও ভয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে, পিছাতে পিছাতে ও গিয়ে বিছানায় পরে গেলো আমি ওর পাশে শুয়ে থাপ্পড় দেওয়ার জন্য গালে হাত রাখলাম আলিফা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো, ওর মুখটা আমার কাছে এনে ওর ঠোঁট দুইটায় আমার ঠোট ডুবিয়ে দিয়ে অনেক সময় নিয়ে চুষলাম তারপর ছেড়ে দিলাম)
–রিফাত এইটা কি করেছ
–কেন ব্যথা পেয়েছ
–কিস করে জিজ্ঞেস করছ ব্যথা পেয়েছি কিনা
–আসলে তুমি টিকি বলেছ আমি তোমাকে থাপ্পড় দিতে পারবো না তাই তো কিস দিলাম
–রিফাত
–চিৎকার কর না সোনা তুমি এখনো আমার নিচে শুয়ে আছ চিৎকার করলে আবার কিস করবো
–অসভ্য ছেলে কোথাকার
–তুমি আমার বউ তোমাকে আদর করলে অসভ্যতামি হবে না বুঝেছ রাগিণী (হাত দিয়ে ওর কপালের চুল গুলো সরিয়ে দিতে চাইলাম রাগ দেখিয়ে আমার হাত সরিয়ে দিলো)
–রিফাত আমার উপর থেকে সরো আমি উঠবো
–হুম সরছি তবে ভবিষ্যৎ এ আমার সামনে রাতুল নামটা নিতে ভেবে নিও
–নিলে কি করবে তুমি
–এখন যা করলাম তাই করবো এর চেয়ে বেশি কিছুও করতে পারি
–রিফাত ভালো হচ্ছে না কিন্তু
–তোমাকে তো মারতে পারবো না ভালোবাসি তাই এমন রোমান্টিক অত্যাচার করছি এইটা তো ভালোই হচ্ছে
–সরো (আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে বসলো)
–বাবার বাড়ি যাওয়ার খুব সখ তাই না যাও নাশতা করে এসে রেডি হয়ে নাও
–আমি নাশতা করবো না এখনি যাবো
–ওকে

আলিফা ফ্রেশ হতে চলে গেলো আমি নিচে আসলাম সবাই তো আমাকে খারাপ ভাবছে দেখি আব্বুর রাগটা ভাঙাতে পারি কিনা, নিচে এসে দেখি আব্বু নাশতা না করে এখনো মুখ গোমরা করে বসে আছেন
আমি: আব্বু নাশতা করবে না
আব্বু: না তুই আগে জবাব দে বউমার গায়ে হাত তুলেছিস কেন
আমি: আব্বু আলিফা মিথ্যে বলেছে যেন সবাই ওকে ওখানে যেতে দাও আর ওখানে গেলে ও…
আব্বু: থেমে গেলি কেন বল
আমি: ওর বাবার বাসায় গেলে রাতুলের সাথে কথা বলতে পারবে আর এজন্যই ও মিথ্যেটা বলেছে
আব্বু: কি বলছিস
আমি: আব্বু বিশ্বাস করো আমি আলিফাকে ততোটাই ভালোবাসি যতোটা ভালোবাসতাম নিলাকে তোমরা আমাকে ভুল বুঝছ
আব্বু: ঠিক আছে নাশতা করে বউমাকে নিয়ে চলে যা
আমি: আলিফা রেগে আছে এখন কিছুই খাবে না আমি খাই কিভাবে, ও তো রেডি হচ্ছে বাইরে কোথাও খেয়ে নিবো
আব্বু: ঠিক আছে

রুমে এসে দেখি আলিফা রেডি, বাব্বাহ রাতুলের সাথে কথা বলার জন্য কি টান এতো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে গেছে
–রিফাত তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও
–প্রথম প্রথম শশুড় বাড়ি যাচ্ছি এতো তাড়াতাড়ি রেডি হতে পারবো না
–কেন তুমি কি মেয়ে যে সাজুগুজু করতে হবে
–তুমি তো মেয়ে তুমি সাজুগুজু করনি কেন
–তাহলে দেরি হয়ে যাবে আমাকে তাড়াতাড়ি যেতে হবে
–তুমি না সাজলে আমি নিয়ে যাবো না
–রিফাত এখন কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে
–ওকে একটু অপেক্ষা করো আমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নিচ্ছি
–হুম

রেডি হয়ে আলিফাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসলাম, সবাই আমাদের বিদায় দেওয়ার জন্য বসে আছে মনে হচ্ছে আমি সারাজীবন এর জন্য চলে যাচ্ছি, ওরা তো জানেনা আমি আগামীকালই চলে আসবো
ছোটমা: সাবধানে যাস আর দুদিন থেকেই চলে আসিস
আমি: আগামীকাল সকালেই আমি চলে আসবো
আলিফা: মানে
আমি: ভয় নেই তোমাকে রেখে আসবো যতো খুশি রাতুলের সাথে কথা বলে নিও (ওর কাছে গিয়ে আস্তে আস্তে বললাম)
রিয়ান: ভাইয়া কি ফিসফিস করছ
আমি: কিছুনা
আব্বু: বউমাকে নিয়েই একেবারে ফিরিস
আমি: আগে যাই তারপর নাহয় এসব দেখা যাবে

গাড়ির কাছে আসতেই আলিফা পিছনে গিয়ে বসতে চাইলো কি আজব মেয়েরে বাবা
রিয়ান: ভাবি তুমি পিছনে বসছ কেন
আমি: আমাকে ড্রাইভার বানানোর ধান্দা আর কি
আলিফা: মানে
আমি: আমি ড্রাইভ করবো আর তুমি পিছনে বসবে তাহলে তো লোকে আমাকে ড্রাইভার ভাববে, শুনো বউয়ের ড্রাইভার হওয়ার ইচ্ছা আমার নেই সামনে এসে বসো (আলিফা আব্বুর দিকে তাকালো আমার কথা শুনে সবাই হাসছে তাই ও আর কিছু বলতে পারলো না চুপচাপ সামনে এসে বসলো)

সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলাম, একটু দূর এসেই গাড়ি থামিয়ে দিলাম
–রিফাত কি হলো এভাবে হঠাৎ গাড়ি থামিয়েছ কেন
–তুমি এতো দূরে বসে আছ কেন আমার পাশে এসে আমার কাধে মাথা রেখে বস নাহলে গাড়ি আর চলবে না
–আমি আগেই বুঝেছিলাম তুমি এমন কিছু করবে তাই তো পিছনে বসতে গিয়েছিলাম
–তুমি যে আমাকে ভালোবাস প্রমাণ হয়ে গেছে
–মানে
–ভালো না বাসলে কি আর আগে থেকে আমার মনের কথা বুঝে যেতে (রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে এসে আমার কাধে মাথা রেখে বসলো)

আলিফা আমার কাধে মাথা রেখে বসে আছে আর আমি মনের আনন্দে ড্রাইভ করছি…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে