পুরোনো_ভালোবাসা   পার্ট: ১৫

0
1902

পুরোনো_ভালোবাসা

পার্ট: ১৫

#Rabeya Sultana Nipa

 

__নিশু! নিশু! কোথায় তুমি?শিহাবের ডাকে নিশু সাড়া না দিয়ে চা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।

নিশু -বউকি কোথাও পালিয়ে যাচ্ছে?চা আনতে সময়তো লাগে তাইনা?

শিহাব -ওহ সরি।আসলে অনিক ফোন করেছে ও নাকি সন্ধ্যায় আসবে।তাই তোমাকে ডাকছি,তোমার আবার রান্না করতে হবে না।
নিশু -অঅ অঅ অনিক কেন আসবে?(একটু তোতলিয়ে)

শিহাব -তোমার আবার কি হলো? তোতলাচ্ছো কেন?আমি বাহিরে যাচ্ছি আমার আসতে হয়তো দেরি ও হতে পারে, তুমি ভালোভাবে কথা বলবে।

কথাটা বলেই শিহাব চা টা খেয়ে বেরিয়ে গেল।নিশু কি করবে বুজতে পারছে না।অনিক এখানে আসতে চাইছে কেন? ও কি আবিরের ব্যাপারে কিছু বুজে পেলেছে?ওহ কিছু ভালো লাগছেনা।শিহাবটাও না কি? ও কি বুজে এই রকম করে নাকি না বুজেই করে আল্লাই ভালো জানে।কথা গুলো ভাবতে ভাবতে নিশু রান্নাঘরে গেলো।যখন আসবেই ওর পছন্দ মত কিছু রান্না করি।

ইয়াসমিন বেগম নিশুকে রান্না করতে দেখে বললো
কেউ আসবে নাকি নিশু?

নিশু -মা! অনিক আসবে একটু আগে শিহাব বলে গেলো তাই রান্না করছি।কিন্তু তুমি রেডি হয়ে কোথায় যাচ্ছো?

ইয়াসমিন বেগম -তোর মামা ফোন করেছে তোর নানু নাকি অসুস্থ তাই ভাবলাম দেখে আসি।কিন্তু অনিক কেন আসবে এইখানে?

নিশু-কি বলবো মা? শিহাবটাও না,কিছু বুজতে চায় না।তুমি চিন্তা কোরো না আমি সামলিয়ে নিবো।তুমি যাও।বেশী অসুস্থ হলে ফোন দিও,আমি আর শিহাব গিয়ে দেখে আসবো।

ইয়াসমিন বেগম -আচ্ছা ঠিক আছে।আমি তাহলে আসি।কথা গুলো বলতে বলতে ইয়াসমিন বেগম চলে গেলো।

__আবির বসে বসে খেলছে।আর নিশু খেলনা গুলো গুছিয়ে রাখছে।

নিশু -আবির! চলো এখন পড়তে বসবে।তোমার বাবাই এসে যদি দেখে তুমি পড়তে বসো নাই,পরে আর কোনো খেলনা কিনে দিবেনা।চলো আবির এখন আর কোনো খেলা নয়।আবিরকে কোলে নিয়ে দাঁড়াতেই কলিং বেল বেজে উঠলো।

নিশু -ওহ এখন আবার কে এলো?তুমি এখানে বসো আমি দেখছি।

আবির -মা! বাবাই আসছে।আমি দরজা খুলবো।বলেই কোল থেকে নেমে গেলো।

নিশু -আচ্ছা বাবা,তুমি দরজাটা খুলো।আমি ওই রুম থেকে আসছি।

_মা! মা!দেখ আমার জন্য কি এনেছে? কথা বলতে আবির নিশুর কাছে এলো।
নিশু তাকিয়ে দেখে অনেক গুলো খেলনা,চকলেট, আরো অনেক কিছু।

নিশু-তোমার বাবার তো কোনো কাজ নাই,তোমাকে আদর দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলতেছে।আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন।
কই তোমার বাবাই কই? শিহাব!! শিহাব! তুমি এতো কিছু কেন***-। কিছুক্ষণ অনিকের দিকে তাকিয়ে একি আপনি? সরি আমি ভাবছিলাম শিহাব।কিন্তু আপনি ওর জন্য এতো কিছু কেন এনেছেন?

অনিক -ওর জন্য আনবোনা তো কার জন্য আনবো?এতো তোমার সমস্যা কথায়?দেখচ্ছি অনেক ভালোই আছো?

নিশু -ভালোতো আছি।কিন্তু ওর জন্য আপনি কেন আনবেন? ওর বাবাই ওর জন্য অনেক খেলনা আনে।আপনার এইগুলো না আনলে খুশী হতাম।

__এমন সময় শিহাব বাহিরে থেকে এসে দেখে দরজা খোলা,অনিক বসে আছে আর নিশু দাঁড়িয়ে কথা বলছে।শিহাব ভিতরে না গিয়ে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে দুজনের কথা শুনছে।

অনিক-সত্যি কি শিহাব আবিরে বাবা?

নিশু-(নিশু অবাক হয়ে)আপনি কি বলতে চাইছেন? আর হ্যা শিহাবই আবিরের বাবা।

অনিক-তোমার আর শিহাবের বিয়ের ৩ বছর চলে,কিন্তু আবিরের ৫ বছর কিভাবে?নিশু! আমি জেনে গেছি আবির আমার ছেলে।

_কথাটা শুনেই শিহাবের মনে হলো কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে পেলে দিয়েছে।মনে মনে ভাবছে এই হতেই পারেনা। আবির আমার ছেলে।আমি ওর বাবা,আমি ওর সব।

নাশু -না! (চিৎকার দিয়ে)শিহাব আবিরের বাবা।আপনি কি চান বলেনতো? আপনি কেন আমার জীবনে ফিরে এসেছেন? আমি তো সব কিছু ছেড়ে চলেই এসেছি।আপনার পরিবার এখন অনেক ভালো আছে।এর চেয়ে ভালো আপনি বিয়ে করে নতুন করে জীবন শুরু করেন।আমদেরকে শান্তিতে থাকতে দেন।

অনিক-আমি এখন কিছুই চাই না।শুধু আমার ছেলেকে চাই।তুমি আর শিহাব ভালো থাকো,কিন্তু আমার ছেলেকে আমাকে দিয়ে দাও।আমি ওকে নিয়ে দেশের বাহিরে চলে যাবো।

নিশু -আপনি পাগল হয়ে গেছেন।আমি মা হয়ে ওকে রেখে থাকতে পারবো? শিবাব ওকে ছাড়া মরেই যাবে।প্লিজ আপনি চলে যান,আর কখনো আসবেননা।

__শিহাব কিছু না বলে ভিতরে এসে বললো,আরে অনিক তুই কখন এলি?কেমন আছিস বল?শিহাব এমন ভাবে কথা বলছে মনে হচ্ছে ও কিছু শুনেই নাই।

নিশু -শিহাব! আগে ফ্রেশ হয়ে নাও। পরে দুজনে একসাথে বসে গল্প করো।

আবির দৌড়ে এসে শিহাবের কোলে উঠে গেলো।

আবির -বাবাই তুমি এসে গেছো।দেখো আংকেল আমার জন্য কতো খেলনা এনেছে।

শিহাব -তাই!আংকেলকে thanks বলছো।কথাটা বলেই আবিরকে আদর করলো শিহাব।

অনিক -আমাকে thanks বলার দরকার নাই।এইগুলো ওরেই প্রাপ্য।জানিস শিহাব আমাদের জীবনে এমন অনেক জিনিস আছে যা নিজের তুবুও নিজের বলে দাবি করতে পারিনা।নিজের জিনিস গুলো নিয়ে নিজেরা সুখী থাকতে পারেনা।কিন্তু অন্যরা ঠিকি সুখি হয়।
__নিশু কথা ঘুরানোর জন্য শিহাব তুমি এখনো দাঁড়িয়ে থাকবে? যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।

শিহাব -(বুজতে পেরে) ওকে জান।অনিক তুই একটু বস এখুনি আসছি।

শিহাব চলে যাওয়ার পরে নিশু অনিকের দিকে তাকিয়ে বললো আপনাকে বললাম না উল্টাপাল্টা কোনো কথা বলবেন না।শিহাব অনেক সহজ সরল।এমন কিছু করবেন না যাতে শিহাব কষ্ট পায়।

অনিক -কিছু আমি বলতে চাই না। আমি শুধু আমার ছেলেকে ফেরত চাই।তুমি বলো আমার সামনে আমার ছেলে অন্য কাউকে বাবা বলে ডাকছে এইটা আমি কিভাবে সহ্য করবো?

নিশু -আমি কিছু বুজতে চাইনা,আমি শুধু বুজি শিহাবই ওর বাবা।শিহাবই ওর সব।

শিহাব ফ্রেশ হয়ে এসে বললো নিশু ক্ষুদা লাগছে।আমাদের খেতে দাও।
নিশু টেবিলে একে একে সব খাবার এনে রাখলো।অনিক খাবার গুলো দেখে অবাক হয়ে নিশুর দিকে তাকিয়ে আছে।

শিহাব -আরে আমার বউয়ে দিকে এইভাবে কি দেখছিস,তোর নজর লেগে যাবে।

অনিক-নজর লাগার জন্য দেখছি না।আমি ভাবছি তোর বউ কিভাবে জানলো আমার প্রিয় খাবার এইগুলো।

শিহাব -এতোকথা না ভেবেই খাবার শুরু কর।আমার বউরে হাতের রান্না খেয়ে দেখ সারা জীবন মনে থাকবে।নিশু অনেক ভালো রান্না করে।

অনিক আর কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে নিলো।মনে মনে ভাবতেছে রান্নার দরকার হবে না এমনেতেই সারা জীবন ভুলতে পারবোনা।আর আমার ছেলেকেতো নয়।যেই করেই হক আমি আমার ছেলেকে আমার কাছে নিয়ে যাবো।

শিহাব -এতো কি ভাবছিস তুই বলতো?

অনিক-কিছুনা,আজ তাহলে আসি।তোর সাথে এখন আমার বার বার দেখা হবে।

নিশু কিছু না বলেই আবিরকে নিয়ে রুমে চলে আসলো।শিহাব অনিককে বিদায় দিয়ে রুমে এসে দেখে নিশু আবিরকে ঘুমা পাড়াচ্ছে।কিছু না বলে নিশুর পাশে এসে বসলো।একনাগাড়ে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে শিহাব। যেন চোখের পলক ফিরাতে মন চাইছেনা।আবিরকে একটু আদর করতে ইচ্ছে করছে।শিহাব আবিরে কাছে গিয়ে কপালে একটা চুমো দিয়ে দিলো।

নিশু -শিহাব কি করছো তুমি? আবির জেগে যাবেতো।

শিহাব -কি করবো বলো? মনে হচ্ছে কেউ আমার কাছ থেকে আমার ছেলেটাকে আলাদা করার চেষ্টা করছে।নিশু “” আমি তো আবিরকে ছাড়া থাকতে পারবোনা,আমি আমার থেকেও তোমাদের বেশী ভালোবাসি।
নিশু!তোমার মনে আছে? যেই দিন আমি তোমাকে প্রথম দেখে ছিলাম,তখন তুমি pregnant ছিলে।ডেলিভারি করানোর জন্য hospital গিয়েছিলে।তখন ব্লাডের জন্য তোমার বাবা পাগলের মতো হয়েগেছিলো কোথাও ব্লাড পাওয়া যাচ্ছিলোনা শুনে।সেইদিন আমিও আমার এক ফ্রেন্ড সহ এসেছিলাম তার মাকে দেখার জন্য।তার পর তোমার বাবাকে পাগলের মতো করতে দেখে আমি জিজ্ঞাস করলাম কি হয়েছে ওনার।তারপর ওনি সব খুলে বললেন,ভাগ্যে ভালো যে আমার সেই ফ্রেন্ড তোমাকে ব্লাড দিয়ে বাঁচিয়ে ছিলো।

চলবে,,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে