ছায়া নীল! ১৩

0
1913

ছায়া নীল!

১৩.

Maria Kabir
– আচ্ছা স্বভাবে কি ভালবাসা থাকে না?
– থাকতেও পারে।তোমার সাথে আর কয়দিন এভাবে দেখা সাক্ষাৎ হতে থাকলে সত্যি আমি আবার প্রেমে পড়বো। তবে এবারকার প্রেম হবে ভয়াবহ।
– প্রেম আবার ভয়াবহ হয় নাকি?
– তুমি যা করেছো সেটা কি ভয়াবহ নয়? কোনো স্বাভাবিক মানুষ নিজের দেহকে ক্ষত বিক্ষত করতে পারে না।
– তুমি বলতে চাচ্ছো আমি অস্বাভাবিক?
– হ্যা। যাই হোক বাদ দাও। আমি আপাতত তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না।
– বাবা আর মা চলে আসবে এখন এখান থেকে ভাগো।
– হ্যা যাচ্ছি। মোবাইল টা নিয়ে আসো।
মোবাইল টা এনে ওর হাতে দিলাম।
সৌরভ হেসে বলল
– একটা মিথ্যা কথা বলেছি তোমাকে।
– কয়টা বলেছো তা কি আমি জানি? একটার বেশিও তো হতে পারে।
– নাহ একটাই বলেছি। সেটা হলো, তোমার পরে আর কোনো মেয়ের সাথে আমি জড়াই নেই।
– বললা কেনো?
– ভাবলাম তোমার প্রতিক্রিয়া টা কেমন একটু দেখা দরকার।
– আর কোনো মিথ্যে কথা বলেছো?
– নাহ। দুপুরে অনেক ঘুমাবা।
– কেনো?
– রাত জাগতে হবে। সারারাত ফোনে কথা বলবো।
– আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি অসুস্থ।
– তোমার চোখে আমার জন্যে যা দেখেছি সেটা মিথ্যে না।
– আমি তোমার মতো মিথ্যে বলি না।
– ১ টাই বলেছি তাতেই মিথ্যেবাদী?
– ওই কথায় আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।
আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
– আহারে। Sorry শারলিন আর হবে না।
– আমাকে ছাড়ো। ভালবেসে আমাকে স্পর্শ করবে। যদি না পারো তাহলে স্পর্শ করবে না।
– আচ্ছা আচ্ছা ছেড়ে দিলাম।
এই কথা বলে আমাকে ছেড়ে দিলো। তারপর সৌরভ চলে গেলো।
দরজা আটকে দিয়ে বাবা আর মা আসার অপেক্ষায় রইলাম। দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকাল হচ্ছে বাবার খোজ নেই। এদিকে আমি রান্নাও করতে পারছি না। খুদায় অসহ্য লাগছিলো। এক হলো মনের অশান্তি ২য় হলো শরীরের যন্ত্রণা।
বিকালবেলা কলিংবেল বাজলো। বাবা এসেছে মনে হয়। সাথে মাও এসেছে মনে হয়।
দরজা খুলে দেখি বাবা একা। বাবার চেহারা দেখেই বুঝতে পারলাম ঝামেলা একটা হয়েছে। বাবার হাতে খাবারের প্যাকেট।
দরজা আটকে দিয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম
– মা আসেনি?
বাবা বললেন
– তুই এই বাড়িতে থাকলে সে আসবে না।
কথাটা শুনে বুঝতে পারলাম, আমি অনেক বড় ভুল করেছি। বাবা আমাকে অনেক ভালবাসেন। আমার সব ভুল, দোষ ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন।
কিন্তু মা আমাকে পছন্দ করেন না। বুঝতে শেখার পর থেকেই বুঝেছি।
মা চাইতেন ছেলে হোক। কিন্তু মেয়ে হলো।আমার পরে তার একটা ছেলে হয়েছিল কিন্তু সে জন্মের পরেই মারা যায়। এরপরে মা আর কোনোদিনও সন্তান নিতে পারলেন না। তার নাকি রক্তে আরএইচ প্রব্লেম না কী যেন আছে।
সে আমাকে এমনিতেই পছন্দ করতো না তার উপর আমার চেহারা নাকি মেজো ফুপুর মতো।
আর আমিও কোনোদিন মা পছন্দ করে এমন কাজও করিনি। তাই আমার প্রতি মায়া তার কমেছে দিনদিন, বাড়েনি।
বাবাকে বললাম
– তুমি আমাকে ছোটো ফুপুর বাসায় কয়েকদিনের জন্যে রেখে আসো। মার রাগ ঠাণ্ডা হলে আমি চলে আসবো।
– বলেছিলাম তোর ছোটো ফুপুকে কিন্তু সে রাজি হয়না। বলে, ওরকম পাগল খারাপ মেয়ে আমার বাসায় আনবো না। কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসলে, দায়ী কে হবে?
– বড় খালা তো মায়ের মতোই। সে তো আমাকে আগাগোড়াই পছন্দ করেন না।
– কী বলবো রে মা, কপাল আমার তোমার মায়ের মতো একজন বউ পাইছিলাম। পুরো জীবন কষ্ট করতে করতেই গেলো আমার। এই পুরো সম্পত্তি তোর মায়ের নামে। চাইলেও তো তাকে তালাক দিতে পারছি না। চাকরী যা করি তাতে তোর আমার চলবেও না।
– বাবা আমাকে কোনো হোস্টেলে পাঠিয়ে দাও।
– তোর মেজো ফুপুর বাসায় পাঠিয়ে দেই কয়েকদিনের জন্য।
– মেজো ফুপু?? উনি রাজি হবে তো?
– দেখি। খাবার টা খেয়ে নে। আমি কথা বলে আসি।
বাবা চলে গেলেন ফোন হাতে নিয়ে।
আমার জীবন টা এমন হয়ে গেলো? নিজের বাড়িতে নিজেই থাকতে পারছি না। সম্পত্তি বাবারই কিন্তু মা তার নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন যদি ছেলের আশায় আরেকটা বিয়ে করেন তখন কী হবে?
আমার জীবন টা একটা অদ্ভুত বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। আমি জানিনা, আমার বাবা কবে সুখের দেখা পাবেন!
আমার নিজের সুখ তো নিজেই ধ্বংস করেছি। আমার জন্মটাই অলক্ষুণে।

চলবে…….!

#Maria_kabir

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে