অবেলায় ভালোবাসা  পর্ব-৭

0
2166
অবেলায় ভালোবাসা  পর্ব-৭
অবেলায় ভালোবাসা  পর্ব-৭

অবেলায় ভালোবাসা  পর্ব-৭

লেখা –সুলতানা ইতি

কি বলছো তুমি,মাথা ঠিক আছে তোমার
নিহার- মাথা একদম ঠিক আছে, এখন তুমি বলো আমার কথাতে তুমি রাজি কি না

নিদিপা কিছুক্ষন ভেবে বল্লো যদি রাজি না হই?
নিহার- তা হলে আমি অন্য পথ খুঁজে নিবো,তবু ও গাইথি কে আজ আমি নিবো ই

নিদিপা- ঠিক আছে আমি রাজি, আমায় কি করতে হবে বলো

নিহার- তুমি গাইথি কে কোন একটা অজুহাত দেখিয়ে বাড়ির পিছনে নিয়ে আসবে আমার গাড়ি একটি গাছের আড়ালে পার্ক করা থাকবে,
প্রথমে তুমি তার নাকে এই ক্লোরোফম ভেজা রুমাল টা ছেপে ধরবে, পরে আমি ওকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যাবো, কেউ সন্দেহ করবে না

নিদিপা- আর আমি আমার কি হবে
নিহার একটু অবাক হওয়ার ভান করে বল্লো
-তোমার আবার কি,তুমি যেখানে আছো সেখানে ই থাকবে বা নিজের বাড়ি চলে যাবে

নিদিপা-আমি যাবো না তোমার সাথে?

নিহার- ওহ. নো. নিধি তোমার তো কোন বুদ্ধি নেই তুমি সহ উধাও হলে সবাই তোমাকে সন্দেহ করবে, আর তা ছাড়া আমি গাইথি কে বিয়ে করার জন্য সাথে নিচ্ছি না,গাইথি আমার স্যারের বেছে থাকার পেরনা, বুঝেছো

নিধিপা মুখ বোতা করে বল্লো- হুম

নিহার – ডোন্ট ওরি ডার্লিং যাও তাড়া তাড়ি,

নিদিপা যাওয়ার জন্য পিছনে পা বাড়ালো

নিহার- দাড়াও, এই রুমাল টা সাথে নিয়ে যাও

নিদিপা রুমাল নিয়ে আর এক মুহুর্ত দাড়ালো না

গাইথি বউ সেজে বসে আছে পাশে কেউ নেই সবাই কাজে ব্যাস্ত,শ্রুতি আপু ও আসতে পারেনি আমেরিকা, থেকে দুলা ভাই ছুটি পায়নি, তাড়াহুড়ো করে বিয়ে হচ্ছে তেমন করে মেহমান দাওয়াত দেয়া হয়নি, সত্যি জীবন টা বড় ই বিচিত্র, আমরা কি চাই তা আমরা ই জানি না, এমন সময় গাইথি নিধিপাকে আসতে দেখলো
ইশারা করে ডাকলো গাইথি নিদিপা কে
নিদিপা- গাইথি তোকে বউ সাজে খুব মানিয়েছে

গাইথি সে কথায় কান না দিয়ে বল্লো
– তুই কোথায় ছিলি এতোক্ষন

নিদিপা- ছিলাম একটা কাজে, এই শুন না তোর সাথে কিছু কথা আছে

গাইথি মুখটা মলিন করে বল্লো
চুহেসের কথা বলবি তাই তো,

নিধিপা- নারে অন্য কথা
গাইথি- বল
নিধিপা- এখানে বলা যাবে না
গাইথি- এখানে বললে কি প্রব্লেম, কেউ তো নেই

নিধিপা- তুই দেখছিস না ঐশী ভাবি কিচ্ছুক্ষণ পর এসেই তোকে দেখে যায়। তা ছাড়া বিয়ে বাড়ি কে কখন এসে পড়ে

চল না তোদের বাগানে যাই
গাইথি- তুই পাগল হয়েছিস কেউ দেখলে আমাকে এখন সন্দেহ করবে

নিধিপা- আরেহ কেউ দেখবে না,
তবু ও গাইথি কিছুতেই রাজি হলো না যেতে

নিধিপা আর কোন উপায় না দেখে হঠ্যাৎ গাইথির মুখে রুমাল ছাপা দিয়ে ধরলো,

গাইথি কিছুক্ষন চটপট করে থেমে গেলো
নিধিপা বুঝলো জ্ঞান হারিয়েছে,

নিধিপা ধুরু ধুরু বুকে গিয়ে দরজা আটকে দিলো যেন এ দিকে কেউ না আসে

তার পর নিহার কে কল দিয়ে সব টা বলে
নিহার- এখন গাইথি কে বের করে নিয়ে আসবো কোন পথে

নিধিপা- তুমি গাইথির রুমের বারান্দা দিয়ে খুব সহজে নিয়ে যেতে পারবে তাড়া তাড়ি এসো

নিহার আর এক সেকেন্ড ও দেরি না করে, নিধিপার বলা কথা মতো রুমে এসে গাইথিকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে বেরিয়ে এলো,

ফিস ফিস করে নিধিপা কে বল্লো আমি যাওয়ার পর ই তুমি রুমে দরজা খুলে দিবে বেশি সময় দরজা বন্ধ থাকলে কেউ এ পথে চলে আসতে পারে ,

নিধিপা,দরজা খুলে দিয়ে সবার সামনে দিয়ে বাগানের পিছে গেলো

নিহার- তুমি আবার এসেছো কেনো
নিধিপা- পথে যদি জ্ঞান ফিরে আসে গাইথি খুব চিৎকার চেঁচামেচি করবে, তখন নতুন করে বিপদে পড়বে তুমি

নিহার- জ্ঞান ফিরে আসবে না তুমি নিশ্চিন্ত থাকো,যে ক্লোরোফম দিয়ে অজ্ঞান করেছি এতে সহজে জ্ঞান ফিরে না ইনজেকশন দিয়ে জ্ঞান ফিরাতে হয়, এই বলে গাইথি কে পিছনে সিটে রেখে গাড়ির দরজা লক করে
ড্রাইভিং সিটে এসে বসলো

নিধিপা- সর্বনাশ, যদি মরে যায়

নিহার- উফফ বোকার মতো কথা বলো না এই বলে গাড়ি স্ট্রাট দিলো, গাড়ি চলতে শুরু করলো

চুহেস সারাদিন অফিস করে এসে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো

আজ নিহার কেনো ছুটি নিলো কে জানে, ও না থাকাতে আজ সব ছাপ পড়েছে আমার উপর,

এ দিকে ওকে ছাড়া আমি অচল,আমার সব কাজের খবর রাখে নিহার , আর একবার এই রকম ছুটি নিলে চাকরি থেকে বাদ করে দিবো

চুহেসের ক্লান্তিতে চোখ বুঝে এলো, মনটা আর ও খারাপ হয়ে গেলো
ইদানীং একা থাকলে ই বাবুইর কথা মনে পড়ে যায়, গ্রামে গিয়ে ওকে এতো কাছে দেখতে পেয়ে এমন লাগছে ,
আচ্ছা বাবুই এখন কেমন আছে, ও কি আমার কথা ভুলে গেছে, দু চার দিনের পরিচয় ভুলে যাবার ই কথা,বাবুইর কাছে দু চারদিন হলে ও, বাবুই কে আমি সেই ছোট থেকে দেখছি, ইশ যদি ছোটবেলার সব কথা ওর মনে থাকতো, কতো ভালো হতো,
আচ্ছা ও কি আমাকে দেখেই দৌড়ে আসতো কাছে, নাকি পর্দার আড়াল থেকে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে পালিয়ে যেত,
খুব ইচ্ছে করে অফিস শেষে ক্লান্ত শরির নিয়ে বাসায় ফিরে এই রকম একটা মিষ্টি মুখ দেখতে
কিন্তু আদৌ কি দেখতে পাবো,

চুহেস ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাতটা বাজে
– ইস নিহার নেই কখন
কি করতে হবে মনে করিয়ে দেয়ার মতো কেউ নেই, আজ আর খাওয়া হলো না, যাই ফ্রেশ হয়ে এসে এক সাথে ডিনার করে ফেলবো,

নিহার ছেলেটা কে যত যাই বলি না কেনো খুব ভালো ছেলে,আমার সব ঝাড়ি মুখ বুঝে সহ্য করে , রাবেয়া খালা নিজের ছেলের কাছে যাওয়ার আগে আমার জন্য নিহার কে ঠিক করে যায়,
নিশ্চয় উনি সব জেনে বুঝে ই নিহার কে এপয়েন্ট করেছে, ফ্রেশ হয়ে এসে বুয়া কে টেবিলে ডিনার দিতে বল্লো,
চুহেস খাচ্ছে আর ভাবছে আমার যদি নিহারের মতো একটা ভাই থাকতো,
নিহারের এই একনিষ্টার জন্য ওকে ভালো একটা কিছু উপহার দিতে হবে,কিন্তু কি দিবো, আজ নিহার আসুক ওকে জিজ্ঞাস করবো ও সব ছেয়ে বেশি কিসে খুশি থাকে

খাওয়া শেষ করে নিহার নিজে রুমে এলো, নাহ চোখ বন্ধ করা যাবে না,চোখ বন্ধ করলেই বাবুই চোখের সামনে বসে থাকবে,
তার ছেয়ে ভালো গিটার টা নিয়ে ছাদে চলে যাই,এই গিটার টা রাবেয়া খালা দিয়েছে,

বলেছে বেশি একা লাগলে গিটার টা আমাকে সংগ দিবে সত্যি তাই, গিটারে যখন টুং টাং সুর তুলি তখন মন টা এক অজানা আবেশে ভরে যায়,
রাত প্রায় সাড়ে দশটা চুহেস এখন ও ছাদে বসে রেলিং ধরে নিছের দিকে ছেয়ে আছে , চারিদিকে অন্ধকার আর ব্যাস্ত শহরের গাড়ি গুলোর হেড লাইট এক অসাধারণ পরিবেশ সৃষ্টি করেছে
মনে হয় রাতের অন্ধকারে জোনাকি আলো জ্বালিয়ে এদিক ওদিক যাচ্ছে

হঠ্যা চুহেসের চোখ আটকে যায় নিচের গাড়ির বারান্দায়, নিহার গাড়ি থেকে বের হচ্ছে, ওর কোলে মধ্যে কাউকে নিয়েছে মনে হচ্ছে পাঁজাকোলা করে কাউকে বিতরে নিয়ে আসছে যাই দেখে আসি তো ব্যাপার টা কি

to be continue

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে