জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ২০

0
1864

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ২০

লেখিকা: সুলতানা তমা

ছেলেটির সামনে বসে আছি, ছেলেটির জ্ঞান হয়তো একটু আগে ফিরেছে, হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে আর আমি চেয়ারে বসা
ছেলেটি: আপু আমি আপনার সম্পর্কে তেমন কিছু জানিনা আবার অনেক কিছুই জানি মানে ডক্টর যতোটুকু বলেছে ততোটুক জানি
আমি: তোমার নাম জানতে পারি
ছেলেটি: আমি হৃদয়
আমি: আমাকে চিনো কিভাবে
হৃদয়: চিনতাম না হসপিটালে এসে ডক্টর এর কাছ থেকে আপনার সম্পর্কে জেনেছি
–কি কি জেনেছ
–অনেক কিছু তারমধ্যে মজার বিষয় যেটা জেনেছি তা হলো আমরা দুজন এক পথের পথিক
–মানে বুঝলাম না
–মানে হলো আপনি ভালোবাসেন শ্রাবন ভাইয়া কে আর উনি অন্য কাউকে, আমি ভালোবাসি নিপা কে আর ও অন্য কাউকে
–যা আন্দাজ করেছিলাম তাই সত্যি তুমি নিপা কে ভালোবাস
–হুম তিন বছর যাবত ওকে ভালোবাসি কিন্তু ও আমাকে কখনো ভালোবাসেনি কারন আমি ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলাম
–ছিলাম বলতে এখন কি নেই…?
–না নেই এক বছর হলো ও আমার সাথে যোগাযোগ একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে কারন আমি ওকে বার বার ভালোবাসি বলে ডিস্টার্ব করি
–নিপা অসুস্থ জানো কিভাবে
–নিপা আমাকে দূরে ঠেলে দিয়েছে আমি না, ওর সব খুঁজ আমি রাখি ওদের রিলেশন যখন হয়েছে তখন আমি জানতে পেরে ওর খুঁজ রাখা বন্ধ করে দেই, দুদিন আগে হঠাৎ ওর সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হয় তাই ফোন দেই তখনি ওর ছোট বোন জানায় নিপা হসপিটালে তারপর এখানে আসা
–সবই তো বুঝলাম কিন্তু কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে কেন….?
–সিদ্ধান্তটা এমন ছিল না ডক্টর এর কাছে এসেছিলাম নিপার অবস্থা জানতে তখন উনি আমাকে আপনার সম্পর্কে বলেন আর আপনার সম্পর্কে জেনেই আমি কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই
–কেন…?
–আপনি যদি আপনার ভালোবাসার মানুষ কে ভালো রাখার জন্য তার প্রিয়জন কে কিডনি দিতে পারেন তাহলে আমি কেন আমার ভালোবাসার মানুষ কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কিডনি দিতে পারবো না
–এজন্য দিয়েছ
–হ্যা, আমি এতোটা মহান ছিলাম না ডক্টর এর কাছে আপনার ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা দেখে আমি কিডনি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই আর ডক্টর কে নিষেধ করে দেই আপনার কিডনি না নিতে
–হুম বুঝলাম একটা প্রশ্ন করতে পারি….?
–জ্বী অবশ্যই
–নিপা কে এখনো চাও…?
–কেউ কি ভালোবাসার মানুষ কে হারাতে চায়….?
আমিও হারাতে চাইনা ও যদি নিজে থেকে ফিরে আসে তাহলে অবশ্যই চাই আর যদি….
–হুম বুঝেছি, তো নিপাকে কি জানাবা না কিডনি যে তুমি দিয়েছ
–না থাক আমি দূর থেকেই নাহয় ভালবাসি
–হুম
–হুম
–আচ্ছা তুমি রেস্ট নাও আমি আবার আসবো এখন যাই
–ঠিক আছে আপু

কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসলাম ভাবছি নিপা কে দেখতে যাবো কিনা হঠাৎ সামনে এসে কে জেনো দাঁড়াল থাকিয়ে দেখি শ্রাবন
–তমা তুমি এখানে
–(এখন কি বলি হৃদয়ের কথা তো বলা যাবে না)
–কি হলো চুপ হয়ে আছ যে
–এইতো নিপাকে দেখতে আসছি
–ঠিক আছে চলো

শ্রাবনের সাথে নিপার কেবিনের দিকে যাচ্ছি, যতো কেবিনের কাছে এগুচ্ছি ততোই যেন বুকে চিনচিনে ব্যাথা বাড়ছে, জানিনা নিপা কি থেকে কি বলে আমাকে দেখে

নিপার কেবিনে ঢুকে দেখি ও ঘুমিয়ে আছে নিপার বোন আর মা পাশে বসা, যাক এবারের মতো বেচে গেলাম নিপা কিছু বলবে এই টেনশন তো আর নেই, তাড়াতাড়ি শ্রাবন কে বললাম
–নিপা তো ঘুমিয়ে আছে আমি নাহয় পরে আবার আসবো এখন যাই
–বাসায় যাইবা
–হুম
–চলো আমিও যাবো
–থাক আমি একা যেতে পারবো
–আমি কি বলেছি একা যেতে পারবা না এতো বেশি কথা বল কেনো, চলো
–হুম

রিক্সায় শ্রাবনের পাশে বসে আছি, কি আজব আগে এই মানুষটা আমার কতো আপন ছিল আর এখন পাশে বসতেও মনে হয় অন্য কারো পাশে বসে আছি
–তমা (হঠাৎ শ্রাবনের ডাকে ওর দিকে থাকালাম)
–হুম
–ভুল শুধরানোর একটা সুযোগ দিবা
–কি ভুল
–ভুল নাকি অন্যায় তা জানিনা কিন্তু আমি তোমাকে ফিরে পেতে চাই
–কিসের ভুল আর কিসের অন্যায়
–নিপার সাথে আমার সম্পর্ক করা ঠিক হয়নি জানি এইটা ভুল করেছি নাকি অন্যায় করেছি জানিনা এখন শুধু একটা সুযোগ দাও প্লিজ আমি তোমাকে ফিরে পেতে চাই
–(নিশ্চুপ)
–তমা প্লিজ বিশ্বাস কর আমি তোমাকে যেমন ভালোবাসতাম এখনো তেমন ভালোবাসি মধ্যে তোমার পাশে নিপা কে একটুখানি জায়গা দিয়েছিলাম, নিপা থাকা অবস্থায়ও আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি সারাক্ষণ তোমার কথা ভাবতাম তাই নিপা আমাকে ভুল বুঝতো এখন তুমিই বলো আমি কাকে বেশি ভালোবাসি
–বাসায় চলে এসেছি
–বলে যাও
–না বলাই থাক (মৃদু হেসে বাসায় চলে আসলাম)

সন্ধ্যা নেমে এসেছে আকাশে দুইএকটা তারা উঠেছে, মৃদু বাতাসের মধ্যে বারান্দায় চোখ দুইটা বন্ধ করে দাড়িয়ে আছি, মাথায় নানান কথা ঘুরপাক খাচ্ছে
পৃথিবীর নিয়ম বড়ই অদ্ভুত আমি ভালোবাসি শ্রাবনকে আর ও নিপাকে, হৃদয় ভালোবাসে নিপাকে আর ও শ্রাবনকে
যদি এমন উলটপালট নাহয়ে দুইটা জুটি হতো তাহলে কতো ভালো হত
আচ্ছা শ্রাবন যে বলে ও আমায় এখনো ভালোবাসে, সত্যিই কি ভালোবাসে…..?

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে