ধর্ষিতা_বউ পার্ট: ১

0
8161

ধর্ষিতা_বউ

পার্ট: ১

#Rabeya Sultana Nipa

 

__আজ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। তবে একটুও খারাপ লাগছে না।হালকা হালকা বাতাস বইছে, চারদিকে পাখীরা কিচিরমিচির করে ডাকছে,মনে হচ্ছে এই সন্ধ্যা নেমে এলো বুজি।কিন্তু না এখন মাত্র বিকাল হয়েছে।
সত্যি ভালো লাগার মতো বিকাল।আমি মাঝে মাঝে অপেক্ষা করে থাকি এইসময়টার জন্য।কেন জানেন? আমার একটা পাগলি আছে ও এইরকম সময় তার খুব পছন্দের।ওহ্ঃ অফিস কখন শেষ হবে আর কখন পাগলীর মুখ খানা দেখতে পাবো।কারণ এই মেঘাচ্ছন্ন বিকেলবেলা পাগলী বারান্দায় ইজিচেয়ারটায় হাতে একমগ কফি নিয়ে বসে। যতোক্ষণ না কফি শেষ হবে ততোক্ষণ বসে বসে দুলবে। তবে আমি পাশে থাকলে অন্য ব্যাপার। পাগলীর কথা গুলো ভাবছি আর অফিসে ফাইল গুলো দেখে শেষ করছি।

পিছন দিক থেকে অভ্র এসে বললো কিরে বাড়ী যাবিনা অফিস তো ছুটি।
অভ্রর কথা শুনে উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাগ গুছাতে গুছাতে আর বলিস না আমার পাগলীর কথা ভাবতে ভাবতেই খেয়াল করিনি।আচ্ছা এইবার চল।দেখেছিস আমার পাগলীর কথা ভাবতে ভাবতেই পাঠকদের পরিচয়টাই দেওয়া হলোনা।যাইহোক বাড়ীতে যেতে যেতে আমার পরিচয়টা দিয়েই পেলি।
_আমি ইকাবাল মাহমুদ আয়ান, বাবা মায়ের ৪ নাম্বার সন্তান, দুই বোন দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোটো আমি।পড়া লেখা শেষ করে একটা কম্পানির এমডি তে জয়েন করেছি।আর যাকে পাগলী পাগলী বলছি সেই সত্যিকারের পাগলি নয়,সেই আমার মনের রাজ্যের পাগলী,মানে আমার বউ মিফতাহুল জান্নাত প্রাপ্তি।চাকরী সূত্রে আমি প্রাপ্তিকে নিয়ে ঢাকায় থাকি অবশ্য অরো অনেক কারণও আছে সেই গুলো আস্তে আস্তেই জানতে পারবেন।আর অভ্র তার কথা না বললেই নয়,কারণ এই অচেনা শহরে যখন আমি এসেছিলাম তখন এই অভ্রই আমার সব ছিলো আর কাউকেই তেমন আপন ভাবে পাইনাই।যাইহোক আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে বাসায় চলে আসলাম। সামনের দরজায় দাঁড়িয়ে ভাবলাম কলিংবেল বাজিয়ে পাগলীটাকে ডিস্টার্ব করবোনা। আমার কাছে যে বাড়তি চাবিটা আছে ওইটা দিয়েই দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম।আরেকটা কথা না বললেই নয়।আমার পাগলীকে আমি যতোই ভালোবাসি না কেন ও আমার সাথে কথা বলেনা, তারও একটা কারন আছে আস্তে আস্তে এটাও জানবেন।বাসার ভেতরে ঢুকেই আস্তে করে দরজাটা লাগিয়ে দিতেই আমাদের কাজের মেয়ে রেশি এসে বললো, ভাইয়া, আপনি কলিংবেল না বাজিয়ে এইভাবে আসলেন কেন?ওর কথা শুনে দরজাটা আটকিয়ে পিছনে ফিরে বললাম আমি আসেছি জানলে তোর ভাবী এসে দরজা খুলতো তাই ওকে ডিস্টার্ব করতে চাইনি।তোর ভাবী তো এখন বারান্দায় তাইনা?

রেশী -হুম ভাইয়া, ভাবী এই সময় তো বারান্দায় বসে থাকে।
রেশীর কথাটা শুনে না দাঁড়িয়ে রুমে গেলাম।হাতের ব্যাগটা রেখে বারান্দার দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম মেঘাচ্ছন্ন আকাশ মৃদু হাওয়া তার চুল গুলো বার বার চোখের উপরে এসে পড়ছে আর ও সরিয়ে দিচ্ছে। সত্যি আমার বউটাকে কতোটা মায়াবী লাগছে বলে বুজানো যাবেনা।ইচ্ছে করছে বউ টাকে জড়িয়ে ধরে একটু আদর করি।কিন্তু না ওকে তো ছোঁয়া আমার নিষেধ, ও নিজেই সে নিষেধটা করেছিলো।
অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর বউটার নজর পড়লো আমার দিকে।আমাকে দেখে তড়িঘড়ি করে আমাকে সরিয়ে রুমে এসে তোয়ালে টা ধরিয়ে দিয়ে ইশারায় ওয়াশরুম দেখিয়ে দিলো।আমিও ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।প্রাপ্তিও রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

রেশী! রেশী! প্রাপ্তির ডাকে রান্নাঘর থেকে দৌঁড়ে এলো রেশী।

রেশী -ভাবী আপনি কিছু বলবেন?

প্রাপ্তি -তোমার ভাইয়া যখন আসছে আমায় ডাকোনি কেন?

রেশী -ভাবী আমিও তো দেখেনি, যখন ভাইয়া ভেতরে ঢুকে দরজা আটকাচ্ছিলো তখন দেখেছি।আমি বলেও ছিলাম কলিং বেল বাজায়নি কেন? ভাইয়া বলেছে আপনাকে ডিস্টার্ব করতে চায়নি তাই।

প্রাপ্তি -আচ্ছা ঠিক আছে, ওর জন্য কফি বানিয়েছ?
রেশী- জ্বী ভাবী, আমি নিয়ে আসছি।

আয়ান ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়িয়ে চুল গুলো মুছচ্ছে।
প্রাপ্তি কফিটা নিয়ে এসে পাশে দাঁড়িয়ে আয়ানকে এক অপলক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।প্রাপ্তির ইচ্ছে করছে আয়ানের চুল গুলো এলোমেলো করে দিতে।ইচ্ছে করছে আয়ানের চোখ রেখে বলতে আয়ান! আমিও তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি।কিন্তু না! আমার মতো মেয়ের তো কোনো ইচ্ছে থাকতে নেই।আমি তো,,,,,,,আমি তো,,,,,,,কথাটা ভাবনার জগতে বলার আগেই আয়ান বললো কি হলো কফিটা কি ঠাণ্ডা করে ফেলবা? আমাকে দিবেনা? আয়ানের কথা শুনে প্রাপ্তি ভাবনার জগত থেকে ফিরে এসে, আয়ানের হাতে কফিটা দিলো।আয়ান মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে একটা কথা বলবো রাগ করবে নাতো?
প্রাপ্তি মাথা নাড়িয়ে বুজালো না।

আয়ান -আজ তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে।জানি এর কোনো আনসার আমি পাবোনা।তবে মাঝে মাঝে মনে হয় একটা বোবা মেয়ে বিয়ে করা ভালো ছিলো।কথাটা বলেই আয়ান একগাল অট্র হাঁসিতে ঢোলে পড়লো।
প্রাপ্তি কিছু না বলে রুমে চলে আসলো। প্রাপ্তির অনেক কান্না করতে ইচ্ছে করছে কিন্তু না ভালোবাসার মানুষের কথায় কাঁদতে নেই।রাগ করতে নেই, তবে হ্যাঁ শুধু অভিমান করা যায়।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে বাহিরে প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে।আয়ানের মনের কষ্টটা কাউকে দেখানোর মতো না। সবার বিরুদ্ধে গিয়ে প্রাপ্তি সাথে সংসার করে ঠিকে কিন্তু আজও মেয়েটার কাছ থেকে কোনো ভালোবাসায় পায়নি।প্রাপ্তি জোরেশোরে বৃষ্টি হচ্ছে দেখে বারান্দায় দরজা আটকাতে গিয়ে দেখে আয়ান এখনো দাঁড়িয়ে আছে।প্রবল বাতাসের কারণে বৃষ্টি বারান্দায় পর্যন্ত এসে গেছে।আয়ানও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজচ্ছে।
প্রাপ্তি পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই আয়ান বললো, ভিজতেছো কেন ঠাণ্ডা লেগে যাবে তো।যাও রুমে যাও।

প্রাপ্তি -অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে আপনার ঠাণ্ডা লাগে যাবে।অনেকক্ষণ থেকেই তো ভিজেই চলেছেন।এইবার রুমে আসুন।

আয়ান প্রাপ্তির দিকে মুখ ফিরিয়ে বৃষ্টিতে ভেজাটাই দেখলা মনের যে ঝড় বইছে সেটা দেখতে পাচ্ছ?

প্রাপ্তি- (অসহায়র মতো করে)প্লিজ রুমে চলুন।

আয়ান -জানো বৃষ্টিতে ভিজাতে তোমার মুখের কয়েকটা শব্দ শুনতে ফেলাম এইটাই আমার জন্য অনেক।

আয়ান রুমে এসে চেঞ্জ করে ড্রইংরুমে সোপায় গিয়ে বসলো।পাশে থাকা ফোন বেজে উঠতেই ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে দেখে মা আয়েশা বেগম ফোন করেছে।আয়ান দেরী না করে ফোন রিসিভ করেই

আয়ান- আসসালামু আলাইকুম। মা কেমন আছো তুমি?

আয়েশা বেগম – ওয়ালাইকুম সালাম।আমি ভালোই আছি।তবে তোর বাবা অসুস্থ।

চলবে,,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে