রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২ পর্ব-৭

0
3000

রোমান্টিক_অত্যাচারঃ_২
পর্ব-৭
লেখিকা-Israt Jahan
ধারণা-Kashnir Mahi
ইকরামঃযথা আজ্ঞা সম্রাট।
“””””””””””””””””””
মাহিঃ কি হলো থেমে গেলে যে?
আশফিঃকি শর্ত ছিলো?
মাহিঃপাঁজি ছেলে।দাড়াও। -ওর ঠোঁটে আলতো করে একটা চুমু দিয়ে বললাম “তারপর”।ও দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে আবার বলতে শুরু করলো।
[#বিষয়বস্তুঃসম্রাট_ফালাক]
★রাজসভা★
ফালাকঃতো মন্ত্রিসাহেব রাজ্য শেরপুর ও শেরপুরের রাজা স্পর্কিত কি কি তথ্য সংগ্রহ করেছেন সেগুলো উপস্থাপন করুন।
মন্ত্রীঃ মহারাজ! শেরপুর রাজ্যের রাজা জাভেদ খান তিনি এতজন নিষ্ঠাবান মুসলমান।নুন্যতম নামাজ বা পঞ্চোপাসনার তিনি অবহেলা করেন না।তার বৃদ্ধিমত্তা,বীরত্ব,বিচার ক্ষমতা,দানশীলতা,ধৈর্য এসবকিছুর গুণেই তিনি গুনান্বিত।এবং তার সৈন্যসামন্ত সবাই অশিচালনায় খুবই দক্ষ।তার হাতিশালে সহস্রের থেকেউ অধিক হাতি ঘোড়াশালে অজস্র ঘোড়া আছে। তার তুলনায় আমাদের সেগুলি খুবই সীমিত।তার রাজ্যে অভাব অনটন দরিদ্রতা খুবই কম।মাঠে ঘাটে ধান ফসলে কোনো অভাব নেই। সে রাজ্যের প্রজারা খুব সন্তুষ্ট রাজা জাভেদ খানের উপর।তার রাজমহলের নারী-পুরুষ উভয় অশিচালনা জানেন এবং প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন প্রতিনিয়ত।এতবছরে রাজা জাভেদ খান তার বিরুদ্ধে কোনো যুদ্ধেই পরাজিত হননি।
ইব্রাহীমঃসম্রাট এর আগে আপনি যে কয়টি রাজ্য দখল করেছেন তা সে ছলেবলে কৌশলেই হোক বা আপনার যুদ্ধের মাধ্যমেই হোক তাদের আপনি খুব সহজেই পরাজিত করতে পেরেছেন কিন্তু রাজা জাভেদ খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ী হওয়া একটু দুসাধ্য হয়ে যাবে মনে হচ্ছে।তার মত ক্ষমতাধর আমরা নই।( রাজদরবারের পদে অধীনস্থ ব্যক্তি)
ফালাকঃহাহাহা(তাচ্ছিল্যের হাসি)।আপনি কি আমাকে এতো বছরে এইটুকু চিনেননি?আমি শুধু যুদ্ধের মাধ্যমেই নই কূটনৈতিক চিন্তাভাবনার দ্বারাও আমি যে কোনো জিনিস হাসিল করতে পারি। সে যাই হোক তো মন্ত্রী আয়্যুব রাজা জাভেদ খানের পুত্র-কন্যা কতজন আর সবথেকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরশীল ব্যক্তি কে?
মন্ত্রীঃ মহারাজ!রাজা জাভেদ খানের একজনই মাত্র কন্যা।রাজকন্যা মেহেরুন।আর সবথেকে বিশ্বস্ত ও নির্ভরশীল ব্যক্তি তার কন্যা স্বয়ং নিজে। তিনি পুত্রের থেকেও অধিক কিছু মনে করেন রাজকন্যা মেহেরুনকে। কারণ তিনি অশিচালনা থেকে শুরু করে ধনুকচালনা রাজ্যচালনা সবকিছুতেই পারদর্শী।রাজনৈতিক কূটনৈতিক সব বিষয়ে রাজা জাভেদ খান তার কন্যার পরামর্শ গ্রহণ করেন।এবং তাতে রাজা জাভেদ খান কখনোই বিফল হননি।
ফালাকঃএ আমাকে কি শোনালেন মন্ত্রীসাহেব?এ কেমন নারী তাকে যে দেখার জন্য আমার মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে।তাহলে তো আর দেরী করা যাবেনা।রাজ্য শেরপুর দখল ও রাজকন্যা মেহেরুন নাহ্ মেহেরুন নয় আমি তাকে মেহের বলেই ডাকবো এই দুটো জিনিসকে নিজের দখলে আনার জন্য আমি আর বেশি সময় অতিবাহিত করতে চাইনা।গোটা ভারতবর্ষে আমি রাজ করতে চাই।প্রতিটি রাজ্যে আমার রাজত্ব চলবে।আচ্ছা রাজকন্যা মেহের এর রূপের বর্ণনা যে দিলেন না আপনি?
মন্ত্রীঃ রাজকন্যা মেহেরকে আজও পর্যন্ত কোনো পরপুরুষ দেখেননি।
ফালাকঃআচ্ছা? না জানি তার নামখানার মত সে কতোটা অপরূপ।
(রাজা ফালাক রাজসভায় উপস্থিত সকলের সাথে আলোচনা পর্ব শেষ করলেন।আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো রাজ্য শেরপুর কবে কখন কিভাবে আক্রমণ করবেন)
“””””””””””””””””””
আশফিঃ এদিকে রাজকন্যা মেহের……….। মাহি? ঘুমিয়েছে তাহলে মেয়েটা।কাঁধের উপর মাথা রেখে আমার হাত জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েছে।খুব আস্তে করে ওকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিলাম।মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে ওর মুখে একটু আদর করে আমিও শুয়ে পড়লাম।
আলিশাঃবাব্বাহ্ এতো বেলা পর্যন্ত ঘুমাই নাকি ওরা?সকাল ৯ টা বেজে গেছে।
আশফিঃগুড মর্নিং আলিশা।
আলিশাঃগুড মর্নিং।তাহলে ঘুম ভাঙ্গলো তোমাদের? আমি সেই কখন থেকে ওয়েট করে আছি তোমাদের জন্য।
আশফিঃ সো স্যরি।তুমি এখনো ব্রেকফাস্ট করোনি তাইনা?রাতে ঘুম কেমন হয়েছে?
আলিশাঃ ঘুম তো ভালোই হয়েছে কিন্তু তোমার মহারাণী কোথায়?সে কি ঘুম থেকে উঠেনি?
আশফিঃআসলে রাতে অনেক দেরি করে ঘুমিয়েছে তো তাই আর ডাকিনি।
আলিশাঃহুম ওর তো এখন পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজন।
আশফিঃআচ্ছা তুমি নাস্তা করে নাও।আমাদের জন্য আর কতক্ষণ ওয়েট করবে?
আলিশাঃ মানে কি?আমি কি তোমাদের ছাড়া একা বসে নাস্তা করবো?কখনোই না।এসো তুমিও করবে।
আশফিঃনা।আসলে আজকে অফিসে যেতেই হবে।নাস্তা করার সময় নেই।ওখানে গিয়ে দেখতে হবে কি অবস্থা?সেক্রেটারির উপরে সব দায়িত্ব দিয়ে এসেছি।
আলিশাঃএইযে CEO সাহেব আপনার অফিস দেখার জন্য অনেকেই আছে কিন্তু এখানে আমাকে দেখার জন্য আপনি ছাড়া কেউ নেই।আমার দেখাশোনাটা করবে কে শুনি?
মাহিঃ কেনো আমি আছি না? আমাকে ভরসা করতে পারো।
আলিশাঃগুড মর্নিং মাহি।
মাহিঃ মর্নিং।আমি কিন্তু তোমার অনেক ভালো খেয়াল রাখতে পারবো।
আলিশাঃআচ্ছা।আমি তো দেখছি তোমাকেই এখনো দেখাশোনা করতে হয় আশফিকে।তাহলে আশফির বোনকে তুমি কিভাবে দেখাশোনা করবে?হুম?
মাহিঃ সেটা তুমি দেখলেই বুঝতে পারবে আমি তোমার কেমন খেয়াল রাখতে পারি?
আলিশাঃ ও আচ্ছা।
আশফি মাহি কিন্তু ভয় পাচ্ছে।
মাহিঃ একদম না।আশফি চাইলেও তোমাকে টেক কেয়ার করতে পারবেনা।
আলিশাঃকেনো? নিষেধ করে রেখেছো নাকি?
মাহিঃ উহুম।তুমি নিজেই দেখে নিতে পারো।
আশফিঃ এটা মাহি ঠিকই বলেছে।
আলিশাঃ কিরকম? বুঝিয়ে বলো আমাকে?
মাহিঃ আলিশা সেটা তুমি ও অফিসে যাওয়ার পরই বুঝতে পারবে।
আলিশাঃওকে ওকে এখন এসো নাস্তা করে নিই।প্রচন্ড খিদে পেয়েছে।আশফি তুমি তো অফিসে গিয়ে নাস্তা করবে তাইনা?তাহলে আমি আর মাহি দুজনে মিলেই নাস্তা করি।
আশফিঃহুম তাই করো।
আলিশাঃমাহি তোমার খাওয়া-দাওয়া দেখছি একদম ঠিক নেই।
মাহিঃ ওহ্ গড।ভাই নেই ভাই এর বোন তো আছে। আমার খাওয়া-দাওয়ার উপর খবরদারি করার জন্য।
আলিশাঃএরকম ভাবে বলছো কেনো?আশফি তো ঠিকই করে।জোড় করে তোমাকে খাইয়ে দেয়।না হলে তোমার যা খাওয়ার ভাব-সাব দেখছি তাতে তোমাকে আর বেশিদিন চোখে দেখা যাবেনা। মাহি খাওয়ার দিকে নজর দাও। ওকে?প্রয়োজন হলে আমিও তোমাকে জোড় করে খাইয়ে দিবো।
বুঝেছো?
মাহিঃনা প্লিজ।তুমি অন্তত আমার সাথে এমন করোনা।যতটুকু খেতে পারি ততটুকুই তো খাবো।
আলিশাঃহুমমম।
মাহিঃ আলিশা তোমাকে কিভাবে স্যরি বলি।এখন পর্যন্ত তোমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারলামনা। নিশ্চই অনেক বোরিং হচ্ছো?
আলিশাঃ মিথ্যা বলবোনা। একটু হচ্ছি।তবে একদম খারাপ ও লাগছেনা।আর তুমি কিভাবেই বা আমাকে নিয়ে ঘুরতে বের হবে।
আশফির কড়া নিষেধ তাকে ছাড়া বাইরে কোথাও বের হতে পারবেনা।
মাহিঃ এটাই তো সমস্যা।
লোকটা সবসময় খালি বেশি বেশি করে সবকিছুতে।ও তো অফিসে পড়ে থাকে আর আমি সারাটাদিন বাড়িতে বসে থেকে থেকে একদম নিরামিষ হয়ে যায়।
আলিশাঃমাহি তোমার ফোন বাঁজছে।
মাহিঃ ও।আমি তো শুনতেই পাইনি।
-কি হয়েছে??(ফোনে)
আশফিঃকিছুনা।আমি গাড়িতে।
মাহিঃ ও আচ্ছা আমি এখনো নাস্তার টেবিলে।
আশফিঃও আলিশা আছে বুঝি সাথে?
মাহিঃ কেনো তুমি দেখে যাওনি?
আশফিঃহুম দেখলাম তো। নাস্তা করা শেষ হয়নি?
মাহিঃ এই তো বসলাম।
আমি কি রোবট?
আশফিঃকিন্তু ডিয়ার রোবটেরা তো খাইনা ওরা চার্জ নেয়।
মাহিঃ ধুর।আমাকেও চার্জ দিও।তাহ। লে আর খেতে হবেনা কিছু।
আশফিঃঅবশ্যই।অফিস থেকে ফিরে তোমার চার্জের ব্যবস্থা করবো।ঠিকআছেে? মাহিঃ ধ্যাত।কি সব কথাবার্তা বলে।
আশফিঃ?? ওকে রাখছি।অফিস পৌঁছে গেছি।
মাহিঃ পাঁজি একটা।(ফোন কেটে)
আলিশাঃহাহাহাহাহা। এটা কি ছিলো মাহি?
মাহিঃশুনেছো নিশ্চই? এটা তো শুরু যেদিন থেকে অফিস যাবে সেদিন থেকে শুরু হবে ওর এসব পাগলামী।
আলিশাঃহুম স্পিকার লাউড করে রেখেছো তো শুনবোনা?ঘর থেকে বের হতে পারলোনা সাথে সাথে গাড়িতে উঠেই ফোন? এটা সত্যিই একটা দারুণ বিষয়। আর তুমি সেটাকে পাগলামী বলছো?
মাহিঃ এগুলোকে পাগলামী ছাড়া কি বলে?
আলিশাঃভালোবাসা,দুর্বলতা,দুশ্চিন্তা যা খুশি বলতে পারো।একটা মানুষকে কতোটা ভালোবাসলে তাকে এভাবে মিস করে কেউ।
মাহিঃ হুমম।জানি। মানুষ বলে বিয়ের পর নাকি আস্তে আস্তে বৌ এর প্রতি স্বামীর টান ভালোবাসা এসব নাকি কমে যায়।শুধু থাকে দায়িত্ব-কর্তব্য।কিন্তু আশফি পুরোটাই তার ভিন্ন। দিন দিন ওর ভালোবাসার পরিমাণ শুধু বেড়েই চলেছে আর দায়িত্ব কর্তব্যের কথা তো বলবোইনা।
আলিশাঃআচ্ছা চলোনা আজকে আমরা দুজনে lunch রেডি করি? আশফিকে চমকে দিবো।
মাহিঃ সেটা তো আমি রোজই করতে চাই।কিন্তু কে শুনে কার কথা। আমাকে খাঁচা বন্দি পাখির মত করে রেখেছে।
মাঝেমাঝে মনে হয় ওকে লুকিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসি।কারণ আমি প্রেগন্যান্ট হয়েছি পর্যন্ত আমাকে নিয়ে কখনো ও জার্নিই করতে চাইনা আর সেখানে তো লং ড্রাইভ দূরে থাক।
আলিশাঃতুমি ওকে অনেক ভয় ও পাও তাইনা মাহি?
মাহিঃ হুম।ভীষণ।আবার একদমই না
আলিশাঃবুঝলাম না। মানে?
মাহিঃ ও তুমি বুঝবেনা।
আলিশাঃআমি বুঝতেও চাইছিনা।
আচ্ছা তাহলে আমরা কিচেনে যাই দুপুরের খাবার তৈরি করে ফেলি?
মাহিঃ এতো তাড়াতাড়ি? আর কিছুক্ষণ পরে যাইনা?চলো বাগান থেকে ঘুরে আসি।
আলিশাঃওকে চলো।
মাহিঃ আমি আর আলিশা দুজনে পাশাপাশি একসাথে বাগানে হাঁটছি।কিন্তু হঠাৎ করেই মেয়েটা কেমন চুপচাপ হয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ আগে কাকে যেনো ফোন করছিলো ও কিন্তু সে ফোনটা হয়তো রিসিভ করেনি।তারপর থেকেই ওর মনটা খারাপ দেখছি।
-আলিশা?
আলিশাঃহুম বলো।
মাহিঃ তুমি কত বছর হলো ইংল্যান্ড ছিলে?
আলিশাঃএইচ.এস.সি পাস করেই ইংল্যান্ড চলে গিয়েছিলাম।
মাহিঃ তাহলে তো অনেক বছর ইংল্যান্ড ছিলে।
আলিশাঃহুম।ওখানে আমার খালামণি থাকেন।ওনাদের সাথেই থাকতাম।
মাহিঃ হুম।নিজের দেশ ছেড়ে ওখানে থাকতে তোমার ভালো লাগতো? মিস করতে না ফ্যামিল ফ্রেন্ডস এসব?
আলিশাঃহুম।খুব মিস করতাম প্রথম ২ বছর।তারপর আস্তে আস্তে যখন অনেক ফ্রেন্ডস হলো সারাদিন ওদের সাথে সময় কাটাতাম। ওদের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতাম। একসময় নিজেকে একদম পুরোপুরি ইংল্যান্ড বাসীদের মত করে নিজেকে তৈরি করে ফেললাম। ওদের কালচারের এমর কোনো জিনিস নেই যা আমি পারিনা বা জানিনা।
মাহিঃ আচ্ছা কি কি জানো তুমি?
আলিশাঃআমি খেলাধুলা থেকে শুরু করে সে যে কোনো ধরনের খেলা হোক সব পারি।তারপর পপ ড্যান্স, হিপহপ, ব্যান্ড মিউজিক,র্যাপার সবকিছুই আমার মাঝে আছে।
মাহিঃ শুধু এগুলোই?আর কিছুনা?
আলিশাঃআর কি? ও বুঝতে পেরেছি।রান্নাটা ও মোটামোটি পারি,ড্রাইভিং করতে পারি তারপর প্রেম করতে পারি…..??
মাহিঃ হাহাহাহা। তুমি তো দেখছি অলরাউন্ডার।
আলিশাঃহুম সত্যি অলরাউন্ডার।শুধু একটা জায়গায় ছাড়া।
মাহিঃ কিছু বললে?
আলিশা না কিছুনা। এখন বলো তুমি কি কি পারো?
মাহিঃ আমি তোমার মত এতোকিছু জানিনা। তবে আমি যেটুকু সেটুকু ও কম নয়।
আলিশাঃআচ্ছা?তো শুনি সেগুলো কি কি?
মাহিঃ প্রথমত আমি সংসারের যাবতীয় কাজ জানি।আর সংসারের বাইরে যেগুলো আছে সেগুলো হলো বিজনেস করতে জানি আমি,ড্রাইভিং করতে জানি,নাচ-গান মোটামোটি পারি তবে তোমার মত সবধরনের নয়।আর…….
আলিশাঃ আর কি? মনে পড়ছেনা? তুমি কিন্তু অলরাউন্ডার হতে পারলেনা।
মাহিঃ তাই?কিন্তু আমি যেগুলো জানি তুমি কিন্তু সেগুলো জানোনা।
আলিশাঃরিয়েলি?কি সেই জিনিসগুলো?যা আমি জানিনা?
মাহিঃ আমি প্রেম করতে না পারলেও আমি আমার হাজবেন্ডকে ভালোবাসতে জানি যেটা তুমি জানোনা। কারণ তোমার তো বিয়েই হয়নি তো স্বামীকে কিভাবে ভালোবাসবে?
আলিশাঃস্বামী না হলে বুঝি ভালোবাসা যাইনা?
মাহিঃ হুম যাই।কিন্তু আলিশা ম্যাম এর তো কোনো লাভার ই নেই। তাহলে?
আলিশাঃহুম তা ঠিক। আচ্ছা বলো আর কি কি জানো?
মাহিঃআমি ঘোড়া চালাতে জানি,কুংফু জানি,গান চালাতে জানি।
আলিশাঃওয়াও।এগুলো তো আমি জানিইনা।তুমি নিশ্চই এগুলো আশফির থেকে শিখেছো?
মাহিঃ তাছাড়া কি? এগুলো ও ছাড়া আর কে ই বা শেখাবে আমাকে।
আলিশাঃআশফি যে অনেক ভালো ক্যারাটে জানে সেটা আমিও জানি। মাহি তুমি কখনো ফুল স্পীডে গাড়ি চালিয়েছো?
মাহিঃ পাগল নাকি? এমনিতেই আমাকে কখনো ড্রাইভ করতে দেইনা আর ফুল স্পীড তো দূরে থাক।
আলিশাঃতার মানে তুমি এটা পারোনা।কিন্তু আমি অনেকবার বাজি রেখে ফুল স্পীডে গাড়ি চালিয়েছি। কেউ আমাকে কখনো হাড়াতে পারেনি।
মাহিঃ আমি পারিনা এটা ভুল।কখনো চালাইনি এই আর কি।
আলিশাঃতাহলে আসবে নাকি আমার সাথে বাজিতে?
মাহিঃ তুমি কি সিরিয়াস?
আলিশাঃএকদম।
মাহিঃ ওকে তাহলে আমরা কাল ঠিক ১১ টার দিকে বাসা থেকে বের হবো।আর হ্যা এই বিষয়টা যদি আশফি জানতে পারে তাহলে কিন্তু সব বানচাল হয়ে যাবে।
আলিশাঃ Don’t worry darling. আমি আছি না?
মাহি আমার না খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।চলোনা বাইরে থেকে ঘুরে আসি।আর আইসক্রিম ও খেয়ে আসবো।
মাহিঃ বাইরে যেতে হবে কেনো? ফ্রিজেই তো আইসক্রিম………..।
ও আমার প্রাণপ্রিয় পতি তো আমার জন্য এখন ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম গুলো ও সরিয়ে ফেলেছে। অদ্ভুত মানুষ একটা। বাসায় যে আমি ছাড়া অন্য কেউ আছে সেটা তিনি ভুলেই গেছেন।
আলিশাঃওর কি দোষ? তুমি যদি লুকিয়ে খাও???
মাহিঃ হ্যা।এর জন্যই রাখেনি।আচ্ছা দাড়াও আমি কাউকে গিয়ে আনতে বলি।
আলিশাঃআরে অন্য কেউ যাবে কেনো? আমরাই তো যেতে পারি।তুমি চলো আমি আর তুমিই যাবো।
মাহিঃ কিন্তু আশফি যদি………( কথা শেষ না হওয়ার আগেই মাহির ফোনে আশফির কল এলো)
এই বলতে বলতেই চলে এসেছে আশফি সাহেব।
আলিশাঃকোথায়?
মাহিঃ আরে ওদিকে কোথায় দেখছো?ফোনে দেখো।তাও আবার ভিডিও কল।
আলিশাঃতাই বলো। আচ্ছা রিসিভ করো।
মাহিঃহুমম।কেমন আছেন?(ফোনে)
আশফিঃকেমন আছেন মানে কি?ফোন রিসিভ করতে এতো সময় লাগে কেনো?
মাহিঃ উফফ।বাসায় থাকলেও angry face ফোনের ভেতোরেও angry face. আচ্ছা তুমি বাসায় যাই করো কিন্তু বাইরে গেলে কি একটু লাভারদের মত করে কথা বলা যাইনা?
আশফিঃও হ্যা আপনি তো আমার সাথে প্রেম করতে চেয়েছেন তাইনা?তো আপনি কি পারবেন আমার সাথে প্রেম করতে?
মাহিঃ না পারার কি আছে? এগুলো ও কি শিখে পড়ে করার জিনিস নাকি?
আশফিঃশিখে পড়ে করতে হয়না বাট…..
মাহিঃ বাট?
আশফিঃএই তুমি কোথায়? তুমি তো বাসার ভেতোরে না।
মাহিঃএই হাদারাম নিজের বাগানটা ও কি চিনতে পারছোনা?
আশফিঃও তাই বলো।না আসলে ফোনের ভেতোর দেখছি তো তাই কেমন যেনো একটু অচেনা অচেনা লাগলো।
মাহিঃ তুমি আমাকে খাঁচার ভেতোর আটকে রাখো।
আশফিঃআরে নাহ্।তাহলে তো আবার সমস্যা। আচ্ছা তাহলে ঘুরো পরে ফোন করছি আবার।
মাহিঃ হুম।
আলিশাঃবাব্বাহ্! ১০ মিনিট পর পর বৌকে বুঝি মনে পড়ে?
মাহিঃ১০ মিনিট পর পর নয়।তার সবসময়ই আমার কথা মনে পড়ে শুধু ফোনটাই আসে ১০ মিনিট পর পর।আচ্ছা তুমি তো আইসক্রিম খাবে তাইনা?
আলিশাঃহুম।
মাহিঃ বাইরে তো এখন যেতে পারছিনা।অন্য কাউকে পাঠায় আনতে?
আলিশাঃওকে।
মাহিঃএকটা গার্ডকে পাঠালাম কিছু আইসক্রিম আনতে।আইসক্রিম আনার পর আমি আর আলিশা বসে একসাথে সবগুলো আইসক্রিম খেয়ে নিলাম।যদিও আমাকে খেতে নিষেধ করেছিলো আলিশা।কিন্তু সামনে রেখে কি আর নিজের লোভ সামলানো যাই? তারপর আমি আর আলিশা দুজনে মিলে দুপুরের খাবার রেডি করলাম।এর মাঝে আমাদের ভেতোর অনেক রকম গল্প হলো।দুজনে অপেক্ষায় আছি কখন আশফি আসবে।
আলিশাঃএই এতো বড় বাড়িতে তুমি কি করে যে সময় পার করো কে জানে।
মাহিঃ হুমম?। এর জন্যই তো বলেছিলাম ওকে আর একটা বিয়ে করতে।
আলিশাঃকি? সময় কাটানোর জন্য তুমি ওকে বিয়ে করতে বলেছো?
হাহাহা।এটা কোনোদিন সম্ভব।আর বিয়ে করার পর ঐ মেয়ে যদি আশফির কাছে থাকতো তুমি কি সেটা মেনে নিতে পারতে?
মাহিঃ একদম না।এর জন্যই তো ওকে আর বিয়ে করার কথা বলিনি।
আলিশাঃআর কখনো বলবে ও না।যে মেয়ের সংসারে অন্য একটা মেয়ে এসে কতৃত্ব ফলায় তাহলে সেই মেয়ের কপাল সারাজীবনের জন্য পুড়ে যায়।বুঝেছো? আচ্ছা মাহি আমি তো তোমাদের জুনিয়র কিন্তু আমি যে তোমাকে আর আশফিকে তোমাদের নাম ধরে ডাকি এটা কি তোমাদের খুব খারাপ লাগে?
মাহিঃ আরে কি বলো এসব? খারাপ লাগবে কেনো?তোমাকে তো আমি বন্ধুই মনে করি।আর বন্ধুদের মাঝে কোনো সম্বন্ধ করে ডাকতে হবে নাকি?
আলিশাঃআসলে আমিও তোমাদের একদম ফ্রেন্ডদের মতই মনে করি তাই নাম ধরেই ডাকি।আর এটাই আসলে অভ্যাস হয়ে গেছে ওখানে থাকতে থাকতে।
মাহিঃ সেটা আমরা বুঝি।
-কথা বলার মাঝে হঠাৎ করে মাহি হাঁচি দিয়ে উঠলো।
আলিশাঃএই যাহ্ ঠান্ডা লেগে গেলো নাকি তোমার? তাহলেই তো সর্বনাশ। কে বলেছিলো তোমাকে একসাথে ওতোগুলো খেতে?
মাহিঃ কি করবো? সামনে পেয়ে যে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলামনা।
আশফিঃGood noon everyone.
আলিশাঃ গুড নুন আশফি। তো তোমার অফিস শেষ হয়ে গেলো?
আশফিঃআসলে এখন একটু তাড়াতাড়িই চলে আসি।বাসায় একটা বাচ্চাকে রেখে যায় তো তাই টেনশন হয় আর কি।
মাহিঃ হ্যা।এরপর যখন বাচ্চার বাচ্চা হবে।তখন অফিস ই বন্ধ করে দিবে।
আলিশাঃতাই তো মনে হচ্ছে।
আশফিঃতখন তো আমার টেনশন কমে যাবে। কারণ বাচ্চাটা যে বড় হয়ে যাবে তখন।সে বুঝতে পারবে এখন আমি বড় না হলে আমার বাচ্চাকে কে দেখাশোনা করবে।এখন না হয় আমি তোমাকে দেখছি আর যখন আমার চান্দু আসবে তখন চান্দুকে তো দেখতেই হবে সাথে চান্দুর বাবাকে ও।
মাহিঃ হয়েছে।এবার যান ফ্রেশ হয়ে আসুন।
আশফিঃহুম যাচ্ছি।
আলিশাঃতুমি কি জানো মাহি আশফি বাড়িতে থাকলে সব একঘেয়েমিতা দূর হয়ে যায়?
মাহিঃ হ্যা জানি তো।এর জন্যই তো সবসময় আমার কাছে থাকার চেষ্টা করে।
আলিশাঃএতক্ষণে দুজনেই বোরিং ফিল করছিলাম। ও আসার পর সেটা আর মনে হচ্ছেনা।
মাহিঃতাই?
আশফিঃমাহি একটু এখানে এসো তো।
মাহিঃ আসছি।হুম বলুন কি হয়েছে?
আশফিঃহয়েছে তো অনেক কিছুই।
মাহিঃ কি হয়েছে? কোনো সমস্যা নয় তো। ওর স্যুটটা খুলে দিচ্ছিলাম আর কথা বলছিলাম।
আশফিঃআসলে ব্যাপারটা সমস্যা মনে করলে সমস্যা।আর সমস্যা না মনে করলে সমস্যা না।
মাহিঃ ধ্যাত। কি সব বলছো কিছুই বুঝতে পারছিনা।ক্লিয়ার করে বলো। কোম্পানিতে কোনো প্রবলেম হয়েছে?
আশফিঃহুম। আসলে একটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি।তাই তোমার সাথে একটু আলোচনা করতে চাইলাম।
মাহিঃ হ্যা বলো কি সমস্যা?
আশফিঃ একটা মার্কেটিং কোম্পানি যারা আমাদের কোম্পানির সাথে ডিল করতে চাইছে।
মাহিঃ কিসের ডিল?
আশফিঃডিল টা হচ্ছে আমাদের নিউ ডিজাইনের যে প্রোডাক্টগুলো এ বছর থেকেই তৈরি করা শুরু হবে সেগুলোর জন্য আমাদের যে ম্যাটেরিয়াল প্রয়োজন সেগুলো আমরা অন্য একটা কোম্পানির থেকে নিতে চেয়েছিলাম আর বহু আগে থেকে তাদের থেকেই আমি ম্যাটেরিয়াল গুলো নিয়ে আসছি।তাতে কখনো খারাপ কিছু পাইনি।কিন্তু কথা হচ্ছে এই নতুন যে কোম্পানিটা আমাদের সাথে ডিলে আসতে চাইছে তার কোম্পানির ম্যাটেরিয়াল কতোটা মানসম্মত হবে সেটাই ভাবছি।কারণ তারা খুবই কম মূল্যে ম্যাটেরিয়ালগুলো আমাকে দিতে চাইছে।আমাদের সাথে তার কোম্পানির ডিলটা হলে তার কোম্পানির রেপুটেশনটা বাড়বে কিন্তু তাতে আমার কোম্পানির রেপুটেশন কি হবে সেটাই ভাবছি।
মাহিঃ কেনো তুমি তার ম্যাটেরিয়াল গুলো দেখোনি?সেটা খারাপ নাকি ভালো?
আশফিঃআমি দেখিনি। আমার নিউ ডিজাইনার
যে মেয়েটা আছে সে দেখেছে।
মাহিঃ অদ্ভুত।তুমি নিজে দেখবেনা সেটা কেমন? ডিজাইনারের উপর ভরসা করলেই হবে?আর তাছাড়া নিউ ডিজাইনার এটা কতোদিন হলো জয়েন করেছে?
আশফিঃ মাসখানেক হবে। আর এসব ম্যাটেরিয়াল চুজ করে প্রডাক্টস তৈরির দায়িত্ব ডিজাইনারই নিয়ে থাকে। কিন্তু এতোদিন যাদের সাথে বিজনেস করে এলাম এখন তাদের বাদ দিয়ে অন্য কোম্পানির সাথে কিভাবে ডিল করবো বুঝতে পারছিনা।যেহেতু প্রোডাক্টস গুলো ভালোই হবে ডিজাইনার বললো আবার মূল্য ও কম নিবে তাই ভাবছি ডিলটা করে ফেলবো নাকি।
মাহিঃ আমার মনে হয় তোমার আরো ভালো করে চিন্তা করা উচিত।
আশফিঃকিন্তু এদিকে ওরা অনেক চাপ দিচ্ছে।
মাহিঃ আচ্ছা পরে ভাবা যাবে এসব নিয়ে।আগে যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।তারপর খেতে আসবে।
আশফিঃবলছি শুনোনা?
মাহিঃ আবার কি হলো?
আশফিঃআজকে না ভীষণ ক্লান্ত লাগছে তুমি আমাকে একটু হেল্প করোনা।
মাহিঃ হেল্প?কি কাজে?
আশফিঃএকটু change করিয়ে গোসল করিয়ে দাও আমাকে।
মাহিঃ ফাজলামি তাই না? change করিয়ে দিতে হবে কি সুন্দর কথা?
আশফিঃদিবেনা?
মাহিঃ পারবোনা আমি এসব করতে।
আশফিঃআমি তোমাকে গোসল করিয়ে দিইনা?
মাহিঃ সে তো জোড় করে। আমি কি করিয়ে দিতে বলি?
আশফিঃআচ্ছা সে জোড় করে করিয়ে দিই নাকি জোড় না করিয়ে দিই সেটা কথা না। কথা হলো আমি এখন করিয়ে দিতে বলেছি করিয়ে দিবে।
মাহিঃ ঠিক আছে তাহলে চলো।ভালো করে গোসল করিয়ে দিবো তোমাকে আজকে।
আশফিঃপ্লিজ।
-ও আমার জামা কাপড় খুলে দিয়ে আমাকে গোসল করানোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে।
মাহিঃ দেখো আমি কিন্তু বারবার তোমাকে গোসল করাতে পারবোনা।
আশফিঃ তো আমি ক’বার গোসল করতে চাই তোমার কাছে?
মাহিঃ তোমার তো পছন্দ হয়না।তারপর আবার বলবে ভালো করে গোসল করিয়ে দাও।গোসল করা হয়নি আমার। এরজন্যই তো বললাম আমি বারবার করাতে পারবোনা কিন্তু।
আশফিঃআমার যদি মনে হয় যে আমার গোসল হয়নি তাহলে আমি বলবোনা যে আমাকে আবার গোসল করিয়ে দিতে?আচ্ছা এতো কথা বলার সময় নেই।নাও তাড়াতাড়ি এসো বাথরুমে।
মাহিঃ পাঁজি একটা ওকে গোসল করাতে এসে নিজেই গোসল করে ফেলি।পুরো গায়ে সাবান মেখে আবার আমাকে জড়িয়ে ধরে দুষ্টুমি শুরু করে দিয়েছে।
-আচ্ছা আমি তো ভিজে যাচ্ছি। এরকম করলে আমাকে তো আবার গোসল করতে হবে।ছাড়ো আমাকে।এসব করার জন্যই বুঝি আমাকে গোসল করিয়ে দিতে বলো?
আশফিঃহুম। এক এক সময় এক এক রকম ফিলিংস কাজ করানোর জন্য এক এক রকম জায়গা প্রয়োজন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে