জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৬

0
2049

জীবনের_ডায়েরি পার্ট: ১৬

লেখিকা: সুলতানা তমা

 

রাতে বারান্দায় বসে আছি হঠাৎ আব্বুদের রোমে চেঁচামেচি শুনা গেলো
আব্বু: তুমি এতো নিচে নামলা কিভাবে তমা তো তোমারও মেয়ে কিভাবে পারলা ওর হাত পুরতে
আম্মু: আমি তো আমার ভুল বুঝতে পারছি আমাকে ক্ষমা করে দাও
আব্বু: যে কাজ করেছ তুমি ক্ষমার অযোগ্য
আম্মু: আর এমন হবে না তমা কে আমি নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসব তুমি বললে তমার কাছেও ক্ষমা চাইবো
আব্বু: এইটা তোমার ইচ্ছা কিন্তু মনে রেখো আর কোনো দিন আমার মেয়ের উপর অত্যাচার করলে এই বাসা থেকে তোমাকে চলে যেতে হবে

আবার সব নীরব হয়ে গেলো বুঝলাম না আম্মু হঠাৎ এতো ভালো হয়ে গেলো কেন, না জানি এই মহিলার ভিতরে কোন খারাপ মতলব চলতেছে, এসব ভাবছি তখন আব্বু আসলেন
–কি করছিস
–এইতো বসে আছি
–আমাকে তো কাল চলে যেতে হবে
–হুম
–তোর আম্মুর কথায় তো বুঝা যায় ভুল বুঝতে পারছে
–হয়তো
–আর কখনো মিথ্যে বলিস না তোর আম্মু খারাপ ব্যবহার করলে আমাকে বলিস
–ঠিক আছে

দেখতে দেখতে একটা সপ্তাহ কেটে গেলো শ্রাবণের ফোন এখনো বন্ধ অসুস্থতার জন্য কলেজেও যেতে পারিনি জানিনা ওর কি হয়েছে, হাতটা অনেকটা কমেছে এই এক সপ্তাহ আম্মু কোনো খারাপ ব্যবহার করেনি আমাকে প্রতি বেলা নিজের হাতে খাইয়ে দিয়েছে

রাতে বারান্দায় বসে আছি আর শ্রাবণের কথা আনমনে হয়ে ভাবছি ওর ফোন বন্ধ কেন ও কি আমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে, হারাবে কেন ও তো আমাকে ভালোবাসে কি করে এতো দিন কথা না বলে থাকতে পারতেছে, এসব ভাবছি আর দুচোখ বেয়ে পানি ঝরছে হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো, শ্রাবন ফোন দিয়েছে তাড়াতাড়ি রিসিভ করলাম
–হ্যালো
–হুম
–এতো দিন কোথায় ছিলে ফোন বন্ধ ছিল কেন
–এমনি
–মানে এমনি ফোন বন্ধ করে রাখছিলা কেন
–বললাম তো এমনি
–কি হয়েছে তোমার
–কিছু না তোমার হাত কমেছে
–তোমার ফোন তো বন্ধ ছিল আমার হাত পুরার কথা জানছ কিভাবে
–জেনেছি কোনো ভাবে দেখা করতে পারবা
–কখন
–এখনি
–এতো রাতে
–হুম তোমার সাথে কিছু কথা আছে একটু পর ছাদে এসো
–হুম
ছাদে গেলাম ও দারিয়ে আছে
–শ্রাবন
–তোমার হাতটা দেখাও
–নাহ দেখতে হবে না
–কেন
–এতো দিন কথা না বলে যখন থাকতে পারছ এখন হাত দেখে কি করবা
–হুম (আমি স্পষ্ট দেখছি ও চোখের পানি লোকানোর চেষ্টা করছে)
–কি হয়েছে বলবা
–তমা তুমি আমাকে ভুলে যাও
–মানে কি বলছ তুমি এসব
–ঠিকি বলেছি ভুলে যাও আমার পক্ষে রিলেশন রাখা সম্ভব না
–কিন্তু কেন
–এমনি
–তুমি কি বলছ বুঝতে পারছ
–হ্যা ভুলে যাও বিয়ে করে নাও সুখি হবা
–এই তুমি কি সেই শ্রাবন যে আমার জন্য সুইসাইড করতে চাইছিলা
–নাহ আমি পাল্টে গেছি ভুলে যেও আমাকে ভালো থেক বলেই চলে গেলো

ওর কথা গুলা আমার কানে এখনো বাজতেছে ওকে নাকি ভুলে যেতে হবে কিভাবে ভুলবো আমার সব স্বপ্ন তো ওকে ঘিরে কিভাবে বাঁচবো ওকে ছাড়া, সারা রাত চোখে ঘুম আসেনি দুইটা চোখ যেন আজ বন্যা হয়ে গেছে কাঁদতে কাঁদতেই সকাল হলো নির্ঘুম রাত যে কতটা কষ্টের আজ বুঝেছি, রিয়াকে ফোন দিলাম
–হ্যালো
–কিরে তোর কন্ঠ এমন শুনাচ্ছে কেন
–আমাদের বাসায় আসতে পারবি
–কি হয়েছে
–বাসায় আয় বলবো
–আচ্ছা রাখ আসছি

একটু পর রিয়া আসলো
–কিরে এতো সকালে আসতে বললি
–রিয়া আমার সব শেষ হয়ে গেছে (ওকে জরিয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম)
–কি হয়েছে বলবি তো
–শ্রাবন বলেছে ওকে ভুলে যেতে
–মানে কেন
–ওর পক্ষে নাকি রিলেশন রাখা সম্ভব না ভুলে যেতে বলেছে আমি ভুলবো কিভাবে ওকে তো অনেক ভালবেসে ফেলছি
–ও হঠাৎ পাল্টে গেলো কেন
–জানিনা
–আচ্ছা কান্না থামা ওর সাথে আমি কথা বলে দেখি
–হুম
–চল আজকে কলেজে যাই তোর অসুস্থতার জন্য তো এতোদিন আমিও যাইনি আর শ্রাবণের সাথে দেখা হলে জিজ্ঞাসা করবো কেন এমন করছে
–আচ্ছা
কলেজে শ্রাবণের সামনে দারিয়ে আছি আমি আর রিয়া
রিয়া: শ্রাবন এসব কি শুনছি
শ্রাবন: যা শুনেছ তাই সত্যি
রিয়া: হঠাৎ এমন করছ কেন
শ্রাবন: আমি চাই না এই রিলেশন আর রাখতে
রিয়া: তুমি না ওকে ভালোবাস ওর জন্য মরতে চাইছিলা
শ্রাবন: হুম কিন্তু এখন আর ভালোবাসি না
আমি: বাহ প্রথম ভালোবাসা পাবার জন্য হাতের শিরা কাটবা আর পরে ভালো না লাগলে ছুড়ে ফেলে দিবা
রিয়া: ও তো ওর কষ্ট গুলা নিয়ে ভালই ছিল কেন আসছিলা ওর জীবনে কষ্টটা কে দ্বিগুণ করতে
শ্রাবন: দেখ আমি একসময় তোমাকে ভালোবাসতাম এখন আর বাসি না আমাকে ক্ষমা করে দিও ভালো থেক বলেই হনহন করে চলে গেলো
আচ্ছা ও যে শেষ কথাটা বলে গেলো “ভালো থেক” চাইলেই কি আমি ভালো থাকতে পারবো, ও কি একটা বার বুঝতে চাইছে আমার ভালো থাকা যে ওকে ঘিরে, ভালো থেক বলা সহজ কিন্তু সব ভুলে ভালো থাকা অনেক বেশি কঠিন

দেখতে দেখতে দুইটা সপ্তাহ কেটে গেলো শ্রাবন আর আমাকে ফোন করেনি আমি অবশ্য বেহায়া হয়ে অনেক বার ফোন করেছি কিন্তু ফোনটা বন্ধ, দুপুরে ছাদে বসে আছি আর শ্রাবণের সাথে করা খুনসুটি গুলা মনে করে নিজের অজান্তেই হাসছি, আম্মু আসলো
–তোর কি হয়েছে কদিন ধরে দেখছি মনমরা হয়ে থাকিস
–কই কিছু না তো
–হুম নিচে চল খাবি
–চলো
নিচে গিয়ে খেতে বসলাম, তুলি এখনো স্কুলে, আম্মুই আমার প্লেটে ভাত তরকারী দিলো নিজের প্লেটেও নিল তখন আম্মুর ফোন বেজে উঠলো
–তুই খাওয়া শুরু কর আমি ফোনে কথা বলে আসি
–হুম
দুই লোকমা ভাত খেতেই মাথা কেমন যেন ঘুরে উঠলো পেটে খুব জ্বালা করছে আস্তে আস্তে হাত পা অবস হয়ে আসছে চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে খুব কষ্ট করে আম্মু বলে ডাক দিলাম আর কিছু মনে নেই অন্ধকারে তলিয়ে গেলাম

চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে পাশে কেউ নেই একজন নার্স দুরে কি যেন করছে, আমার নড়াচড়া দেখে রোগীর জ্ঞান ফিরেছে বলেই রোম থেকে বেরিয়ে গেলো, একটু পর আম্মু আব্বু, তুলি, রিয়া, আর আম্মুর ফ্রেন্ড রাকিব ভিতরে আসলো, আব্বু এসেই আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল, লক্ষ করে দেখলাম সবাই কাঁদছে
–আব্বু তোমরা কাঁদছ কেন
–আজ দুদিন পর তোর জ্ঞান ফিরেছে কাঁদবো না যদি কিছু হয়ে যেতো
–দুদিন পর
–হ্যা মা কেন এমন জঘন্য কাজ করতে গেলি
–কি করেছি
–বিষ খেয়ে সুইসাইড করতে চেয়েছিলি কেন
–সুইসাইড (আমি কেন সুইসাইড করবো আমি তো বিষ খাইনি, হ্যা আমি শ্রাবনকে ভালবাসি তাই বলে সুইসাইড করবো কেন, সুইসাইড করতাম যদি আব্বু না থাকতো আব্বুকে একা করে আমি চলে যাবো কিভাবে)

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে