অজানা_অনুভূতি পার্ট: ৩২

0
2704

অজানা_অনুভূতি

পার্ট: ৩২

#Rabeya Sultana Nipa

 

_প্রাপ্তি এইবাড়ীতে এসে দেখে সব কেমন নিরিবিলি হয়ে আছে।কাকাই আব্বু সবাই ড্রইংরুমে বসে প্রাপ্তিকে দেখে চুপ হয়ে আছে।প্রাপ্তি সবাইকে এইভাবে দেখে বলতে লাগলো, তোমরা কেমন মানুষ আমি বুজিনা আম্মু অসুস্থ আমাকে একবার জানালেনা?

মেজো কাকা-তুই এইখানে মাথা ঠাণ্ডা করে বস।ফারহানের ফ্যামিলিরর দিকে তাকিয়ে তোমরাও বসো।

প্রাপ্তি -তোমরা বসো আমি আম্মুকে দেখে আসছি।নিশ্চয় আম্মু রুমে আছে।

প্রাপ্তি রুমে যাবে বলে পা এগুতেই প্রাপ্তির মা রান্নাঘর থেকে নাস্তা নিয়ে আসতে আসতে কোথাও যেতে হবে না।আমি দিব্বি সুস্থ আছি।তুই এই বাড়ীতে আসিসনা তাই আমি নীরাকে বললাম তোকে এইভাবেই আনতে। নীরা এই নে নাস্তাটা সবাইকে দিয়েদে।এইফাঁকে আমি আমার মেয়েকে একটু আদর করি।প্রাপ্তির মা প্রাপ্তির কাছে গিয়ে ধরে Happy Marriage Anniversary………..প্রাপ্তি।

প্রাপ্তি -দেখছো শুধু তোমারই মনে আছে।আর ওই গাধাটা এখনো মনে থাকার তো দূরের কথা আমার সামনেই আসলোনা।

(প্রাপ্তির কথাটা শুনে সবাই হাঁসতে যাবে তখনি নীরা সবাইকে ইশারা দিলো না হাঁসার জন্য।)জানো সন্ধ্যা থেকে তাকে আমি ফোন দিয়েই যাচ্ছি একবারো রিসিভ করে নাই।

প্রাপ্তির আব্বু -আচ্ছা ঠিক আছে ওর এতো বড় সাহস হয় কি করে আমার মেয়ের সাথে এইরকম করার।এখুনি বলছি বাসায় আসতে।

কথাটা শুনে নীরা প্রাপ্তির আব্বুর পাশে গিয়ে বিড়বিড় করে বললো,বড় আব্বু! ভাইয়া তো ছাদে। ফোন দিলে চলে আসবে না?

প্রাপ্তির আব্বু -চিন্তা করিসনা ওইভাবেই কথা বলবো।
(ফারহান কে ফোন দিয়ে)ফারহান, তোমার সাহস কি করে হয় আমার মেয়ের ফোন রিসিভ না করার।যাইহোক যেখানে থাকো তাড়াতাড়ি বাসায় আসো।(একটু চুপ থেকে) কিহ আজ বাসায় আসবা না? ওহ দেরী হবে।আচ্ছা ঠিক আছে।
ফারহানকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সব কিছু নিজে নিজে বলে ফোন রেখে দিলো।ফারহান ঠিকি বুজেছে আব্বু কেন এইভেবে কথা বলছে।নিশ্চয় প্রাপ্তি সামনে আছে।
প্রাপ্তি আর কথা না বাড়িয়ে নিজেও নীরার সাথে কাজে লেগে গেলো। একটু পর ইমরান এসে বললো কিরে প্রাপ্তি, তুই কখন এলি?

প্রাপ্তি-এইতো কাকাই একটু আগে।তোমার সাথে ফারহানের দেখা হয়েছে আজ?

ইমরান -নিজের হাঁসিটা চেপে রেখে কই নাতো।আচ্ছা যাইহোক এই (নীরাকে ডেকে)নীরা ছাদে যাবি? চল আমরা ছাদে গিয়ে আড্ডা দিই।

নীরা -হ্যাঁ যেতেই পারি।প্রাপ্তি চল আমরা ছাদে বসে আড্ডা দিই।

প্রাপ্তি-এতো রাতে ছাদে? আচ্ছা চল।

প্রাপ্তি আর নীরা ছাদের দিকে এগুতে লাগলো।ইমরান সবাইকে ইশারা দিয়েছে ছাদে যাওয়ার জন্য।প্রাপ্তি ছাদে যেতেই ফারহান আর মৃদুল বাঁজি ফাটাতে শুরু করলো।প্রাপ্তি সবকিছু অবাক হয়ে দেখছে।কি বলবে কিছুই বুজতে পারছে না।মনে হচ্ছে তার সব ভাষা যেন সে হারিয়ে ফেলছে।ফারহানের উপর সন্ধ্যা থেকে যতো রাগ হয়েছিল সব এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে।
সবার এক সাথে বলে উঠলো Happy Marriage Anniversary…….. প্রাপ্তি এন্ড ফারহান।প্রাপ্তি অবাক হয়ে ইমরান কে বললো তারমানে সবাই আগে থেকেই প্লান করে রেখেছো আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য?

নীরা -সবাই বললে ভুল হবে, হ্যাঁ আমরা সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম এতো বড় করে নয়।একজন মানুষেরি এই সব ক্রেডিট।
প্রাপ্তি হাঁসি দিয়ে বললো আমি জানি ছোটো কাকাই ছাড়া আর কেউ হতেই পারেনা।কাকাই, তোমাকে অনেক গুলা thanks। কিন্তু এতো কিছু কেন করতে গেলে শুধু শুধু?
প্রাপ্তির কথা শুনে ফারহান প্রাপ্তির দিকে তাকিয়ে হাঁসছে।যাইহোক প্রাপ্তি খুশী হয়েছে এটাই বেশী।

ইমরান -প্রাপ্তি এইসব কিছুই আমি করিনি।সব ফারহানই করেছে আমি আর মৃদুল শুধু হেল্পই করেছি।

প্রাপ্তি ফারহানের দিকে তাকিয়ে এই জন্য তুমি ফোন রিসিভ করছিলেনা তাইনা?

ফারহান কিছু বলার আগেই মৃদুল বললো সব কথা বাসায় গিয়ে হবে। আগে দুইজন মিলে কেকটা কেটে ফেলো দেখি।

মেজো কাকা -হুম মৃদুল ঠিকি বলেছে যা করার তাড়াতাড়ি করো।
সব ফর্মালিটি শেষ করে সবাই নিচে নেমে এলো।ফারহান নীরার কাছে গিয়ে বললো, নীরা তুমি আর আমি গিয়ে যে শাড়ী গহনা গুলো নিয়ে এলাম ওই গুলো এইদিকে দাও।ফারহান এইগুলো হাতে নিয়ে রুমে গিয়ে দেখে প্রাপ্তি খাটের এক কোণায় হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।ফারহান যেতেই উঠে বসতে বসতে বললো কি দরকার ছিলো এইগুলো কারার বলোতো।আচ্ছা! হাতে ওই গুলো কিসের প্যাকেট?

ফারহান -পরে বলছি এইগুলো কি।(আস্তে করে)প্রাপ্তি! আজ আমি কিছু চাইলে দিবে তো?

প্রাপ্তি -ঠোঁটের কোণে একটা হাঁসি এনে কি চাও শুধু একবার বলো তাতেই চলবে।শুধু দেখো তোমার প্রাপ্তি কি করে।

ফারহান-হুম,,,নীরাকে ফোন দিয়ে কই তুমি রুমে আসো।পারমিশন পেয়ে গেছি।

প্রাপ্তি -এই তুমি কি করছো আমি তো কিছু বুজতেছিনা।

ফারহান- চুপ করে বস কিছু বুজতে হবেনা।এইতো নীরা এসে গেছে।নীরা আমি মৃদুলের কাছেই যাচ্ছি তুমি সাজিয়ে পেলো।
কথাটা বলে প্যাকেট গুলো খাটের উপরে রেখে ফারহান চলে গেলো।

প্রাপ্তি -নীরা! ও কি বলে গেলো এইগুলো।

নীরা- তোকে বউ সাজাতে বলে গেছে। ভাইয়া চায় সব কিছু ভুলে নতুন করে শুরু করবে।তোদের দিয়ের দিন তো তুই ভাইয়াকে ভালোবাসিস নাই তাই আজ তোর থেকে ভালোবাসা আদায় করবে।

প্রাপ্তি ফারহানের কথা রাখতে গিয়ে সত্যি সত্যি বউ সাজলো।

নীরা- তুই বস আমি ভাইয়াকে পাঠিয়ে দিচ্ছি কথাটা বলেই নীরা চলে গেলো।
প্রাপ্তি বসে আছে ফারহানের অপেক্ষায়,কিন্তু শরীরটা ভালো লাগছেনা তবে আজ ফারহানকে বুজতে দেওয়া যাবেনা।ও অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করেছে আমার জন্য।
আজ আমার লক্ষ্মী কে অনেক অনেক সুন্দর লাগছে, ফারহানের কথা শুনেই ভাবনার জগত থেকে ফিরে এলো সে। ফারহান প্রাপ্তির পাশে বসতে বসতে বললো, কি ভাবছো বসে বসে?

প্রাপ্তি -শাড়ী গহনা এইগুলো কখন এনেছো?শুধু শুধু এতো অপচয় এর কোনো মানে আছে?

ফারহান-একদম চুপ! আজ আমি তোমার কাছ থেকে কোনো নীতি কথা শুনতে চাইনা। সেইদিন অনেক কথা শুনিয়েছ আজ আর না।সেই দিন তোমার প্রতি আমার কোনো অধিকার ছিলোনা।আজ এক সাথে সব উসুল করে নিবো কথাটা বলেই প্রাপ্তিকে নিজের কাছে টেনে এনে ভালোবাসি, ভালোবাসি,ভালোবাসি, শুধু আমার এই লক্ষ্মী বউটাকে।

প্রাপ্তি-(মুচকি হাঁসি দিয়ে,) 2 2 2।

ফারহান -( ইয়ার্কি মেরে)2, মানে কি?এইটা কি ফোন নাম্বার? নাকি ভালোবাসার নাম্বার?

প্রাপ্তি -ধ্যাত, আমি বলতে চাইছি সেইম টু ইউ।

ফারহান-ওওওও বুজিয়ে বলবা তো।

প্রাপ্তি -(ফারহানের বুকে মাথা রাখে)ফারহান!তুমি আমায় এতো ভালোবাসো কেন বলতো?

ফারহান -এখন যদি একটু কষ্ট দি মেনে নিবে?

প্রাপ্তি -আমি জানি তুমি আমায় কোনো কষ্ট দিতে পারোনা।আচ্ছা তারপরে শুনি কি করছো তুমি?

ফারহান -সরি প্রাপ্তি আমিও চাইনি কষ্ট দিতে।কিন্তু কোনো উপায় নেই।কাল আমাকে মালয়েশিয়া যেতে হবে।তবে বেশী না মাত্র ৭ দিন।ওইখান থেকে ফিরে এসে তোমাকে নিয়ে বেড়াতে যাবো দূরে কোথাও।শুধু আমি আর তুমি, ওইখানে আমাদের কেউ ডিস্টার্ব করার মতো থাকবেনা।

প্রাপ্তি -আমাকে আগে বললে না কেন? আচ্ছা ৭ দিন কিন্তু এর বেশী না বলে দিলাম।

ফারহান প্রাপ্তির কপালে একটা চুমু দিয়ে এইনা হলে আমার লক্ষ্মী বউ।
প্রাপ্তি ফারহানের কথা গুলো শুনছে ঠিকি কিন্তু মাথার ভিতরে কেমন যানি করছে।
ফারহান প্রাপ্তির নিরবতা দেখে,
ফারহান -এই প্রাপ্তি আজ তুমি এতো চুপচাপ কেন? কি হয়েছে তোমার?অন্য দিন তো আমার প্রাপ্তি এতো চুপ থাকে না।আচ্ছা প্রাপ্তি কি আমার উপর কোনো কারনে রাগ হয়ে আছে।

প্রাপ্তি মুচকি একটা হাঁসি দিয়ে নিজের মুখটা ফারহানে বুকে গুজিয়ে,তুমি কোন সময় থেকে বকবক করেই যাচ্ছো আমায় একটুও আদর করছোনা।প্রাপ্তি কথা গুলো বলছে ফারহানকে শান্তনা দেওয়ার জন্য।

ফারহান -সত্যি তো আমার লক্ষ্মী বউটা কে আদর না করে বকবক করে যাচ্ছি।কথাটা বলে ফারহান প্রাপ্তিকে বুকে নিয়ে এক অজানা ভালোবাসায় ডুব দিলো।

চলবে,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে