জীবনেরডায়েরি২ পার্ট: ১১

0
1911

জীবনেরডায়েরি২

পার্ট: ১১

লেখিকা: সুলতানা তমা

কেবিনের বাহিরে বসে আছি মেয়েটার চিকিৎসা চলতেছে, শ্রাবন কেমন যেন অস্থির হয়ে আছে ঠিক হয়ে বসতেছে না, ভাবছি মেয়েটা ওর কি হয় জিজ্ঞেস করবো কিনা তখনি একজন সিস্টার এসে শ্রাবনের হাতে একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বললো ওষুধ গুলো নিয়ে আসতে, শ্রাবন এক মুহূর্ত দেরি না করে দৌড়ে চলে গেলো ওষুধ আনতে

চেয়ারে বসে আনমনে হয়ে ভাবছি মেয়েটি শ্রাবনের কি হয় তখন মেয়েটির ছোট বোন পাশের চেয়ারে এসে বসলো এখনো কাদতেছে, আমি শান্তনা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
–আচ্ছা শ্রাবন তোমাদের কি হয়
–আপনি জানেন না ভাইয়া তো আপুকে ভালোবাসে, আপুর নাম নিপা প্রায় একবছর ধরে সম্পর্ক….

ওর আর কোনো কথা আমার কান দিয়ে ঢুকলো না, কানে শুধু বার বার একটা কথাই বাজতেছে “ভাইয়া তো আপুকে ভালোবাসে”
মাথাটা প্রচুর ঘুরতেছে বুকের বাম পাশে খুব ব্যাথা হচ্ছে চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে আমি যেন অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছি, আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালাম তারপর এলোমেলো ভাবে হাটতে শুরু করলাম পা দুইটা যেন অবস হয়ে গেছে, চোখ দুইটায় আজ কাজল দিয়েছিলাম শ্রাবন দেখবে বলে এখন এই কাজল চোখের পানিতে লেপ্টে যাচ্ছে, কোনো ভাবে হসপিটাল থেকে বেরুলাম, একটা রিক্সা ডেকে আনলাম যখন রিক্সায় উঠতে যাবো তখন দেখলাম শ্রাবন চলে এসেছে, আমার কাছে আসলো
–কোথায় যাচ্ছ
–আমার ঠিকানায়
–মানে
কিছু না বলে ওর দিকে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ থাকিয়ে রইলাম তারপর রিক্সাওয়ালা কে যেতে বললাম

বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে শুরু করলাম, কি হলো এইটা আমি তো এমন কিছু কল্পনাও করিনি আর শ্রাবন কিনা আমার অজান্তে অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক করেছে, আর ভাবতে পারছি না মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করতেছে উউউফফফফ খুব কষ্ট হচ্ছে, এতো বছর আম্মুর অত্যাচার সহ্য করলাম কিন্তু এতো কষ্ট তো হয়নি আজ কেন এতো কষ্ট হচ্ছে, চোখ দুইটা যেন সাগর হয়ে গেছে বুকে চিনচিনে ব্যাথা হচ্ছে

কতক্ষণ সময় এভাবে কাঁদলাম জানিনা হঠাৎ তুলির ডাকে নিজেকে সামলে নিয়ে দরজা খুললাম
–আপু কি হয়েছে তোমার
–কিছু না তো
–তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন
–এমনি
–দাড়াও আমি রিয়া আপুকে ডেকে আনি
দৌড়ে চলে গেলো তুলি, আচ্ছা রিয়া কে আমি কি বলবো শ্রাবন অন্য মেয়েকে ভালোবাসে….?
রিয়া তো শ্রাবন কে মেরেই ফেলবে এই কথা শুনলে

এসব ভাবতে ভাবতেই রিয়া এসে হাজির
–কিরে কি হইছে তোর
–কই কি
–এমন দেখাচ্ছে কেন
–কিছুনা
–আমার কাছে লুকিয়ে পারবি না এইটা ভালো করেই জানিস বলে ফেল
–হুম
–কি হলো বল
–কিছুনা
–শ্রাবনের সাথে ঝগড়া করেছিস
–না
–ওকে আমি শ্রাবনকে ফোন দিতেছি
–ও এখন ব্যস্ত আছে
–কিসের এমন ব্যস্ততা যা তোর থেকে বেশি জরুরী
–ও এখন আর আমার নেই
–মানে কি আবুল তাবোল বকছিস
–এটাই সত্যি
–হইছে কি বলবি তো
–শ্রাবন নিপা নামের একটি মেয়েকে ভালোবাসে
–তমা প্লিজ জোকস রাখ
–সত্যি রে নিপা এখন হসপিটালে আছে এক্সিডেন্ট করেছে শ্রাবন ওখানেই আছে
রিয়া দফ করে বিছানায় বসে পড়লো হয়তো আমার মতো রিয়াও বিশ্বাস করতে পারতেছে না কিন্তু এটাই যে সত্যি

শ্রাবন এখন আর আমার নেই, ও এখন নিপা নামের কারো হয়ে গেছে, ও এখন আর আমায় ভালোবাসবে না জরিয়ে ধরবে না চুলের ঘ্রান নিতে পাগল হবে না……

আচ্ছা শ্রাবন আমাকে ঠকালো কেন….?
নিপা কে ভালোবাসে আমাকে বলেনি কেন…?
একবছর ধরে ওদের সম্পর্ক তারমানে আমি যখন ছিলাম না তখন থেকে….?
আচ্ছা শ্রাবন যদি নিপা কে ভালোবাসে তাহলে আমাকে বিয়ের স্বপ্ন দেখালো কেন….?
নিপা কে ভালোবাসা সত্বেও কেন বারবার বলেছে আমাকে ভালোবাসে….?
শ্রাবন কেন আমার সাথে এমন করেছে…..?

আনমনে হয়ে এসব ভাবছিলাম হঠাৎ রিয়া আমার কাধে হাত রাখলো চমকে উঠে ওর দিকে থাকালাম, রিয়ার চোখে পানি দেখে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলাম না ওকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলাম, আমার সাথেই কেন এমন হয় আর কতো কষ্ট পাবো আমি
–তমা প্লিজ শান্ত হ
–কিভাবে শান্ত হব ও এমন করলো কিভাবে
–শ্রাবন আসলে পর জিজ্ঞেস করবো তুই তো ভুলও শুনতে পারিস
–ভুল হবে নাহ আমি দেখেছি নিপার জন্য শ্রাবনের ভালোবাসা কেমন, যখন ফোন আসছিল ও পাগল হয়ে গেছিল কিভাবে যে হসপিটাল যাবে ও ভেবে পাইতেছিল না, ও নিপার জন্য একদম পাগল আমি বুঝে গেছি
–আচ্ছা শ্রাবন আসলে পর কথা বলে দেখি তুই একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর

খুব ক্লান্ত লাগছে রিয়ার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লাম…..

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে