রাগি জামাই পর্ব – ৫

0
4154

রাগি জামাই পর্ব – ৫
লেখা : বৃষ্টি জাহান নীলা ✍
.
.
সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভাঙলো । পাশে তাকিয়ে দেখলাম লোকটা নেই । হয়তো উঠে গেছে আমার আগে ।
সকাল টা বেশ মিষ্টি মিষ্টি লাগছে । হালকা শীত পড়েছে , তাই অনেক বেলা হলেও কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকে সব । এমন সময় গরম গরম কফি হলে বেশ হতো ‌ । কথাটা ভাবতেই লোকটা কফি নিয়ে হাজির ।
– গুড মর্নিং সুইটহার্ট ।
– হুহ

– কি ব্যাপার। সকাল সকাল ভেঙ্গচি দিলা কেন ।
– রাগ আমি রাগ । চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারেন না নাকি ।
– বাব্বাহ , রাতে আদর করলেও রাগ আবার না করলেও রাগ । আমি এখন কোন ফান্দে পরে গেছি।
– রাখেন তো আপনার আজাইরা পেচাল । আগে বলেন,, আমি ঘুমানোর সময় আমার বালিশের পাশে একটা চকলেট রেখেছিলাম । সকালে উঠে দেখি নাই , কোথায় গেলো ?
– কোথায় গেলো ??( বলেই কফির মগ টেবিলে রেখে মাথা চুলকাতে লাগলো )
– হ্যাঁ হ্যাঁ গেলো কোথায় । আজ কাল দেখছি চকলেট ও চুরি হচ্ছে ।
-তো তো তোমার চকলেট কে চুরি করবে ( তুতলিয়ে )
– যে আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমায় ।
– কে ঘুমায়
– নেকা । মনে হয় ওনি জানেন না কে ঘুমায় ।
– তুমি কি আমার কথা বলছো ।
– ??
– আমি তো চকলেট খাই না সোনা । আর আমি কি আমার বাবুনের চকলেট খেতে পারি ??? তুমিই বলো
– কেনো আপনার কি মুখ নাই যে খেতে পারবেন না ।
– আহা বুঝো না কেনো । তোমার চকলেট খেলে আমার ডায়রিয়া হবে । তুমি যে ভাবে অভিশাপ দেও হুম । তোমার চকলেট খাবার সাহস আমার নেই ।
– চকলেটের তো হাত পা নেই যে দৌড়ে পালিয়ে যাবে ‌ । অবশ্যই আপনি খেয়েছেন , হয়তো ঘুমন্ত অবস্থায় খেয়েছেন তাই এখন কিছু মনে পড়ছে না ।
– কি তুমি আমাকে ঘুমন্ত চোর বানিয়ে দিলে । শেষ পর্যন্ত বউয়ের কাছ থেকে এই মিথ্যা অপবাদ শুনতে হলো । হে আল্লাহ আমি আর বাঁচতে চাই না ‌। নিয়ে যাও আমাকে
– হইছে এতো ঢং করতে হবে না।
– কি করবো তাহলে।
– আজকে আমার জন্য আরো বেশি করে চকলেট নিয়ে আসতে হবে ।
– যথা আগ্গা মেডাম । এইবার চকলেট চুরি হলে আমার দোষ নেই কিন্তু ।
– হ্যাঁ আমি এতো বোকা না হুহ এইবার সব চকলেট গোপন যায়গায় লুকিয়ে রাখবো
– পিচ্চি হলে কি হবে মাথায় বেশ বুদ্ধি ( আস্তে আস্তে)
– কিছু বললেন মনে হয়।
– না না ।
– কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে । যান গরম করে নিয়ে আসুন ।
– এতো সখ করে বিয়ে করলাম । কই বউ আমার একটু আদর যত্ন করবে তা না আমি নিজেই বউয়ের সেবা করে মরছি । আল্লাহ ( গাল ফুলিয়ে )
– আবারো কিছু বললেন মনে হলো ।
– না না , তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো । আমি গরম কফি আনছি ।
– হুম হুম
ওয়াসরুমে গিয়েই হাসিতে লটোপুটি খাচ্ছি । মিথ্যা অপবাদ দিয়ে বেশ বোকা বানিয়ে দিলাম লোকটাকে । আসলে আমার চকলেট আমি নিজেই খেয়ে ঘুমিয়েছি । আর দোষ পড়লো নিষ্পাপ রাগি জামাইয়ের উপর । ব্যাটাকে এইভাবেই যব্দ করতে হবে।
একটু একটু ভালোলাগা তৈরি হচ্ছিলো । ফ্রেস হয়ে নিচে নামলাম । নিচে গিয়ে দেখি ওনার ছোট বোন স্বর্ণা এসেছে । স্বর্ণা খুব মিশুক একটা মেয়ে । আমরা এক সাথেই লেখাপড়া করছিলাম । ওকে দেখেই গল্প জুড়ে দিলাম । একসাথে লাঞ্চ করলাম তিনজন ‌। ওনি বিকেলে অফিসে যাবার জন্য তৈরি হচ্ছে । এমন সময় স্বর্ণা তার ভাইয়ার কাছে বায়না ধরেছে শপিং এ যাবে ।
– ভাইয়া আমি শপিং করতে যাবো ।
– কাল নিয়ে যাবো ।
– না আজ যাবো ।
– কিন্তু আমার তো অফিসে একটা জরুরি কাজ আছে বোনটি । কালকে যাই প্লীজ
– আমি ভাবির সাথে যাবো ।
লোকটা অন্য কিছু বলতে পারলো না। জানে বোন কষ্ট পাবে । আর ওনি ওনার বোনকে খুব ভালো বাসেন ।
– ঠিক আছে ভাবিকে নিয়ে যা ।
আর তুমি একদম ভুলেও পালানোর চেষ্টা করোনা। তোমার দিকে সবসময় আমার লোকেরা নজর রাখবে ওকে সোনা ( কথাটা আমাকে কানের কাছে এসে আস্তে করে বললো )
আমিও মাথা নেড়ে ঠিক আছে জবাব দিলাম ।
বিকেল বেলা আমরা বেড়িয়ে পড়লাম শপিং এর উদ্দেশ্যে । আমি আর স্বর্ণা মন ভরে শপিং করতে থাকলাম । আমার জন্য কয়েকটি শাড়ি আর থ্রি- পিস, আর ওনার জন্য শীতের জন্য একটা চাদর কিনে নেই। খুব ভালো লাগছে । শপিং মল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠতে যাবো এমন সময় শাউনের সাথে দেখা । একসাথে এক স্কুলে লেখাপড়া করতাম আমরা , বেষ্টফ্রেন্ড ছিলাম। কলেজে উঠে আলাদা হয়ে যাই । অনেক দিন পর দেখা । দেখতে পেয়েই জরিয়ে ধরলো । এটা শুধুমাত্র একজন বন্ধুর মতো । যার মধ্যে অন্য কিছু ভাবতে পারিনি আমি । ওর সাথে প্রায় এক ঘন্টা কফি শপে কথা বললাম সাথেও স্বর্ণাও ছিলো, সেই ছোট্ট বেলার পুরোনো দুষ্টুমির কথা জুড়ে দিলাম আমরা তিনজন। আমরা ৬ টার দিকে বাসায় পৌঁছাই । বাসায় গিয়েই সবাইকে আমাদের শপিং দেখালাম। ঠিক ৭ টার সময় ওনি বাসায় পৌঁছালেন। আমি আর স্বর্ণা টিভি দেখছি । ওনি আমাদের দিকে তাকালেন না । সোজা উপরে নিজের রুমে চলে গেলেন ‌। সেটা নিয়ে অতোটা মাথা ঘামাইনি আমি । ১০.৩০ বাজে আমি আর স্বর্ণা সিরিয়াল দেখছি । উপর থেকে একবার জোরে চেঁচিয়ে বললো লোকটা ” নীলা রুমে আসো তো ”
আমি এই কথায় কোনো পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো টিভি দেখে চলছি । ৩০/ ৩৫ মিনিট পর লোকটা নিচে নেমে আমার সামনে এসে দাড়ালো ‌। চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে আছে । আমি এই রাগের কারণ খুঁজে পেলাম না । আমার ঠোঁট কাঁপছে । কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বললাম ।
– আমি এখনি উপরে যেতাম
কথা বলে শেষ ও করতে পারলাম না । ঠাসস্ ঠাসস্ করে দুই গালে দুইটা থাপ্পড় দিলো । স্বর্ণা ভয়ে কাঁপছে । ওকে ধমক দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলো লোকটা। আমার চোখে পানি টলটল করছে ।
কিছু না বলেই আমার চুল টেনে ধরলো ।
– একবার একটা কথা বললে সাথে সাথে সেটা তোকে করতে হবে । ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নে কথাটা ।
আমি চুপ , কারণ আমি এই রাগের কারণ বুঝতে পারছি না । লোকটা আমার চুলের মুঠি ধরে টেনে সিঁড়ি দিয়ে উপরে নিয়ে গেলো ।
– আমার কাছে তুই সুখী না ‌ । আগে বললেই পারতি তোর গায়ে অনেক জ্বালা । আমি না হয় মিটিয়ে দিতাম । আমি তো কাপুরুষ না তুই ভালো করেই জানিস
-…………( আমার মাথায় কিছুই ঢুকছিলো না )

– তোর শপিং তো ৫ টার সময় শেষ হয়ে গেছে । তাহলে বাড়িতে ৬ টায় ফিরলি কেনো ।
– …….
– কোনো উত্তর নেই ??? হুম আজকাল ছেলেদের সাথে জড়াজড়ি করতেও মন চায় তোর । কিরে পরপুরুষের সাথে করতে পারলে নিজের স্বামীর সাথে পারবিনা কেনো ।
অন্যের বিছানায় শুতে পারলে আমার বিছানায় শুতে এতো সমস্যা কেন তোর ।
আমার মুখে কোনো কথা আসছে না । মানুষরে ভাবনা এতো নিচ কিভাবে হতে পারে । এতো খারাপ চিন্তা ভাবনা । এ লোকটা কিভাবে আমাকে ভালোবাসতে পারে । সকালে এক রূপ রাতে এক রূপ। ঘন্টায় ঘন্টায় রূপ পরিবর্তন । মাথা টা ঘুরছে।
– চুপ কেনো তুই , কিছু বল ( গাল টিপে কথা গুলো বলছে )
আমার চোখ পানিতে ভরে গেছে । শুধু ঝড়ার অপেক্ষা ।
– তোকে যে কি করতে ইচ্ছে করছে আমার । এই আমার কি নেই যা ঐ ছেলের মধ্যে আছে । বল
টেনে শাড়িটা খুলে ফেলেছে ।তোর কোথায় কোথায় হাত দিয়েছে তোর ঐ প্রেমিক । এইখানে , এইখানে , এইখানে ( হাত দিয়ে দেখাচ্ছে আর চিল্লাচ্ছে ) ।
তুই তো অপবিত্র হয়ে গেছিস । তোকে এখন পবিত্র করতে হবে।
আমি কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারিনি। শুধু অবাক হয়ে দেখছিলাম মানুষটাকে । এখন তো আমার অবাক হওয়ারই পালা ।
একটা মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি । লোকটা আমাকে টেনে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো । রাত ১২ টা বাজতে চললো । ঝর্ণার নিচে নিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দিলো ।
– সারারাত তুই এই পানির নিচে দাঁড়িয়ে থাকবি । ভুলেও এর নিচে থেকে সরবি না । কথাটা মাথায় রাখিস
– আমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি ।
– বায় সুইটহার্ট । উম্মাহ
বলেই চলে গেলো
এটা কি আসলেই ভালোবাসা । এমনিতেই শীতের সময় । পানি বরফে পরিনত হয়েছে । হে আল্লাহ আমি তোমার কি এমন ক্ষতি করেছিলাম । কেনো তুমি এতোটা কষ্ট দিচ্ছো আমায় । দেখা যাক এই অত্যাচার কতদিন চলতে থাকে ।
.
.
. চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে