তিনি এবং ও ! ১০.

0
1889
তিনি এবং ও ! ১০.
তিনি এবং ও ! ১০.

তিনি এবং ও !

১০.
বিকালের দিকে বাগানে চেয়ার পেতে চুপচাপ বসে আছে নিদ্র। দূর আকাশের দিকে তার দৃষ্টি।
নিদ্র খেয়াল করলো কেউ একজন তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।কে আর হবে? এই বাড়িতে মানুষ মাত্রই বর্তমানে দুজন। অদ্রি আসবে না কারণ দুপুরে আবারো তাদের মাঝে বেশ কথা কাটাকাটি হয়েছে। আর লিলি তো কখনওই তার আশেপাশেও আসেনা। দূর থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তাকে দেখে। এখানে চেয়ারও নেই যে বসতে বলবে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে। বসতে বললেই তাকে চেয়ার ছাড়তে হবে। বিশেষ প্রয়োজন হলে সেই কথা বলবে। নিদ্র আকাশের দিকে মন রাখার চেষ্টা করছে। অনেকক্ষণ যাবত পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। পেছন থেকে বলল
– আমি বসতে পারি এখানে?
নিদ্র পিছনে তাকিয়ে দেখলো অদ্রি হাতে চেয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিদ্র বলল
– আপনার বাড়ি আর আপনিই অনুমতি চাচ্ছেন?
অদ্রি চেয়ার পেতে বসে মাথার ঘোমটা ঠিক করে বলল
– মানে আপনাকে বিরক্ত করতাম না ইয়ে একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিলো।
নিদ্র বলল
– বিরক্ত তো করেই ফেলেছেন এখন জিজ্ঞেস করুন!
অদ্রি মাথা নিচু করে লাজুক স্বরে বলল
– আপনি চুলে কোন কালার ব্যবহার করেছেন সেটা জানতে চাচ্ছিলাম।
নিদ্র ঠাট্টার সুরে বললে
– কেনো? আপনিও করবেন নাকি?
অদ্রি মাথা উঁচু করে বলল
– নাহ নাহ আমাকে ওসব সাজে না।লিলির খুব পছন্দ হয়েছে কালার টা। ও নাকি পার্লার থেকে করাবে।
– আমি ভাবলাম আপনি রঙিন হতে চাচ্ছেন। যাই হোক, আসলে আমি কোনো কালার ব্যবহার করিনি।
অদ্রি অবাক হয়ে বলল
– কিন্তু বাঙালী দের এরকম চুলের রঙ তো হয়না। আমি তো এরকম শুনিও নাই।
– ডাবল সংকর বাঙালী দের হয়।
– বুঝলাম না।
– বাঙালী তো সংকর জাতি। আমি হলাম সেই সংকর জাতির সংকর।
– কীসব বলছেন আপনি।
– আমার বাবা বাঙালী আর মা জাতিতে ইংরেজ। বাবা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে বাইরের ইউনিভারসিটি তে পড়তে যান। মাও ওখানে পড়তো। ব্যাস প্রেম হয়ে গেলো, বিয়ে করলেন তারপর ডাবল সংকরের নিদ্র জন্ম নিলো।
– কিন্তু আপনার কথায় তো মনেই হয়না। আপনার বাংলা বলার ধরণে মনে হয় মানে আপনার বাংলা টা তো তাহলে এতো ভালো থাকার কথা না।
– মায়ের ভাষা তখনই তো শিখবো যখন মাকে পাবো! মাকেই তো পাইনি। আমার জন্মের সময়ই মারা গেছেন। দাদীর কাছে মানুষ হয়েছি। বাংলার অধ্যাপিকা ছিলেন। বুঝতেই পারছেন।
– আপনার মা আপনার মতোই সুন্দর ছিলেন?
– সে তেমন সুন্দর ছিলেন না। শুধু গায়ের রংটাই সাদা। আমার চেহারা বাবা – মা কারোরই মতো হয়নি। মায়ের গায়ের রঙ, চোখের আইরিশের রঙ আর চুলের রঙ এককথায় সকল রঙ তার থেকে প্রাপ্ত। বাবার কী পেয়েছি আমি আজও খুঁজে পাইনি।
আর যখন যা ইচ্ছা হয় বলে ফেলি এটাও আমার মায়ের স্বভাব।
তবে লুসি খুব সুন্দরী।
– ইংরেজজাতি সুন্দর হয়।
– আমি তো আমার কথা বললাম। আপনার কথা জানতে পারি?
অদ্রি প্রশ্নটা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বলল
– রাতে কী খাবেন?
নিদ্র বলল
– আপনি যা খাওয়াবেন।
অদ্রি দ্রুত পায়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। অদ্রি তার মায়ের মুখখানা মনে করার চেষ্টা করছে। মধ্যবয়সী একজন মহিলার নিড্র ডাকটা তার কানে বাজছে।
রাতে নিদ্রের রুমে অদ্রি চেয়ার এনে রাখলেন। চেয়ার রাখার সময় অদ্রি দেয়ালের রঙ দেখলো। কী চকচকে রঙ! আর কেমন বেমানান।
নিদ্র বিছানার উপর আসন পেতে বসে পুরাতন একটা বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছিলো। নিদ্র বলল
– আপনাকে মিথ্যে বলেছি।কিন্তু আপনি বুঝতে পারেননি।
অদ্রি দেয়ালে হেলান দিতে গেলো তখনি নিদ্র বলল
– আপনি রঙিন হয়ে যাবেন। রঙ পুরোপুরি শুকায় নাই।
অদ্রি বলল
– এ ঘর টাতে তেমন আলো বাতাস আসেনা।
– কিছুই করার নেই। এখন এটাতে মন বসিয়ে ফেলেছি।
– কী মিথ্যে বলেছেন? আপনার বিষয়ে বলতে গেলে কিছুই জানি না। সেক্ষেত্রে মিথ্যেটা বুঝতে না পারাটা ব্যর্থতা না।
– কিছুই জানতে হয়না। কথা বলার ধরনে ধরা যায়।
– শিখিয়ে দিবেন?
– আমার মায়ের বিষয়ে আজ খুব বলতে ইচ্ছে করছে। আপনি শুনবেন?
অদ্রি বলল
– বলুন।
নিদ্র বিছানা থেকে নেমে মেঝেতে বসলো। অদ্রি তার মুখোমুখি বসলো।
নিদ্র এখনো সেই বইয়ের পাতা উল্টাচ্ছে।
নিদ্র বলল
– মা শব্দটার অর্থ আমার জানা ছিলোনা। লালনপালন সবকিছু আমার দাদী করেছেন। বাবা কখনওই বেশি আদর করেননি আবার কমও করেননি। মায়ের কোনো স্মৃতি নিয়ে বাবা আমাকে বড় হতে দেননি। একবার বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, মা কোথায়? বাবা আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে গম্ভীর স্বরে বলেছিলেন — সে মারা গেছেন তোমার জন্মের সময়। মা কেমন ছিলেন? কীরকম দেখতে সেটা আমি কোনোভাবেই জানতে পারিনি। কিন্তু মায়ের চেহারা কেমন হতে পারে সেটা আমি মনে মনে এঁকে রেখেছিলাম। বাবা খুব কালো, দাদীও তাই। আর আমি সাদা। বাবা আমার অমিল গুলোই আমি মায়ের বৈশিষ্ট্য স্বরূপ মেনে নিলাম।
আমার বয়স ২১ হবে ১ সপ্তাহ বাকি। ফ্রেন্ডদের সাথে বাস্কেটবল খেলছিলাম। খেলার বিরতির সময় পাশেই বসে ছিলাম। একজন বয়স্ক মহিলা আমাকে বললেন – আপনি নিড্রো নাজমুল?
আমার নামের বিকৃতি টা আমার সহ্য হয়ে যাচ্ছিলো কিন্তু এই বয়স্ক মহিলার বলার ধরণে আমার মেজাজ কিছুটা খারাপ হলো। বিরক্তি নিয়েই বললাম – হ্যা।
বয়স্ক মহিলা বললেন – তোমার মা খুব দেখত্ব চাচ্ছে তোমাকে। আমার সাথে চলো।
আমার অবাক হলাম। তাকে বললাম – আপনার ভুল হচ্ছে। আমার মা তো অনেক আগেই মারা গেছেন।
বয়স্ক মহিলা বললেন – আমার ভুল হচ্ছে না। তোমার মা জীবিত। চলো আমার সাথে।

চলবে…….!

#Maria_kabir