জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১৭

0
1863

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১৭

লেখিকা: সুলতানা তমা

কলিংবেল এর শব্দ শুনেও গেলাম না ইচ্ছে হচ্ছে না রুমেই শুয়ে রইলাম, একটু পর আমার রুমে কারো আসার শব্দ পেলাম থাকিয়ে দেখি শ্রাবন, একদম শুকিয়ে গেছে হয়তো নিপার চিন্তায়, কিছু না বলে ওর দিকে থাকিয়ে আছি ও এসে আমার পাশেই খাটে বসলো
–তমা
–হুম
–এই অসময়ে শুয়ে আছ যে
–এমনি
–আমি খুব স্বার্থপর তাই না
–হঠাৎ এই কথা কেন
–এইযে নিপার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে তোমার কোনো খুঁজ নেইনি
–(মৃদু হাসলাম)
–নিপা সুস্থ হলে ওকে জিজ্ঞেস করো আমি কাকে বেশি ভালোবাসি
–থাক না এখন এসব কথা
–কিন্তু তুমি যে আমায় ভুল বুঝে বসে আছ
–নাতো
–বিশ্বাস করো আমি তোমাকেই ভালোবাসি তোমার পাশে নিপাকে একটুখানি জায়গা দিয়েছিলাম শুধু
–বাদ দাও তো এখন এসব কথা
–হুম

দুজনেই চুপচাপ হয়ে আছি, আমি দেয়াল ঘড়িটার দিকে থাকিয়ে আছি আর ও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে থাকিয়ে আছে, কিছুক্ষণ পর ও আমার মাথার পাশে এসে বসলো আমার মাথা ওর কোলে নিয়ে আমার দিকে থাকিয়ে রইলো, আজকে ওর কোলে শুতে কেমন যেন লাগছে ও যে এখন আর আমার নেই তাই হয়তো

ওর কোলে চুপ করে শুয়ে আছি হঠাৎ আমার গালে এক ফোটা পানি পড়ল চমকে উঠে ওর দিকে থাকালাম পাগলটা কাঁদছে, লাফ দিয়ে উঠে বসে জিজ্ঞেস করলাম কি হইছে কিছু না বলে আমার দুগালে ধরে কপালে একটা মায়া দিল তারপর আমাকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো, পাগলটার সামান্য কষ্ট সহ্য করতে পারি না চোখের পানি কিভাবে সহ্য করবো, আমিও কাঁদতে কাঁদতে ওর দুগালে ধরে জিজ্ঞেস করলাম
–কি হইছে এভাবে কাঁদছ কেন
–তমা বিশ্বাস কর আমি তোমাকে ভালোবাসি
–তাই বলে এভাবে কাঁদবা
–তুমি তো বলেছ নিপা সুস্থ হলে আমাকে ছেড়ে চলে যাইবা আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না
–আচ্ছা এখন এসব নিয়ে ভাবছ কেন নিপার অপারেশন করাতে হবে তো
–হুম করাবো মানবতার কারনে কিন্তু আমি ভালোবাসি তোমাকে, তুমি ছিলে না ফিরে পাবো না তাই তোমার পাশে নিপাকে একটু জায়গা দিয়েছিলাম বিশ্বাস করো আমার সবকিছু জুরে তুমি আছ
–হুম
–নিপার সাথে তো ব্রেকাপ হয়ে গেছিল আমি ভুলেও গিয়েছিলাম তুমি ফিরে এসেছ এর চেয়ে বড় পাওয়া আমার আর কি হতে পারে
–শ্রাবন এখন এসব কথা বাদ দাও নিপার অপারেশন করাও
–হুম
–এই নাও টাকা (টাকা এনে ওর হাতে দিলাম)
–টাকা দিলে আগামীকাল সকালেই অপারেশন করবে ডক্টর বলেছে
–ঠিক আছে করাও টাকা আরো লাগলে বলো আর আমি হসপিটালে থাকতে পারবো না এতিমখানার কাজে দুদিনের জন্য বাইরে যাবো
–মানে
–যা শুনেছ তাই ফোন করবো সবসময়
–না গেলে হয়না
–নাহ
–হুম
–এখন যাও অপারেশন এর ব্যবস্থা করো
–হুম

শ্রাবন চলে গেলো নিজেকে আর আটকে রাখতে পারলাম না বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকলাম, আমি তো এমন কিছু চাইনি চেয়েছিলাম দুজনের ছোট্ট একটা সংসার হবে অন্য কিছুর অভাব থাকলেও ভালোবাসার অভাব থাকবে না আর এখন কিনা দুজনকেই কাঁদতে হচ্ছে, নিপা সুস্থ হলে এসব জানলে পর হয়তো তিনজন কেই কাঁদতে হবে, কিন্তু আমার কান্না যে ওদের দেখানো যাবে না ওদের কে সুখে রাখতে হলে নিজেকে পাথর বানাতে হবে, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো ডক্টর ফোন দিয়েছে
–হ্যালো
–তুমি চাইলে আগামীকাল সকাল ১০টায় অপারেশন করবো যতো তাড়াতাড়ি করা হবে ততোই ভালো হবে
–ঠিক আছে আমি সকালে চলে আসবো
–ওকে

ফোনটা রাখার পর ভিতরে কেমন যেন এক অজানা ভয় হচ্ছে যদি আমার কিছু হয়ে যায় কি হবে আব্বু আর তুলির ওদের ভরসা তো এখন আমি কি হবে রিয়া পাগলীটার ও যে আমাকে ছাড়া কিছুই বুঝে না
–আম্মু আসবো (দরজায় থাকিয়ে দেখি আব্বু এসেছেন)
–আসো
–কিরে মন খারাপ
–হুম একটু
–কেন
–আমি এখন তোমার কাছে যেতাম
–কেন কোনো প্রয়োজন
–হ্যা
–বল
–আব্বু এতিমখানার কাজে দুদিনের জন্য একটু শহরের বাইরে যেতে হবে (এতো বড় মিথ্যে আব্বুকে বলতে গিয়ে গলা কেঁপে কেঁপে উঠছে)
–তুই না গিয়ে অন্য কেউ গেলেও তো হয়
–আমাকেই যেতে হবে আব্বু
–একা একা যাবি…
–কিছু হবে না ফোন করবো বার বার
–ঠিক আছে কখন যাবি
–সকালে
–আচ্ছা
আরো কিছুক্ষণ আব্বু আর আমি গল্প করলাম তারপর আব্বু চলে গেলেন, এতোক্ষণ আব্বুর সামনে খুব কষ্ট করে চোখের পানি আটকে রেখেছিলাম এখন আর পারছি না, অনেকদিন হলো আম্মুর ছবিটা জরিয়ে ধরে কাঁদি না তাই আম্মুর ছবিটা আলমারি থেকে বের করে আনলাম, এক দৃষ্টিতে ছবিটার দিকে থাকিয়ে আছি এই আম্মুটা বেঁচে থাকলে হয়তো আমার জীবনে এতো কষ্ট আসতো না, আম্মুর ছবিটা জরিয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতে পারিনি

সকালে খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো, উঠে ফ্রেশ হয়ে আস্তে আস্তে নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করলাম, কিছুটা ভয়ও হচ্ছে তাও যে আমাকে যেতেই হবে

রেডি হয়ে রিয়া কে কোনো ভাবে বুঝিয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে